নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্ত মনের মানুষ, মনের আনন্দে কথা বলা , গান শুনতে ভালো লাগা । দেশের কথা ভেবে দিন পার করা । হলো আমার নেশা ,আমি একটা নেশা খোর , দেশের কথা ভেবে বিভর ।

আজাদ মোল্লা

মুক্ত মনের মানুষ

আজাদ মোল্লা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভুতের বাড়িতে নতুন বৌ , তাবিজ কবজে আছে বেশ !!!!!!!

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৩

সকালবেলা শাশুড়ি মা এসে হাজির হন। এসেই প্রশ্নবাণ, কি বৌমা, তুমি নাকি কাল রাত্রেও..! তারপর পরামর্শের ভঙ্গিতে বলেন, শোনো মা, এইটা নিয়া চিন্তা করার কিছু নাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এইটা জ্বীন-ভূতের কাজ। তুমি হয়তো জানো না, এই বাড়িতে ভূত আছে। এইটা একেবারে পরীক্ষিত সত্য। জানো, আমরা যখন এই বাড়িতে থাকি না তখন অনেকেই ছাদে তাদের হাঁটাহাটি করতে দেখছে। এমন কি দারোয়ান আর তার বৌ প্রায়ই শোনে, আটকা ঘরে জিকির করে। কেউ কেউ আবার নাচ-গানও শুনছে।
লিপি ধীরে ধীরে মুখ শুকিয়ে যেতে থাকে।
সেদিকে তাকিয়ে শাশুড়ি আবার বললেন, আরে তুমি কি আমার কথা শুনে ভয় পাইতেছ নাকি? ভয়ের কিছু নাই। যখন মানুষ থাকে তখন কিন্তু এরা কিছু করে না। আচ্ছা মা শোনো তো তুমি কি কিছু দেখছো নাকি?
কী, কী দেখবো?
না, মানে রাত্রি হইলে তোমার হয় কী বলোতো? আমার খুব জানার ইচ্ছা। জানো, সেই কবে থেকে শুধু শুনেই আসতেছি এখানে ভূত আছে, জ্বীন আছে, কিন্তু দেখা পাইলাম না। অথচ দেখ তুমি নতুন বৌ, তোমারে কি না ধইরা বসলো। নাও এখন এইটা রাখো।
কী এটা?
তাবিজ। আর এই বোতলে পানি পড়া।
লিপি এই ব্যপারে কোনো কৌতুহল দেখায় না। সে তাবিজটা নিয়ে খাটের সাইড টেবিলের ড্রয়ারে রাখতে যায়।
এমন সময় হা-হা করে ওঠেন শাশুড়ি। আরে কী করো, কী করো! তুমি ওটা ওইখানে রাখতেছো কেন? যাও এক্ষুণি গিয়া গোসল কইরা আসো, তারপর পানি পড়াটা খাইয়া তাবিজটা ডান হাতের বাজুতে বাঁধতে হবে।
হাতে কেন মা, কোমরে বাঁধলে হবে না? অসহায় ভঙ্গিতে বলে সে।
না, হুজুর বারবার বলে দিয়েছেন, তাবিজ যেন বাজুতে বাঁধা হয়। মেয়ে মানুষের কোমরে তাবিজ কোনো কাজে দেয় না। কেন দেয় না জানো?
রেহনুমা জানে না। তবে সে আন্দাজ করতে পারে—এই ভদ্রমহিলা এখন একটা অশ্লীল ইঙ্গিত করতে যাচ্ছেন। তাই সে তাড়াতাড়ি বললো, হ্যাঁ, বুঝতে পারছি।
কিন্তু বললেই কি আর ছাড় আছে, মহিলা গলা নিচু করে বলে যেতে থাকেন, শোনো হায়েজ-নেফাজ হলো নাপাক জিনিস। ওই সময়ে কোমরে তাবিজ থাকা মানে তাবিজও নাপাক হইয়া যাওয়া। কি, বুঝো নাই? তারপর ওই তাবিজ আর কাজ করে না।
লিপি মনে মনে প্রমাদ গোনে। এর হাত থেকে নিস্তার নেই। এখন এই ভদ্রমহিলা তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক নিয়েও একগাদা প্রশ্ন করবেন। অশ্লীল ধরনের সব প্রশ্ন। শুনে লিপির মাথা মগজ গুলিয়ে যাবে । সে এই ঘর থেকে বের হয়ে যেতে চাইবে কিন্তু এই অতি উৎসাহী শাশুড়ির হাত থেকে তার নিস্তার নেই। সে পিছু পিছু হাঁটবে আর জিজ্ঞেস করতেই থাকবে। বলো মা, সব কিছু খুইলা বলো। তেজপাতা হুজুরকে সব কিছু খুলে বলতে হবে তো!
লিপি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, এসব কথা আপনি বলবেন তাকে?
তাতে কী হইছে? হুজুরকে পুরুষ ভাববার কোনো কারণ নাই। উনি হইল ডাক্তারের মতো, ওনাকে সবই বলা যায়। তা একটু খুইলা বলতে হয় এই আর কি। ডাক্তারের মতো ওরা সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝে না আর কি। বোঝো তো ওনাদের কাজ কারবার একটু আধ্যাত্মিক লেভেলে।
