নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যকে বন্ধু ভাবি, আকাশ ছোঁয়ার সপ্ন দেখি

আয়ুথিয়া

স্বপনাতুর

আয়ুথিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

সপ্নপুরনের ইউরোপ ( ফ্রান্স পর্বঃ সুগন্ধির রাজধানী গ্রাস)

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৪


ফ্রান্সের সুগন্ধির দুনিয়াজোড়া খ্যাতির কথা কেনা জানে !! আর সেই বিশ্বখ্যাত সুগন্ধি শিল্পের গোড়াপত্তন যে শহরে সেই শহরের কথাই এবার লিখব। সুগন্ধির রাজধানী হিসেবে পরিচিত ফ্রান্সের এই শহরটির নাম গ্রাস (Grasse) । একে দক্ষিণপূর্ব ফ্রান্সের একটি কমিউন বা সোজা বাংলায় উপশহর বলা যায় যেখানে গ্রাম্যভাব এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে। তবে ফ্রান্সে কমিউন শব্দটির আবির্ভাব ১২শ শতকে যার অর্থ সম জীবন পদ্ধতির লোকজনের সমাবেশ । পুরো ফ্রান্সে ছোটোবড়ো মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩৬০০০ হাজারের মত কমিউন রয়েছে যেগুলো স্বায়ত্তশাসিত এবং যেখানে প্রাচীন সংস্কৃতি ও ঐতিয্যকে যত্নসহকারে লালন করা হয় । গ্রাস শহরটি সমুদ্র থেকে বেশ দুরে হলেও এটি ফ্রেঞ্চ রিভেরিয়ার অংশ বিশেষ । নিস থেকে ৪০ কিমি এবং কান থেকে ২০ কিমি দূরত্বের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০০-৪০০ মি উঁচু এই পাহাড়ি ছোটো শহরটির বৈশিষ্ট্য হল নির্মল পাহাড়ি হাওয়া এবং ফুলের সৌরভ । কারন এইখানে শুধু সুগন্ধি তৈরি হয়না সেইসাথে সুগন্ধি শিল্পের প্রধান কাঁচামাল বিভিন্ন ফুলের চাষ হয় মাইলের পর মাইল জমিজুড়ে। আহা! চোখ বন্ধ করে পাহারঘেরা এমন এক জাইগা ভাবুন যেখানে দুচোখ যায় ফুল আর ফুল ; বাহারি ফ্রেঞ্চ গোলাপ, ল্যাভেন্ডার, জেসমিন,মিমসাসহ নানা রকম সুঘ্রানের ফুলের চাষ হয় গ্রাসে। আপনি প্রতিদিন যে সুগন্ধি ব্যাবহার করেন তার একফোঁটা নির্যাস এর জন্যে শত শত ফুলকে জীবন দিতে হয় তা কি জানেন!!! আর এই শত শত ফুলের বলিদানের জায়গা হল এই গ্রাস শহরটি। হা!হা! ভয় পাবেন না । তো আপনি যদি ফ্রেঞ্চ রিভিরেয়ার সাগর দেখতে দেখতে ক্লান্ত হন তাহলে একফাকে ঘুরে আসতে পারেন গ্রাসে। নিস বা কান থেকে সরাসরি ট্রেন ও বাস সার্ভিস রয়েছে গ্রাসের সাথে। গ্রাসের ম্যাপ ফ্রান্সের সুগন্ধির ইতিহাস

