![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#জানালার গ্রিল ধরে এক মনে দাড়িয়ে ছিল মিম। বাইরে অবশ্য দেখার কিছু ছিল না, কেননা সামনেই একটা ছয়তলা বাড়ি। তারপরেও বাইরে তাকায়ছিল কিছু করার ছিল না বলে। একটু দূরে মিমের ছোট ভাই পাড়ার ছেলের সাথে খেলছিল। মিমের ভাইয়ের নাম অবশ্য ওর নামের সাথেই মিল করে রাখা, মুহিত। কিন্তু একটা সমস্যা ছিল ওদের দুই ভাইবোনের মাঝে। ওরা ছিল সৎ ভাইবোন। মিমের মা মারা গেছে আজ থেকে ১৪ বছর আগে। তারপর ওর বাবা আবার বিয়ে করে। মিম অবশ্য ওর সৎ মাকে নিজের মার মতই ভালবাসত। কেননা সৎ মা এতটা ভাল হওয়া শুধু ভাগ্যের ব্যাপার বললে ভুল হবে বরং বলতে হবে রাজকপাল। মিমের বযস এখন প্রায় বিশের কাছাকাছি। এই বয়সের একটা মেয়ের জীবন কাটে সাধারণত ভার্সিটির পড়াশুনায় ব্যস্ত থাকা, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা-ফূর্তি করে বেড়ানো আর একটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে আগানোতে। কিনউত মিমের এই বিশ বছরের জীবনটা হয়ে ওঠেছিল একেবারে বিষময়। মিম থাকে ওর দাদা দাদী আর সৎ মা ভাইয়ের সাথে। বাবা বলতে ঠিক কি বুঝানো হয় তা মিম-মূহিত জানে না। মিমের বাবা ঢাকা শহরের বাস ড্রাইভার। অথচ মিমের চাচা রুয়েটে ফাইনাল ইযারে পড়াশুনা করে, ফুপু ঢাকা ভার্সিটির ফার্মেসির টিচার আর দাদা-দাদী ব্যাংকার। মিমের দাদার ঢাকা শহরে দুইটা বাড়ি ছিল। একটা ছয় তলা আর অন্যটা চার তলা। তাছাড়া গ্রামে জমি-জমা তো ছিলই। মিমের বাবা ছোটবেলা থেকেই ছিল খুব উদ্ভত প্রকৃতির। ক্লাশ সিক্স-সেভেনে থাকতেই একদম বখে যায়। সারাদিন উল্টাপাল্টা কাজ করত আর বাবা-মাকে একদমই শ্রদ্ধা করত না। আর তার ফল ভোগ এখন করছে মিম, মূহিত আর ওদের মা। মিমের দাদা ওদের তিনজনকে যে বাড়িতে থাকতে দিত সেটাই ছিল ওদের জন্য অনেক। মিমের সৎ মার কিছু জমি-জমা ছিল বলে ওদের কোনমতে দিন চলে যেত। মিম আর মুহিতের পড়াশুনার অনেক খরচই মিমের দাদী যোগান দিত। কিন্তু বেশ কযেক বচর ধরে মিমের পড়াশুনা বন্ধ। কেননা দূর্ভাগ্যবশত হোক আর সৌভাগ্য বশত হোক মিমের দাদার মা তখনও বেচে ছিল। আর তার দেখাশোনার ভার পড়েছিল মিমের ওপর। মেয়ে মানুষের তো বিয়েই হয়েই যাবে আর তাছাড়া মিমের জন্য তো খুব একটা ভাল পাত্রেরও দরকার নাই। অবশ্য মেয়ে মানুষের জন্য পড়াশুনা নয় এটা শুধু ছিল মিমের জন্য। সেজন্য মাঝে মধ্যে মিমের এক সময় মনে হত যে সে জিজ্ঞাসা করবে তার ফুপু ভার্সিটির টিচার কিভাবে হল। তবে এটা জিজ্ঞেস করলে যে কড়া একটা মাইর খেতে হবে তা মিম জানত। তাই আগ বাড়িয়ে মার খাওয়ার কি দরকার। বারান্দায় আরো কিছুক্ষণ মিম দাড়িয়ে থাকত কিন্তু দাদার ডাক পড়ে যাওয়ায় ভেতরে চলে গেল। মিমকে দেখেই ওর দাদা জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় ছিলি?’
- বারান্দায়।
-এইটা বারান্দায় থাকার সময়?
কিছু বলে না মিম, চুপচাপ দাঁড়ায় থাকে। ওর দাদা কারণে-অকারণে বকাঝকা করে এটা নতুন কিছু না। মিমের বাবা থাকলে তেমন একটা বকাঝকা করে না কিন্তু মিমের বাবা ছয় মাস যাবৎ্ লাপাত্তা এটা চিন্তার অবশ্য কিছু না। সে প্রায়ই এরকম ডুব মারে। মিমের হাতে একশ টাকার একটা নোট ধরায় দিয়ে ওর দাদা বলল এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসতে। এই কাজটা মিমের প্রচন্ড বিরক্ত লাগত কিন্তু করার কিছু ছিল না। দোকানদার অবশ্য কিছু মনে করত না। কেননা শুধু দোকানদার নয়, পাড়ার সবাই ওদের অবস্থা জানত।টাকা হাতে নিয়ে মিম বেরিয়ে পড়ে সিগারেট আনতে আর মনে মনে ভাবে বুড়া হয়েও সিগারেট ছাড়ে না কেন।
#বাড়িতে মিমের ফুপু পা দিতেই একটা ছোট খাট সোরগোল পড়ে যায়। অবশ্য সেটা মিম আর ওর ফুপুর মধ্যে। ফুপুর বিয়ে হয়েছে প্রায় দশ বছর ধরে কিন্তু বছর দুই ধরে এই বাড়িতেই আছে। ফুপুর এক তাক্ল, এক মেয়ে। দুইজনেই ছোট। ফুপু যখন ভার্সিটিতে ক্লাশ নিতে যায় তখন ওদের দেকাশুনাটা মিমই করে। বাচ্চা দুটাই ছির চূড়ান্ত রকমের বিচ্ছু। একটা ভীষণ পাজি হওয়ার পরও ছোট থাকতেই আরেকটি বিচ্ছু কেন যে পয়দা করল তা মিম ভাবে, বাড়ির সব কিছু ছেলেমেয়ে দুইটা এলোমেলো করে রাখে। বাসায় যদি এলোমেলো হয়েই থাকে তবে সেটা মিমের দোষ। একদিন ছেলেটা কিভাবে কিভাবে যেন ফ্রিজের ওপর বসেছিল। সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর যখন মিম দিশেহারা হয়ে পড়েছিল তখন দাদার ধমকে তাকায় দেখে প্রিজের ওপর বসে আছে এভাবে সারাদিন অতিষ্ট থাকার পর যখন ফুপু ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরে আবার বিকালে বের হয় তখন মিমের অসহ্য লাগে কিন্তু কিছু করার থাকে না। আজও