![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম , আমাদের পাড়ার পশ্চিম দিঘীরপাড় জঙ্গলা খাস জায়গায় একটি উদাস্তু পরিবার এসে বাসা বাধেঁ ।জায়গাটা এতই নিরবছিল যে আমরা ছোটরাতো নই, বড়রাও কোনদিন ওখানে যাবার সাহস পায়নি , রাত্রিরে নানু -দাদুরা নাতীদের গল্পশুনাতো ঐ জঙ্গলের ভূতের গল্প বলে । সুতরাং ওখানে কেউ বাসা বাধাঁয় কারো অমত ছিল না,বরং একদল ওদের কে পিশাচঁ বলেই প্রচার করে ছাড়লো ! পিশাচঁ না হলে কি ওমন জায়গায় কেউ থাকে ? এবং আমাদের সবার মনে ওদের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারনা সৃষ্টি হলো । ওরা চার সদস্যর ছিল বাবা- মা ও ওদের এক ছেলে এক মেয়ে , ওদের কারো নাম আমাদের এখনো জানা নেই কারন ওদের কে জমষ্টিগতভাবে সমাজবর্জীত করেছিল , বলা হলো কেউ যেন ওদেরকে কাজ না দেয়, কথা না বলে । প্রথমদিকে ওরা সবার সাথে মেশার চেষ্টা করলেও না পেড়ে অপমানিত বা কখনো শারীরিক আঘাত পেয়ে কোনদিন আর কারো সাথে মেশার চেস্টা করেনি । ওরা তো ভিন্ন জাতের, ভিন্নরকম সবাই কেমন যেন কালো ছিল -খুব কুৎসিত দেখতে , ওদের দিকে তাকালে কারো মায়া হবার কথা নয় , বর্তমান সময়ও এমন অনেকমানুষ আছে যাদের দিকে একবার তাকালে আর তাকানো জায়না ঘাঁ সিউরে উঠে ওরা সবাই তেমনি ছিল । ওরা সব সময় অন্যদের থেকে দুরে থাকতো , পাড়ায় কোথাও খেলা হলে ওরা বহুদুরে থেকে দেখতো ! ওদেরকে দেখলে কেউ কেউ ওদের উপর ঢিল ছুরতো ! খেলায় পরাজিত দল ওদের উপর তেরে যেত , ওদেরকে দায়ী করতো । মানুষ হিসিবে ওদের দারিদ্রতা কারো হৃদয় স্পর্শ করেনি, শুনেচি ওরা লতা-পাতা খেয়ে থাকতো , বর্ষায় জলের ভেতর বহুদুর থেকে মাছ টুকিয়ে আনতো বা ধানকাটার পর ঈদুরের গর্ত থেকে ধানবের করতো এভাবেই ওদের সাংসার চলতো । বছর দুই পড়ে ঐ সন্তান দুটোর বাবা-মা মারা যায় , জঙ্গলের ভেতর থেকে কান্নার শব্দ আসলেও কেউ জায়নি ওদের দেখতে বরং তাদের মৃত্যুর পর এটা ছড়িয়ে ছিল ওদের বাবা-মায়ের লাশ নাকি ওরা খেয়ে ফেলছে! ওরা তো পিশাচঁ !
এবং আমাদের শিশুদের মনে আরো হিংস্রতা ফুটিয়ে তুলা হলো । আরো কিছুদিন পর ঔ পিশাচঁ পাড়ার মেয়ের কোলে সদ্য সন্তান দেখে সবার সন্দেহ হলো ! আবার কথা রটলো ওরা ভাই বোন মিলে সংসার পেতেছে! কি সাংঘাতিক ! ভাই বোন, স্বামী -স্ত্রীর মত থাকে ! আবার সন্তান জন্মও দিয়েছে । এবার এলাকর মানুষরা জোট করলো ওদেরকে এলাকা ছাড়া করবে , ভাই- বোন মিলে সন্তান জন্মদেয় ওরা! কত পিশাচঁ ওরা ! কতটাই পাপের কাজ ! একদিন সকালে উঠে শুনি কে বা কারা ওদের কে রাত্রিরে পুড়িয়ে মেরেছে তখন আমরা যেন সবাই শান্তহলাম । আহ কি শান্তি! সমাজ থেকে পিশাচেঁর অভিশাপ গেল ।
বি:দ্র:
বহুদিনপর ভেতর যখন মানবিকতার জন্মনিল ,ওদের প্রতি করুনা বা নিজেকে ক্ষমা করতে পারিনি কোনদিন । আসলে সমাজ পারিপাশ্বিকতা মাঝে মাঝে পশু বানিয়ে দেয় ।এখনও তাই , সেম টু সেম । যাদের কে সমাজের বিবেকবান মনে করি তাদের মুখে পিশাপ করতে মন চায় । আমার বাসার ধার্মিক বাড়িওয়ালা যখন উপযুক্ত টাকা পাওয়ার পরও বাড়তি দাবী করে ,তখন গাঁ ঘেন্যা লাগে ! সে বেশি নিবে আর চায়ের দোকানে সর্গের ইশ্বর কামনা করবে । রাত্রিরে ভালো করে ঘুমাবো বলে সবটাকাই ওদের হাতে তুলে দিই,-আর নিজে পান্তা খেয়ে থাকি । আমার বন্ধুরা বলে মানুষ আবার বিদ্রোহ করবি? রক্ত দিবি দেশের জন্য? রক্তদিলে দেশ উর্বর হবে ! আমি বলি -এ দেশের জন্য রক্তদিলে নিজের বিবেক বিসর্জন দিব! এই ছোট্ট জীবনে যা যা অভিজ্ঞতার স্বীকার হয়েছি তা দিয়ে কোনদিন দেশকে ভালোবাসা যায় না , বহুকাল আগেই ভুলে গেছি দেশ শব্দের অর্থ মানুষ ছিল ।
©somewhere in net ltd.