![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“মেরী ক্রিসমাস!”
ছন্দময় টুংটাং শব্দে ইনবক্সে ম্যাসেজটা আসলে, কম্পিউটারের সামনে ঝিমুতে থাকা শাহেদ চোখ তুলে তাকায়। ষোলশহরের আল ফালাহ গলিতে ওদের পাঁচতলা বাড়ির চিলেকোঠায় মনিটরের পাশে পা দুটো লম্বা করে দিয়ে ঝিমুচ্ছিলো শাহেদ। একটা অনলাইন ডেটিং সাইটে প্রোফাইল আপলোড করে অপেক্ষা করছিলো ও। এটা আজকাল নিঃসঙ্গ, একা থাকা মানুষদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এরকম ওয়েব সাইট অনেক আছে। ইউজাররা জমকালো একটা স্ক্রিন নাম ব্যবহার করে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, বয়স, অবস্থান এসব তথ্য দিয়ে একটা প্রোফাইল বানিয়ে এসব সাইটে দিয়ে রাখে। সাইটে অবস্থানকারী কেউ এসব প্রোফাইল দেখে কাউকে ভালো লাগলে, তাৎক্ষণিক ম্যাসেজের মাধ্যমে আলাপ করতে পারে, কিংবা কারো অনুপস্থিতে ম্যাসেজও দিয়ে রাখতে পারে। শাহেদ সাইপ্রাসে সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে ইস্তাম্বুলে একটা কোম্পানিতে সিকিউরিটি এনালিস্ট হিসেবে কাজ করেছে গত পাঁচ বছর। গত বছর তিনেক ধরে তুরস্কে সিরিয়া এবং আই এস নিয়ে ঝামেলা শুরু হলে, ওর মা পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলেন। সকাল বিকেল ফোন করছিলেন, শাহেদ যেনো সবকিছু ছেড়ে দেশে চলে আসে। শাহেদ একথা ওকথা বলে ওর মাকে ভুলিয়ে রাখছিলো। ওর একটা ঝামেলাও ছিলো। ওর অফিসের এক তুর্কি ক্যাথলিক মেয়ের সাথে গত তিন বছরের সম্পর্কের কথা শাহেদ ওর মাকে জানায়নি। অবশ্য মা’কে জানানোর মতো আত্মবিশ্বাস ওদের সে সম্পর্কে ছিলো না। মাস তিনেক আগে, মেয়েটা অন্য কারো সাথে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে চলে যায়। শাহেদ ভেঙ্গে পড়ে। কিছুই ভালো লাগছিলো না ওর তখন। দেশে চলে আসে শাহেদ। দেশে এসে, এদিক সেদিক কিছু কাজ করেছে। ভালো লাগেনি। এখানকার কাজের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিলোনা। ধীরে ধীরে ও আউটসোর্সিং এর কাজ শুরু করে। সারাদিন কম্পিউটারেই কাজ। ওদের পাঁচতলা বাড়ির চিলেকোঠায় নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলে শাহেদ। কাজের ফাঁকে ইন্টারনেটে ছবি দেখে বা দেশী বিদেশী খবরের কাগজের পাতা ব্রাউজ করতে করতে একসময় ক্লান্ত লাগলে শুয়ে পড়ে।
আজ পঁচিশে ডিসেম্বর। ক্রিসমাস ইভ! ইস্তাম্বুলের স্মৃতি ওকে এখনো তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়। এখন অবশ্য রাত দুটোর মতো বাজে। পুরো বিকেল ঘুমিয়ে, সন্ধ্যা থেকেই কম্পিউটার নিয়ে বসেছে। একটা কাজের ডেডলাইন বেশ কাছে চলে এসেছে, অথচ, কাজটাতে হাতই দেয়া হয়নি। এলগরিদমগুলো সাজাতে পারছিলো না। মনটা কেনো যেনো ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। একটা ডেটিং সাইটে প্রোফাইল আপলোড করে অপেক্ষা করতে করতে ঝিমুনি মতো এসে গিয়েছিলো ওর। হঠাৎ ইনবক্সে ম্যাসেজ আসার শব্দে চোখ তুলে তাকায়।
“মেরী ক্রিসমাস!” ও নিজেও প্রতি উত্তর দেয়।
“হু আর ইউ?”
