নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসাদ কাজল

আসাদ কাজল

খেয়ালি, পড়তে ভালোবাসি, মাঝে মাঝে নিজেই কিছু লিখি।

আসাদ কাজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অতঃপর বৃষ্টি এলো..

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩২

“অতঃপর বৃষ্টি এলো। টানা গরমে শরীরে মনে জমে থাকা চটচটে ক্লেদ ধুয়ে মুছে অদ্ভুত সতেজতায় গা ঝাড়া দিয়ে উঠলাম যেনো। জানালায় ঝোলানো মানিপ্ল্যান্টের পাতাগুলো তৃষ্ণা মেটাতে ভেজা গ্রিলের ফাঁকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ঝরঝর ঝরঝর আষাঢ়ের গল্পটা কাল রাতের অন্ধকার এখনো বুকে জড়িয়ে রেখেছে। একটা প্রজাপতি আমার কেবিনের দেয়ালে ঝুলে আছে। ওর ভ্যালভ্যাট রঙিন পাখা থিরথির কাঁপছে। প্রজাপতিটাকে ছুঁতে ইচ্ছে করছে খুব। জানালার নিচে হাসপাতালের গলিটাতে জল জমে গেছে। ছপছপ ছপছপ জল কেটে রিক্সা চলছে। মানুষও। পাশের উঁচু বড় বাড়িটার কার্নিশে এক জোড়া ভেজা কাক দেখা যাচ্ছে। এ ওর গায়ে ঠোঁট ঘসছে। কাকবউতো এসময় ডিমে তা দেবার কথা! কে জানে? হয়তো বাসা বেঁধেছিলো। হয়তো ভালোবেসে ডিমও ফুটিয়েছিলো। হয়তো নষ্ট হয়ে গেছে। দেখো পাখিরা কত অবলীলায় নষ্ট ডিমের কষ্ট ভুলে যায়। আবার ভালোবাসে। অথচ, আমাদের মেয়েটাকে ভুলতে পারলাম না কেউই। কেউ কি জানে, কতোটা অভিমান জমাটা বাঁধলে একটা ভ্রূণ নিজেকে হত্যা করে?

সকালে ঘুম থেকে জেগে তোমাকে দেখিনি। আমাকে ঘুমে আটকে রেখেই তুমি বেরিয়ে গেছো। একটু আগে ঘুম ভাঙালে কি এমন ক্ষতি হতো? বিছানার পাশে তোমার রেখে যাওয়া বইটাতে চোখ বুলোচ্ছি। দ্য ফল্ট ইন আওয়ার স্টারস। বইটা পড়লে যে কেউ ক্যান্সারকে ভালোবেসে ফেলবে, তা কি জানো তুমি? নাকি জেনে বুঝেই আমাকে পড়তে দিয়েছো। আচ্ছা...আমার প্রথম ক্যামো নেবার দিনের কথা মনে আছে তোমার? কি সব আজে বাজে বকছি তাই না? সেসব কি ভোলা যায়?

অপারেশন হলো। ক্যামো হলো। তারপর? তারপর কি হবে আমার? উত্তরটা সবাই জানি। রুদ্রের কবিতাটা মনে আছে তোমার? চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়। কি জানো, আমাদের মেয়েটা চলে গিয়ে ভালোই হলো। কে দেখতো ওকে বলো? আমার অনুপস্থিতি, তোমার ব্যস্ততা...অভিমানে এমনিতেই শেষ হয়ে যেতো ও। কি সুন্দর তুলতুলে হাত দুটো। আলট্রাসনোতে মুখে পুরেছিলো একটা আঙ্গুল। তুমি অবাক হয়ে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করেছিলে, মেয়েটা কি হাসছে?

মেয়েটাকে গান শোনাতে তুমি। ডাক্তার বলেছিলেন তেইশ সপ্তাহ থেকে বাচ্চা শব্দ শুনতে পারে। সাড়া দেয়। প্রতিদিন অফিস থেকে ফিরে তুমি গান শোনাতে ওকে। সপ্তাহখানেক যেতেই আমরা টের পেলাম তোমার গান শুনতেই মেয়েটা কেমন স্থির হয়ে যেতো। দুহাত বাড়িয়ে দিতো কি? তোমার দিকে?”

এটুকু লিখার পরই বীথির হাতটা কেমন অবশ হয়ে এলো। নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। হাতড়ে হাতড়ে বিছানার পাশে রাখা সুইচে চাপ দিলো।


অফিসে নিজের ডেস্কে বসে অনেক আরাধ্য প্রমোশনের মেইলটা সবে খুলেছে শাহেদ। এমন সময় হাসপাতাল থেকে ফোনটা এলো। সবকিছু ওভাবে রেখে ছুটতে ছুটতে হাসপাতালে এসেছে। বীথির কেবিনে এক হাতে বীথির চিঠিটা আর অন্য হাতে বীথির ডান হাতটা ধরে অপেক্ষা করছে বর্ষীয়ান নার্স রেবেকা। বিড়বিড় করে কি যেনো পড়ছেন তিনি। তাঁর বন্ধ দুচোখ বেয়ে অঝোরে গড়িয়ে পড়ছে জল। হয়তো বীথিকে ঈশ্বরের হাতে সঁপে দিচ্ছেন। শাহেদ বুঝতে পারলো সব। প্রায় এক যুগের একটা সম্পর্কের গ্রন্থি ছিঁড়ে একজন মানুষ চলে গেলো। ভীষণ যন্ত্রণা পেয়ে গেলো। গত চার মাস ধরে এ দিনটা থেকে পালিয়ে যেতে চাচ্ছিলো শাহেদ। পারলো না। শাহেদকে দেখে বীথির চিঠিটা ওর হাতে দিয়ে ধীরে ধীরে কেবিনের দরজা লাগিয়ে বেরিয়ে আসে রেবেকা। রেবেকা বেরিয়ে যেতেই বীথির দুহাত বুকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে শাহেদ।

You don’t get to choose if you get hurt in this world… but you do have some say in who hurts you. I like my choices.
- John Green, The Fault in Our Stars.



মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আমি এখন চিন্তিত- বাংলাদেশের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিম্নমানের দূষণনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি মানে চরম দূূষিত পানি ও বাতাস।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.