নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন কলম যোদ্ধা নারী মালালা ইউসুফজাই

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮


আমাদের ভুলে যাওয়ার কথা নয় খুব বেশিদিন আগের কথা না ।মালালা ইউসুফজাই একজন পাকিস্তানি শিক্ষা আন্দোলনকর্মী । তিনি সবচেয়ে কম বয়সে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি উত্তর ও পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত উপত্যকা অঞ্চলে শিক্ষা এবং নারী অধিকারের ওপর আন্দোলনের জন্য অতি পরিচিত একজন নারী এই মালালা । যেখানে স্থানীয় তালিবান মেয়েদের বিদ্যালয় শিক্ষালাভের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। তার পরিবার সেই স্থানে অনেকগুলি বিদ্যালয় পরিচালনা করে থাকেন।২০০৯ সালে মালালা বিবিসির জন্য ছদ্মনামে একটি ব্লগ লেখেন যেখানে তিনি তালিবান শাসনের অধীনে তার জীবন ও সোয়াত উপত্যকায় মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে তার মতামত ব্যক্ত করেন। পরের বছর গ্রীষ্মকালে সাংবাদিক অ্যাডান এলিক তার জীবন নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের জন্য একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করেন।তারপর মালালা সংবাদমাধ্যম এবং টেলিভিশনে সাক্ষাৎকার দিতে থাকেন ও দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনকর্মী ডেসমন্ড টুটু দ্বাএয়া আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।

২০১২ সালে ৯ই অক্টোবর স্কুলের বাসে একজন বন্দুকধারী তাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি করে যার মধ্যে একটি তার কপালের বা দিক দিয়ে ঢুকে চামড়ার তলা দিয়ে তার মুখমণ্ডলের মধ্যে দিয়ে কাঁধে প্রবেশ করে। পরবর্তী বেশ কয়েকদিন তিনি অচৈতন্য ছিলেন এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল কিন্তু ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হলে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য বার্মিংহ্যাম শহরের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন।ডয়েশ্‌ ওয়েল ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে তাকে বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত কিশোরী বলে মনে করে। জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষাকার্যক্রমের বিশেষ দূত গর্ডন ব্রাউন ইউসুফজাইয়ের নামে জাতিসংঘের একটি আবেদনে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের শেষে বিশ্বের সকল শিশুকে বিদ্যালয়মুখী করার দাবী করেন যা পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষার অধিকার বিলের আনুষ্ঠানিক সমর্থনের পক্ষে সহায়ক হয়। ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে টাইম পত্রিকা ইউসুফজাইকে বিশ্বের ১০০জন সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের একজন বলে গণ্য করেন। তিনি ২০১১১সালে পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার এবং ২০১৩ সালে শাখারভ পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৩ সালের জুলাই মাসে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন এবং অক্টোবর মাসে কানাডা সরকার তাকে সাম্মানিক কানাডীয় নাগরিকত্ব প্রদান করার কথা ঘোষণা করে।২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তাকে সুইডেনের বিশ্ব শিশু পুরস্কারের জন্য মনোনীত করা হয়। ২০১৪ সালের মে মাসে হ্যালিফ্যাক্সে ইউনিভার্সিটি অব কিং'স কলেজ তাকে সাম্মানিক ডক্টরেট প্রদান করেন।সেই বছরের শেষের দিকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য কৈলাশ সত্যার্থীর সঙ্গে যুগ্মভাবে মালালার নাম ঘোষণা করা হয়। মাত্র সতেরো বছর বয়সে তিনি ছিলেন বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব। ২০১৫ সালে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাছাইকৃত তথ্যচিত্র হি নেমড মি মালালা তার জীবন নিয়ে তৈরি হয়।

