নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মই আমার আজন্ম পাপ.....।

জিসান রাহমান

নীরবতায় বাঁচি, সত্যকে খুঁজি।

জিসান রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীবাদঃ পুরুষ-বিদ্বেষ না নারী-মুক্তি?

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১:০৬

নারীবাদ, খুব প্রচলিত একটি শব্দ। নারীবাদী বলে পরিচয় দেওয়া মানুষের সংখ্যা'ও খুব একটা কম না। কিন্তু দূর্ভাগ্য "নারীবাদ" শব্দ'টি যত বেশি ব্যবহৃত হয়েছে, তত বেশি এর অর্থ বিকৃত হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ'ই নারীবাদ বলতে তীব্র পুরুষ বিদ্বেষ বুঝে। সত্যিকার অর্থে নারীবাদ তীব্র পুরুষ-বিদ্বেষ তো দূরে থাক, অল্প পুরুষ বিদ্বেষ'ও বোঝায় না। নারীবাদ সম অধিকার বোঝায়। পুরুষের যেমন অধিকার আছে; ঠিক সেই পরিমান অধিকার নারীর থাকা- এটি'ই নারীবাদ।

নারীবাদ নারী'কে মানুষ হিসেবে গণ্য করা'র কথা বলে। নারী'কে মানুষের মর্যাদা দেওয়া'র কথা বলে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী'কে মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়না। পুরুষের যত অধিকার থাকে তার অর্ধেক'ও নারী'র থাকেনা। নারী'কে জীবন্ত একটি লাশ হয়ে বেঁচে থাকতে হয়। তার সমস্ত ইচ্ছা-আকাঙ্খা মাটি চাপা দিতে হয়। পুরুষ কেন্দ্রিক এ সমাজ ব্যবস্থা'য় নারী'র এই দূর্বল অবস্থানের কারণে নারীবাদের সৃষ্টি হয়। নারীদের এগিয়ে আসতে হয়; কথা বলতে হয় সম অধিকার আদায়ের জন্য।

নারীবাদের জন্ম হয়েছিলো ফ্রান্সে ১৮৮০ সালে। এরপর বিস্তৃতি লাভ করে ইংল্যান্ড এবং আমেরিকা'তে। নারীবাদের উল্লেখযোগ্য সাফল্য হলো ভোটাধিকার অর্জন। পুর্বে ইউরোপ আমেরিকা'র মতো মহাদেশে নারীদের ভোট দেওয়ার অধিকার ছিলোনা। একটি দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা হয়েও নারী'রা এ অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। নারী'রা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়ে আন্দোলন করে। যার ফলস্বরূপ ১৯১৮ সালে নারীকে ভোটাধিকার দেওয়া হয় প্রথম যুক্তরাজ্যে। সেই থেকে মুক্তির পথে নারীদের যাত্রা শুরু।

১৯৬৪ সালে প্রথম "নারীমুক্তি" শ্লোগান'টি ব্যবহৃত হয়। এই শ্লোগানের মূল বিষয় হলো নারী-পুরুষ সমান অধিকার। এই পর্যায়ে আন্দোলনের বিষয়বস্তু ছিল পুরুষের সমান পারিশ্রমিক, পুরুষের সমান আইনগত অধিকার, পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণের অধিকার, চলাফেরা'র অধিকার, সার্বজনীন ভোটাধিকার, সরকারী পদলাভের অধিকার, কাজ করা'র অধিকার, সম্পত্তি'র মালিকানা'র অধিকার,শিক্ষা লাভের অধিকার ইত্যাদি। অর্থাৎ নারী'রা বুঝতেই পারলো নারীবাদ ছাড়া মুক্তি সম্ভব নয়।

বাঙলাদেশে নারীবাদ খুব কম'ই দেখা যায়। এদেশে নারীরা'ই নারীদের অবজ্ঞা করে; বাকী কথা আর কিইবা বলবো। এদেশে কোন মেয়ে যখন রাতে বাড়ী ফিরে; মেয়েরা'ই বলে মেয়ে'টি খারাপ। কোন মেয়ে যখন স্বেচ্ছায় চলে কথা'র বাণ ছুটে আসে মেয়েটার উপর। ধর্ষণ আমাদের দেশে খুব'ই জনপ্রিয় একটি সমস্যা। জনপ্রিয় এজন্য'ই যে এই একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে এদেশে'র পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সুখ পায়। নারীকে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতে বাধ্য করা হয় এবং দোষ চাপানো হয় সেই হতভাগা নারী'র উপর। ধর্ষকের চেয়ে নারী'ই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সমাজে তার সম্মানহানী হয়; সে অবহেলা'র বস্তু হিসেবে গণ্য হয়। বিচার চাইতে গিয়ে সে বারে বারে মানুষিক ধর্ষণের শিকার হয়। ধর্ষণে মেয়েটা'র দোষ'ই খুঁজে বের করা'র চেষ্টা করা হয়। মেয়েটা'র চরিত্রে সমস্যা কি পোশাকে সমস্যা- সেটা দেখা হয়; কিন্তু মেয়াটা'কে যে ধর্ষণ করলো সেটা'র দোষ ছেলে'র সেটা দেখা হয়না তেমন। ছোট্ট শিশু কিংবা বোরকা পরিহিত কেউ যখন ধর্ষণের শিকার হয় তখন'ও এরা পোষাকে দোষ খুঁজতে যায়। এবং নারীরাই এই কাজ'টি বেশি করে।

এতো সব বাঁধা থাকার পরও আমাদের নারী'রা এগিয়ে যাচ্ছে। বেগম রোকেয়া'র দেওয়া সেই আলোকবর্তিকা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের নারীরা। ধীরে ধীরে নারীবাদী হয়ে উঠছে আমাদের সমাজব্যবস্থা। একদিন এই নারীবাদ'ই আমাদের নারীদের মুক্ত করবে; পুরুষের সাথে মিলে তারা বিশ্বের মানচিত্রে একটি উজ্জ্বল দেশ হিসেবে চিহ্নিত করবে। অসম্ভব কোন কল্পনা নয়; আমাদের পোষাক শিল্পের দিকে তাকান উত্তর পেয়ে যাবেন। নারীবাদ ভালো না খারাপ- সেটা'র উত্তরও পেয়ে যাবেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.