“সারটেনলি আ সান অব এডাম...” ইচছে করেই ফাজলামো করছে শাহেদ।
“তোমার স্ক্রিন নাম দেখছি ‘গ্যেস মি’, ভাবছি চেনা কেউ কিনা।“
“আমরা কি আসলেই কেউ কাউকে চিনি? নিজেকেই কি তুমি ঠিক চিনতে পেরেছো?”
“হুম... ঠিক আছে, আমার চেনা কেউ নও। ফিলসফি করে তেমন কাউকে চিনি না আমি।“
“হে হে হে... কোথায় থাকো তুমি?”
“নিউ ক্যাসেল আপন টাইন, ইউ কে তে, তুমি?”
“আমি চট্টগ্রামে।“
“ওটা কোথায়?”
“গুগল করো..”
“আহ! বলেই ফেলো, গুগল করার ঝামেলায় যেতে ইচ্ছে করছে না।“
“বাংলাদেশের নাম শুনেছো?”
“ওটা কোথায়?”
“ইন্ডিয়ার নামে শুনেছো?”
“অবশ্যই! আমার খুব কাছের কজন বন্ধু আছে ইন্ডিয়ান। ভীষণ অমায়িক, ভালো মানুষ ওরা।“
“হতে পারে। আমাদের দেশটা ওদের গায়ের সাথে লাগানো।“
“ওহ, তাই! সেতো অনেক দূরে! তোমাদের ওখানেও কি এখন শীত? ঠাণ্ডা কেমন পড়ছে এবার?”
“একই গোলার্ধের মানুষ আমরা। এখানেও শীতকাল। তবে, ঠাণ্ডা তেমন নেই। এই ধরো, এখন টেম্পারেচার বোধকরি ১৬/১৭ ডিগ্রি হবে।“
“বাহ! আরামেই আছো! এখানে মাইনাস সাত। আমরা যখন কথা বলছি, ঠিক এই মুহূর্তে তুষার পড়ছে। তোমাদের দেশে তুষারপাত হয়?”
“নাহ! এখানে তুষার পড়ে না। তবে, চাকরির সুত্রে বেশ কবছর ইস্তাম্বুল ছিলাম। আমি জানি প্রকৃতির আরেক মায়াজাল এই তুষারপাত।“
“তা ঠিক বলেছো। আমার খুব প্রিয় একটা সময়। যখন তুষার পাত হবে, তার ঠিক আগে আকাশ অদ্ভুত এক আলোয় ছেয়ে যায়। সেই আলোয় চারপাশের প্রকৃতি স্থির হয়ে যায়। যেনো এক বিশেষ মুহূর্তের অপেক্ষায় সবাই। একসময় সেই প্রতীক্ষার শেষ হয়। আকাশ থেকে তুলোর মতো গুড়ো গুড়ো হয়ে বরফ পড়তে থাকে। আমি দুপাশে হাত মেলে দাঁড়িয়ে থাকি। আমার হাতে বরফ জমতে থাকে। কি নরম, তুলতুলে সেই অনুভূতি!”
“এখানে, আমাদের দেশে যখন বৃষ্টি হয়, আমরা ঠিক তাই করি। দুহাত মেলে দিয়ে বৃষ্টিতে দাঁড়াই। আমাদের তৃষ্ণার্ত শরীরে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ে। একটানা বৃষ্টির রিমঝিম রিমঝিম শব্দে সম্মোহিত আমরা ভিজতে ভিজতেই ভেসে যাই আমাদের সুন্দরতম কল্পনায়।“
“আবার একটানা তুষারপাতে, ঘরের ওমে জানালার পাশে হাতে কফির কাপ নিয়ে বসে থাকতেও খুব ভালো লাগে। তোমরাও কি বৃষ্টিতে তা করো?”
“তা আর বলতে! তবে বৃষ্টিতে আমাদের আরেকটা বিলাসিতা আছে। চাল ভাজা, আমরা যেটাকে বলি ‘মুড়ি’, পেঁয়াজ, লঙ্কা আর সর্ষের তেল দিয়ে মেখে, গরম চায়ের সাথে খাওয়া... আহ! ভাবতেই জিভে জল আসছে!”
“হুম। ‘মুড়ি’টা ঠিক আমার দেখা হয়নি। তবে পেঁয়াজ, লঙ্কা আর সর্ষের তেলের কম্বিনেশনটা আমার গা গুলিয়ে দিচ্ছে।“
“ও কেন?”