মালালা ইউসুফজাই ১৯৯৭ সালের ১২ই জুলাই উত্তর পশ্চিম পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের সোয়াত জেলায় পাশতুন জনজাতির অন্তর্ভুক্ত এক সুন্নি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।দক্ষিণ আফগানিস্তানের বিখ্যাত মহিলা পাশতু কবি এবং যোদ্ধা মালালাই এ ম্যায়ওয়ান্দের নামানুসারে তার নামকরণ করা হয় মালালা যার আক্ষরিক অর্থ দুঃখে অভিভূত। ইউসুফজাই পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকার অধিবাসী পাশতুন জাতিগোষ্ঠী বিশেষ। মিঙ্গোরা নামক স্থানে মালালা তার পিতা জিয়াউদ্দিন, মাতা তোর পেকাই এবং দুই কনিষ্ঠ ভ্রাতার সঙ্গে বসবাস করতেন।জিয়াউদ্দিন একজন শিক্ষা আন্দোলনকর্মী এবং কবি, তিনি খুশহাল পাবলিক স্কুল নামক বেশ কয়েকটি বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতাএবং ইংরেজি, উর্দু ও পাশতু ভাষাতে দক্ষ মালালা তার নিকট হতেই শিক্ষালাভ করেন। একটি সাক্ষাতকারে তিনি জানান যে তার চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে থাকলেও তার পিতা তাকে রাজনৈতিক জীবন বেছে নিতে উৎসাহত করেন।রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়ার পর জিয়াউদ্দিন মেয়ের সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা করতেন।মালালা ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে থেকে শিক্ষার অধিকার নিয়ে সরব হতে শুরু করেন যখন তার পিতা তাকে পেশাওয়ার প্রেস ক্লাবে একতি বক্তব্য রাখতে নিয়ে যান যা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও টেলিভেশন চ্যানেলে উপস্থাপিত হয়। ২০০৯সালে মালালা ইনস্টিটিউট ফর ওয়ার অ্যান্ড পিস রিপোর্টিং প্রতিষ্ঠানের মুক্তচিন্তা পাকিস্তান যুব প্রকল্পে একজন শিক্ষানবিস এবং পরে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে কিছুকাল কাল করেন যা সাংবাদিকতা ও তর্ক-বিতর্ক অ আলোচনার মাধ্যম তরুণ সমাজের মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ের ওপর গঠনমূলক আলোচনা করতে উৎসাহিত করত।

২০০৮সালের শেষের দিকে বিবিসি উর্দু ওয়েবসাইটের তরফ থেকে আমের আহমেদ খান ও তার সহকর্মীরা সোয়াত অঞ্চলে তালিবানদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্বন্ধে জানার জন্য সেখানকার স্থানীয় কোন মেয়েকে তার জীবন সম্বন্ধে ব্লগ লেখার অনুরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সময় তেহরীক-ই-নফাজ-ই-শরিয়ত-ই-মোহম্মদি নামক স্থানীয় তালিবান সংগঠনের নেতা মৌলানা ফজলুল্লাহর নেতৃত্বে তালিবানরা সোয়াত উপত্যকায় প্রভাব বিস্তার শুরু করে টেলিভিশন, সঙ্গীত, মেয়েদের শিক্ষা ও মহিলাদের কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পুলিশদের মস্তকচ্যূত দেহ শহরে প্রকাশ্যে ঝোলানো থাকত।পেশাওয়ার শহরে আব্দুল হাই ককর নামক তাদের স্থানীয় সংবাদদাতার সঙ্গে স্থানীয় শিক্ষক জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাইয়ের যোগাযোগ ছিল কিন্তু তারা এই কাজের জন্য কোন ছাত্রীকে খুজে পাননি কারণ পরিবারের নিকট এই কাজ ছিল যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। অবশেষে জিয়াউদ্দিন তার নিজের মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ১১ বছরের মালালাকেই এই কাজের জন্য বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিলে বিবিসি সম্পাদকরা সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করেন।মালালার নিরাপত্তার জন্য বিবিসির সম্পাদকরা তাকে ব্লগে ছদ্মনাম ব্যবহার করতে বললে মালালা পাশতুন রূপকথার একটি চরিত্রের নাম অনুসারে গুল মকাই ছদ্মনামে লেখেন। ২০০৯ সালের ৩রা জানুয়ারি বিবিসি উর্দু ব্লগে মালালার লেখা প্রথম প্রকাশিত হয়। হাতে লেখা এই সমস্ত রচনাগুলি তিনি একজন সাংবাদিককে দিতেন যিনি সেগুলিকে স্ক্যান করে বিবিসিকে ই মেইল করে দিতেন।এই রচনাগুলিতে প্রথম সোয়াত যুদ্ধের সময় সামরিক অভিযানের কারণে বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রীদের সংখ্যা কমে যাওয়া ও বিদ্যালয়গুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তার চিন্তা ভাবনা লিখিত হয়। ২০০৯ সালের ১৫ই জানুয়ারির পরে কোন ছাত্রী বিদ্যালয়ে যেতে পারবে না এই মর্মে তালিবানরা ফতোয়া জারি করে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট শতাধিক স্কুল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নষ্ট করে দেয়।১৫ তারিখ ব্লগের লেখাটির কিয়দংশ নিয়ে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়।নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পর তালিবানরা আরো বহু বিদ্যালয় ধ্বংস করে দেয়।সে সময় মালালা তার বার্ষিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়েদের বিদ্যালয়গুলি বন্ধ ছিল। ছেলেদের বিদ্যালয়গুলিও এই ঘটনার প্রতিবাদে ৯ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের বিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ৯ তারিখের পরে তালিবানরা মেয়েদের প্রাথমিক সহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেয় কিন্তু শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য বিদ্যালয়গুলি বন্ধ থাকে। ১৫ই ফেব্রুয়ারি সরকারের সঙ্গে তালিবানদের শান্তি চুক্তি হয় এবং ১৮ তারিখ মালালা ক্যাপিটেল টক নামক একটি জাতীয় সম্প্রচার অনুষ্ঠানে তালিবানদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন। তিন দিন পরে মৌলানা ফজলুল্লাহ নারিশিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দেন এবং ১৭ই মার্চ পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত মেয়েদের বোর্খা পরে বিদ্যালয়ে যাওয়ার অনুমতি দেন। ১২ই মার্চ মালালা বিবিসির জন্য শেষ বারের মত ব্লগ লেখেন।