মিমের ফুপু বাড়ি এসেই শপিং এর জন্য বের হয়ে যায়। ফুপু চলে যেতেই বাড়ি এলোমেলো করা শুরু করে দেয়। ছেলেটা দৌড়ে গেল একদিকে আর মেয়েটা অন্য দিকে। প্রথমে মিম গেল ছলেটাকে ধরতে। ছেলেটাকে ধরার পরই অন্য রুম থেকে আবার মেয়েটার চিৎকার শুনতে পেল। ওই সবে যেয়ে দেখে মেয়েটা পায়ের ওপর ভারী ফুলদানী ফেলে দিয়েছে আর অঝোরে কাঁদছে। ফুপু আসার আগে যদি কান্না না থামায় তাহলে মিমের খবর আছে। তাই বরফ পানি যা ছিল সবকিছু দিয়ে পা ডলাডলি শুরু করল। কিন্তু তারপরেও রক্ষা পেল না। ফুপু আসতে আসতে কান্না থামায় দিয়েছিল কিন্তু পা লাল দেখে ফুপু মিমকে ডাক দেয়। একগাদা বকাঝকা করার পর মিমকে বিদায় দেয়। তাৎক্ষনিক ঘটনাটা দেখলে ফুপুর হাতে একটা কড়া মাইর খেত অবশ্য। চড়-থাপ্পর খেয়ে মিমের অভ্যাস হয়ে গেছে। তারপরেও প্রতিবার থাপ্পর খাওয়ার পর কেমন জানি একটা ব্যাথা অনুভূত হয। ‘মিম’ দাদির ডাকে পিছনে ঘুরে তাকালে মিম। ‘তোর খুব মন খারাপ, তাই না?’ -‘না, অভ্যাস হয়ে গেছে,’ হাসতে হাসতে বলে মিম। দাদী আর কিছু বলে না। পরদিন মিমকে নিয়ে ওর দাদী বাইরে ঘুরতে বের হয়। নানা জায়গায় ঘোরার পর একটা ফাস্টফুডে খাওয়ার পর মিমকে একটা নতুন জামা কিনে দেয় দাদী। বাড়িতে বকাঝকা খাওয়ার জন্য মিমকে এরকম ঘুষ প্রায়ই দাদী দেয়।
#সকাল বেলা থেকেই মিমের মনটা ভীষণ খারাপ। নিচে মিমের দাদা মুহিত আর মুহিতের মার সাথে কেন জানি এক করছিল। অবশ্য মিমের মন সেজন্য খারাপ নয। গতকাল মিমের দাদী যে জামাটা কিনে দিয়েছিল সেটা ছাদ থেকে চুরি হয়ে গেছে। দাদীকে এ কথা বলার সময় মিমের ফুপুও একথা শুনে নেয় মিমের ফুপু ওল্টা মিমের ওপর রেগে গিয়ে দাদীকে বলে ‘দেখো গিয়ে, ওই নিজেই কি করেছে।’ হ্যাঁ, চোরের রক্ত যে আমার গায়ে আছে আর চোরদের বংশধর তো আমি। মনে মনে একথা ভাবলেও চুপচাপ নিচে চলে আসে মিম। ফুপুর বকবকানী শুনতে সাত সকালে ভাল লাগছিল না। এতক্ষণে মিম বুঝতে পারে মিমের দাদার সাথে মুহিতের টক্করের কারণটা কি? মুহিতকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে চায় ওর দাদা। কিèুত মুহিত বা মুহিতের মা কেউই রাজী নয়। মুহিত এখন ঢাকা ল্যাবরেটরীর সপ্ম শ্রেণীর ছাত্র। সে এখনস মাদ্রাসায় যেতে চায় না। কিন্তু মিমের দাদা নাছোড় বান্দা। এর মধ্যে মিম চলে আসায় আরও মেজাজ খারাপ হয়ে যায় মিমের দাদার। কেননা, মিম বয়সে ছোট হলেও এমন সব যুক্তি দেয় যে তর্কে পারা যায় না আবার মিমের কাছে হার মানতে হবে এটাই বা কেমন কথা। মিম ওর দাদাকে বোঝায় যে মুহিত এখন আর মাদ্রাসার পরিবেশের সাথে খাপ খাওযাতে পারবে না। মুহিতকে যেহেতু ছোট বেলায় মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়নি তাহলে এখন আর ভর্তি করানো ঠিক হবে না। ও যদি স্কুল ছেড়ে মাদ্রাসার সাথে খাপ খাওয়াতে না পারে স্কুল ছাড়ার পর তাহলে আম-ছালা সবই যাবে। তাছাড়া ফুপু চাচা কেউই তো মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে নাই। তাহলে মুহিত কেন? মিমের দাদা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়ায় কি যেন ভাবল। মুহিত মনে করল মনে হয় কাজ হয়েছে। কিনউত মিমের দাদা হটাৎ করে ছুটে এসে মিমের গালে টাস করে থাপ্পর বসায় দিল। ‘ওই শয়তান, তুই নিজেকে কি মনে করিস রে? তুই যখন বুঝিস তাহলে যা তোর ভাইকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে। তোর ভাইটাতো সারাদিন শয়তানি করে বেড়ায়। আমি ওকে ভালো বানাতে চাচ্ছি তো আমারই দোষ। এ কথা বলে মিমের দাদা ওপরে চলে যায়।
মুহিতকে অবশ্য আর মাদ্রাসায় যেতে হল না। কেননা মাদ্রাসার হুজুরও একই কথা বলে যে মুহিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওযাতে পারবে না। মিমের দাদা আর কোন ঝামেরা করেনি। তবে কয়েকদিন ধরে তার মেজাজ আর টিক হয় না। মিমই সাহস করে জিজ্ঞেস করলে আবার তেড়ে আসে মিমের দাদা কিনউত ফুপুর ডাক পড়ে যাওয়ায় আর মাইর খেতে হয় না। মিম ফুপুর ঘরে গিয়ে দেখে ফুপুরও মাথা গরম ‘তুই, কি শিহাবের চকলেট খেয়েছিস?’ হকচকিয়ে গেল মিম। হাসবে না কাঁদবে মিম ঠিক বুঝতে পারল না। সে কি ছোট বাচ্চা যে শিহাবের চকলেট খেয়ে ফেলবে চুরি করে। কিনউত মিম মুখে বলল, কই নাতো।’
- সত্যি করে বল।
-হ্যা সত্যি করেই বলছি।
-তাহলে, মুহিতকে ডাক।
-ও তো, স্কুলে গেছে।
-ফাজিলটা তাইলে স্কুল যাওয়ার আগে চকলেট সাবার করছে।
-আমি তো গতকালকেই শিহাবকে দেখলাম একটা চকলেট খেতে। আর তাছাড়া ছোট মানুষ হয়তবা খেলতে গিয়ে ফেলে টেলে দিয়েছে।
-ছোট মানুষ বলেই তো ও মিথ্যা বলবে না।
-বলতেই পারে।
-তাহলে তোরাই শিখায়ছিস।
-ফুপু, আপনি কোনদিন মিথ্যা বলেন নি?