“সর্ষের তেলের গন্ধটাই আমার পছন্দ না। গা গুলিয়ে ওঠে। আর লঙ্কাতো আমার সহ্যই হয় না। একবার এক বন্ধুর বাসায় মেক্সিকান লঙ্কা দিয়ে তৈরি করা একটা ডিস খেয়ে আমাকে হাসপাতালে অব্দি দৌড়োতে হয়েছিলো।“
“আহ! আমাদের লঙ্কার প্রজাতি অবশ্য মেক্সিকান লঙ্কার মতো ঝাল না। তবে কামড় দিলে মুখে একটা কিক লাগবে, ওটার লোভেই মূলত লঙ্কা মুখে দেয়া। তারপরেও অভ্যস্ততার একটা ব্যাপার আছে। এই যেমন তৈরি করা খাবারের ওপর তোমরা যেভাবে সাদা গোল মরিচ ছিটিয়ে দাও, ওটা আবার আমি সহ্য করতে পারি না।“
“এলাকাভেদে প্রকৃতি পরিবর্তিত হয়, মানুষ পাল্টায়, খাদ্যাভ্যাস পাল্টায়।“
“হুম...”
“তা ক্রিসমাস ইভে অলাইনে কি করছো?”
“আমি মুসলিম, আমাদের ধর্মে এটা অন্য সাধারণ দিনের মতোই। তবে এখানে ঠিক ইভিনিং নেই এখন। রাত প্রায় আড়াইটে বাজে!“
“আহ! কি করছো অতো রাতে?”
“কম্পিউটারে কিছু কাজ করার চেষ্টা করছিলাম। মন বসাতে পারছিলাম না। কারো সাথে আলাপ করতে খুব ইচ্ছে করছিলো। তুমি এলে। ধন্যবাদ।“
“ওহ! ইউ আর ওয়েলকাম! তোমার প্রোফাইলে দেখছি, তোমার বয়েস একত্রিশ এবং তুমি অবিবাহিত। তোমার রিলেশনশিপ স্টেটাস কি? তুমি কি একা? বান্ধবী নেই?”
“অবিবাহিত মানে একাই বুঝিয়েছি। বান্ধবী নিয়ে ঘোরার বয়েস কি আর আছে?”
“বলো কি? আমাদের এখানে পঞ্চাশোর্ধ অনেককেই দেখবে বিয়ে ছাড়াই বেশ আমোদে আছে তাদের বান্ধবী এবং ঔরসজাত ছেলেপুলে নিয়ে। বিয়েটা এখানে এখন সামাজিক কোন সমস্যা না, ওটা ব্যক্তিগত আতঙ্কের নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেককেই দেখা যায় লংটার্ম রিলেশনশিপে বেশ সুখেই ছিলো অথচ বিয়ের কিছুদিনের মাথায় বিচ্ছেদ নিয়ে সরে গেছে একে অন্য থেকে। বিয়ে নিয়ে ভাবনা আমরা ছেড়ে দিয়েছি।“
“তোমরা কি দায়িত্ব নিতে ভয় পাও? নাকি অধিকারবোধের বিড়ম্বনা?”
“হতে পারে দুটোই... কিংবা আস্থা আর বিশ্বাসের নাগরদোলা।“
“সেটা কি রকম?”
