![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মধ্যবিত্ত সংসারের একেবারে অন্দরমহল মানে রান্নাঘরের তেল লবন কিংবা খুন্তি বেলুনের নিত্যকার আলাপ থেকে শুরু করে দাম্পত্যজীবনের খুঁটিনাটি নিয়ে সত্তুরের দশক পর্যন্ত যতো সাহিত্য হয়েছে, এর পরে আর তেমন জমিয়ে কোন সাহিত্য দেখা যায়নি। সেটা মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক বিকাশ বা সংকটের কারণে হতে পারে। সে আলোচনায় আজ যাচ্ছিনে। তবে জোর দিয়ে বলতে চাই, এখনো দারুণ সব গল্পের প্লট মধ্যবিত্তের শোবার ঘরে কিংবা রান্নাঘরে নিত্য তৈরি হচ্ছে।
এই যেমন, এক বন্ধুর কথা বলতে পারি। খুব কাছের বন্ধু। আড্ডায় আমরা প্রায়ই এটা ওটা আলাপের ফাঁকে নিজেদের সাংসারিক টানাপোড়েনগুলো নিয়েও কথা বলি। যেদিন খুব মন খারাপের গল্প হয়, সেদিন চিনি ছাড়া চা খাই। যেদিন আনন্দের গল্প হয় সেদিন চায়ে দু চামচ চিনি বাড়িয়ে দেই।
একদিন আড্ডায় বন্ধু গোমড়ামুখো। ওকে দেখে আমার মনটাও খারাপ হয়ে গেলো। আজও চিনি ছাড়া চা খেতে হবে। যথারীতি চিনি ছাড়া চা হাতে বন্ধুটি বললেন, গত দুরাত ঘুমোতে পারেন নি। প্রিয়তমা স্ত্রী তাঁর কাঁথাটি কোথাও লুকিয়ে রেখেছেন।
আপনারা মুখ টিপে হাসছেন হয়তো। মানছি, এটা জনগুরুত্ব বিবেচনায় আসার মতো কোন লেখা নয়। কিন্তু বন্ধুটির কাঁথা অন্ত প্রাণ। ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি কাঁথা গুটলি পাকিয়ে বুকের কাছে জড়িয়ে ধরে ঘুমোয় ও। হা হা করে খানিক হাসলাম। জানতে চাইলাম, ‘এখনো কি কাঁথা জড়িয়ে ঘুমাস?’
‘হ্যাঁ। কাঁথাটা গুটলি পাকিয়ে বুকে জড়িয়ে দেয়ালের দিকে মুখ দিয়ে ঘুমাই।‘
‘এখনো? ছোটবেলা থেকে দেখছি তোকে। তা বউ পাশে নিয়ে দেয়ালের দিকে মুখ করে ঘুমোলে হয়?‘
‘প্রতিরাতে বউয়ের কাছে ওর বাবার বাড়ির আলাপ শুনতে ভাল্লাগে না। ভাই কি করেছে, বোন কি করেছে, বোনের জামাই কি করেছে...। একই আলাপ। জানিস... কাঁথাটা গুটলি পাকিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরলেই মাথার ভেতর থেকে সবকিছু মিলিয়ে যায়।... কাঁথার নরম উষ্ণতা গায়ের রোমে রোমে ছড়িয়ে পড়ে। নিজের কাছে নিজে ফিরে আসি। ... কেবল তখনই মনে হয়, আমি আমার ঘরে আছি, আমার বিছানাতে আছি।‘
‘সেকিরে! বউকে বিছানার খোলা পাশটা দিয়ে দিয়েছিস?’ অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলাম।
বিছানার খোলা পাশে শোয়া নিয়ে আমার সাথে আমার স্ত্রীর প্রতি রাতের মান অভিমান। অথচ, ও কেমন অবলীলায় বউকে সেটা দিয়ে দিয়েছে।
‘হ্যাঁ।‘
‘কি বলছিস? তাও কাঁথা লুকিয়ে রাখলো?’
