নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক্ষুদে গল্পকার

জীবন্ত জীবাশ্ম অভ্র

ঃ)

জীবন্ত জীবাশ্ম অভ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাফি ও কিছু জিনিয়াস এর গল্প

২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৩




না। আজ আমি কোন গল্প লিখছি না। এমন একটি সত্যকে তুলে ধরছি যা আমরা এড়িয়ে যেতে চাই হর-হামেসা। এটা হলো কিছু ভিন্ন মানুষের গল্প(বাস্তবতা)।

এ বছরেরই ফেব্রুয়ারি মাস। মিডিয়ার মারফতে একটা টিউশান শুরু করি কামাল গেট এলাকায়।

ঠুক...ঠুক..... দরজায় টোকা...

-কে?
-আমি শুভর স্যার। মিডিয়া থেকে পাঠায়সে।

টুক-টাক....ধুমধাম......দরজা খুলল।
একটা পিচ্চি সামনে দাঁড়ানো। আমার হাত ধরে টানতে টানতে সোফায় কাছে টেনে নিয়ে বসালো।
"আয়, আয় না, বস্, বস্ না!!"-এভাবেই সম্বোধন করছিলো আমাকে। কিন্তু এই বাচ্চাটার আপ্যায়ন দেখে আমি আসলেই থঃ। আমাকে যেনো কত চেনা ওর। আপ্যায়নের পরের ধাপ আরো এগ্রেসিভ। আমাকে সোফায় বসালো আদর করে। মুখে কি যেনো বিড়বিড় করছে। ছাত্রের মা আন্টি আমার সাথে পড়ানো নিয়ে কথা বলবে বলে আমার সামনে বসলো। আর আমি সেই মুহুর্তেই ছেলেটিকে আবিষ্কার করলাম আমার কাঁধের উপর চেপে বসেছে।
-এই রাফি, নাম্। কিছু মনে করিওনা বাবা। ওইক্ নাম। ঠ্যাস, ঠাস, ঠ্যুস। নাম্।

আমার ঘাড় থেকে রাফিকে নামাতে আন্টির ভিষণ পরিশ্রম হয়ে গেলো।
-কিছু মনে করিওনা বাবা। আমার ছেলেটা বাবা একটু পাগল, কি বলে যেন্ ওটারে? অটিস্টিক। সেই কারণে.......

কথাটা শুনে আমি যেনো পিলে চমকে উঠলাম। শুধু আমি না, আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে তার মনে খুব জোরে সোরে একটা আঘাত লাগতো। এতো কিউট বাচ্চাটা! এইটা অটিস্টিক! বিশ্বাস হল না কিছুক্ষণ। চোখেমুখে বিষ্ময় নিয়ে আন্টিকে জিজ্ঞাস করি-
-কিন্তু ও তো আমার হাত ধরে নিয়ে এসে আমাকে বসালো! দেখতেও তো সব নরমাল। কিন্তু অটিস্টিক হলো কোন দিক থেকে!
-বাবা, আরো দু'দিন আসো, সব বুঝে যাবা।

কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে গেলাম। অটিজম সম্বন্ধে আমার জ্ঞান নেই বললেই চলে। কিন্তু বিটিভিতে দেখেছি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ওদেরকে দেখলেই তো কেমন যেনো আলাদা রকমের বাচ্চা মনে হয়। কিন্তু রাফি তো খুব সুন্দর স্বাভাবিক দেখতে একটা বাচ্চা!

ইন্টারেস্ট বাড়ছে আর বাড়ছে আমার রাফি সম্বন্ধে জানার। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রাফি সম্বদ্ধে ইন্ফরমেসন কালেক্ট করতে থাকলাম।


