নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রহস্য অনেক অথবা কিছুই রহস্য নেই।

শহীদুল ইসলাম অর্ক

খুঁজি- নিজেকে, অন্যকেও...

শহীদুল ইসলাম অর্ক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পা

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

আদনান কাঁপা কাঁপা হাতে, পরম মমতায় চিঠিটি গ্রহণ করে। একজন ভাষা সৈনিকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রেম বিরহ, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি আর ইতিহাসের এক অনন্য দলিল এই চিঠি। আদনান ইতিহাসের সতেজ আহবান যেন উপলব্ধি করতে থাকে। সম্মোহিতের মতো সে ধীরে ধীরে চিঠির ভাঁজ খুলে চোখ বুলায়...

৫ জানুয়ারি, ১৯৬৫

শান্তিবাগ, ঢাকা

অণু,

কেমন আছিস ? ভাল নিশ্চয়। আমি আগের মতই। তোর ছেলের জন্মদিনের কার্ড পাঠিয়েছিস। যেতে আনুরোধ ও। নারে, মনে হয় যেতে পারব না। জানিস তো আমি কখনই খুব বেশি সামাজিক হয়ে উঠতে পারিনি।আগেও যেমন ছিলাম এখন ও তেমনি। বরাবরের মত নিঃসঙ্গ,একা। আর এ জন্য তুই আক্ষেপ করে লিখেছিলি। কিন্তু কী করব বল, সবার তো সবকিছু করা হয়ে উঠে না। আমার দ্বারা ওসব সংসার, টংসার কখনও করা হবে না। তুই তো জানিস আমাকে। আমি কেমন। যা ভাবি তাই করি। কেউ মানলেও ক্ষতি নেই, না মানলেও দুঃখ নেই।

শুধু কখনো কখনো বুকের বা পাশটাতে খচ খচ করে। ভাবি, যদি আমার ও হত এমন। আমি ও তো কারো হাত ধরে হাটতে হাটতে চলে যেতে পারতাম গ্রামের মেঠো পথ ধরে, সবুজের সান্নিধ্যে। তুমুল ভালোবাসাবাসি আর মান অভিমানের খেয়া পাড়ি দিতে। কিন্তু তা আর হল কই।

যদি বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিকে ভুলে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো এতদিনে বিয়ে করে ছেলেমেয়ের গর্বিত পিতা হতে পারতাম। কিন্তু, তা যে হয়না অণু!

তের বছর আগের সেই দিনের কথা ভাবলে মনে হয় এইতো সেদিন। সেই মধুর ক্যান্টিন, সেই কলা ভবন, সেই লাইব্রেরি এখন ও আছে। নেই অনেকেই। আমার বন্ধুদের মধ্যে তুই আমাকে সবচেয়ে ভাল বুঝতি বলে মনে হয়। আমার দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ-বেদনা সব। আর আমি এ ও জানি, আমার প্রতি তোর বন্ধুত্বের টানটা ছিল সবচেয়ে বেশি।

সে দিনের ইতিহাস আজো ছায়া ফেলে মনের পর্দায়। সকাল সকাল আমরা জমায়েত হয়েছিলাম ক্যাম্পাসে। দ্বি ধাবিভক্ত সিদ্ধান্তের পর সবাই শেষে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া শুরু করলো। আমি ছিলাম মিছিলের মাঝখানে। টগবগ করে রক্ত যেন ফুটছিল।সবার মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে, গুলি করবে করুক, প্রয়োজনে মরবো তবু আন্দোলন থেকে পিছু হটবো না।

হঠাৎ গোলাগুলিতে মিছিল ছত্রভঙ্গ। একটা বুলেট এসে লাগল আমার বাহুতে। তীব্র ব্যথায় পড়ে গেলাম। নাক, ঠোঁট ফেঁটে রক্তাক্ত।

বাহু থেকে ঝরছে রক্ত।আমার গায়ের উপর দিয়ে ছুটছিল লোকজন।

হঠাৎ মেয়েলি কণ্ঠ -'প্লিজ, মাড়াবেন না, প্লিজ।' বুঝতে পারলাম কেউ আমাকে সেভ করার চেষ্টা করছে। আমি মাথা তুলে দেখার চেষ্টা করলাম।

অনেক কষ্টে, ধুলোর আধো অন্ধকারে দেখলাম একজোড়া খালি পা।তার পায়ে আলতা নাকি রক্তের লাল রঙ বুঝে উঠার আগেই চোখ বন্ধ হয়ে আসল। তারপর জ্ঞান হারালাম।

জ্ঞান ফিরল হাসপাতালে। শুনলাম একটি মেয়ে আমাকে রিকশায় করে এখানে নিয়ে এসেছিল। তার নাম পরিচয় কেউ বলতে পারে না। ঐ দিন কে কার খোঁজ রেখেছিল বল?

আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি। কিন্তু ভুলতে পারি না তাকে। বার বার মনে পরে একজোড়া ফর্সা মেয়েলি পা আমার সামনে। যে আমাকে বাঁচিয়েছিল হাজার পায়ের আঘাত থেকে।কতদিন, কতভাবে খুঁজেছি তাকে, পাই নি।

ঐ একজোড়া ফর্সা সুন্দর পা'কে আমি ভালবাসি। আমার জীবনে ঐ একজোড়া পায়ের ভালবাসা ছাড়া ভালোবাসাবাসির আর কোনো অধ্যায় নেই।

-অসীম

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০০

আলম 1 বলেছেন: অসাধারন

২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৭

শহীদুল ইসলাম অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব আলম।

৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৪

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: অল্প কয়েকটি লাইনে অসাধারণ একটা গল্প উপহার দিলেন।

গল্পে +++++++++

৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:

নিয়মিত লিখুন। দেখিয়ে দিন আপনার ক্ষমতা। আপনার লেখার হাত ভাল। চালিয়ে যান পাশে আছি।

৫| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৩

শহীদুল ইসলাম অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায়।

৬| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:০১

নেক্সাস বলেছেন: নিয়মিত লিখুন। শুভকামনা

৭| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

শহীদুল ইসলাম অর্ক বলেছেন: ধন্যবাদ নেক্সাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.