প্রথমদিকের আন্দোলন
মে মাসে পাকিস্তান সেনাবাহিনী দ্বিতীয় সোয়াত যুদ্ধ চলাকালীন মিঙ্গোরা প্রবেশ করে সে সময় শহর খালি করে দেয়া হয় যার ফলে ইউসুফজাই পরিবার গৃহচ্যুত এবং বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। জিয়াউদ্দিন পেশাওয়ার চলে যান এবং মালালা তার আত্মীয়দের নিকট গ্রামে চলে যান। সে সময় একটি সাংবাদিক সম্মেলনে উগ্রপন্থিদের সমালোচনা করার জন্য জিয়াউদ্দিনকে একজন তালিবান রেডিও মারফত প্রাণনাশের হুমকি দেন। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত মালালা সে সময় চিকিৎসক না হয়ে একজন রাজনীতিবিদ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। জুলাই মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তালিবানদের শহর থেকে হঠিয়ে দিতে সক্ষম হলে প্রধানমন্ত্রী সোয়াত উপত্যকায় ফিরে যাওয়া নিরাপদ বলে ঘোষণা করেন ও ২৪শে জুলাই ইউসুফজাই পরিবার আবার একত্রিত হন। সে সময় তারা তৃণমূল পর্যায়ের আন্দোলনকর্মীদের সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বিশেষ মুখপাত্র রিচার্ড হলব্রুকের সঙ্গে সাক্ষাত করেন যেখানে মালালা তাকে এই পরিস্থিতিতে সাহায্য করার অনুরোধ করেন।বিবিসির জন্য লেখা শেষ হওয়ার পর নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক অ্যাডাম এলিক একটি তথ্যচিত্র বানানোর উদ্দেশ্যে মালালা এবং তার পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই তথ্যচিত্র বানানো হয়ে গেলে মালালা জাতীয় পাশতু সংবাদমাধ্যম এভিটি খাইবার ও উর্দু সংবাদমাধ্যম ডেইল আজ এবং কানাডার টরন্টো স্টারে সাক্ষাতকার দেন। ২০০৯ সালের ১৯শে আগস্ট তিনি ক্যাপিটেল টক অনুষ্ঠানে দ্বিতীয়বার অংশ নেন। এই বছর ডিসেম্বর মাসে বিবিসি ব্লগের লেখিকার আসল পরিচয় হিসেবে তার নাম জানা যায়। এই সময় তিনি নারীশিক্ষার জন্য সর্বসমক্ষে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে শুরু করে দেন।২০১১ সালের অক্টোবর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার আন্দোলনকর্মী ডেসমন্ড টুটু আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারের জন্য মালালার নাম মনোনীত করেন। তিনি প্রথম পাকিস্তানী হিসেবে এই পুরস্কারের জন্য মনোনীত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মিশেল মাইক্রফট এই পুরস্কার লাভ করেন। দুই মাস পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি তাকে প্রথম জাতীয় যুব শান্তি পুরস্কার প্রদান করেন। মালালা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত না হলেও শিক্ষা প্রসারের উদ্দেশ্যে তার দ্বারা কোন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে সে সময় গিলানি আশা প্রকাশ করেন। মালালার অনুরোধে গিলানি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সোয়াত ডিগ্রি কলেজ ফর উইমেন প্রতিষ্ঠানে একটি তথ্যপ্রযুক্তি কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দেন। একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মালালার নামে নামাঙ্কিত করা হয়। ২০১২ সালে তিনি মালালা এডুকেশ ফাউন্ডেশন তৈরি করে দরিদ্র মেয়েদের বিদ্যালয়মুখী করার প্রচেষ্টা শুরু করেন।

