![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রাণী আর উদ্ভিদের মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে আর প্রাণীকে খাবারটা খুঁজে বের করতে হয়। এ-জন্যই প্রাণী সচল। একই পরিবেশে কিংবা একই ছাদের নিচে থাকা দুটো প্রাণী যদি পাশাপাশি থেকেও দুটো জিনিস দেখে তাহলেও একই জিনিস দুজন দুই রকম দেখে, শুধুমাত্র কয়েক ডিগ্রীর এদিক সেদিকের হিসেবেও অনেক পার্থক্য হয়ে যায়। সেই দেখা যখন ব্রেইনে যায় তখন হয় স্মৃতির রসায়ন। সেখানে হরেক রকম বিক্রিয়া। সেইসব বিক্রিয়ায় কত শত নিয়ামত। এভাবেই দৃষ্টি আর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য হয়।
আপনি যখন পহেলা বৈশাখে কোন বান্ধবীর সাথে ঘুরে বেড়াবেন দেখবেন ঠিক আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন মানুষ আপনার বান্ধবীকে দেখবে পশুর দৃষ্টিতে। কারণ সেই মানুষটা বড় অভাগা-কাপুরুষ কোনদিন কোন নারীকে সে দেখে নাই, কথা বলে নাই। তার কাছে নারী মানে একদলা মাংস, যেই মাংস কাঁচা খেয়ে ফেলতে হয়. আর আপনার দৃষ্টিতে মেয়েটা আপনার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ- যাকে নিয়ে কোন বাজে চিন্তা চাইলেও আপনার কল্পনায় আনতে পারেন না। একই ছবি দুটো ভিন্ন চোখের ভেতর দিয়ে যখন মস্তিষ্কে পৌছায় চিত্রটাই পাল্টে যেতে পারে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আপনি কি দেখছেন কিংবা কি শুনছেন সেটা সবসময় ইম্পরট্যান্ট না- ইম্পরট্যান্ট ব্যাপার হচ্ছে আপনার এই দেখা, শোনা কিংবা স্পর্শের অনুভূতি যখন আপনার মাথায় ঢুকে যাচ্ছে তখন সেই ডাটা গুলো কয়েকটা ইথিকাল গেইট অর্থাৎ আদর্শের দরোজা পার করে যাচ্ছে। আপনার যদি ‘চুরি করা মহাপাপ...’ নামের একটা ইথিকাল গেইট থাকে তাহলে কেউ হাতে কয়েক বান্ডিল টাকা নিয়ে ঘুরলেও আপনার কোন অনুভূতি হবে না। আবার ধরেন ‘খালি আমার মা-বোনই নারী বাকি সবাই বেগানা...’ এরকম চিন্তা থাকলে পহেলা বৈশাখে নারীরা আপনার হাত থেকে নিরাপদ না। ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার হওয়া দরকার...’ এরকম একটা চিন্তা যদি আপনার সত্যিই থাকে তাহলে আপনি জামাতে ইসলামকে দুই চোখে দেখতে পারবেন না... এরকম অজস্র লজিক গেইট, চিন্তার দরজা আমরা প্রতিদিন তৈরি করি এবং বিভিন্ন পরিস্থিতে নিজেদের আদর্শকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞাসা করি এই পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয়, আদর্শের দরজা আমাদের যে দিকে নিয়ে যায় আমরা সে দিকেই যাই।
অনেকের আদর্শ তাকে দিয়ে পথশিশুদের জন্য একটা স্কুল খোলায়, অনেকের আদর্শ তাকে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে বাধ্য করায়, অনেকের আদর্শ ছোট ভাই-বোনে আর বুড়োদের সাথে সময় কাটাতে শেখায়। আবার আদর্শিক অবস্থান থেকে অনেকে হত্যাকান্ড চালায়, ধর্ষণ করে।
তাহলে এখন কোন আদর্শকে মানবো ?
আমাদের গড় আয়ু নাকি ৬৫ থেকে বেড়ে ৭১ বছর, যদিও পৃথিবীর অপর প্রান্তের মানুষেরা আমাদের চেয়ে কুড়ি পঁচিশ বছর বেশী বেঁচে থাকে। বেঁচে থাকাটাই যদি জীবনের উদ্দেশ্য হয় তাহলে আপনি এই দেশে জন্মে প্রথমেই ফেইল। এই দেশে থাকলে বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই যতদিন বাঁচবেন বাঁচার মত বাঁচুন। মাথা উচু করে বাঁচুন, আদর্শ নিয়ে বাঁচুন।
এই পৃথিবীতে ধ্রুব বলে কিছু নাই, সূর্য এখন আর পূর্ব দিকে উদিত হয় না একটু বাঁকা হয়ে ওঠে। পৃথিবীর তিনভাগ জল বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন। বক আগের মত সাদা নাই, মাছ এখন সাগরের চেয়ে একুরিয়ামেই বেশী দেখা যায়। কোন কিছুই ধ্রুব নাই, সব পরিবর্তন হচ্ছে। নতুন অপরাধের সৃষ্টি হচ্ছে, আর সেইসব অপরাধের অপরাধীদের সায়েস্তা করার জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন শাস্তি।
এটাই স্বাভাবিক, একবার ভাবুন তো- পৃথিবীতে গাড়ি আবিস্কার হওয়ার আগে থেকেই যদি ট্রাফিক আইন অমান্য করার জন্য শাস্তি দেয়া হতো তাহলে ব্যাপারটা কেমন শোনাতো?
