![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তনু হত্যার প্রতিবাদে....
বাংলাদেশ, ২০৩৫
বাড়িতে ভয়ে ভয়ে আফজাল সাহেব ঢুকেন। প্রতিদিনই তার মনে আশঙ্কা জাগে তাকে দেখেই হয়ত তার বিশ বছরের মেয়েটা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরবে। অবশ্য প্রায় দিনই তার মেয়ে এই কাজটি করে। ব্যাপারটা তার কাছে মোটেই ভালো লাগে না। মেয়েরা সব সময় বাবার সাথেই সাধারণত এমনটা লেগে থাকে। কিন্তু আফজাল সাহেব মনে করেন মেয়েদের সাথে মায়েদেরই থাকা বেশি ভালো।
নাহ, আজকে তৃণা ছুটে আসে না। ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে সে প্লে স্টেশনে গেম খেলতে ব্যস্ত। কানে দুই মণ ওজনের একটা হেডফোন, হাতে গেমপ্যাড এবং চোখ ভি আর দিয়ে ঢাকা। তবে সে চোখ যে সামনের বিশাল কার্ভ টিভিটা ছাড়া আর কিছু দেখছে না তা নিশ্চিত।
সিঁড়ি বেয়ে চুপচাপ আফজাল সাহেব উপরে চলে যান। নিজের ঘরে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে ঢুকে পড়েন ওয়াশরুমে। সারাদিন অনেক খাটাখাটনি গেছে। তার উপরে এক ঝামেলা জুটেছে অফিসের সিনিয়র কর্মকর্তার দ্বারা সামান্য ঝাড়ুদার মেয়ে ধর্ষণ। ভালোই লাগে না কিছু।
#
মোটামুটি আটটার পর আফজাল সাহেব নিজের ঘরের বারান্দায় বসতেই বেশি পছন্দ করেন। এসময় আবার ঝামেলা বাধে। তৃণা এসে হাজির হয়। টুকটাক কথা বলে এবং চুপচাপ বসে থাকে। আফজাল সাহবে কিছু বলেন না। চা শেষ করে খবরের কাগজে মন দেন আর মাঝে মধ্যে মেয়ের কথার জবাব দেন। তৃণা এক সময় না এক সময় চলে যায়।
আজও তার ব্যতিক্রম হল না। তৃণা এসে হাজির, কোন কথা না বলে বাবার সামনে এসে পাশে চেয়ারটিতে বসে। দুই পা চেয়ারের উপরে তুলে এমনভাবে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আফজাল সাহবের মোটেই ভালো লাগে না। তৃণার পরনে হালকা গোলাপী সালোয়ার-কামিজ তার গায়ের রঙের সাথে মিলে গেছে। আকাশ থেকে চাঁদের আলো যখন আবার তার গায়ে এসে পড়ে তখন অভিভূত হওয়ার মত একটা দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।
আফজাল সাহেব ব্যাপারটা খেয়াল করেন। তৃণা বাবার সামনে ওড়না পরে আসেনি। আফজাল সাহেবের দৃষ্টি চলে যায় তার মেয়ের বুকের দিকে। যেকোন পুরুষকে আকৃষ্ট করার মত মেয়েটার বুকের গড়ন। আফজাল সাহেব ঘামতে থাকেন। তার রীতিমত অস্থির লাগতে শুরু করে।
"বাবা?"
তৃণার ডাকে চমকে উঠে তার বাবা। তবে মেয়েটার গলার স্বর অপরিচিত ঠেকে। এই কণ্ঠ পৃথিবীর সমস্ত ধরনের পুরুষের মধ্যে পশু জাগিয়ে তুলতে পারে।
"বাবা, তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?"
"হ্যা, মা। তুমি তোমার মাকে একটু ডেকে নিজের ঘরে চলে যাও তো।"
তৃণা চলে যায়। আফজাল সাহেব স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। নাহ, এভাবে সম্ভব না। একটা ব্যবস্থা করতেই হবে তার। যতটাই খারাপ হোক না কেন ব্যাপারটা।
#
দুই মাস পর....