হাসতে হাসতে প্রশ্নটা করলেও ফুপুর চেহারা দেখে বুঝতে পারল যে মারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। তাই আগেই মাথা আগায় দিল থাপ্পর খাওয়ার জন্য। ‘কি করছিস?’ জোরে বলে ওঠে ফুপু। অবাক হয়ে মিম জিজ্ঞেস করে, ‘মারবেন না?’ ‘ফাজলামি করিস! ভাগ এখান থেকে।’ মিমকে আর মাইর খেতে হল না। আজকে দিনটা তাহলে ভালই যাচ্ছে। তবে মিম একবার মাইর খেয়েছিল ছোট থাকতে যখন ও স্কুলে পড়ত। স্কুলে একটা খাটাস টিচার ছিল অল্পতেই ক্ষেপে ক্ষেপে যেত। মিমের দুষ্টমিতে অতিষ্ট হয়ে বাসায় ফোন করে সেই টিচার। আর ফোনটা সৌভাগ্যবশত ধরে দাদা। তারপর আর কি? বাসায় ফিরার পর শুরু হয় মাইর। মাইর খাওয়ার পর মিম বাপের নামসহ দাদার নামও ভুলে গেছিল। মাজে মাঝে মিমের মনে হয় যে স্কুলে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারলে ওর জীবনটা একটু হলেও আলাদা হত। মিমের ফুপু ঘুম থেকে ওঠে ফজর নামাযের আগে। সে অবশ্য ইচ্ছা করে জাগত না, এটা ছিল তার এক রকম সমস্যা। সেই সকাল বেলায় ওঠেই সে দেখতে চাইত যে মিম তার সামনে রেড টি নিয়ে দাড়ায় আছে। একদিন দুদিন দেরি হলে নানা কথা শুনতে হত। তবুও মিম মাঝে মাঝে ভাবে যে তার জীবনটা একদিন একটু হলেও পরিবর্তন হবে।
#দিনটা ছির মুহিতের জন্মদিন্ তবে মুহিত জন্মদিনের শুভেচ্ছা পেল মিম আর ওর মার কাছ থেকে। সে আশা করেছিল বাবা হয়ত ফোন দিবে। কিনউত বেলা ১টা পর হয়ে গেলে আশা ছেড়ে দেয়। মিম ভেবেছিল দাদী হয়ত কিছু একটা নিয়ে মুহিতের সামনে হাজির হবে। কিনউত দাদীও তা করেনি। হয়ত কোন দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে। এর আগে এমন এক অবস্থা হয়েছিল যে মিম নিজেই ওর জন্মদিনের কথা ভুরে গেছিল। সেবার বাড়িতে মুহিত আর ওর মাও ছিল না। তারা গিয়েছির মুহিতের নানা বাড়ি। তারপর এক সময় মিমের দাদী মিমকে শুভেচ্ছা জানায়। মিম যখন এই ঘটনা স্কুলের বন্ধুদের বলেছিল তখন ওরা মুচকি হেসে বলেছিল আবেগে গপ্প ঝাড়ছে মিম তখন ভেবেছিল সে যদি তাইলে দাদার গল্প বলে তাহলে ওরা সবাই মিমকে পাগল ভাববে নয়তবা বলবে মিম মেয়েটাই আসলে ভাল না। তবে মিম মিথ্যা বলত না। ক্লাশে কেউ যখন তাকে জিজ্ঞেস করত তার বাবা কি করে, সে বিনা সঙ্কোচে বলত বাস ড্রাইভার। অবশ্য মুহিত বলত যে তার বাবা বেচে নেই।
#মিমের কাছে কিছু টাকা ছিল। অনেক দিন ধরেই সে টাকাগুলো জমাচ্ছিল। এবার মিম ঠিক করেছিল যে মুহিতকে কিছু একটা দিবে। ফুপুর একটা কলম মুহিতের খুব পছন্দ হয়েছিল। সাহস করে একবার লিখেও দেখেছিল। মিম ওই কলমটার উদ্দেশ্যে স্টেশনারী দোকানে চলে যায়। কলমটার নাম ছিল পারকার, পারকারের অনেকগুলো কলম ছিল, তার মধ্য থেকে মুহিতের পছন্দেরটা খুজতে একটু কষ্ট হল। কিন্তু যখন খুঁজে পেল তখন দাম শুনে মাথায় বাজ পড়ল। মিম নিয়ে এসেছিল পঁচিশ টাকা। কিন্তু কলমটার দাম ছিল তেরশ টাকা। অগত্যা কলমটা না কিনে মিম দোকান থেকে বেরিয়ে আসে। জীবনে প্রথম বারের মত মিম মুহিতের জন্য কিছু একটা কিনতে এসেছিল। মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় মিমের। ফুটপাতে এসে কিছুক্ষণ দাড়ায় থাকে। তারপর কিভাবে আবার ফিরে যায় মার্কেটে। গলার রূপার চেইনটা বিক্রি করে দেয় এক হাজার টাকায়। তারপর কলমটা কিনে বাড়ি ফিরে মিম। জন্মদিনের উপহার পেয়ে মুহিত খুশিতে আত্মহারা। অনেক দামী কলম বুঝতে পারলেও এটা কখনই সে ভাবেনি যে একটা কলমের দাম তেরশ টাকা হতে পারে। তবে ওদের মা ঠিকই আন্দাজ করেছিল কলমের দামটা। কেননা সে খেয়াল করেছিল যে মিমের গলায় রূপার চেইনটা নেই। চোকের ঈষাণ কোণে একটু পানি আসে কিন্তু এর বেশি সে কিছুই করতে পারে না।
#কয়েকদিন ধরে মিম একটু শান্তিতেই আছে। ফুপু শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেছে। তবে বড় দাদা অসুস্থ হওয়ায় কাজ কমেনি। কাজ করছে মিম টিকই কিন্তু মানসিক শান্তিতে রয়েছে। ছেলেরা শ্বশুর বাড়িতে বেড়াতে যায় কিন্তু এখানে ঘটনা উল্টো ভেবে নিজের মনেই হাসে মিম। তবে মিমের এই ভাগ্য কখনই হবে না। মিমের বিয়ে হয়ে গেলে মিমকে বরাবরের মত ওকে বিদায় করে দেবে। হয়তবা দাদী, মুহিত আর ওর মা মাঝে মাঝে ওকে মনে করবে। দাদীর কথা ভাবতেই দাদীর ডাক পড়ে যায়। দাদীর ঘরে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘জি, দাদী?’
- কি করছিলি?
- এমনি দাড়ায় ছিলাম।
- এটা নে।
- কি এটা?
