![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিকেলে টাউনহলের মাঠে বসেছিলাম সুহানার সাথে । বসে ওর বিস্তুত কোলে মাথা রেখে ও আমাকে বাদাম ছিলে খাওয়াচ্ছিলো । আছরের আযান হয়ে এলো , সুহানা উঠলো মাঠের এককোনে ব্যাগ থেকে তুয়ালে বের করে ও নামাজ পড়লো । আমি বসে রইলেম । ও নামাজ শেষ করে এলো আবার খুনসুটিতে মেতে গেলাম । সুহানা হিজাব পড়ে , মুখমন্ডলটা শুধু বিস্তুত হয়ে বের হয়ে থাকে সত্যি বলতে হিজাব এ ওকে মন্দ লাগে না । যারা এটাকটিব সবখানেই এটাকটিব এজন্যই হয়তো । কাপড়- বিশ্বাস নিয়ে আমাদের কোন ঝগড়া হয়না । আমাদের ঝগড়া হয় কে কতটা অন্যর টা খেয়ে ফেলি । সুহানার পরিবার খুবই ধার্মিক ; কয়েকবার ওদের বাসায় গিয়ে আমি হাজির হয়েছিলাম থ্রি কোয়াটার পড়ে, ওর বাবা-মাকে আমার দিকে তাকিয়ে জ্বলতে দেখিছি । সুহানা সব সময়ই আমার কাছে অসাধারণ , আমার নাকি সব কিছুই ওর ভালো লাগে । একই ইয়ারে পড়ি আমরা , ও প্রতিদিন সকালের নাস্তা নিয়ে আসে আমার জন্য , জানে মেসে থাকি সকালের নাস্তা হয় না ।
আর আমাদের দেখে অনেকেই অভাগ হয় ! একজন থ্রি কোয়াটার আরেকজন এরাবিয়ান ড্রেস ! সুহানাকে কেউ প্রশ্ন করলে ও বলে এটাই সৌন্দর্য্য ডিয়ার । কেউ কারো মত নয় কেউ যদি হুবহু আমার মত থাকে আমি তাকে কোনদিন গ্রহন করবো না । সেম কপি আমি !! মানা যায় । গত রমজানে সুহানা রোজা রেখেও আমার জন্য সকালের নাস্তা নিয়ে আসতো , ও জানে ক্ষুদা আমি সইতে পারি না । সুহানাকে একদিন আমার মেসে নিয়ে এলাম । এই দেশের বেচেলর ফ্ল্যাটে মেয়ে নিয়ে আসা মানে আশে পাশে মানুষের বুকে কাটাঁ বেধাঁ , ও হয়তো সঙ্গম করার জন্য তাকে নিয়ে এসেছে । যদি সেটা্র জন্যও নিয়ে আসে সমস্যা কোথায় ? সঙ্গম মানুষকে মুক্তি দেয়, শরীর ওজন কমায়, টেনশন মুক্ত করে । এই দেশের বেশির ভাগ অবিবাহিত ছেলেরা সঙ্গমকে পাপ মনে করে , অথচ সঙ্গম দু’জন মানুষের সম্মতির ফসল । দুপুর বেলা সুহানা এলো , ও নামাজ পড়লো ঘরে । নিজেই পরিস্কার করলো ঘর , রান্না করলো । আর আফসুস করলো, মানুষ এত অপরিস্কার হয়ে থাক তুমি ? আমি বললাম: একা গুছাতে ভালো লাগে না তুমি শক্রবার করে এসে পড়োনা একসাথে গুছাই সব কিছু । সুহানা রাজি হল । আমার বাবা-মা সুহানাকে দেখে পছন্দ করলো, তাদের ভাবনার বিষয় সব সময় ধর্মের মধ্য – ধার্মিক মানেই ভালো ! সুহানা ধার্মিক সুতরাং ও ভালো ।
কথা বলতে বলতে সুহানা বললো: তোমাকে নিয়ে বাসায় সমস্যা হচ্ছে গো । তোমার পোশাক আশাক নাকি ভালো নয়, ঐ দিন বাবা তোমাকে নামাজের জন্য ঢেকেছে তার সাথে যাওনি ওতে সে খুব মাইন্ড করেছে ।
আমি: আমি তো অসন্মান করিনি সুহানা ? বলেছি শুধু আংকেল আপনি যান, আমার একটু ব্যস্ততা আছে তাকে এড়ানোর জন্য ।
সুহানা: সে তো বুঝে না ।
আমি: এখন কি করতে হবে ?