আজ প্রায় মেলাদিন ধরে আফজাল সাহেব অফিসে আসেন কিন্তু কোন কাজে মন বসাতে পারেন না। অফিসের সবাই বলাবলি করা তাদের বস মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে গেছে।
সেলফোনটা বাজতেই আফজাল সাহেব আঁতকে উঠেন। আজকাল ফোন বাজলেই তার মনে হয় পুলিশ কি না।
না, ফোন তৃণার মা ফোন দিয়েছে। আফজাল সাহেব রিসিভ করেন।
"তোমার মেয়ে বলেছে সে আত্মহত্যা করবে।"
"ওর জামা-কাপড়, মুভি, চকলেট, গেম আমি তো সবকিছুই অফুরন্তভাবে দিচ্ছি। তাহলে সমস্যা কোথায়?"
"সমস্যা হল এভাবে একটা মানুষ বাঁচতে পারে না।"
তৃণার মা ফোন রেখে দেন। আফজাল সাহেব ডুকরে কেঁদে উঠেন। তার মত করেও তো একটা মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। সে যা করেছে মেয়ের সাথে তা কি সম্ভব একটা বাবার পক্ষে করা?
কিন্তু আফজাল সাহেব পেরেছেন। তিনি আজ এতোদিন ধরে ঘরে বন্দী করে রেখেছেন নিজের মেয়েকে। যার জন্মের পর তিনি বহুবছর পর হাসতে পেরেছিলেন, যাকে তিনি কোলে রাখার জন্য অফিসে যেতেন না।
কিন্তু তৃণা বড় হতে থাকলে আফজাল সাহেবের মনে সেই স্মৃতী ভেসে উঠে। নিজের ছোটবোনের কথা। যাকে তিনি তৃণার মত করেই ভালোবাসতেন। যার কথা তার স্ত্রী-কন্যা কেউই জানে না।
পনের বছর হয়ে যাওয়ার পরও আফজাল সাহেবের বোন তিন্নি "ভাইয়া ভাইয়া" বলতে বলতে কোলে বসে পড়ত।
একদিন সন্ধ্যায় তিন্নি কেন জানি কোচিং থেকে ফিরে আসে না। অজানা আশঙ্কা সবার মনে চেপে বসে। পরে যখন পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে নিজের বোনের নগ্ন লাশটা দেখায় তখন সাথে সাথে তিনি জ্ঞান হারান।
এরপর অনেক কিছুই ঘটে গেছিল। ফেসবুকে ঝড় উঠে গেছিল, সামাজিক সংস্থাগুলো লাফিয়ে উঠেছিল। আফজাল সাহেব তখন টিউশনি করে নিজের, বোনের এবং মায়ের খরচ চালাতেন। তার সে সময় অর্থও ছিল না, ক্ষমতাও ছিল না।
সবকিছু চিরাচত নিয়মে থেমে যায়। অপরাধীরা যে যার মত বুক ফুলিয়ে চলতে শুরু করে। আফজাল সাহেব নিথর হয়ে নিজের ঘরে পড়ে থাকেন কেবল। সেদিনই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এমন একদিন বাংলাদেশে আসবে যেদিন ধর্ষনের খবর না পেলে খবর পানসে বলে মনে হবে।
আজ আফজাল সাহেবের অর্থ এবং ক্ষমতা দুইই আছে। কিন্তু তিনি শান্তিতে থাকতে পারছেন না। চারিদিকে আজ হায়েনার দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। একবার যদি মেয়ের কিছু হয়ে যায় এই অর্থ-ক্ষমতা কি পারবে তার মেয়েকে ফিরিয়ে আনতে?
২| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:০০
আহসানের ব্লগ বলেছেন: চিন্তা চিন্তা চিন্তা। লেখা টা পড়ে ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৭
বিজন রয় বলেছেন: না।