রাফি, বয়স এখন ৮। স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিলো ৫ বছর বয়সে। সেখানে বেশিদিন টিকতে পারে নি। কারণ সে স্বাভাবিক না। অস্বাভাবিকতার সুচনা হয় আরো আগে। আমার স্টুডেন্ট শুভ এর মতে, রাফি একবার পুকুরে ডুবে যায় ২ বছর বয়সে। তখন সে বেঁচে তো যায়। কিন্তু এর পর থেকে নাকি এমন হয়ে গেছে। কি আজব! এমন আবার হয় নাকি! যাই হোক, রাফির অস্বাভাবিক ব্যবহার দেখে অনেক মহাজ্ঞানী মতামত দিয়েছেন তার জ্বীনের আসর লেগেছে! ফলাফল- "ফকির বাবা, হক্ মওলা" । অনেকে বলেছে পানি পড়া খাওয়াতে! বুকে-কোমড়ে-গলায় পড়েছে তাবিজের দোকান! এমন আরো কত অভিনবত্ব দেয়া হয়েছিলো তার চিকিৎসায়! কিন্তু সঠিক চিকিৎসাবিদ্যা কি প্রয়োগ করা হয় নি রাফির উপর? অবশ্যই হয়েছে। কিন্তু কয়দিন পরেই আবার ডাক্তার বাবুকে বিদায় জানিয়ে আবার ফকির বাবা জিন্দাবাদ! বর্তমান কালে কেউ একজন জ্ঞানী তত্ত্ব দিয়েছেন মুসলমানি(ছাত্র শুভ এর ভাষায়) করালে রাফি ভালো হয়ে যাবে! যেই কথা সেই কাজ। গিনিপিগের উপর হয়ে গেলো নতুন এক্সপেরিমেন্ট। অই বেচারা তো ব্যাথা পেলে কেঁদে কষ্টটা প্রকাশও করতে পারে না! খালি ভিন্ন ভিন্ন করুণ আওয়াজ করে। একটা লাল লুঙ্গি পড়ে পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকা শিশুটির কষ্ট বুঝানোর ক্ষমতাও নেই। জন্মই যেনো তার আজন্ম পাপ।

জ্বি। আমার অনেক কষ্ট লেগেছে। তাই তো এতো কিছু লিখছি। মনের এককোণে খেদ রয়ে গেছে। কিছুই করতে পারবো না তার জন্য। তাই।

তবে এতক্ষণ যা দেখেছেন তাতে রাফিকে খুব ভালো ছেলে ভাবলে ভুল করবেন। এহেন কোন কোণ নাই শুভদের ঘরে, যেখানে রাফি ধ্বংস যজ্ঞ চালায় নি। (#১ম_কমেন্টে রাফির ছবি পোস্ট করলাম)। পানির ফিল্টার থেকে শুরু করে ড্রেসিংটেবিল এর আয়না, যে কোন কিছুই সে ভেঙ্গে ফেলে সিরিয়াল কিলারদের মত ঠান্ডা মেজাজে। কিন্তু এখন বেচারা পা ছড়িয়ে শুয়ে থাকে। অস্থির যন্ত্রণায় কাতরে উঠে। এলিয়েনদের মত শব্দ করে। কিন্তু মুখে ব্যাথার কোন ছাপ নাই।

এটাই কি অটিজম? যেখানে আক্রান্তকে গিনিপিগ হতে হয়? যেখানে কষ্টকে প্রকাশের সুযোগ থাকে না! আগেই বলেছি, এটা নিয়ে তেমন কিছু জানা নেই। বসে গেলাম গুগল এ।

রাফির কথা বাদ দেন। একটা আশ্চর্যরকম সত্যের সঙ্গে পরিচয় হবেন? আসেন হই। চাইল্ড প্রডিজিটি সম্বন্ধে কি জানেন? কিছু বাচ্চাকে সায়েন্সের ভাষায় "স্পেশাল ব্রেন্ড চাইল্ড" অথবা "মেন্টালি এনাবেল্ড চাইল্ড" বলে। এর অর্থ বুঝাতে গেলে বলতে হবে এমন শিশু, যে অল্প বয়স থেকে অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করে। যেমন ধরুন একটি ৭ বছরের বাচ্চা একজন মহিলার সিজার করালো! কি? চমকে গেছেন? আমিও চমকে গেছিলাম। সে সময়ে তো আমি ক্রিকেট ব্যাটই ভালো করে ধরতে পারতাম না! একটা ৭ বছরের বাচ্চা অন্তসত্বা মহিলার সিজার অপারেশন সফলতার সাথে করেছে।

[[ভারতের আকৃত জসওয়াল কে যখন কেজি স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছিল , কেউ তার সাথে মিশতে চাইতোনা।কেউ বলতো পাগল। অনেকে বলত ভুত জ্বীন ধরেছে। আকৃত নিজ মনে কিসব যেন বির বির করতো রাফির মত।