সুহানা: কিছু না , যে বুঝে না তাকে বুঝানোর দরকার নেই । কারো ভালোলাগা না লাগা দিয়ে কি আমি আঙ্গুল চুষবো ?বাবা পরশুদিন একছেলে নিয়েএসেছিল বাসায় আমাকে দেখানোর জন্য ।
আমি: কি বলেছিলে ?
সুহানা: বাবাই বললো, তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করতে হবে । আমি বলেছি –নেবার, ইজএন্ড পসিবল । অলরেডি তোমার কথা বাসায় জানে তবুও তার পছন্দ যেন আমার পছন্দ হতে হবে । জীবনের ক্ষেত্রে নিজেকে প্রতারনা করতে পারি না ।
আমি: সেই তো । যদি বেশি চাপ দেয় চলে আসো , যেয়ো না আর ওখানে ।
সুহানা: চলে আসতে হবে না আমাকে , আমার অধীকার আমার মন ইচ্ছে , অন্যকে জয়ী হতে দিব কেন ? যদি মন থেকে না টানে । আমিতো ধর্ম কর্ম করি তুমি অত মানোনা এততো আমাদের র্তক,ঝগড়া হয়না , শুধু চার-পাচঁবার কপাল ডুশালেই ধার্মিক হওয়া যায় বুঝি ? তুমি আমার জীবনে আসবে এটাই শেষ কথা । আমরা এমনিতেই ভালো থাকবো দেখিয়ে দিব , পাশাপাশি অনেক ভাবেই ভালো থাকা যায় ।
আমি: আমার জন্য ভয় হয় কিনা করে বস তুমি ? খুব পাগলী ।
সুহানা: পাগল আমার ! যে মানুষটা চুমু খাওয়ার আগে পারমিশন নেয় চুমু খাব কিনা তাকে কিভাবে অবিশ্বাস করি বল ? তুমি না থাকা মানে পৃথিবীর অসুস্থতা । সত্যই সুন্দর । সেই সত্যিই তোমার ভেতর আছে । ছোট একটা আন্তরিকতার জন্য মানুষ একজন আরকজন কত কিছু করেছে , সত্য তোমারর ভেতর দেখিছি ! তাই সত্যার আরো গভীরে ঢুকার লোভ জন্মে ।
আমি: অনেক পড়ে ফেলেছো মনে হয় ;
সুহানা: কিসব আজব বই পড়ো তুমি –being in love, inner journey, soulemate ,Hangover .
আমি: হাহাহাহ
সুহানা: তোমার মত পাগল হতে পারবো না । তোমাকে যদি সত্য বলে ডাকি ?
আমি: ডাকতে পারো ।
সুহানা : আচ্ছা সত্য হারাবে নাতো আমায় রেখে ?
আমি: হারাবো না ।
সুহানা: সত্যিই তো ?
