নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদ কাজল

আসাদ কাজল

খেয়ালি, পড়তে ভালোবাসি, মাঝে মাঝে নিজেই কিছু লিখি।

আসাদ কাজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এমিগডালা হাইজ্যাকিং

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৩৫

ঘটনা ১: দুপুরে খেয়ে রিক্সা নিয়ে বেরিয়েছে ছোটখাটো গড়নের জলিল মুন্সি। রাস্তা ফাঁকা। খালি রিক্সা নিয়ে রাস্তার এক পাশ ঘেঁষে সওয়ারির আশায় ধীরে ধীরে রিক্সা টানছে। গলির মুখে কিছু ছেলেপেলে জটলা করছে। ওদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কে একজন চিৎকার করে বললো, ‘মোবাইল! মোবাইল!’ অমনি রিক্সা ছুড়ে ফেলে দিয়ে হুঙ্কার দিয়ে ছেলেগুলোর দিকে ছুটলো জলিল মুন্সি। মুখ দিয়ে চলছে গালাগালির ষ্টীম। প্রচণ্ড ক্রোধে মুখ দিয়ে লালা গড়িয়ে পড়ছে। হাতে পাথর নিয়ে এলোমেলো ছুড়ে মারছে।

ঘটনা ২: সবে রান্নাঘরের ফ্লোর মুছে বেরিয়েছে বীথি। খুব কষ্ট হয়েছে। রান্নাঘর ভর্তি জিনিস! কখনো উবু হয়ে বসে, কখনো হামাগুড়ি দিয়ে, সবকিছু গুছিয়ে, সাফ করে, ফ্লোর মুছে যখন বেরিয়েছে, ঠিক তখনই ওর পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চাটা এক বাটি দুধ নিয়ে টলমল পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ওখানে। বাটি ভেঙ্গেছে, দুধ ছিটকে রান্নাঘরের প্রতিটা কোনায় ঢুকে পড়েছে। মুহূর্তে মাথায় আগুন ধরে গেলো বীথির। কিছু বোঝার আগেই বাচ্চাটাকে জাপটে ধরে সটাসট মার! ভীষণ ক্রোধে সারা গা কাঁপছে!

ভেবে দেখুন, এরকম নির্দিষ্ট কিছু শব্দ শুনে বা এরকম কিছু কাজের জন্য চট করে রেগে আগুন হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এমন মানুষ আমাদের চারপাশেই আছে। কেবল ‘মোবাইল’ না, মনোবিদগণ বলছেন, শব্দগুলো ইতিহাস নির্ভর কোন শব্দও হতে পারে, রাজনৈতিক হতে পারে, ধর্মীয় কোন শব্দও হতে পারে। একই শব্দ সবাইকে পাগল করে দেবে, হিতাহিত জ্ঞান লোপ পাইয়ে দেবে, এমনটা নয়। আবার একই কাজের প্রতিক্রিয়া সবাই একভাবে করবে তা নয়।

কেনো এমন হয়? আপাত সংসারী, নিরীহ লোকগুলো নির্দিষ্ট কিছু শব্দ শুনে বা দৃশ্যমান কোন কাজের প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে কেনো?

সেরিব্রাল কর্টেক্স বা কর্টেক্স হচ্ছে আমাদের মস্তিস্ক বা ব্রেইনের বহিরাংশ যেটা যুক্তি বা বিবেচনাবোধ নিয়ে কাজ করে। মানব মস্তিস্কের এই অংশটা অপেক্ষাকৃত নতুন। আধুনিক। আর মস্তিস্কের যে অংশটা আমাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে ওটাকে বলে লিম্বিক সিস্টেম। ওটা ব্রেইনের নিচের স্তর। ব্রেইনের এই অংশটা যুক্তিবাদী অংশের চাইতে পুরাতন, আদিম বা প্রিমিটিভ। তাই, যিনি যুক্তির বাইরে, গায়ের জোরে, রাগের বশে বা উত্তেজিত হয়ে কিছু বলছেন বা করছেন, তিনি মস্তিস্কের আধুনিক অংশ কর্টেক্স ব্যবহার করছেন না, বরং মস্তিস্কের আদিম অংশ লিম্বিক সেন্টার ব্যবহার করছেন। মোদ্দা কথা তিনি পশুর স্তরে আছেন।