- মুহিতের জন্মদিনের কথা তো আমি ভুলেই গেছিলাম। ওকে এটা দিয়ে বলিস আমার উপর যেন রাগ না করে।
বাক্সটা নিয়ে মিম নিচে নেমে আসে হাসি মুখে। দাদীর সম্বন্ধে যা ভেবেছিল তাই হল। মুহিত আর মিম যখন বাক্সটা খুলল তখন একটা সুন্দর হাতঘড়ি বের হল। অবশ্য দাদী যে জন্মদিনের কথা অবশেষে মনে করেছে এতেই বেশি খুশি হল মুহিত।
কিছুদিন পর ফুপু ফিরে আসলে আবার মিমের যন্ত্রণা শুরু হয়। একদিন কি মনে করে ফুপু নিচে আসে। এসে দেখে মুহিত ওর নতুন কলমটা দিয়ে কি যেন লিখছে। সাথে সাথে দৌড়ে এসে কান টেনে ধরে মুহিতের, ‘তাই তো বলি আমার পেনটা কই গেল। শেষ মেষ চুরি শুরু করেছিস।’ মুহিত শুকনো গলায় বলে ‘ফুপু, এটা আপু কিনে দিয়েছে।’ ‘তোর আপুর বর তো তোর আপুকে টাকা দিয়েছে।’ চিৎকার-চেচামেচি শুনে মিম নিচে এসে দেখে ফুপু মুহিতের কান ধরে জোরে টানছে। মিমকে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘এই পেন ও কোথায় পেল?’ মিম ভয়াত কণ্ঠে বলে, ‘ফুপু আমি আমার রূপার চেইনটা বিক্রি করে দিয়েছি।’ ‘হীরার চেইন বিক্রি করতে পারিস নি। আমার পেন কোথয় তাহলে?’
হয়তবা শিহাব বা শান্তু নিয়েছে। একথা শুনে ফুপু আরও ক্ষেপে গেল। মিথ্যা কথা বলার ব্যাপার হোক, চুরির ব্যাপার হোক সব বিষয়ে মিম ফুপুর ছেলেমেয়ের কতা কেন টানে। তার ছেলেমেয়ে কে কি সে চোর বানাচ্ছে। মিম বারবার বলতে চাইল যে সে বোঝতে চেয়েছে ওরা খেলার জন্য নিয়েছে কি না। কিন্তু ফুপু কোন কথা শুনল না। মিমকে থাপ্পরের পর থাপ্পর মারতে শুরু করল। মুহিত দৌড়ে উপরে গেল দাদীর কাছে। কিন্তু দাদী ছিল না। আবার যখন নিচে নামবে তখন দাদা জিজ্ঞেস করল, ‘বারবার দৌড়াচ্ছিস কেন?
- দাদা ফুপু আপুকে মারছে।
- তুই কি তোর ফুপুকে থামাতে যাচ্ছিস?
- হ্যা।
এইবার আবার দাদা মুহিতকে ধরে মারতে লাগল, ‘বেয়াদব, এত বড় সাহস। ফুপুকে থামাবি মানে? ফুপুকে ধাক্কা মেরে সরাবি নাকি।’ মুহিত চুপচাপ মাইর খেয়ে গেল। ফুপু ততক্ষণে কলমটা নিয়ে লাফাতে লাফাতে উপরে চলে আসল। নিচে এসে মুহিত শুধু ওর মাকে বলল, ‘তুমি ফুপুকে থামাতে পারল না। ‘আমি শেষমেষ পা ধরায় তোর ফুপু ওকে ছেড়ে দিয়েছে।’ দাদী ফিরলে ফুপু আর দাদার সঙ্গে দাদীর অনেক তর্কাতুর্কি হল। মুহিত নিচ থেকে শুধু দাদীর একটা কথাই শুনতে পেল, ‘তোমাদের কি একটু মায়া-দয়া হয় না।’
পরদিন মুহিত যখন বাসায় ফিরল তখন দেখল বাসায় অনেক লোকজনের ভিড়। আরো একটু ভেতরে ঢুকতেই মুহিত পুলিশও দেখতে পেল। তারপর কি ভেবে মুহিত দৌড়ে ভেতরে গেল। মুহিত যখন ভেতরে পৌছল তখন দেখল মি মাটির উপর শুয়ে আছে আর মিমের পাশে ওর দাদী আর মা কাঁদছে।
#প্রকৃত ঘটনা কি মুহিত ওর মাকে জিজ্ঞেস করলে সে শুধু কাঁদল। কছিুক্ষণ পর মিমকে দাফন দেয়া হবে। মুহিত লক্ষ্য করল যে মিমের ঠোটের চারপাশ নীল হয়েছিল। রাতে পাড়ার মসজিদের ইমামকে জানাযার নামাযের জন্য অনুরোধ করা হলে সে রাজী হল না। কেননা মিমের দাদা বলেছিল যে মৃত্যুর কারণ আত্মহত্যা। শেষমেস জানাযার নামায ছাড়াই মিমকে দাফন দেওয়া হল। মিমের বাবাকে এই প্রথম খবর দেওয়ার সাথে সাতে ছুটে এল কিনউত তার মেয়ে যে আর বেঁচে নেই। পোস্টমার্টম করে দেখা গেল মিমের শরীরে বিষ ছিল। এলাকার সবাই বলাবলি করতে লাগল যে ওই বদমাশ দাদাই মিমকে মেরে ফেলেছে। হয়তবা কিল-ঘুষি মারার সময় বেচারির নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আর কোন উপায় না পেয়ে ওর মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে তখন ওর দাদা। মুহিতের মা অবশ্য বলেছিল যে মিমের ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকান ছিল। দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকতে হয়েছে। মুহিতের মা যে ভয়ে আর কোন সত্যি কথা বলছে না এটাই মনে করল সবাই। মিমকে উদ্ধার করার আগে দরজা ভাঙ্গা হয়েছে নাকি পরে সেটা কে জানে। প্রথম কয়েকদিন পুলিশ খুব লাফালাফি করল। স্থানীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন এল ‘মিমের আত্মহত্যা নাকি হত্যা’। বেশ কয়েকজন সুষ্ঠ বিচারের জন্য মানববন্ধনও করল। কিন্তু বাংলাদেশের নিয়মানুসারে কয়েকদিন পর সবই থেমে গেল।
[বেশ কিছুদিন পর]
মিমের দাদার মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে। বাড়িতে ফিরার সময় পাড়ার কিছু ছেলে দূর থেকে চিৎকার করছিল, ‘এ্যা, খুনী জব্বার আর মাটিতে থুতু ফেলছিল। মিম মারা যাবার পর মিমের ফুপু আর এ বাড়িতে থাকে না। মিমের বাবাও এখন বাড়িতে প্রায়ই আসে। মুহিত আর মুহিতের মাকেও আগের মত কষ্ট করতে হয় না। তবে বেশ কিছুদিন ধরে মিমের দাদার খুব একটা ভালো ঘুম হচ্ছে না। রাতে বার বার জেগে যাচ্ছে আর মনে হয় কেউ যেন তাকে ডাকছ্ েএরপর থেকে যখন সে মিমের ঘরের পাশ দিয়ে যেত একটা অস্পষ্ট শব্দ শুনতে পেত। ধীরে ধীরে শব্দটা স্পষ্ট হতে লাগল। আর একদিন স্পষ্ট শুনতে পেল মিম তাকে দাদা বলে ডাকছে। ক্ষণিকের জন্য তার মনে হল শরীটায় একটা বিদ্যুতের মত কি যেন গেল। ওখান থেকে চলে আসার পর সে নিজেকে বোঝাতে লাগল যে এটা মনের ভ্রম ছাড়া আর কিছু না। কিনউত এরপর থেকে মিমের ঘরের সামনে দিয়ে গেলেই মিমের ডাক শুনতে পেত। মনে প্রাণে চেষ্টা করতে লাগল ব্যাপারটা মাথা থেকে ঝাড়ার কিন্তু মিমের ডাক দিনে দিনে আরও বেশি শুনতে লাগল। একদিন বাথরুমে গিয়ে আবার মিমের ডাকটা শুনতে পেল। তাড়াতাড়ি করে দরজা খুলতে গিয়ে দেখল দরজাটা খুলছে না। লকটা বারবার ঘুরানোর চেষ্টা করলেও সেটা যেত শক্ত পাথরের মত হয়েছিল। ভয়ে আতঙ্কে মনে হল যে সে এখনই মারা যাবে। হঠাৎ মনে হল পিছনে কেউ দাড়িয়ে আছ্ েভয়ে সে পেছনে তাকাতে পারল না। ধীরে ধীরে চোখের সামনে সব কিছু ঝাপসা হতে লাগল তারপর পুরাই অন্ধকার।
যখন মিমের দাদার জ্ঞান ফিরল তখন সে দেখল বাথরুমের মেঝেতেই সে শুয়ে আছে আর বাইরে থেকে তার স্ত্রী তাকে ডাকছে, ‘কি হলো? এতক্ষণ ধরে বাথরুমে কি করছ? কয়েকবার জোরে সে বাথরুরেম দরজায় ধাক্কাও দিল। মিমের দাদা সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বের হল।
-কি ব্যাপার ঘটনা কি?
- আমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম।
- কেন?
মিমের দাদা এরপর সব ঘটনা তার স্ত্রী খুলে বলল। সব শুনে মিমের দাদী বলল যে এটা মিমের মৃত্যুর জন। হাজার হোক দাদা হওয়ায় নাতনীর জন্য একটু হলেও মন খারাপ তারতো হবেই। কিনউত এরপর থেকে মিমের দাদা মিমের ডাকটা আরও বেশি শুনতে পেত। রাতে বাড়ি ফেরার সময় তার খালি মনে হত কেউ যেন তাকে অনুসরণ করছে। কিন্তু রাস্তা পুরাই জনশূন্য। বাড়িতেও তার প্রায়ই মনে হয় কেউ যেন হাটা চলা করছে কখনও কখনও হাসির শব্দও শুনতে পাওয়া শুরু করল। সবকিছু নিয়ে মিমের দাদার অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেল। সারাদিন সে অস্থিরতার মধ্যে থাকতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত সে নামায পড়া শুরু করল। যদি তাও সবকিছু ঠিক হয়।
#দিনটা ছিল শুক্রবার। মিমের দাদার মনটা আজ বেশ ভাল। অনেকদিন হল কোন সমস্যা হয়নি। রাস্তায় এক একা হটলেও কোন কিচু মনে হচ্ছে না। সবসময় নামায পড়ে প্রার্থনা করে যেন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। খোদা মনে হয় তার ডাক শুনছে এইবার। অনেকদিন হল শিহাব আর শান্তু জেদ ধরেছে ফ্রান্টাসি কিংডমে যাবে। ঠিক হল আজ সবাই তারা সেখানে যাবে। সকাল বেলাতেই ফুপু বাড়িতে চলে এল। মুহিত আর মুহিতের মাকেও তৈরি হয়ে নিতে বলল। মিমের দাদীও যেতে চাইল কিন্তু মিমের দাদা রাজী হল না। বয়স্ক মানুষ ওইসব জায়গায় গিয়ে কি করবে। আর ফ্রান্টাসি কিংডম তো দূর কম না। বলতে গেলে ঢাকার বাইরে। তাই সে বাড়িতে থেকে গেল। জুম্মার নামায পড়ে একটা লম্বা ঘুম দিয়ে ওঠল। আসরের নামায পড়া শেষ হলে বসল টিভির সামনে। বাড়িতে অন্য কেউ থাকলে তার শান্তিমত টিভি দেখা হয় না। ছোট পোলাপান দেখবে কার্টুন, তার স্ত্রী থাকলে হিন্দী সিরিয়াল। আর তার পছন্দের জিনিস হল টক শো। দেশের ভাবধারা কখন কেথায় যাচ্ছে সেটা সবারই জানা থাকা উচিত। এই ব্যাপারটা সে কাউকেই বোঝাতে পারে না। টিভিতে ভউিম দিয়ে কয়েকটা চ্যানেল ঘোরাতেই সে পছন্দের জিনিস পেয়ে গে। কতক্ষণ ধরে সে টিভি দেখছিল তার মনেও নেই। পেছন থেকে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হল ‘দাদা নামায পড়বেন না’ তখন সে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল, ‘তোর অত চিন্তা করতে হবে না।’ কিনউত ঠিক তখনই তার সাথে সাথে মনে পড়ে গেল বাড়িতে কেউ নাই, ভয়ে ভয়ে স পেছনে তাকাল। নাহ, কেউ নেই। ভ্রম হতে পারে। টিভি বন্ধ করে ওযু করতে গেল সে। ওযু করে ফিরে এসে জায়নামায নেয়ার জন্য ঘরে ঢুকতেই দেখল একটা মেয়ে নামায পড়ছে মিমের দাদার শরীরের পেছন দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। ভয়ে সে নড়াচড়া করতে পারল না। মেয়েটা যতক্ষণ নামায পড়ল মিমের দাদা দাঁড়িয়ে দেখল। নামায শেষে মেয়টো যখন সালাম ফিরাল তখন দেখল মেয়েটা আর কেউ না, মেয়েটা মিম। মিম আবারও জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা নামায পড়বেন না?’ এবার মিমের দাদা ধীরে ধীরে পেছাতে শুরু করল। তারপর দৌড়ে সিড়ির কাছে যেতেই কে যেন তাকে পিছন থেকে ধাক্কা দিল। মুহূর্তের মধ্যেই সে সিড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। প্রথমে কয়েকটা আঘাতে আর্তনাদ করে ওঠল। তারপর সব অন্ধকার।
#ফ্যান্টাসি কিংডম থেকে যখন সবাই বাড়ি ফিরল তখন বেশ রাত হয়ে গেছে। কয়েকবার কলিং বেল বাজানোর পর যখন মিমের দাদা দরজা খুলল না সবাই ভাবল হয়ত নামায পড়ছে। পনের-বিশ মিনিট পর আবারও বেল বাজানো শুরু করল কিন্তু ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ নেই। এবার সবাই একটু ভয় পেল। এরপর অনেক জোরে জোরে মুহিত দরজায় কড়া নাড়ল, তারপরও দরজা খুলল না। বাড়ির চারপাশে ঘুরে ঘুরে সবাই ডাকাডাকি শুরু করল। আর কোন উপায় না দেখে পাড়ার লোকজন ডেকে এনে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে ঢুকতেই সবার গা শিউরে ওঠল। মিমের দাদা সিড়ির কাছে মেঝের ওপর পড়ে আছে। তার মাথা ফেটে রক্ত জমাট বেধে আছে।