আমি: সত্যিই ।
সুহানা আল্লার কাছে দুয়া করি তুমি যেন , অনেকদিন আমার ভেতর বেচেঁ থাক ।
আমি: অনেকদিন নয়, যদিন পৃথিবীতে আছি বল ।
সুহানা: হুম তাই । তাহলে আজ উঠি চল , বাসায় ফিরতে হবে । কাল দেখা হবে নিশ্চয় ।
পর সুহানা চলে গেল । দু’দিন হয়ে গেল ,সুহানা ফোনে পাচ্ছিলাম না । ওর বাসায় গেল ,ওর ছোট ভাই দরজাটা খুলে দিল আর আমার দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকালো । ওকে বললাম, তোমার আপু কোথায় । ও উত্তর দিল না , পর ও বাবা এলো –আমি সালাম দিলাম । সে এসেই বললো, তুমি এসেছো কেন ?চলে যাও । আর এসো না এখানে । বললাম শুহানার সাথে দেখা করে চলে যাবো , সে মানলো না । জোর করেই সুহানাকে ডাকলাম , কোন আওয়াজ এলো না । পর তাকে পুলিশের ভয় দেখালাম ।সে এতে গললো না । পর নিচে নামলাম, ঐ বাসার বাড়িওয়ালে বললাম ।তারা বললো আমি কি করবো ভাই , তাদের মেয়ে । এলাকায় অবস্থিত কিছু বন্ধুকে ডাকলাম ওরা এলো ,ওরা ওর বাসায় গেল । পর সুহানার সাথে আমাকে দেখা করতে দিল , ওর ঘরে ডুকতেই ও আমাকে আকড়েঁ ধরলো আমাকে নিয়ে চল প্লিজ এখানে থাকলে আমি বাচঁবো না । নিচে চা খাবার নাম করে সব বন্ধুরা নামলাম পর ও চলে এলো আমার বাসায় । খুব ভালো করে সময় যাচ্ছিলো আমাদের । ছ’মাস পর ওর বাবা ওকে কল দিয়ে বললো ওর বড় ভাই এসেছে আর ওরাও আমাদের বিয়ে মানতে চায় । আমরাও সহজ মনে গেলাম ওর বাবার বাসায় । গিয়ে দেখি কিসের কি ! ওর বড়ভাই আমাকে দেখেই দৌড়ে আসে আমাকে বুকে লাথি মারলো আমি পড়ে গেলাম , সুহানা আমাকে টেনে তুললো । ভাবলাম সুহানা একা বিয়ে করেছে এটা মানতে পারেনি তাই হয়তো এমন করলো । পর শুনি সেটা নয় ,ওর বড়ভাইয়ের কথা –সুহানা তোকে তোর স্বামীরে মেরে আমরা জান্নাতে যামু , এই হারামির বাচ্ছারে তুই বিয়ে করলি ! দাড়িঁ নাই ,মাথায় টুপি নাই । বাসায় নাকি হাফপেন্ট পড়ে আসে । আমাকে এভাবে মেরে অপমান করাতে সুহানার বাবা-মার কোন প্রতিক্রিয়া ছিল না । পরদিন আটকে আমাকে ওর বড় ভাই আমাকে ব্রেন ওয়াশ করাতে চেস্টা করলো , জিহাদ করার জন্য । পর বুঝলাম ওরা ঐসব দলের তুরস্ক থেকে ওয়াশ হয়ে আসা পাবলিক । দু’দিন আটকে রাখার পর সুহানার সাথে দেখা হলো , ও আমাকে বললো – আমি তোমাকে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি মানুষ তুমি এই নরক থেকে বের হয়ে যাও । কেন সুহানা তুমি যাবে না ? সুহানা আমার কথা ভেবো না ! তুমি যদি উল্টা –পাল্টা করো ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে , সাথে আমাকেও । ওরা একা নয়, ওদের বিশাল গ্যাঙ , বাবা –মাকেও ওরা পটিয়ে ফেলছে কি যেন করে । তুমি যাও, হয়তো আমাদের সুখে থাকা আর হলো না মানুষ । না সুহানা তুমি ছাড়া আমি যাব না , আমার একটু সমস্যা আছে । বল কি সমস্যা ? আমি তোমাকে বিপদে ফেলতে চাই না ! তবুও