লিপি তার শাশুড়ি আর তার ছেলের মধ্যে বিশেষ কোনো পার্থক্য খুঁজে পায় না। আড়তদারির ব্যবসা করে এদের শুধু টাকা আর টাকাই হয়েছে। রাজ্যের খাদ্য খাবার ইমপোর্ট করে করে গুদাম ভর্তি করেছে। মাঝে মাঝে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। টাকার ওপর ভাসছে এরা। পুঁথিগত শিক্ষাও আছে কিন্তু সেখানে রুচি আর আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। বিয়ের পর থেকে তার স্বমী রানাও তার সাথে এমন অদ্ভুত সব আচরণ করে যাচ্ছে।
প্রথম রাত পার হতেই সে ল্যপটপে একটা সিডি চালিয়ে দিয়ে বললো, চলো একটা ছবি দেখি। তুমি তো দেখি কিছুই জানো না। দেখো, এইটা দেখলে কাজে দিবে।
লিপি প্রথমে বুঝতে পারে না, সে কী জানে না যা ফিল্ম দেখে শিখতে হবে! আর এরাই বা ফিল্ম দেখে কী শিখেছে। কিন্তু ফিল্ম যত সামনে এগোতে থাকে লিপির হাত-পা ক্রমাগত শক্ত হয়ে যেতে থাকে। সে তেতো স্বরে বলে, এসব কী!
কামসূত্র, আর এই সূত্র ধরেই এগোতে হবে। দেখো এর মধ্যে কোনো অশ্লীলতা নাই। তবে এরে অশ্লীলও করে তোলা যায়। কিছু কিছু ফিল্মে দেখো নাই সামান্য জিনিসকে কিভাবে প্রেজেন্ট করে!
লিপির কানে এখন আর কোনো কথা যায় না। ধীরে ধীরে তার দম বন্ধ হয়ে আসতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ওপরে শুরু হয় ছেড়া খোঁড়ার কাজ। আর কোনো এক সময় সে এই গোর খোদককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ছুটে পালাতে চায়।
ধীরে ধীরে তার এই ব্যাপারটা প্রায় অসুখে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু তার শাশুড়ি তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে নারাজ। এই বিষয়ে তার স্বামীও মায়ের উপরে কথা বলে না। তেজপাতা হুজুরের দাওয়াইয়ের ডোজ আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়। বিচিত্র সব চিকিৎসা পদ্ধতি লিপির ওপরে প্রয়োগ হতে থাকে। প্রায় ভোররাতে উঠে গোসল করো, তারপর এক কাপড়ে দাঁড়িয়ে থাকো সূর্যের দিকে মুখ করে। তার ওপরে বিশাল এক তেজপাতার ডাল এনে ঝাড় পোছের নামে চলে পিটুনি। প্রায় দিনভর তাকে নানা গাছের ক্বাথ খাওয়ার নাম করে প্রায় না খাইয়ে রাখা হয়। তার জন্য বাইরে কোথাও বের হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। এর পরও লিপির রোগ সারার কোনো লক্ষণ দেখা গেল না। সে দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যেতে লাগলো। গলার স্বরও অস্পষ্ট। কথা বলার সময় চিঁ-চিঁ শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা যায় না। অবশেষে অবস্থা বেগতিক দেখে তার বাবা-মাকে খবর দেয়া হয়।
মেয়ের এই অবস্থা দেখে লিপির বাবা প্রায় কেঁদে ফেলেন। তিনি তখনই মেয়েকে নিয়ে যেতে চান।
লিপির শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আচরণ একেবারেই স্বভাবিক। যেন কিছুই হয় নাই এমন ভঙ্গিতে তার শাশুড়ি পান চাবাতে চাবাতে টিভিতে হিন্দি সিরিয়াল দেখছেন। লিপির বাবাকে দেখে গালের কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়া পানের রস আঁচলে মুছে নির্বিকার ভঙ্গিতে বলেন, বেয়াই সাহেব খাওয়া দাওয়া করেছেন? তা মেয়েকে কী করবেন ভাবছেন? তাকে বরং নিয়ে যান। ওকে দেখলে আমার ছেলেই এখন ভয় পায়। একটা পাগল মেয়ে গছিয়ে দিয়েছেন আমার ছেলের ঘাড়ে। এখন গিয়ে পাগলের ডাক্তার টাক্তার দেখিয়ে বেড়ান। আইন আদালত করে তো কোনো লাভ হবে না, মেয়ে তো পাগল।
লিপির বাবা কতগুলো কড়া কথা বলতে গিয়েও বললেন না। কারণ তার মেয়ে এখনো এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগের কথা বলে নাই। এই না বলার ভেতরে কতটা অভিমান কতটা অনুযোগ রয়েছে এটা তিনি জানেন। তাই মেয়েকে নিয়ে তিনি নিঃশব্দে বেরিয়ে এলেন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫২