মিমের দাদার যখন হুঁশ ফিরল তখন শরীরে একটুও শক্তি নেই। তারপরেও অনেক চেষ্টা করে সিড়ির রেলিং ধরে দাঁড়াল। পিছন থেকে মিম আবারও জিজ্ঞেস করল, ‘দাদা, নামায পড়বে না?’ এরপর মিম হাসতে শুরু করল আর বলল, ‘আমি তো শুধু আস্তে একটু ধাক্কা দিয়েছিলাম। আপনি তো আমাকে কত জোরে জোরে মেরেছেন, কখনও তো পড়ে যাইন্ িশক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে মাইর খেয়েছি।’ এরপর মিম আবার হাসতে শুরু করল। মিমের দাদার মনে হল সে আবার পড়ে যাবে এবং সে নিমিষেই পড়ে গেল। পড়ে গিয়ে সবকিছু কেমন যেন উল্টাপাল্টা হতে শুরু করল। তারপর যখন চোখ খুলল তখন দেখল সে বিছানায় শুয়ে আছে। তার মাথায় ব্যান্ডেজ আর চারপাশে পরিবারের লোকজন। মিমের দাদা জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন লাগছে এমন?’ একটু দম নিয়ে সে বলল, ‘মিম ! ও আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছে।’
- কি বলছ, এইসব।
- হ্যা, সত্যি বলছি। আজকে আমি মাগরিবের নামায পড়িনি কিন্তু আমাদের ঘরে গিয়ে দেখ জায়নামায বিছানোই আছে। এরপর মিমের দাদা আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
কয়েকদিন ধরে মিমের দাদার খুব জ্বর। ঘুরেম মধ্যে প্রলাপ বকে, ‘মিম, আমাকে মাফ করে দে। আমি অন্যায় করেছি। এইবার আমাকে মাফ করেছে।’ এলাকায় খবরটা গোপন থাকল না। সবাই বলাবলি শুরু করল যে এই খুনের ব্যাপারটা ঢাকতে মিমের দাদা কত জায়গায় ঘুষ দিয়েছে। তাও কি নিস্তার পেল। পাপের শাস্তি এখন হারে হারে টের পাচ্ছে। মিমের দাদাকে বেশ কয়েকজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল। কিন্তু কোন লাভ হল না। মিমের দাদী আর ফুপু ঠিক করল এবার সুমনকে ডাকবে। সুমন হল মিমের বাবার মামাত ভাই। সে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। বিদেশ থেকে ডিগ্রীও নিয়ে এসেছে। মিমের দাদী দেরি না করে সুমনকে ফোন দিল। সুমন বলল কয়েকদিন পর আসলে সমস্যা হবে কিনা। কিন্তু মিমের দাদী জানাল ঘটনা গুরুত্বর। এরপর সুমন রাজী হয়ে গেল।
### কেমন আছ, ফুপু?
- ভাল কি আর থাকতে পারি বল।
- তা ঠিক।
- তোর ফুপাকে দেখলি?
- না, ঘুমাচ্ছে।
- তুই আছিস কয়দিন?
- সাত আট দিন।
- সাত আটদিনে তোর ফুপাকে ভাল করতে পারবি?
- মানসিক রোগ যদি হয়ে থাকে তাহলে পারব।
- মানসিক রোগ ছাড়া আবার কি হতে পারে?
- সত্যি যদি ভূত প্রেতের ব্যাপার হয়ে থাকে।
- তুই ডাক্তার হয়েও এগুলো বিশ্বাস করিস?
সুমন কিছু বলে না, শুধ হাসে। ছোট বেলা থেকেই সুমন একটু অন্য রকম। মানুষের মনের কথা খুব সহজেই ধরতে পারে। তার ফুপু যে একদম নিশ্চিত ঘটনা মানসিক রোগের কারণে তা ঠিকই বুঝতে পারল। বোধহয় এ কারণেই তার সাইকিয়াট্রিস্ট হতে সুবিধা হয়েছে।
###- কেমন আছেন ফুপা?
মিমের দাদা আড়চোখে সুমনের দিকে তাকাল। তারপর জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কি ভাবছ আমি পাগল হয়ে গেছি?’
- আমি কি সেটা বলেছি?
- না, তা না। কিন্তু এতদিন পর বাসায় আসার কারণ তো দেখছি না।
- শুনুন ফুপা, মানুষের রোগ দেহের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গেই হয়। মস্তিষ্কও বাদ যায় না।
- মানে তুমি বলতে চাচ্ছ আমি পাগল হয়নি কিনউত পাগলের পর্যায়ে?
- মানসিক রোগ মানেই পাগল না। তবে আপনি যদি আমাকে সাহায্য না করেন তবে সত্যিই আপনি পাগল হয়ে যেতে পারেন।
- কিন্তু আমি সত্যিই মিমকে দেখেছি। সুমন কিছুক্ষণ চুপ করে থাক্ েএ বাড়ির সব ঘটনাই সে জান্ েমিমের ওপর তার ফুপা যে অত্যাচার করত সেটা ভালভাবেই জানে। নিজের কথাগুলো বললে ফুপা ক্ষেপে যাবে তারপরও সে সঞ্চয করে বলল, ‘শুনুন ফুপা, আপনি রাগ করবেন না। আর যদি রাগ সামলাতে না পারেন তবে আমাকে ভাইগ্না হিসেবে না দেখে ডাক্তার হিসেবে দেখুন। আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন?
হ্যা করি।
- আগে করতেন?
- না।
- আসলে আপনি যখন ভূতে বিশ্বাস করতেন না তখনও কিন্তু রাতের বেরায় ভূতের ভয় পেতেন। তাই না?
- হ্যা পেতাম।
- আমাদের এই যুগে ছেলেমেয়েরা পড়ে ফিকশন, সায়েন্স ফিকশন, মিনার গল্প কিন্তু আপনাদের সময় প্রচলিত ছির ভূত-প্রেতের গল্প। কোন মানুষ কোন মানুষকে মেরে ফেললে সেই মানুষ আবার ভূত হয়ে ফিরে আসে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য....
- মিম আমার উপর কি জন্য প্রতিশোধ নেবে?