চলো তুমি , তুমি বাচঁবে এই নরকে । তোরা জেগে যাবে , কয়েকজন ওরা ঘুমুচ্ছে যাও তুমি মানুষ দরজা খুলে দিচ্ছি আমার যা হবার হবে । আমি তো গর্ভবতী দৌড়ে নামতে পারবো না , নিশ্চয় আমরা বেচেঁ থাকবো মানুষ । এখান থেকে নেমে সুজা থানায় গিয়ে বলবে , এই ফ্ল্যাটে জঙ্গি আছে । কি ! তোমার ভাই জঙ্গি ? নানা সুহানা চল আমার সাথে , ওরা তোমাকে বাচঁতে দিবে না ? তুমি না গেলে আমি যাবো না । দরজার কাছে আসতেই শব্দগুলো ভেতর থেকে কোন ইলক্টনিক ডিভাইসের ওরা সবাই জেগে উঠলো ,দরজাটা ওপেন করে দ্রুত সুহানাকে নিয়ে বের হতে গেলেই সুহানার অর্ধেক আংশ দরজায় আটকেঁ যায় ,ভেতর থেকে টানতে থাকে ওকে ! ওর কান্না ,কষ্ট দেখে ওকে ছেড়ে দিই । ছেড়ে দিয়েই দৌড়ে নিচের তলায় নেমে খবর দিই ওপর তলায় জঙ্গি আছে । পর ভয়ে সবাই নেমে আসে , থানায় খবর দেয়া হয় আমি তাদের সব খুলে বলি , rap,পুলিশে ভরে যায় । ওদেরকে বার বার রিকুয়েস্ট করি ওরা যেন সবাইকে জীবিত উদ্ধার করে । বাইরে থেকে কয়েকবার মাইকিং করার পর ওরা সারাশব্দ দেয় না । সোয়াড টিম দরজা অব্দি গেলে ওরা বোমা ছুড়ে, দু’জন সোয়ার্ড কর্মী মারা যায় । প্রচন্ড বোমার শব্দে এলাকায় ভীতি ছড়িয়ে পড়ে । জানালা দিয়ে ওরা গ্রেনেট, বোমা ছুড়ে মারে আসে পাশে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় । পুলিশরা আমার কাছে দু:খ প্রকাশ করে বলে এভাবে আগালে ওরা আরো ক্ষয়ক্ষতি করবে তাই ওরা ডাইরেক্ট এটার্কে যেতে যায় । আমি সুহানা হারালাম বুঝি , পৃথিবীকে খুব শূন্য মনে হচ্ছিলো । যেন কিছু নেই পৃথিবীতেআর শান্তনা পাবার মত । সন্ধের পর প্রচন্ডগোলাগুলির মধ্য আল্লাওয়াকবার ধ্বংনি বের হচ্ছিলো ওদের ফ্লোর থেকে । আমি সুহানার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ও বুঝি আর নেই । এরপর বড় বড় বোমা ফাটলো ওখানে , মনে হলো সবাইকে নিয়ে ওরা আত্মহুতি দিয়েছে । আমি চুপ হয়ে গেলাম । কিছু নেই আর জীবনে , তুমি বুঝি এখানেই শেষ । যে তোমাকে না পেলে শূর্ন্য মনে হয় সেই আমি আজ থেকে একা , একি বেচেঁ থাকা ! তুমি নেই আর , তুমি নেই আর । কিসের জন্য লড়ছে ওরা ! এভাবে মরে ভালো থাকা যায় ? এভাবে বিশ্বাস আদায় হয় ? আহ । পরদিন ঔরুমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করলো , সে এসে জানালা সবাই ওরা কয়লা হয়ে গেছে ! রক্তমাংস ছিড়েঁ ভিড়েঁ আছে । সুহানাকে জোর করে ধরে ওরা মৃত্যুর দিকে নিয়ে গেল । আমাদেরকে দাওয়াত করে নিয়ে এনে এই প্রতিদান । আমরা তো চাইনি ওদের সাথে আবার দেখা হোক । একজনের বেচেঁ থাকাতে অন্যজনের এত সমস্যা হবে কেন ? কেন ?সুহানা বিধায় তোমাকে । তোমার রক্ত মাংসের শরীর ছিন্নভিন্নতা খোজঁবো না , কষ্ট বাড়বে তাতে । তুমি আমার আত্মা, ভেতরটা জানে কত গভীরতায় তুমি ।
©somewhere in net ltd.