আমাদের মস্তিস্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী অংশে ‘এমিগডালা’ নামে একটা জায়গা আছে যেখানে আমাদের সব আবেগের স্মৃতিগুলো জমা থাকে। এই এমিগডালা জায়গাটাই কিন্তু আমাদের রাগ বা ক্রোধের আঁতুড়ঘর। কারণ, আমাদের চারপাশ থেকে যে তথ্যগুলো আসে ওগুলোকে শুরুতে এমিগডালা দিয়ে পাস করতে হয়। এমিগডালা সিদ্ধান্ত নেয় তথ্যগুলোকে লিম্বিক সেন্টার বা আবেগের জায়গায় পাঠাবে নাকি কর্টেক্স বা যুক্তির জায়গায় পাঠাবে।

এমিগডালাতে যেহেতু ইমোশনাল স্মৃতিগুলো মজুদ থাকে, বাহির থেকে ঢোকা কোন তথ্য এমিগডালা দিয়ে পাস করার সময় ওখানে আগে থেকে স্টোর করা কোন আবেগি স্মৃতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে এমিগডালাকে উত্তেজিত করে তুলতে পারে। অনেকটা হিপনোটিক সাজেশানের মতো। উত্তেজিত এমিগডালা তখন তথ্যটা কর্টেক্সকে পাঠাবে না। সোজা লিম্বিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেবে। যেটা সে মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজিত করে তুলবে। মানুষটা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। পরিণতি চিন্তা করবে না। মানুষের মস্তিস্কের এই ঘটনাকে বলে ‘এমিগডালা হাইজ্যাকিং।‘

আর এমিগডালা হাইজ্যাক হলে কি হয়? আমাদের শরীরে অনেকগুলো হরমোন একসাথে বেরিয়ে আসে। শরীরজুড়ে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং শক্তির সঞ্চার হয়। আমাদের কর্টেক্স বা যুক্তিবাদী অংশ পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে। আমরা মস্তিস্কের আদিম অংশ নিয়ে পশুর মত হুঙ্কার দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

অবশ্য হাল ছেড়ে দেবার মত কিছু নেই। মস্তিস্কের এই পাগলামো কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট স্থায়ী। তারপর আবার কর্টেক্স কার্যকর হবে। তখন আমরা আবার যুক্তিবোধ ফিরে পাই। আগের ব্যবহারে লজ্জিত হই।
আমাদের চারপাশে, একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পারেন, আপাত শিক্ষিত অনেক মানুষই এখনো আদিম লিম্বিক সেন্টার নিয়ে কাজ সারেন। যুক্তিবোধ বা কর্টেক্স এর ব্যবহার করেন না। তাঁদের চিকিৎসা দরকার। আর... এই চিকিৎসা আন্তরিকতা নিয়ে, সময় নিয়ে করতে হয়। লিম্বিক সেন্টার ব্যবহারকারি সেসব মানুষদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। আপাতত এই প্রার্থনা করছি।

সূত্রঃ
Goleman, D. (1995). Emotional intelligence. New York: Bantam Books.

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:৩৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: রাগ বা ক্রোধের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সহ নিয়ন্ত্রনের পথ পাথেয় সমৃদ্ধ পোষ্ট +++

যাইকন না কন মাঝে মাঝে রাগ করা ভালা ;)
সবাই যদি কুল কুল হয়ে যায়- কেম্নে কি?
জীবনের উত্তেজনা হারিয়ে যাবেনা ;) হা হা হা (ফান)

ভাললাগা জানবেন।

+++

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৪

আসাদ কাজল বলেছেন: তা ঠিকই বলেছেন। জীবনটাকে মসলাদার করার জন্যে, মাঝে মধ্যে রাগারাগি করাই যায়। তবে চেষ্টা করতে হবে রাগটা যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। হিতাহিত জ্ঞান থাকে যেন। তা না হলে, দেখবেন একটা বিপদ বাঁধিয়ে বসেছেন। ভালো থাকবেন। :)

২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:৫৮

মা.হাসান বলেছেন: ভালো পোস্ট, ধন্যবাদ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫

আসাদ কাজল বলেছেন: স্বাগতম। ভালো থাকবেন।

৩| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১১:০৩

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: উদাহারণ সহ ভালো ব্যাখ্যা: ভালো লাগলো ।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৫

আসাদ কাজল বলেছেন: ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৪| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০০

রাজীব নুর বলেছেন: এমিগডালার কাজ হলো মানুষের ভীতিমূলক চিন্তাধারায় সাড়া দেওয়া।

৫| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:৫৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার পোস্ট, লাইক দিয়ে সরাসরি প্রিয়তে। +++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.