![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১
উঠানের পশ্চিম কোনায় কামিনী গাছটার নিচে অন্ধকার জমাট বেঁধে আছে। অনেকদিন ওদিকে কারো পা পড়েনি বোঝাই যায়। আগাছা জমে জঙ্গুলে হয়ে গেছে ওদিকটা। নিজের কামরায় জানালার ধারে বসে কামিনী গাছটার নিচে ছোপ ছোপ অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে নিশি। রাতের খাবার শেষ হয়েছে অনেক আগে। বাড়ির লোকজন শুয়ে পড়েছে। আকাশে জ্বলজ্বল করছে নবমীর চাঁদ। নিশির শ্যামলা মুখে বিষাদের ছায়া তাতে কিছুই কাটেনি। সদ্য কৈশোর পেরুনো একটা রুপবতী মেয়ের বিষণ্ণতা কতো কারণেই হতে পারে। ওই যে কলেজে পড়া ছেলেটা অনেক দূর থেকে সাইকেল চালিয়ে এসে, কেবল এ বাড়ির সামনে এলেই চেইন পড়ে যায়, সে কি নিশির বিষণ্ণতার জন্য দায়ী হতে পারেনা? একটা সাইকেলের ঘন্টিকি দোয়েলের শিস হতে পারেনা? কিংবা নিশির জানালার পাশে সেই মরে যাওয়া আতা গাছটা? কত রাত একা একা কথা বলেছে সে গাছের সাথে? ওটার জন্যকি নিশির মন পোড়ে না? সুপারি গাছের খসে পড়া পাতা জমিয়ে রেখেছে কতদিন হলো, চড়া হয় না। মেজ ভাইজানের ছেলেটা প্রতিদিন বায়না করছে ওকে দিয়ে দেবার জন্য। প্রাণে ধরে দিতে পারছে কই! কৈশোর হারানোর কষ্ট কি ওকে পোড়ায় না?
গত দুদিন সাইকেলটা এলো না, কিংবা এই যে সেজ ভাবি ওর আলতার শিশিটা লুকিয়ে ফেললো। ওর কষ্ট হয় না বুঝি! চুলে বিনি করে রোজ বিকেল থেকে দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে প্রহর গোনা, আলতায় পা ডুবিয়ে উঠোনজুড়ে একা একা এক্কা দোক্কা খেলা। ওর ক্লান্ত লাগে না বুঝি! আচ্ছা ও এলো না কেনো? কদিন বেশ সাইকেল চালিয়ে চলে গেলে, কার বুক মাড়িয়ে গেলে একটু ফিরে দেখবে না! বাহ!
জ্যোৎস্নার আলোয় চরাচর ধুয়ে যাচ্ছে। অন্ধকার থেকে চোখ ফিরিয়ে আকাশে চাঁদের দিকে তাকায় নিশি। নবমীর চাঁদটা ওদের উঠানে ইউকেলিপটাস গাছের মাথায় বসে আছে। ওর বুকটা হু হু করে ওঠে। অদ্ভুত এক হাহাকার ওর ভেতরে গুমরে ওঠে। কেন এমন হয়? কেন মনে হয় ওর কেউ নেই? কিছু নেই?
২
পড়ার টেবিলে বই সামনে নিয়ে বসে আছে আযহার, জুলমত চেয়ারম্যানের ছোট ছেলে। নিয়ামতউল্লাহ ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। পড়ায় মন নেই। গত পরশু বাজার থেকে ওর সাইকেলটা চুরি হয়ে গেছে। কাল থেকেই একটা নতুন সাইকেলের জন্য মায়ের কাছে বায়না ধরেছে। মা গা করছে না। মাকে শাস্তি দেবার জন্য রাতে রাগ করে খায়নি কিছু। ওর চোখে কেবল একটা বাড়ির ছবি ভাসছে। মাথায় বিনি করা একটা শ্যামলা মুখের ছবি ওর দৃশ্যময় পৃথিবী আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আকাশে জ্বলছে নবমীর চাঁদ। জ্যোৎস্নায় থৈ থৈ করছে চরাচর। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। ভীষণ অসহায় একটা ক্ষোভে, দুপুর থেকে অনাহারী পেটের যন্ত্রণায় থেকে থেকে চোখে জল জমছে।
৩
ধবধবা পূর্ণিমায় খোলা মাঠে সাঁই সাঁই করে সাইকেল চালাচ্ছে কামারুলের দশ বছরের ছেলে বাদল। বাতাসে ভাসছে যেনো। ছেলেটা তিন বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে বাবার কাছে কাঁদছিলো একটা সাইকেলের জন্য, গত পরশু কোথা থেকে এই সাইকেলটা নিয়ে হুড়মুড় করে বাবা ঘরে ফিরলেন। দুদিন বাবা ধরে ধরে শিখিয়েছেন, আজ নিজেই চালাতে শিখে গেছে। সাইকেল চালাচ্ছে আর থেকে থেকে খুশিতে চিৎকার করছে। আকাশে জ্বলজ্বল করছে নবমীর চাঁদ। মাঠের একপাশে বসে ছেলের সাইকেল চালানো দেখছে কামারুল। মাঝে মাঝেই লুঙ্গি উঠিয়ে চোখ মুছছে। ছেলেটার কোন সাধ কখনো পূরণ করতে পারেনি সে। আজন্ম হাঁপানিতে ভোগা, অতি দরিদ্র কামারুল ছেলেকে নিয়ে পেটপুরে খেতেই বা পেরেছে কবেলা? মা মরা দশ বছরের ছেলের আনন্দ আজ ওকে অদ্ভুত এক মুগ্ধতায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
৪
সারারাত জ্বলে ভোর রাতের দিকে নিঃশেষ হয়ে আসে নবমীর চাঁদ। চন্দ্রাহত মানুষেরা তাদের অন্তর্গত আনন্দ বেদনা নিয়ে একটা বিনিদ্র রাত অপেক্ষায় কাটিয়ে ঘুমে ঢলে পড়ে। পৃথিবীর হাজার বছরের পথচলায় মানুষ এবং প্রকৃতির এই অদ্ভুত মাখামাখির দায় চাঁদের নয়, হতভাগ্য মানুষেরাই কেবল এই ক্ষত বয়ে নিয়ে বেড়ায়।
২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৩২
আসাদ কাজল বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১০:৪৬
মা.হাসান বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।
৪| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৩
আসাদ কাজল বলেছেন: ধন্যাবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।