তেলাপোকা রোমেন বলেছেন: ভাললাগা

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৬

আজাদ মোল্লা বলেছেন: অনেক অনেক শুভেচ্ছা আপনার জন্য , ভালো থাকবেন ।

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৮

রুদ্র জাহেদ বলেছেন:
মফস্বলের কুৎসিত ব্যাপারগুলো তুলে আনলেন।এই গতানুগতিক সমাজে এসব কুসংস্কার এবং পাশবিক মানসিকতা এখনো আছে।কী নিদারুণ ব্যাপার!গল্প ভালো লাগল

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩১

আজাদ মোল্লা বলেছেন: আরও অনেক আছে যাহদের কথা চিন্তা করাই মুসকিল ভাই ।
ভালো লেগেছে শুনে আনন্দীত হলাম , ধন্যবাদ আপনাকে ।

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩০

প্রামানিক বলেছেন: এরকম শ্বাশুড়ি দেশে অনেক আছে যারা নতুন বউদের ভুতের নামে নাচিয়ে ছাড়ে।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৫

আজাদ মোল্লা বলেছেন: ঠিক কথা বলেছেন ভাই , ভুত ভুত বলে জীবন নেবে কেরে । ধন্যবাদ আপনাকে প্রাামাণিক ভাই ।

৪| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৩

সুমন কর বলেছেন: রুদ্র জাহেদ বলেছেন:
মফস্বলের কুৎসিত ব্যাপারগুলো তুলে আনলেন।এই গতানুগতিক সমাজে এসব কুসংস্কার এবং পাশবিক মানসিকতা এখনো আছে।কী নিদারুণ ব্যাপার!
-- সহমত।

গল্পে আরো সময় দেবার প্রয়োজন ছিল।

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪৪

আজাদ মোল্লা বলেছেন: পরের গল্প লিখলে দাদা আপনার কথা মাথায় রাখবো । ভালো থাকবেন , মন্তব্য জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.