- মিম আপনার উপর কোন প্রতিশোধ নিচ্ছে না। ছোটবেলার ওই ভূত-প্রেতের গল্প আপনার মনে এখনও জমা হয়ে আছে। আপনি মিমের ওপর নানা অত্যাচার করতেন। আর যখন মিম মারা গেল তখন আপনার অবচেতন মনে গল্পগুলোর কথা আবার কাজ করতে শুরু করে।
- আমি মিমের ওপর কোন অত্যাচার করিনি।
- অত্যাচার করেছেন কি করেনি সেটা আপনি নিজেই বালভাবে জানেন। আপনার অবচেতন মনে কাজ করতে শুরু করে মিম মারা গেছে আর ও আপনার ওপর প্রতিশোধ নিবে।
- আমি তো বললাম যে আমি মিমের ওপর কোন অত্যাচার করি নি। তুমি জান না মিমের বাপ কেমন ছিল। ওর তো রক্তই খারাপ।
- আপনি রক্তের কথা কেন তুলছেন? মিমের বাবার কারনে মিম যদি খারাপ হয়ে থাকে তবে মিমের বাবাও আপনার জন্য খারাপ হয়েছে।
- কথাবার্তা মুখ সামলে বল।
ফুপা শীতল চোখে তাকিয়ে থাকলে সুমন আর কিছু বলল না। সে বুঝতে পারল এটা চিকিৎসার উপযুক্ত সময় না। তাই সেদিনকার মত সেখান থেকে চলে আসল।
পরদিন সুমন আবার তার ফুপার কাছে গেল। তারপর অনেক শান্তভাবে বুঝায় বলতে শুরু করল যে সে একটা দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছে। তাকে তো এই দায়িত্ব পালন করতে হবে। এখন তার দরকার সাহায্য। সে যদি তাকে সাহায্য না করে তবে পুরাপুরি পাগল না হলেও সমস্যা প্রকট হয়ে যেতে পারে। সবকিছু শোনার পর মিমের দাদা বুঝতে পারল সুমন যা জানতে চায় সব বলা উচিত। সে সুমনকে জানাল যে সুমন যা জানতে তা সব খুলে বলবে। এরপর সুমন নানা ধরনের প্রশ্ন শুরু করে।
- ফুপা, আপনার এখন কেমন লাগছে?
- মোটামুটি ভাল।
আচ্ছা, আপনি ছোটবেলায় কেমন প্রকৃতির ছিলেন?
- ছোট বেরায় যে রকম থাকে সে রকমই।
- না আমি বলতে চাচ্ছি আপনিকি শান্ত প্রকৃতির ছিলেন নাকি চঞ্চল ছিলেন।
- দুটোরই মিশ্রণ ছিল।
- আপনি ছোট বেলায় কোন খেলাটি বেশি পছন্দ করতেন?
- চোর-পুলিশ।
- ছোটবেলায় কি মারামারি করতেন?
- করতাম।
- কেমন করতেন, অনেক?
- মোটামুটি।
- সাধারণত কি কারণে করতেন?
- আমার সাথে কেউ আগ বাড়িয়ে লাগতে আসরে তাকে আমি ছেড়ে দিতাম না।
- ঠিক আছে।
সুমন এরপর কিছু ট্যাবলেটের নাম বলল খাওয়ার জন্য। মিমের দাদা সুমনকেই টকা দিল ওষুধ নিয়ে আসার জন্য ওষুধগুলো খাওয়ার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই মিমে দাদা গভীর ঘুমে তলায় পড়ল।
###- সুমন, তোর কাজ কেমন চলছে?
- এই তো ফুপু চলছে, ভালই।
- তোর ফুপা এভাবে ঘুমাচ্ছে কেন?
- রিলাক্সের ওষুধ দিয়েছি।
- তোর ফুপার এমনিতেই তো ঘুম বেশি।
- এটা ঠিক ঘুমের জন্য না। এই ওষুধগুলা খেলে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাবে।
- ঠিক হতে কতদিন লাগবে?
দেখি। আচ্ছা ফুপু, মিম কেমন মেয়ে ছিল?
- খুবই ভা। ওর মত নাতনী লাখে একটা মিলে।
- কিন্তু ফুপা ওর কদর বুঝল না কেন?
- জানি না। ওদের বাবার দোষ তোর ফুপা কেন যে ওদের উপর চাপাল বুঝলাম না।
- আচ্ছা ফুপু, ফুপার ভাল হওয়ার খাতিরে জিজ্ঞেস করছি। তোমার কি মনে হয় ফুপা অগত্যায় মিমকে মেরে ফেলেছে?
- তোর ফুপা আর যাই করুক না কেন অন্তত মানুষ খুন করবে না। আবার খুন করার পর মুখে বিষ ঢেলে দিবে এই কাজ করার মত সাহসও তোর ফুপার নেই।
- তাহলে তুমি বলতে চাচ্ছ মিমই আত্মহত্যা করেছে।
- মিম আত্মহত্যা করার মত মেয়ে না। ও আমাকে, মুহিতকে আর মুহিতের মাকে অনেক ভালবাসত। ও এটা করবে না।
- তাহলে তুমি আসলে কি বলতে চাচ্ছ। মিম কিভাবে মারা গেল।
-সুমন, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার কথা বলতে ভাল লাগে না। আমার খুব কস্ট হয। তুই তোর ফুপার চিকিৎসা করতে এসেছিস। আমার না।
- আচ্ছা, ঠিক আছে।
###-কি খবর আপু?
- এই তো, আছি আরকি।
- দুলাভাই কেমন আছে।
- সে, আছে ভালই। আমাদের নিয়ে তোর দুলাভাই অত চিন্তা করে না।
- শিহাব-শান্তু কেমন আছে।
- আছে ভালই। শান্তুর একটু ঠান্ডা লেগেছে। বাবার চিকিৎসা কেমন চলছে?
- চলছে। আসলে মিমের ব্যাপারটা মাথা থেকে সরছে না।
- সরবে কিভাবে ! ফাজিল মেয়ে, ও আত্মহত্যা করেছে শুধুমাত্র আমাদের বিপদে ফেলার জন্য। পুলিশ তো ঝামেলা করতে পারল না কিন্তু বাবার শরীর ঠিকই খারাপ হয়ে গেল। বাবার মাথা থেকে জিনিসটা সরছে না কেন রে?
- অনেক কারণই আছে।
- বল দেখি।
- এই তো, ফুপা ছোটবেলায় নিজেও খুব চঞ্চল ছিল। প্রিয় খেলা ছিল চোর-পুলিশ আর বেশ ভাােই মারামরি করত।
- এটার সাথে মিমের ব্যাপারটার সম্পর্ক কি?
- পুলিশ চোরকে ধরবেই আর আগ বাড়িয়ে মরতে গেলে মারও খেতে হবে। এছাড়া ভূত-প্রেতের গল্প-টল্প আরও অনেক কিছু আছে।
- মিমকে দেখতে পারবে কিভাবে বল। ওর বাবা তো যা ছিল ছিলই, মাও ছিল বলতে গেলে বস্তির।
- হমম, সেটাই। আচ্ছা তাক তুমি আমি একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি।
###- ভাবী, কেমন আছেন?
- আছি ভাই, আল্লাহর রহমতে।
- মুহিতের পড়ালেখা কেমন চলছে?
- চলছে ভালই।
- একটা কথা জিজ্ঞেস করব আপনাকে?
- কর।
- মিম কেমন মেয়ে ছিল?
