![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম দল বিএনপি। অথচ তাদের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড দেখে বোঝার উপায় নেই যে, বিএনপি নামে দেশে একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। সাংগঠনিক ভাবে বিএনপি অনেক দুর্বল। বর্তমান ঘটনাবলি থেকে তা আরও স্পষ্ট হয়েছে। ইতিহাসের বাঁকে দাঁড়িয়ে বিএনপি হাটছে উল্টো পথে।
কাদের মোল্লার রায় দেয়ার সময় দেশে থমথমে ভাব বিরাজ করছিল। সবার মধ্যে একটা চাপা আতঙ্ক কাজ করছিল এবং সেই সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছিল জামাত শিবির। রায়ের দিন সারা দেশে বেপরোয়া হরতাল পালন করেছিল। আর আজ সাইদির রায়ের দিন জামাত- শিবির কর্মীরা ভয়ে রাস্তায় নামে নি। ২৪ দিনের ব্যবধানে এই যে পরিবর্তন এর মূল অবদান শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের। অথচ বিএনপি এই শাহবাগ নিয়ে ইতিবাচক হতে পারছে না। কখনো কখনো শাহবাগ নিয়ে উৎসাহ জনক মন্তব্য করলেও পরক্ষনেই আবার ইউটার্ন মারছেন। রাজনৈতিক গণ্ডির মধ্যে থাকলে বিএনপিকে অবশ্যই জামায়াতকে সঙ্গ দিতে হবে কারণ তারা জোট সঙ্গী। কিন্তু এখন তো জোটের রাজনীতির সময় নয়। ভোটের হিসাবের সময়ও এটি নয়। এটি বিএনপির মাথায় রাখা উচিত।
শাহবাগকে বিএনপি আদর্শ হিসেবে নিয়েছে এটা প্রমানিত। সারা দেশে তারা শাহবাগের আদলে গণতন্ত্র মঞ্চ করার ঘোষণা দিয়েছে। তার মানে বিএনপি শাহবাগকে অন্তর থেকে পছন্দ করেছে। কিন্তু রাজনৈতিক হিসাব নিকাষের কারনে এর সাথে সংহতি জানাতে পারছে না। সংহতি জানাতে বিএনপি দুটি কারনে ভয় পাচ্ছে। প্রথমত জামায়াত দ্বিতীয়ত আওয়ামীলীগ। জামায়াতকে ফ্যাক্টর বলার কারণ হচ্ছে ১৮ দলীয় জোটের মধ্যে সবচেয়ে সহিংস দল হচ্ছে জামায়াত। যে কোন মিটিং, মিছিল কিংবা হরতালে জামায়াতের তাণ্ডব চালানোর ক্ষমতা অত্যন্ত আলোচিত। ভোটের হিসাব তো আছেই। অন্য দিকে আওয়ামী লীগের থিংক ট্যাঙ্ক শাহবাগ আন্দোলনের শুরুতেই এর সাথে সংহতি প্রকাশ করেছে। এখানেই বিএনপির আপত্তি। তাদের কৌশল তারা আওয়ামীলীগের অনুগামী হবে না। যেখানে দেশপ্রেম জড়িত, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যে আন্দোলনে ভিত্তি মূল, জামায়াত ঘৃণা যেখানকার প্রানের স্পন্দন সে আন্দোলনকে রাজনীতির নোংরা ময়দানে আনলে কি আর চলে?
শাহবাগে সংহতি না জানানোতে বিএনপির আমি কোন দোষ দেখি না। কিন্তু বিএনপি শাহবাগের চরিত্র হননের অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেল থেকে বেরিয়ে মির্জা সাহেব শাহবাগ নিয়ে ইতিবাচক কথা বললেও পরদিন তিনি ইউ টার্ন নিলেন। আমরা অবশ্য নিশ্চিত নই যে, তিনি ইচ্ছায় না অনিচ্ছায় ইউ টার্ন নিয়েছেন। বিএনপি নেতা হান্নান শাহ বললেন গোয়েন্দা সংস্থার ইন্ধনে এবং আওয়ামী লীগের মদদে আন্দোলন হচ্ছে। পরদিন বিএনপি দলীয়ভাবে শাহবাগের সাথে একাত্নতা ঘোষণা করলেও তার সাথে কতগুলো প্রশ্নবোধক অভিযোগ তুলতে ভুলেন নি। তরিকুল ইসলাম শাহবাগ আন্দোলনকে সাজানো নাটক বলে অভিহিত করেছেন। এম কে আনোয়ার, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জয়নুল আবেদিন ফারুক বিভিন্ন সময়ে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। যা সত্যিই দুখঃজনক।
গত শুক্রবার ১২ টি ইসলামি দলের শান্তি পূর্ণ বিক্ষোভকে অশান্ত করেছিল জামায়াত-শিবির। সেই দিন তারা ইসলামের নামে যা করল তা ইসলামের সাথে সঙ্গতি পূর্ণ নয়। শহীদ মিনারে হামলা করা, পতাকা ছিঁড়ে ফেলা, গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা, ব্যাংকে আগুন লাগিয়ে দেয়া কখনো ইসলামি ভাবাদর্শ পূর্ণ হতে পারে না। ইসলামের নাম ভাঙিয়ে এতদিন পার পেয়ে এসেছে জামায়াতে ইসলামি। ১৯৭১ সালের নারকীয় হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তরিতকরণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করণ সহ আরও অসংখ্য অন্যায় করেছে জামায়াতে ইসলামি। সব সময় আন্যায়কে লুকানোর জন্য ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে জামায়াত। যা বলছিলাম গত শুক্রবারে জামাত-শিবির কর্তৃক শহীদ মিনারে হামলা, পতাকা ছিঁড়ে ফেলা, গণজাগরণ মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা, ব্যাংকে আগুন লাগিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ঘটলেও বিএনপি তাৎক্ষনিক কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি। এ ব্যাপারটি অনেককেই হতবাক করেছে। তাণ্ডবের দিন না দেখালেও দুই দিন পর ঠিকই নিন্দা জানিয়েছে বিএনপি। একটা ন্যাক্কার জনক ঘটনা জানানোর জন্য যদি বিএনপির ২ দিন সময় লাগে তাহলে আপনি কিভাবে বলবেন বিএনপি মূল ধারায় আছে?
একাত্তরে যে দলটি বাংলাদেশ চায় নি তাদের সাথে বিএনপির জোট বাধাটা ছিল দীর্ঘ মেয়াদী ভুল। যে ভুলের মাশুল সবসময়েই বিএনপিকে দিতে হবে। আজকে শাহবাগের সাথে একাত্নতা না জানানোর পেছনে যারাই কল কাঠি নাড়ুন না কেন তাদের কারনে বিএনপিকে ২০১৩ সালের ইতিহাসের অংশ না হতে পারার ভয়াবহ চুলকানি নিয়েই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করতে হবে।
শুভ বুদ্ধির উদয় হোক বিএনপির। সাইদির ফাঁসি নিয়ে বিএনপি কি মন্তব্য করে তা থেকেই বোঝা যাবে দলটি টিকবে কি, টিকবে না।
©somewhere in net ltd.