আমি এখনো বুঝতে পারছি না, বিছানার খোলা পাশে শুয়েও কেউ কি করে এতোটা নিষ্ঠুর হতে পারে।
‘এতো সুস্পষ্ট মানবাধিকার লঙ্ঘন! তুই জিজ্ঞেস করিসনি? কি বলেছে?’
‘বলেছে, হয় ও থাকবে, নয় কাঁথা!‘
হা হা হা করে হেসেছিলাম। বন্ধুর মন খারাপ। কিছুতেই ঘুমাতে পারছে না। কাঁথা বুকে জড়িয়ে নিরুপদ্রব, শান্তিময় ঘুম চায় ও।
আরেক বন্ধু আছেন। ব্যাংক কর্মকর্তা। সকালে বেরিয়ে যান, রাত নটা নাগাদ ঘরে ফেরেন। স্বভাবতই ভীষণ ক্লান্ত থাকেন। ঘরে ফিরে গোসল করে খাবার খেয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমে কাদা। গিন্নী তাগাদা দিতে থাকেন, ‘এখন ঘুমাবে না। কথা আছে। ঘুমাবে না। ঘুমাবে না...‘ কখনো মিনতি, কখনো অভিমান। কিছুতেই কিছু হয় না। বন্ধুটি মাঝে মধ্যে অপরাধবোধে ভোগেন। স্ত্রীকে সময় দেয়া হচ্ছে না। ব্যস, ওটুকুই। জীবন যেমন চলছিলো, চলতে থাকে। বন্ধুটি অপরাধবোধের গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে হাত পা ছড়িয়ে শিশুর মতো করে ঘুমোতে চান।
এরকম সংসারী ইংরেজ ভদ্রলোকদের মধ্যে একটা কৌতুক প্রচলিত আছে।
“ওয়ান নাইটার ট্রলিব্যাগ নিয়ে মি. জন পাঁচ-তারা হোটেলে ঢোকেন এবং চেক ইন কাউন্টারে পৌঁছেন।
মি. জনঃ- একটি ডাবল বেডরুম প্লিজ।
রিসেপশনিস্টঃ- কিন্তু স্যার, আপনি তো একা।
মি. জনঃ- হ্যাঁ, তা ঠিক। কিন্তু আমি বিবাহিত। আমি বিছানার ওপাশ থেকে বিশুদ্ধ এবং পূর্ণ নিরবতা উপভোগ করতে চাই। “
সংসারী মধ্যবয়সী পুরুষকুলে একটা বড় বিছানায় নিরবচ্ছিন্ন নিরবতায় হাত পা ছড়িয়ে ঘুমানোর ইচ্ছেটা সার্বজনিন বলে মনে হচ্ছে।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:১৭
আসাদ কাজল বলেছেন: হে হে হে তা মন্দ বলেন নি।
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩১
শায়মা বলেছেন: আমার মনে হয় বন্ধুদের বৌদের মনের কথাগুলোও জানবার ছিলো। তাদেরও মনে হয় নিরুপদ্রপ বিছানার আরেক পাশ নিয়ে নিরবিছিন্ন ঘুম ঘুমাতে ইচ্ছা হয়। তা না করে হয়তো গুটিশুটি মেরে কোনো ভোম্বল দাস হাসব্যান্ডের নাক ডাকা শুনতে শুনতে রাত পেরিয়ে যায়! কে জানে!
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৩
আসাদ কাজল বলেছেন: তা ঠিক। অপর পক্ষের বক্তব্য না শুনে মন্তব্যের ইতি টানা যাবে না। ইতি টানছিও না। দেখা যাক, নতুন কোন ভাবনার দেখা মেলে কিনা। ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১৬
কনফুসিয়াস বলেছেন: হাহাহাহা। কিছু বলব না।
কবি এখানেই নীরব
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:২৪
আসাদ কাজল বলেছেন: হে হে হে । বুঝলাম, আপনি নিরাপদে থাকতে চান।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১২
রাজীব নুর বলেছেন: মধ্যবিত্তদের অনেক কষ্ট।