মালালাকে হত্যা প্রচেষ্টা
মালালা ধীরে ধীরে বিখ্যাত হতে শুরু হলে তার বিপদও বাড়তে শুরু করে। সংবাদপত্রে প্রকাশ করে বাড়িতে ও ফেসবুকে মৃত্যুর হুমকি দেয়া শুরু হয়। ২০১২ সালের গ্রীষ্মকালে তালিবান নেতারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১২ সালের ৯ই অক্টোবর মালালা পরীক্ষা দিয়ে বাসে বাড়ি ফেরার সময় একজন তালিবান বন্দুকধারী সেই বাসে উঠে পড়েন। সেই বন্দুকধারী বাসে উঠে মালালা কে তা জানতে চেয়ে বাসের সকল যাত্রীকে মেরে ফেলার হুমকি দেন এবং অবশেষে মালালাকে চিহ্নিত করে তিনটি গুলি ছোঁড়েন, যার মধ্যে একটি তার কপালের বা দিক দিয়ে ঢুকে মুখুমণ্ডল এবং গলা দিয়ে কাঁধে পৌঁছয়। সে ঘটনায় কায়নাত রিয়াজ ও শাজিয়া রমজান নামক আরো দুই মেয়ে আহত হন।

মালালার চিকিৎসা
মালালাকে পেশাওয়ার শহরের একটি সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে চিকিৎসকরা তার ওপর অস্ত্রোপচার করেন। পাঁচ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা তার কাঁধ থেকে গুলিটিকে বের করে আনতে সক্ষম হন। গুলির প্রভাবে মস্তিষ্কের কিছুটা অংশ ফুলে উঠেছিল বলে পরদিন পুনরায় ডিকম্প্রেসিভ ক্রেনিয়েক্টমি নামক অস্ত্রোপচার করে তারা মালালার খুলির কিছুটা অংশ অপসারণ করতে বাধ্য হন। ১১ই অক্টোবর পাকিস্তানি এবং ব্রিটিশ চিকিৎসকের একটি দল তাকে রাওয়ালপিণ্ডি শহরের আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওলজি প্রতিষ্ঠানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। গৃহমন্ত্রী রেহমান মালিক আশ্বাস দেন যে মালালাকে সরকারি খরচে চিকিৎসক দলের তত্ত্বাবধানে জার্মানিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হবে।১৩ই অক্টোবর মালালার ঘুমের ওষুধের মাত্রা কমানো হয় এবং এই দিন তিনি তার হাত পা নাড়াতে সক্ষম হন।সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মালালার চিকিৎসার জন্য প্রস্তাব আসতে থাকে।১৫ই অক্টোবর চিকিৎসক এবং পরিবারের সম্মতিতে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্পূর্ণ সরকারি খরচে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহ্যাম শহরের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।২০১২ সালের ১৭ই অক্টোবর চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে মালালা চেতনা ফিরে পান এবং পরবর্তী কয়েকদিন সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই চললেও তার অবস্থা ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে ওঠে এবং ৮ই নভেম্বর তিনি বিছানায় উঠে বসতে সক্ষম হন। ২০১৩ সালের ৩রা জানুয়ারি তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং ওয়েস্ট মিডল্যান্ডস অঞ্চলে তার পরিবারের সাময়িক বাসস্থানে তার পরবর্তী চিকিৎসা চলে।২রা ফেব্রুয়ারি তার খুলির অংশ পুনর্গঠনের জন্য এবং ককলিয়ার ইমপ্লান্ট বসিয়ে শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয় ।