গ্রাসের প্রধান আকর্ষণ সুগন্ধি তৈরির বিভিন্ন ঐতিয্যবাহি কারখানা । তন্মধ্যে প্রধান তিনটি কারখানা হল Galimard যেটি ১৭৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত গ্রাসের সবচেয়ে পুরনো সুগন্ধি কারখানা, Molinard প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৯ সালে এবং সবচেয়ে বিখ্যাত Fragonard Perfume এর কারখানা যেটি ১৯২৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় যদিও এর শুরুর ইতিহাস আরও অনেক প্রাচীন । সম্ভবত fragonard নামকরন হয়েছে অষ্টাদশ শতাব্দীর চিত্রকর Jean-Honoré Fragonard এর নামানুসারে যার জন্ম এই গ্রাস শহরেই। তার বাবা ছিলেন সেই সময়ের নামকরা perfumer যার সাথে হয়ত এই Fragonard কারখানার যোগসূত্র ছিল। এত ইতিহাসের প্যাঁচালের মধ্যে নাইবা গেলুম!!! পর্যটকদের জন্যে কারখানা গুলোর নিজস্ব দৈনিক ট্যুর রয়েছে যেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকে ফুলের বাগান ঘুরানো, ফুল সংগ্রহ থেকে সুগন্ধির নির্যাস তৈরির প্রক্রিয়া , নিজস্ব সুগন্ধি বানানোর সুযোগ এবং মিউজিয়াম দর্শন। তবে প্রথম দুটি জিনিস ফুলের সিজনের উপর নির্ভর করে আর শেষ দুটি সারা বছর থাকে। আমার দুর্ভাগ্য আমি যে সময় গিয়েছি তখন ফুলের সিজন ছিলোনা! ইদুরকপালে হলে যা হয় আর কি !! যেহেতু শুধু একদিন সময় নিয়ে গিয়েছি তাই একটা কারখানাই ঘুরতে পেরেছি। তো স্বভাবত সবচেয়ে বিখ্যাত Fragonard Perfume ফ্যাক্টরিতেই ঢুঁ মারলাম। সেদিন আবার ট্যুর গাইড ছিলোনা ; যা দেখবি নিজ দায়িত্বে দেখ আর যা ভুছুং বুঝার বুঝে নে কারন সব ফ্রেঞ্চে লেখা ছিল । মানে অভাগা যেদিক যাই সাগরও শুকিয়ে যায় ! তো কি আর করা, গিয়েছি যখন সব দেখেই ফিরব । প্রথমে ঢুকেই দেখলাম ইয়া বড় বড় পুরনো সুগন্ধি তৈরির সরঞ্জাম যার আগামাথা কিছুই বুঝলাম না কেমনে কাজ করে। তবে বুঝলাম এটা প্রাচীনকালে বহুল ব্যবহৃত কিন্তু বর্তমানে মেয়াদ উতীর্ণ !!! যাই হোক এরকম আর অনেক সুগন্ধি তৈরির সরঞ্জাম ছিল যা কারখানাটির প্রাচিনত্ব ও ঐতিয্যর ধারক। তাছাড়া ম্যাপ দিয়ে বিশাল একটি কক্ষে ফ্রান্সের সুগন্ধির ইতিহাস সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে দেখলুম । একটা সেকশনে সুগন্ধি তৈরির বিভিন্ন ফুলের সংগ্রহশালা ছিল। তাছাড়া বিভিন্ন কক্ষ জুড়ে প্রাচীন কাল থেকে নানা ধরনের সুগন্ধির সংগ্রহশালাও ছিল । কারখানার মিউজিয়ামটির শেষ প্রান্তে সুভেনির ও বিভিন্ন সুগন্ধিসহ সাবান ও শ্যাম্পুর বিক্রয়কেন্দ্র ছিল । বিক্রয়কেন্দ্রে প্রতিটা সুগন্ধির ঘ্রান পরখ করার জন্য স্যাম্পল ছিল । আমাকে আর পায় কে; ফ্রী তে বাঙালি আলকাতরাও খায় আর এখানে তো বিশ্বখ্যাত সুগন্ধি!!! এক একটা সুগন্ধির আলাদা আলাদা ঘ্রান; কোনটা ফুলের সৌরভ তো আর কোনটা ফলের ঘ্রান কিংবা চকলেটের , কোনটা বেশ তিব্র আর কোনটা হাল্কা! আরিব্বাস! ঘ্রাণ নিতে নিতে এমন দশা যে মাথা ঘুরানো শুরু। বিখ্যাত ফ্রাগনারদ ফ্যাক্টরি
সুগন্ধি প্রস্তুতের প্রাচীন সরঞ্জাম