আপনার নিজের চিন্তা চেতনা নিজের মত করে গড়ে তুলুন। পৃথিবীর সমস্ত কিছু পরিবর্তনশীল, তাই নিজের চিন্তার জগতে ক্রমাগত পরিবর্তন আনুন। আপনার নিজের চিন্তা চেতনা নিজের মত করে গড়ে তুলুন। কোন একটা মতাদর্শের অন্ধ অনুকরণ করবেন না, পড়ুন সেই মতের বিরোধীদের কথাও। বিভিন্ন জায়গা থেকে চিন্তা করুণ, নিজের যুক্তি আর বিবেকের কষ্টি পাথরে পরীক্ষা করে দেখুন আদর্শকে। কখনোই কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত নয়, ক্রমাগত নিজের চিন্তার জগতে পরিবর্তন আনুন। কোন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকবেন না, সেই সিদ্ধান্তকে সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন করুণ। আমাদের আশেপাশের জগত বস্তুতে বস্তুতে সংঘর্ষের ফলে যেভাবে নিরন্তর পরিবর্তন হচ্ছে নিজেদের চিন্তার জগতকেও সেভাবে পরিবর্তন করতে হবে, শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে সেই পরিবর্তন যেন হয় অবশ্যই মঙ্গলজনক পরিবর্তন। কোনকিছুকে আঁকড়ে ধরে রাখার ভেতরে মঙ্গল নাই। ব্যাক্তি, নেতা কিংবা মানুষ পূজার ভেতরে মুক্তি নাই। ভুল স্বীকার করতে কখনোই লজ্জা নাই। পড়ার বিকল্প নাই।
এভাবে করতে গেলে হয়তো দেখবেন একাধিকবার রাস্তা চিনে নিতে ভুল করেছেন। তবে এতে বিচলিত হবার কিছু নাই- শুধরানোর সময় আজীবন। মনে রাখবেন পৃথিবীর কোন মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয়। কোন মানুষ যত বড় আর যত মহানই হোক না কেন সে তার জীবনকালে অতি অবশ্যই কোন না কোন ভুল করেছে। একজন মানুষের আয়ুস্কাল যত বেশী হয়- ভুলের সংখ্যা ততই বেশী হয়। এটাই স্বাভাবিক, এই স্বাভাবিকতা নিয়েই আমরা চলি। আমিও আমার জীবনে অসংখ্য ভুল করেছি এবং যদি বেঁচে থাকি সামনেও করবো।
তবে বুঝতে পারার পর কোন ভুলকে স্বীকার করতে পারার ভেতরে একটা গৌরব আছে। হ্যা, আমি গভীর ভাবে মনে করি ভুল বুঝতে পারা এবং নিজের সমালোচনা করতে পারা একটা বড় গুণ। খুব বেশী মানুষ এটা করতে পারে না। আপনি চাইলেই সারাজীবন কোন ভুল করবো না টাইপ প্রতিজ্ঞা করে ফেলতে পারেন কিন্তু নিশ্চিত ভাবে সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে পারবেন না। তারচেয়ে যদি ভুলটা বুঝতে পেরে নিজেকে শোধরানোর প্রতিজ্ঞা করেন তাতে আপনার এবং আপনার আশেপাশের সবারই কল্যাণ।
ঠিক একই ভাবে আপনি যখন কোন মানুষের কোন কাজ অথবা বক্তব্যকে সমর্থন দেন তার মানে কিন্তু এই না যে সেই মানুষের জীবনের প্রতিটা কাজ আর প্রতিটা বক্তব্যকে আপনি সমর্থন দিচ্ছেন কিংবা তার চরিত্রের সমস্ত সমালোচনাযোগ্য বিষয়গুলোকে তার ভুল গুলোকে আপনি বৈধতা দিচ্ছেন। কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে কারো নেতৃত্ব কিংবা বশ্যতা মেনে নেয়ার মানে এই না যে আপনার প্রত্যেকটা কর্মকাণ্ডে তার প্রভাব থাকবে এবং তার প্রত্যেকটা কর্মকান্ড আপনি না দেখেই সমর্থন দেবেন। সবকিছুই যদি কারো কাছ থেকে টুকেই নেন তাহলে আপনার তিন পাউন্ড ওজনের বিরাট মগজটা আর কি কাজে লাগলো?
কাউকে অনুকরণ করতে বেশী মগজ লাগে না,
অনুকরণপ্রিয়তা সার্কাসে মানায় মনুষ্য-প্রজাতিতে না।
-আরিফ রাহমান।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১০:৪৩
সিনবাদ জাহাজি বলেছেন: হুমমমমম
নিজের বিচার বিবেচনা শক্তিকে সর্বাগ্রে স্থান দেওয়া উচিৎ