“আমাদের এখানে সবচেয়ে বড় সামাজিক অসুখের নাম ‘পারস্পরিক আস্থাহীনতা’। আমরা সম্পর্কের ব্যাপারে কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। স্ত্রী স্বামিকে বিশ্বাস করছে না, স্বামী স্ত্রীকে বিশ্বাস করছে না, মা-বাবা ছেলে মেয়েকে বিশ্বাস করছে না, ওরা আবার মা-বাবাকে বিশ্বাস করছে না... প্রতিটা সম্পর্কেই একটা একটা উৎকণ্ঠা, একটা অস্থিরতা, একটা আতঙ্ক আমাদের সবাইকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।“
“ওরে বাবা! এতো ভয়ঙ্কর ব্যাপার! বোধকরি তোমাদের পরিবারগুলো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়াতে পারবারিক সংস্কৃতি, আস্থা, মূল্যবোধ এসবের আর কোন অর্থ নেই তোমাদের কাছে। আমাদের চিত্র আলাদা। আমরা এখনো পরিবার আঁকড়ে ধরে আছি। মা বাবা ভাই বোন সবাই একসাথে সুখ দুঃখ সবকিছু শেয়ার করি, একে অন্যের পাশে দাঁড়াই। আমাদের সম্পর্কগুলোতে কর্তব্যবোধ সবার আগে আসে, অবিশ্বাস বা আস্থাহীনতা এখনো আলোচনার বিষয় না।“
“ওসব আমাদেরও ছিলো ষাটের দশকে। তোমাদেরও আমাদের মতোই অবস্থা হবে। এই পুঁজিবাদ আর বাজার অর্থনীতি, ধীরে ধীরে তোমাদেরও টেনে পথে নামাবে। পরিবার ভেঙ্গে দেবে। তোমরা প্রতিষ্ঠার তাগিদে, ক্যারিয়ারের জন্যে, বেঁচে থাকার জন্যে ছুটতে থাকবে। একে অন্যের হাত ছেড়ে দেবে। স্বার্থপরতা তোমাদের জড়িয়ে ধরবে আষ্টেপৃষ্ঠে...”
“হা হা হা তুমি দেখছি আমাদের ধর্ম গ্রন্থে থাকা শেষ বিচারের দিনের অবস্থা বর্ণনা করছো... ওই দিন সবাই নরকের আতংকে, পাপের আতংকে, জ্ঞান হারা হয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে থাকব, কেউ কাউকে চিনবে না, কেউ কারো উপকারে আসবে না, সবাই বলতে থাকবে, ‘ইয়া নাফসি!’, ‘ইয়া নাফসি!’ ‘হায়! আমার কি হবে!’....”
“হা হা হা... তা আমাদের এদিকে বোধকরি সেদিন এসে গেছে, আমরা ওভাবেই ছুটছি সবাই।“
“তোমার প্রোফাইলে দেখছি, তুমি বিয়াল্লিশ বছর বয়সেও সিঙ্গেল, মানে কখনো বিয়েই করোনি?”
“হুম... একটা লং টার্ম রিলেশনশিপে ছিলাম। মাস চারেক হলো আলাদা হয়ে গেছি। বিয়ে কখনো করা হয় নি। তবে আমার একটা মেয়ে আছে, পনর বছর বয়েসি। আমার সাথেই থাকে।“
“ওর বাবা?”
“ওর বাবার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো বছর তিনেক। গ্রেসি, আমার মেয়ের বয়েস যখন দু’ বছর তখন আমাদের ব্রেক আপ হয়ে যায়। সে যে কি ভীষণ দিনগুলো গেছে! ছোট মেয়েটাকে নিয়ে একা একা বেঁচে থাকার সংগ্রাম! বাসার খরচ, মেয়ের খরচ, ডে কেয়ারের খরচ... একা একা সবদিক সামলানো সে যে কি কঠিন সময়!”
“মেয়েটার কথা ভেবে একসাথে থাকার চেষ্টা করোনি?”
“কোন মানুষ একটা সম্পর্ক অত সহজে ভেঙ্গে দিতে পারে? কোথাও রক্ত ক্ষরণ হবে না? চেষ্টা তো অবশ্যই ছিলো। একটা কথা কি জানো, একজন মা যখন নিপীড়িত হয়, ওটা কেবল মাতৃত্বের অপমানই নয়, এসব নিপীড়ন দেখে অভ্যস্ত সন্তানও কখনো আত্মবিশ্বাস নিয়ে, মনোবল নিয়ে দাঁড়াতে পারে না।“
“হুম... তা ঠিকই বললে।“
“আমি আমার মেয়েকে নিয়ে মাথা উঁচু করে লড়াই করেছি, জীবনের কোন পর্যায়ে মেয়েকে বোঝা মনে করিনি, যেমন আমার মা করেছিলো। আজ আমার মেয়ের চোখে আমার জন্যে যে শ্রদ্ধা, আমাকে নিয়ে ওর যে উপলব্ধি, ওটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া। আমারতো আর কিছুই নেই। “
“তোমার মা বাবা বা ভাই বোন কেউ নেই?”