প্রতিক্রিয়া
তেহরিক-ই-তালিবান নামক সংগঠনের মুখপাত্র এহসানুল্লাহ এহসান এই ঘটনার দায় স্বীকার করতে গিয়ে বলেন যে বিধর্মী এবং অশ্লীলতার প্রতীক মালালা যদি এই ঘটনা থেকে বেচে ওঠেন তবে তারা আবার তাকে আক্রমণ করবেন। এই আক্রমণের পেছনে তালিবানরা যুক্তি দেন যে তারা জিয়াউদ্দিনকে নিজ কন্যাকে তাদের বিরুদ্ধে কথা না বলার জন্য বারবার সাবধান করলেও তিনি তা শোনেননি এবং সেই কারণে এই আক্রমণ করতে তারা বাধ্য হন। তারা আরো যুক্তি দেন যে কুরআনে উল্লিখিত রয়েছে যে ইসলামের বিরুদ্ধে যারা মতপ্রকাশ করবেন তাদের হত্যা করা উচিত এবং তাদের মতে শরিয়ত অনুসারে শিশুদেরকেও একই কারণে হত্যা করার বিধান দেওয়া রয়েছে।২০১২ সালের ১২ই অক্টোবর পাকিস্তানের ৫০জন মুসলিম মৌলবী মালালাকে আক্রমণকারী বন্দুকধারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেন। সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের ইসলামী পণ্ডিতরা সর্বসমক্ষে পাকিস্তানি তালিবানদের আক্রমণের পেছনে যুক্তিপ্রদর্শনকে ধিক্কার জানান। যদিও সমগ্র পাকিস্তান জুড়ে এই আক্রমণের নিন্দা করা হয় তবুও কয়েকটি পাকিস্তানি উগ্র রাজনৈতিক দল ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করতে শুরু করে। তারা বলতে শুরু করেন যে মালালার ওপর এই আক্রমণ মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি দ্বারা পরিচালিত হয় যাতে আমেরিকা পাকিস্তানের ওপর ড্রোন আক্রমণ বজায় রাখার ছুতো পায়। তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তান এবং অন্যান্য তালিবানপন্থী সংগঠন মালালাকে মার্কিন গুপ্তচর রূপে প্রচার করে।সেই হত্যা প্রচেষ্টা সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং জনসাধারণের মধ্যে মালালার জন্য সহমর্মিতা এবং তালিবানদের বিরুদ্ধে ক্রোধের সঞ্চার ঘটে। আক্রমণের পরের দিন পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কুড়ি লক্ষাধিক মানুষ পাকিস্তানে শিক্ষার অধিকারের পক্ষে স্বাক্ষর করেন যার ফলে পাকিস্তানের প্রথম শিক্ষার অধিকার বিল আইন হিসেবে স্বীকৃত হয়। পাকিস্তানি আধিকারিকরা আক্রমণকারীদের তথ্য পেতে ও চিহ্নিত করতে এক কোটি টাকা ঘোষণা করেন। জিয়াউদ্দিন এই নিরাপত্তাহীনতা এবং সংকটের মধ্যেও দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে অস্বীকৃত হন।পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি এই আক্রমণকে সভ্য মানুষের ওপর আক্রমণ বলে বর্ণনা করেন। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এই ঘটনাকে একটি জঘন্য এবং কাপুরুষোচিত পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা এই ঘটনাকে ঘৃণ্য ও দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেন ও রাষ্ট্রসচিব হিলারি ক্লিন্টন বলেন যে ইউসুফজাই সাহসিকতার সাথে মেয়েদের অধিকারের জন্য লড়াই করায় তালিবানরা তার ক্ষমতায় আশঙ্কিত হয়ে তাকে আক্রমণ করেন। ব্রিটিশ বিদেশসচিব উইলিয়াম হেগ এই ঘটনাকে বর্বরোচিত বলে উল্লেখ করেন যা পাকিস্তান ও সমগ্র বিশ্বকে স্তম্ভিত করেছে।
আক্রমণের দিন লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠানে মার্কিন গায়িকা ম্যাডোনা হিউম্যান নেচার নামক তার গানটি মালালাকে উৎসর্গ করেন।এবং নিজের পিঠে মালালার চিত্র সংবলিত একটি ট্যাটু অঙ্কন করেন। মার্কিন অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি এই ঘটনা সম্বন্ধে একতি নিবন্ধ লেখেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন ফার্স্ট লেডি লরা বুশ দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় একটি নিবন্ধে মালালাকে অ্যানা ফ্র্যাংকের সঙ্গে তুলনা করেন। ভারতীয় পরিচালক আমজাদ খান মালালার ওপর একটি জীবনীমূলক চলচ্চিত্র তৈরি করার কথা ঘোষণা করেন।