সাইকোলজিস্টের কাছে আকৃত কে নিয়ে গেলে ঘটে অবাক করা ঘটনা।
সাইকোলজিস্ট আকৃতের বির বির করে বলা কথার রেকর্ড করে সাউণ্ড বাড়িয়ে অবাক হয়ে শুনেন, আকৃত যা যা বলছে সব মেডিকেলের বই এর লাইন, মেডিকেল টার্মস। একটা ৫ বছরের বাচ্চা এনাটমিক্যাল টার্মস হুবুহু বলে যাচ্ছে,ভাবা যায়। সাইকোলজিস্ট বুঝে গেলেন এই ছেলের মধ্যে কিছু একটা আছে। খোজ নিয়ে দেখলেন আকৃতের বোন মেডিকেলে পড়ে, আকৃত এ বয়সে বোনের বই মুখস্ত করে ফেলেছে।

সে আকৃত ৭ বছর বয়সে সিজার করাল এক মহিলার। এক বাচ্চা আরেক বাচ্চাকে পৃথিবীতে আনছে। যে আকৃত কে তার ক্লাসমেটরা পাগল ভাবত।

কোরিয়ার কিম আং ইউঙ্গের গল্পটা আরো অবাক করা। কিম মাত্র ৩ বছর বয়সে ক্যালকুলাস করা শুরু করে। ৪ বছর বয়সে কিম এক আইকিউ টেস্টে অংশ নেয় এবং তার আইকিউ আসে ২২০। আইনস্টাইনের ছিল ১৬০। ৫ বছর বয়সে কিম ইউনিভার্সিটি কোর্স করা শুরু করে। এবার আসি আসল সারপ্রাইজে

কিমের যখন ৮ বছর বয়স তখন NASA কিম কে তাদের একটা প্রজেক্টে কাজ করার আমন্ত্রন জানায়। ৮ বছর বয়সে আমরা যখন কার্টুন দেখি কিম তখন নাসায় চাকরি করে। গিনেজ বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে কিম সর্বকালের সর্বসেরা আইকিউওয়ালাদের মধ্যে ৪ নাম্বার স্থান দখল করে আছে। ২১০ আইকিউ নিয়ে।]]

উপরের ব্রেকেডে দেয়া তথ্য গুলো পড়েছেন? এগুলো আমি যখন জানতে পারি, আমার অটিজম সম্বন্ধে আইডিয়াটাই পাল্টে যায়।
একটা উদাহরণ লক্ষ্য করুণ। ধরুণ সচিন টেন্ডুলকারকে যদি ক্রিকেট শিখতে না দিয়ে, আর্ট কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়া হত, সে কি লিওনার্দো বা পিকাসো হতে পারতো? যার জন্য যা, তাকে তার জন্য তেমন ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আপনার স্বাভাবিক ছেলেটা ৫বছর বয়সে ভালো কেজি স্কুলে পড়েছে। তাই বলে এই ছেলেটিও কি মানিয়ে নিতে পারবে! ওর জন্য আলাদা স্কুল আছে। ওর যত্ন আলাদা। আপনি মাছকে পানিতে রাখলেই বাঁচবে, পাখিকে উড়তে দিলেই সঠিক বিকাশটি হবে।

শুধু রাফি না, যে কোন অটিজম আক্রান্ত বাচ্চার প্রতি আপনার দয়ার দরকার নেই। আপনার স্বাভাবিক ছেলেকে যেমনি পথ দেখিয়েছেন, তেমনি এই বাচ্চাটিকে এর নিজের মত একটা রাস্তা তৈরির সুযোগ করিয়ে দেন। মা বাবার যেট্টুক দায়িত্ব শুধু তা করলেই চলবে। একটা ভুল ভাঙিয়ে দিই-
"অটিজম কোন রোগ না, এসব বাচ্চারা শুধু একটু আলাদা।"

"পৃথিবীতে সে ই শ্রেষ্ঠত্ব পেয়েছে যে সবার থেকে আলাদা।"

তোমরা এগিয়ে যাও। জয় কর প্রতিবন্ধকতাকে।






---------///অভিষেক অভ্র//---------

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অনেক কিছূ জানা হলো!!!!!


+++

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো ।

শুভকামনা :)

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩০

জীবন্ত জীবাশ্ম অভ্র বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.