খুবই ভাল। ওতো আমাকে আপন মার মতই মনে করত। কেন যে আত্মহতা করতে গেল।
ও কি, আসলেই আত্মহত্যা করেছে?
ও যেরকম কষ্টে থাকত তাতে কোন সন্দেহ আর নাই। আর আব্বাও তাই বলে এত ভয়ানক কাজ করবে না। আর মিমের ঘরের দরজা তো ভেতর থেকে লাগানো ছিল। সাধারণত ও তো ওর ঘরের দরজা লাগায় রাখত না। ওই দিনই কেন ঘরে দরজা লাগাল। আর প্রথমে তো আব্বাকেই দেখেছি মিমকে ডাকডাকি করতে। তারপরই তো আমরা যেয়ে দরজা ভাঙ্গি। আমি তো জমে পাথরই হয়ে গেছিলাম...
থামেন থামেন। আমি তো এত কিছু একসাথে জিজ্ঞেস করি নি।
ওহ, না মানে তুমি বলছিলা যে...
হ্যা, বুঝতে পেরেছি। আমি এখন উঠি, কেমন?
আচ্ছা।
### ফুপা, আজকে কেমন লাগছে আপনার?
হ্যা, ভালই লাগছে।
কোন স্বপ্ন দেখেছেন কি?
দেখেছি, কিন্তু এখন মনে পড়ছে না।
আচ্ছা আচ্ছা। ফুপা, কতা হল আপনার কোন সমস্যা নাই।
তুমি তাহলে আমার কথা বিশ্বাস করছ?
হ্যাঁ করছি। আর আপনি মিমকে এবার শান্তি দিন, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
কিভাবে শান্তি দিব।
আপনি কি মিমের জন্য অনুতপ্ত?
হ্যা।
মিমের তো জানাযার নামযা হয় নি। আপনি নামাযটা পড়ানোর ব্যবস্থা করেন, মিলাদ দেন, হুযুরকে দিয়ে কুরআন শরীফ এবার খতম দেয়ান। দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে।
সত্যি বলছ?
জি, সত্যি বলছি।
আচ্ছা ঠিক আছে।
মিমের জন্য মিলাদ পড়ানো হবে শুনে সবচেয়ে বেশি খুশি হল মুহিত। মুহিতের সাথে সুমনের তেমন কোন কথাবার্তা হয়নি এখন পর্যন্ত। তাই একদিন হাল্কা কথাবার্তা বলার জন্য মুহিতের ঘরে গেল সুমন।
কি খবর মুহিত, কি করছ?
এই তো চাচা পড়ছি।
তুমি এখন কোন ক্লাশে?
ক্লাশ সেভেনে।
রোল কত তোমার?
দশ।
আচ্ছা মুহিত, তোমার কাকে বেশি বাল লাগে, দাদাকে না দাদীকে?
অবশ্যই দাদীকে।
দাদীকে খুব পছন্দ করতা তোমরা?
হ্যা। আচ্ছা চাচা দাদা নাকি আপুর জন্য মিলাদ দিবে?
হ্যা। ঠিক আছে, মুহিত তুমি এখন পড়। আমি ওঠি।
মিমের দাদা অনেক কষ্টে হুযুরকে নামায পড়ানোর জন্য রাজি করাল। পরের শুক্রবার জুম্মা নামাযের পর জানাযা পড়ানো হল। আসর নামাযের পর মিলাদ হল। এমনকি একশ ফকিরকেও খাওয়ান হল। সুমনের কথামত মিমের দাদা দেখল যে সে ভাল হয়ে গেছে। মিম তাকে আর বিরক্ত করে না। মিমের গলার স্বরও আর শুনতে পায় না। অবশেষে সুমনের যাওয়ার সময় চলে আসলে মিমের দাদী সুমনের সাথে একা একা কিছু কথা বলার জন্য ডাকল।
সুমন, এটা কিভাবে হল বলতো।
কিছুই না, ফুপু। ছোটবেলা থেকেই ফুপার মধ্যে একটা প্রতিশোধ প্রবণতা কাজ করত। কারও উপর অত্যাচার করলে প্রতিশোধ নেয়া উচিত। এটাই বিশ্বাস ছিল ফুপার। মিমের ওপর যখন ফুপা অত্যচার করত তখন তিনি নিজেও জানতেন যে তিনি অন্যায় করছেন। মিম যখন মারা গেল তখন ফুপার অবচেতন মনে এই চিন্তা আর ছোটবেলার নান াস্মৃতি কাজ করতে শুরু করে। আর তাথেকেই এই হেলুশিনেসনের সৃষ্টি। সিড়ি দিয়ে ভয়ে ফুপা যখন এলাপাতাড়ি ভাবে নামছিল তখন তিনি অসাবধানবশত পড়ে যান কিন্তু তার অবচেতন মন তাকে বলে যে কেউ তাকে ধাক্কা মেরেছে।
কিন্তু মিলাদের পর তোর ফুপা ঠিক হয়ে গেল কেন?
মিলাদ দেয়ার পর ফুপার অবচেতন মনে ভাতে শুরু করে মিম এইবার তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। অবশ্যএই চিন্তার পেছনে ওষুধগুলোরও অনেক ভূমিকা আছে। আর এভাবেই ফুপা ভাল হয়ে যায়।
আচ্ছা, তুই তো আমাদের জন্য অনেক কিছুই করলি। বল, তুই কি চাস?
আমি একটা প্রশ্নের জবাব চাই।
কি প্রশ্ন?
মিমকে আসলে কে মেরেছে?
সুমনের কথা শুনে মিমের দাদী থমকে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ‘তুই এভাবে জিজ্ঞেস করছিস কেন?’ সুমন হেসে বলল, ‘ফুপু, শুধু সাইকিয়াট্রিস্ট হওয়ার জন্য নয়, আমি ছোটবেলা থেকেই মানুষের কথাবার্তা শুনে অনেক কিছু বুঝতে পারি। সত্যি কথা বল। মিমের খাবারে তুমি বিষ মিশাও নি?’ সুমনের কথা শুনে মিমের দাদী কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে বলে, ‘আমি ওর কষ্ট আর সহ্য করতে পারতাম না। তাই বাধ্য হয়েই আমি...’ মিমের দাদী আর কোন কথা বলতে পারে না। ফুপিয়ে কান্না শুরু করে। একজন বযস্ক মানুষকে এভাবে কাঁদতে দেখে সুমনের অস্বস্তি লাগ। তাই সেখান থেকে উঠে চলে গেল।
#জগতের কিছু কিছু ভালোর জন্য অনেক সময় কিছু অন্যায় মেনে নিতে হয়। মিমের আত্মত্যাগের মুহিত আর মুহিতের মা আগের থেকে এখন ভালো আছে। মিমের ফুপু তার নিজের বাড়িতে ফিরে গেছে। সুমন যদি এখন সবকিছু ফাঁস করে দেয় তাহলে আবার সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। থাক, কিছু অন্যায় না হয় মেনেই নেয়া যাক। এখন একটাই দো’আ মিমের আত্মার যেন বেহেশত নসিব হয়।
©somewhere in net ltd.