এর পর জাতিসংঘের প্রস্তাব
২০১২ সালের ১৫ই অক্টোবর জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষার বিশেষ দূত তথা প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন হাসপাতালে মালালার সাথে দেখা করেন এবং আমি মালালা স্লোগান ব্যবহার করে শিশু শিক্ষার ওপর একটি প্রস্তাব রাখেন। সেই প্রস্তাবের দাবি ছিল যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বিশ্বের ৬ কোটি ১০ লক্ষ শিশুকে ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের শেষে বিদ্যালয়মুখী হয়। সেই প্রস্তাবে পাকিস্তান সরকারের কাছে সকল শিশুকে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার এবং বিশ্বের সকল দেশে মেয়েদের প্রতি বৈষম্যকে অপরাধ বলে ঘোষণা করার আবেদন করা হয় ।

বিচার বিভাগ
মালালার ওপর আক্রমণের পরের দিন পাকিস্তানের গৃহমন্ত্রী রেহমান মালিক ঘোষণা করেন যে আক্রমণকারী চিহ্নিত হয়েছে।পুলিশ বন্দুকধারী হিসেবে রসায়নের স্নাতক স্তরের ছার আত্তাউল্লাহ খানের নাম করেন।তারা এই আক্রমণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন কিন্তু প্রমাণাভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যান।২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস ডিরেক্টর মেজর জেনারেল আসিম বাজোয়া ইসলামাবাদ শহরে সাংবাদিকদের বলেন যে ইস্রারুর রহমান নামক একজন উগ্রপন্থীকে প্রথমে চিহ্নিত করে তার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মালালার ওপর আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত উগ্রপন্থীদের সেনা পুলিশ এবং গুপ্তচর সংস্থার যৌথ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বিভাগের বিচারপতি মোহম্মদ আমিন কুন্দি সেই দশজনকে আজীবন কারাবাসের নির্দেশ দেন। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সেই দশজনের মধ্যে আটজনকে গোপণে ছেড়ে দেয়া হয়।

