নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহস্য অনেক অথবা কিছুই রহস্য নেই।

শহীদুল ইসলাম অর্ক

খুঁজি- নিজেকে, অন্যকেও...

শহীদুল ইসলাম অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অচল পয়সা

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২৮

তার সাথে আমার দ্বিতীয় বার
দেখা হবে ভাবিনি। রাস্তায় কত লোককেই
তো দেখি আবার ভুলে যাই। হয়ত কাউকে পুনর্বার
দেখলেও চিনতে পাই না। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার এই
লোকটাকে আমি ভাল করেই চিনি। তার
সাথে আমার এক সপ্তাহ আগে দেখা হয়েছিল,
কথাও।
স্মৃতির জাবর কাটি, ফিরে আসে সেই মুখ!
সেদিন আমি কসাইবাড়ি রেলগেটের কাছে,
রিকশায়, সিগন্যালে আটকা পড়ে আছি। নতুন
চাকরি। সীমাহীন উৎসাহে অফিস যাওয়ার
মাঝে বিন্ধ্যাচল এই সিগন্যাল। করার কিছু নেই।
মুখ শুকনো করে বসে আছি। এমন সময়
তাকে দেখি আমি।
লোকটির বয়স হতে পারে আমার বাবার মতো।
পড়নে জীর্ণ পাঞ্জাবি,ছেঁড়া স্যান্ডেল। আমার
কাছাকাছি এসে সে বলল, 'বাবা, আমার বড়
বিপদ।' আমি তার দিকে তাকালাম। লোকটির
চোখ ছলছল। আমার মনে হল লোকটি প্রফেশনাল
ভিক্ষুক নয়।
প্রশ্ন করলাম, 'কি বিপদ?'
-'ক্ষিদা লাগচে।'
-'তাই। আচ্ছা দাঁড়ান।' বলে পকেটে হাত
চালালাম। বের হয়ে আসলো একটা দশ পয়সার
মুদ্রা। তাড়াতাড়ি লুকিয়ে ফেললাম সেটা। এই
সময়ে দশ পয়সার মুদ্রা পকেটে থাকাটা বিস্ময়কর
হলেও এটা আসলে আমার একটা খেয়াল।
ছেলেবেলায় কতদিন
রেললাইনে পয়সা খেলা খেলেছি!
রেললাইনে কান পেতে শুনতাম ট্রেন কত দূরে।
ট্রেন আসার আগে দশ পয়সার
মুদ্রা রেললাইনে রেখে দূরে দাড়িয়ে থাকতাম।
ট্রেন চলে গেলে দৌড় দিয়ে এসে দেখতাম সেই
মুদ্রাটির চ্যাপ্টা হয়ে যাওয়া লম্বা শরীর। কী এক
অনির্বচনীয় আনন্দ পেতাম!
এখনো মাঝে মাঝে ছেলেবেলার ছেলেমানুষী ভর
করে আমার উপর। এ জন্যই বোধ হয় কলিগরা বলে,
আরে তুমি তো এখনো বালক!
আমি আমার মানিব্যাগ হাতড়াই। লোকটিকে দশ
টাকার একটা নোট দিয়ে দেই।
লোকটি টাকা নিয়ে দেখলাম মলিন
বোরখা পরা এক মহিলার কাছে গেল। সম্ভবত
তারা স্বামি-স্ত্রী। আমার নিজের উপর রাগ
লাগলো।কেন আমি তাকে মাত্র দশ
টাকা দিলাম। আহা বেচারা!
সেদিনই ছিল তাকে আমার প্রথম দেখা।
দ্বিতীয় দেখা আজ। সেই কসাইবাড়ি রেলগেট।
অদূরে লোকের জমায়েত। মাতৃদর্শিনী এক মহিলার
ক্রন্দন। কিছুক্ষণ আগে এক্সপ্রেস ট্রেনের
নির্মমতায় দিখণ্ডিত সেদিনের সেই
সাহায্যপ্রার্থী লোকটি।
আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখি জীবন আর
মৃত্যুর পালাবদল!
আমি হয়ত মানুষ তাই আমার চোখে বিন্দু বিন্দু
জল জমে উঠলো।
হঠাৎ মনে পড়ল আমার সেদিনের সেই অচল
পয়সািটর কথা। যেটাকে রেললাইনে ট্রেনের
চাকায় পিষ্ট করে আনন্দ পাবার জন্য
আমি পকেটে রেখেছিলাম। পকেটে হাত
দিয়ে বুঝলাম সেটা এখনও আছে। আমি কেন
জানি সেই অচল পয়সাটির প্রতি এক ধরনের
মায়া অনুভব করতে থাকি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.