সুগন্ধির প্রধান কাঁচামাল বিভিন্ন ফুল
সুভেনির শপ


গ্রাস শহর



এবার নিজস্ব সুগন্ধি তৈরির কথায় আসি; প্রতিটা কারখানার পর্যটকদের নিজস্ব সুগন্ধি বানানোর জন্যে বিভিন্ন দামের প্যাকেজ থাকে যার এপয়েন্টমেন্ট আগেভাগে নিতে হয় । তন্মধ্যে সবচেয়ে সস্তা প্যাকেজ হল ৪৫ ইউরো দিয়ে একশর বেশি উপকরন থেকে নিজের পছন্দমত উপকরণ নিয়ে ১০০ মিলি সুগন্ধি তৈরি । এক্ষেত্রে আপনার সুগন্ধি তৈরির গাইড হিসেবে একজন প্রশিক্ষক থাকে যাকে ফ্রেঞ্চে les nez বা ইংরেজিতে nose বলে । এই নোজ বাবাজি হলেন এমন এক ডিগ্রিধারী ব্যক্তি যিনি হাজারো ঘ্রান চিনতে পারেন এবং পার্থক্য করতে পারেন সাথে সাথেই ,এককথাই ঘ্রাণবিশেষজ্ঞ । আমার আগে থেকে এপয়েন্টমেন্ট না থাকাই এবং দামের কারনে সুগন্ধি তৈরির কারিগর হওয়ার ইচ্ছা বিসর্জন দিতে হল!!! শেষমেশ ৫ ইউরো দিয়ে একটুকরা সাবান কিনলুম। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো আর কি; কারন ৪০ ইউরো নীচে কোন সুগন্ধি নেই!!! গ্রাসে সুগন্ধির কারখানা ছাড়াও একটি আন্তর্জাতিক সুগন্ধির মিউজিয়াম সহ আর কয়েকটি ছোটো মিউজিয়াম, কিছু পুরনো অলিভ অয়েল তৈরির কারখানা, নিসের মত সরু সরু গলির old town, ত্রয়োদশ শতকের একটি পুরনো ক্যাথেদ্রিল যেখানে চিত্রকর Ruben এবং Fragonard এর বেশকিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। মোটকথা গ্রাস মুলত ঘন পাহাড়ি বন দ্বারা বেষ্টিত প্রাচীন ঐতিয্যের শহর যার মাঝে অনেক পাহাড়ি ঝরনা, গহীন বন, ছোটো নদী,গ্রামের সীমানা ঘেঁষে বিস্তীর্ণ ফুলের মাঠ এবং প্রাকৃতিক গুহাও রয়েছে যা হাইকিং এর জন্যে উপযুক্ত জায়গাও বটে। যারা পাহাড়, প্রকৃতি আর গ্রাম ভালবাসেন তাদের জন্যেই গ্রাস। আর সেই সাথে যদি সুগন্ধিপ্রেমী হউন তাহলে এটাই আপনার কাঙ্খিত জায়গা!!! সব ঘুরা শেষে পড়ন্ত বিকেলে পাহাড়ের ঘন জঙ্গল ছাড়িয়ে বাস ধেয়ে চলছিল গ্রাস ছেড়ে নিসের পানে আর আমি ফেলে আসলাম একরাশ সুগন্ধির সুঘ্রানের স্মৃতি।
ল্যাভেন্ডার ফিল্ড প্রাচীন সরঞ্জাম বিভিন্ন ফুলের নির্যাস যেখান থেকে নিজের মনমত নিজস্ব সুগন্ধি প্রস্তুত করা যায় ওল্ড টাউনের সরু গলি

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:৪০

আরজু নাসরিন পনি বলেছেন:

ইসস
পড়তে পড়তে পারফিউম ম্যুভিটি যেনো আবার দেখতে পাচ্ছিলাম ।
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা পড়ে।

"আয়ুথিয়া" নিকের নাম রাখার কারণ জানতে পারি?
খাগড়াছড়ি কি বিশেষ কোন কারণে আপনার অনেক পছন্দের জায়গা?
ব্যক্তিগত হলে বলার দরকার নেই।
অনেক ভালো থাকুন।
শুভ ব্লগিং।

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩০

আয়ুথিয়া বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ :) অাসলে আয়ুথিয়া নামের মাঝে হারানো জৌলুষ অার ঐতিহ্য খুজে পায় ( থাইল্যানডের প্রাচীন রাজধানী ছিলো অায়ুথিয়া) অার আমি কিনতু পাহাড়ের মেয়ে ;)

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

আরজু নাসরিন পনি বলেছেন:
ওহো...প্রিয় ব্লগার জুন-এর ব্লগে পড়েছিলাম "আয়ুথিয়া" নিয়ে।
এখন মনে পড়ছে।
বাহ আশা করি পাহাড়ি জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখবেন আমাদের জন্যে।

হাহা
মেয়ে...
আপনি আমার কাছে মেয়ের চেয়ে ব্লগার বেশি ;)

২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:৪২

আয়ুথিয়া বলেছেন: হ্যা অবশ্যই পাহাড় নিয়ে লিখবো সামনে :) :) হে হে! পাহাড়ি ব্লগার ;)

৩| ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:০৪

আরজু নাসরিন পনি বলেছেন:

পাহাড়ি ব্লগার।
এবার ঠিক আছে।

আহারে কেন যেনো রেড ব্লেড (সম্ভবত) নামের একজন ব্লগারকে খুব মনে পড়ে গেল !

আপনার মজার মন্তব্যটা পড়ে মনটা একটু হালকা লাগছে।
ভালো থাকবেন।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৫৪

চাঁদের অরণ্য বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়তে পড়তে পারফিউম সিনেমার কথা মনে পড়ল। ভালো অভিজ্ঞতা হলো। যেদিন সুনীলের ছবির দেশে কবিতার দেশে তখন থেকেই ফ্রান্স এর প্রতি ভীষন দুর্বলতা। জানি না এ জীবনে যাওয়া হবে কিনা। ভাল থাকুন। লেখা ভাল হয়েছে। আরো লিখুন ফ্রান্স নিয়ে। ভা্লই লাগছে পড়তে।

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২০

আয়ুথিয়া বলেছেন: ধন্যবাদ :) হ্যা, চেষ্টা করছি সামনে অারো লেখার. ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.