জাতিসংঘে বক্তৃতা
গর্ডন ব্রাউনের হস্তক্ষেপে ২০১৩ সালএর ১২ই জুলাই মাসে মালালা সারা বিশ্বের পাঁচশ জন শিক্ষা আন্দোলনকর্মীর সামনে জাতিসংঘে ভাষণ দেন এবং বিশ্বের সকলের জন্য শিক্ষার জন্য আবেদন করেন। তার ওপর আক্রমণের পরে এই ছিল তার প্রথম বক্তৃতা। জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষার অংশ হিসেবে যুবসমাজ দ্বারা লিখিত শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত একটি সংকল্পপত্রও তিনি পাঠ করে শোনান। এই ঘটনাকে স্মরণ করতে জাতিসংঘ এই দিনকে মালালা দিবস বলে ঘোষণা করে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন এই মঞ্চে মালালাকে একজন বীরাঙ্গনা বলে বর্ণনা করেন
বারাক ওবামা, মিশেল ওবামা, ও তাঁদের কন্যা মালিয়ার সাথে ওভাল অফিসে মালালা, ১১ই অক্টোবর ২০১৩সেখানে মালালার যে বক্তব্য দেনঃ
সন্ত্রাসবাদীরা ভেবেছিল তারা আমার লক্ষ্য পরিবর্তন করে দেবে আর আমার আকাঙ্ক্ষাকে বন্ধ করে দেবে, কিন্তু আমার জীবনে কিছুই পাল্টায়নি এটুকু ছাড়া: দুর্বলতা, ভয় আর নিরাশা মরে গেছে। শক্তি, ক্ষমতা আর সাহসের জন্ম হয়েছে ... আমি কারোর বিরুদ্ধে নই, বা আমি এখানে তালিবান বা অন্য কোন সন্ত্রাসবাদী দলের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশ সম্বন্ধে বলতে আসিনি। আমি এখানে প্রতিটি শিশুর শিক্ষার অধিকারের পক্ষে বলতে এসেছি। আমি তালিবান এবং সকল সন্ত্রাসবাদী ও উগ্রপন্থীদের ছেলে মেয়েদের জন্য শিক্ষা চাই। ... আসুন আমরা অশিক্ষা, দারিদ্র্য ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একটি মহান সংগ্রাম শুরু করি, আমরা আমাদের বই আর আমাদের কলম তুলে নি, ওগুলোই সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। একটি শিশু, একজন শিক্ষক, একটি বই আর একটি কলম দুনিয়া বদলে দিতে পারে। শিক্ষাই একমাত্র সমাধান।উপরের লেখাটুকো ২০১৩ সালের র ১২ই জুলাই জাতিসংঘের ভাষণে মালালার বক্তব্যের কিয়দংশ
আন্তর্জাতিক কর্মকাণ্ড
২০১৩ সালের জুলাই মাসে মালালা বাকিংহাম প্রাসাদে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সঙ্গে সাক্ষাত করেন।সেপ্টেম্বরে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন । অক্টোবর মাসে মাসে তিনি রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সাথে সাক্ষাত করেন। এবং ডিসেম্বর মাসে তিনি অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বক্তৃতা দেন। ২০১৪ সালের জুলাই মাসে তিনি লন্ডন শহরে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে মেয়েদের অধিকার নিয়ে বক্তব্য রাখেন।২০১৪ সালে তিনি ওয়ার্ল্ড'স চিল্ড্রেন'স প্রাইজ ফর দ্য রাইটস অব দ্য চাইল্ড পুরস্কার লাভ করার পর প্যালেস্তেনীয় উদ্বাস্তুদের জন্য কর্মরত ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যাণ্ড ওয়ার্কস এজেন্সি প্রতিষ্ঠানকে গাজাতে ৬৫টি বিদ্যালয় তৈরি করার জন্য $৫০,০০০ দান করেন।শিক্ষাপ্রসারের উদ্দেশ্যে মালালা ফান্ড নামে একটি দাতব্য তহবিল খোলা হয়। গর্ডন ব্রাউনের অনুরোধে ম্যাককিনসে অ্যান্ড কোম্পানির উপদেষ্টা ও ইউসুফজাই পরিবারের সদস্য শিজা শাহিদ এই তহবিলের প্রধান দায়িত্ব নেন। গুগলের সহকারী অধিকর্তা মেগান স্মিথ এই তহবিল বোর্ডের সদস্য।অ্যাঞ্জেলিনা জোলি নারীশিক্ষার জন্য মালালা ফান্ডে $২০০,০০০ প্রদান করেন। ২০১৫সালের ১২ই জুলাই নিজের ১৮তম জন্মদিনে এই তহবিলের সাহায্যে মালালা সিরিয়ার ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী উদ্বাস্তু মহিলাদের জন্য লেবাননের বেকা উপত্যকায় একটি বিদ্যালয় ও কর্মশালা স্থাপন করেন। তিনি বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে গুলির বদলে বইয়ের ওপর জোর দিতে আবেদন করেন।

নোবেল শান্তি পুরস্কার
২০১৪ সালেরর ১০ই অক্টোবর শিশুদের প্রতি অবিচারের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার অধিকারের লড়াইয়ের জন্য মালালা ও ভারতীয় সমাজকর্মী কৈলাশ সত্যার্থীকে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করা হয়।মাত্র ১৭ বছরে মালালা এই পুরস্কারলাভের সময় বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ীর সম্মান লাভ করেন। ১৯৭৯সালে পদার্থবিজ্ঞানী আব্দুস সালামের পর তিনি দ্বিতীয় পাকিস্তানী নাগরিক যিনি এই পুরস্কার লাভ করেন।তার নোবেল জয় সম্বন্ধে বিভিন্ন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
২০১৪সালে ইগুয়ালা গণ অপহরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে মেক্সিকোর একজন নাগরিক এই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বাধা দিলেও নিরাপত্তারক্ষীরা তাকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যান। মালালা পরে এই ব্যক্তির প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:১৩

পবন সরকার বলেছেন: পোষ্টর জন্য ধন্যবাদ

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ পবন ভাই ।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩০

সাহসী সন্তান বলেছেন: মালালার ব্যাপারটাকে আমি কখনোই খাটো করে দেখি না! তবে মূলত তার এই বিপুল জনপ্রিয়তা এবং উত্তরনের অন্যতম মাধ্যম ছিল পশ্চিমা বিশ্ব! তারা মালালাকে সামনে বসিয়ে বিশ্বে একের পর এক বিভিন্ন নাটক রচনা করে চলেছে!

দেখেন নারী শিক্ষার জন্য যে শুধু মালালা বিশ্বের বুকে একাই লড়াই করেছে, এমন কিন্তু নয়! বেশি দূরে যাওয়া লাগবে না, আপনি আমাদের দেশেই তার ভরিভরি নমুনা পাবেন! বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল এরাকি কম লড়াই করেছে! বিশেষ করে একটা জঙ্গী সংগঠনের সাথে লড়াই করে জেতা, আর একটা রক্ষণশীল পরিবারের সাথে লড়াই করে জেতার মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য!

বিশেষ করে, এমন অনেকেই আছে যারা মনে করে মালালার ব্যাপারটা ছিল শ্রেফ একটা নাটক/অভিনয়! তাছাড়া তৎকালিন সময়ে সোয়াত উপত্তকার এক প্রাইভেট হাসপাতালের ইমতিয়াজ আলী খানজাই নামে একজন ডাক্তার মালালার এই ব্যাপারটা নিয়ে পাকিস্থানের আলোচিত পত্রিকা ডন-এ একটা স্বাক্ষাতকার প্রকাশ করেন, এবং তিনিই মালালার এই ব্যাপারটাকে একটা সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেন! কিন্তু অপরপক্ষে আমাদের বেগম রোকেয়ার ব্যাপারটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন, এবং একদম সত্য! অথচ তাকে কি মালালার মত এতটা সম্মান প্রদান করা হয়েছিল!

এছাড়াও মালালার ঐ এক্সিডেন্টের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় ঐ সোয়াত এলাকায় আরো একবার তালেবানরা হামলা চালায়! এবং সেই হামলায় 'নাবিলা' নামে একটা মেয়ে খুবই গুরুতর আহত হয়! এমনকি তার একটা চোখও নষ্ট হয়ে যায়! কিন্তু কই, তাকে নিয়ে তো পশ্চিমাদের কোন মাথা ব্যাথা দেখিনি? নাকি তার ব্যাপারটা ভিন্ন ছিল!

যাহোক তবে মালালার ব্যাপারে যতই ধোয়াশা থাকুক, কিছু কিছু ব্যাপারে তাকে বেশ ভাল লাগে! আর এটাই হলো মূল কথা!

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: যাহোক তবে মালালার ব্যাপারে যতই ধোয়াশা থাকুক, কিছু কিছু ব্যাপারে তাকে বেশ ভাল লাগে! আর এটাই হলো মূল কথা! হুম

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৩

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: আমার মনে হয় পরিবার মানুষের ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। পরিবার পারে সচেতন ভাবে শিশুর মধ্যে চেতনা, অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ঢুকিয়ে দিতে।

৪| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭

আব্দুল্লাহ্ আল আসিফ বলেছেন: @সাহসী সন্তান - রোকেয়া, সুফিয়ারা জন্মেছিল ভীন্ন সময়ে।

৫| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৪৫

সাহসী সন্তান বলেছেন: @ আব্দুল্লাহ আল আসিফ,
রোকেয়া, সুফিয়া ভিন্ন সময়ে জন্মালেও তাদের লড়াইটা কি মালালার থেকে ভিন্ন কিছু ছিল! বরং মালালার ব্যাপারে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করলেও তাদের ব্যাপারে কিন্তু কেউই কোন সন্দেহ প্রকাশ করে না? আর আমি সেটাই বুঝাতে চেয়েছি!

তাছাড়া আপনি 'মালালা' লিখে ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখেন, এমন হাজার হাজার লেখা পাবেন যার সবই তার বিপক্ষে! এবং উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষে! তাছাড়া বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই কিন্তু মনে করে মালালার ব্যাপারটা শুধু মাত্র পশ্চিমাদেরই একটা কারসাজি বই অন্যকিছু নয়!

তাছাড়া মালালার আগে/পরে এমন অনেকেই তো আছে, যারা নারী শিক্ষার জন্য কঠিন লড়াই এবং সংগ্রাম করে চলেছেন বা করছেন! কিন্তু কই, তাদের নামতো এতটা হাইলাইট হতে দেখিনি, যতটা মালালাকে করা হয়েছে! নাকি তারা কেউ পশ্চিমাদের তাবেদারি করতে পারেনি বলেই হয়নি?

৬| ২৯ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১২:২৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আলোচনা চলতে থাকুক । জুম্মার নামাজ পড়ে আসছি ।

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদেরকে মন্তব্য করার জন্য ।

৭| ৩০ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৮

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: অনেক তথ্য জানা হলো । ধন্যবাদ পোস্টের জন্য ।

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৩৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ঠ্যঠা মফিজ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.