“আমি এডপ্টেড চাইল্ড। আমাকে দত্তক নেয়া মা বাবা দু’জনেই একটা গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান, আমার ষোল বছর বয়সে। মূলত তারপর থেকেই আমার একা জীবন।“
“আর তোমার বায়োলজিকাল পেরেন্টস? তাদের পরিচয় পেয়েছো? “
“ওরা স্কটিস। আমার বায়োলজিকাল মা বেঁচে আছেন, বাবা মারা গেছেন ক্যান্সারে।“
“তোমার সাথে যোগাযোগ আছে?”
“আছে... মা’র সাথে মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়... বয়স হয়েছে ওনার, আলঝেইমার্সে ভুগছেন... তেমন গুছিয়ে কিছু বলতেও পারেন না।“
“হুম...”
“কি!”
“ভাবছি... “
“আমি জানি... আমার কথা বলতে গেলেই চারপাশ মেঘে ঢেকে যায়।“
“হা হা হা... তুমি খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলো...”
“তাই নাকি! তুমি কি করো?”
“আমি ফ্রিলেন্স কাজ করি। ছোট ছোট ইউজার ফ্রেন্ডলি সফটওয়ার বানাই।
“ওয়াও! ইউ আর আ ‘গিক’!”
“হা হা হা... নাহ! তেমন কিছু নই আমি। তুমি কি করো?”
“আমি নাচ শেখাই।“
“তাই নাকি! কি নাচ?”
“ইন্টারন্যাশনাল লেটিন। তুমি নাচও জানো?”
“উঁহু! তবে পাশ্চাত্যের নাচ সম্পর্কে ধারণা আছে কিছুটা...তোমার সাথে নাচতে ইচ্ছে করছে খুব! আমার সাথে নাচবে?”
“সারটেনলি ডিয়ার! চলো টেঙগো করি।“
“চলো। চোখ বন্ধ করো। আমার হাত ধরো। আমার দেশে এসো। আমার ঘরে। এখানে সবে ঠাণ্ডা জমছে। এক সপ্তাহ আগে পূর্ণিমা ছিলো। এখন চাঁদ মরে গেছে। ঠাণ্ডা, মরা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে আছে চরাচর জুড়ে। আমরা বড়ো একটা ঘরে দাঁড়িয়ে আছি। ঠিক ঘরের মাঝখাটায়। তুমি চোখ খুলো না। অনুভব করো। পুরো ঘরজুড়ে জানালা। পর্দাগুলো আকাশী রঙের। আমরা জানালা খুলে রাখি। বাতাসে পর্দাগুলো আমাদের ছুঁয়ে ছুঁয়ে উড়ছে। সারা ঘর চাদের আলোয় ভাসছে।“
“হুম... তুমি আরও কাছে এসো। তোমার বাম হাত দিয়ে আমার কোমর জড়িয়ে ধরো। তোমার কাঠিন্যে মিলিয়ে যাক আমার সব কোমলতা। আমার ডান হাতে রাখো তোমার ডান হাত। সঙ্গীতের মূর্ছনা, শীত শীত হিম, মরা চাঁদের আলো আমাদের ঘিরে নাচছে। আমাদের মস্তিষ্ক থেকে হৃদয়, হৃদয় থেকে নাভিমূল, নাভিমূল থেকে পা গড়িয়ে নামছে সুরের ইন্দ্রজাল। অপার্থিব এক উষ্ণতায়, তীব্র কোন ভালোবাসায় আমরা গলে যাচ্ছি। আমাদের শারীরিক অস্তিত্ব মিলিয়ে যাচ্ছে রুপালী আলোয়, ঐন্দ্রজালিক সেই সুরের মূর্ছনায়। সঙ্গীতের সুর ধীর হয়ে আসে। তোমার দৃঢ় হাতের বেষ্টনীতে গলে যেতে যেতে আমি মাথা রাখি তোমার বুকে। আমরা দুলতে থাকি সুরের সাথে। আমার কানে বাজে তোমার বেঁচে থাকার শব্দ। ধুক ধুক, ধুক ধুক! হৃদপিণ্ডের সেই ধ্রুপদী শব্দ ছাড়িয়ে, তোমার তপ্ত নিঃশ্বাস আমাকে পোড়াতে থাকে, আমি গলে যেতে থাকি, তুমি গলে যেতে থাকো। আমাদের অস্তিত্বে জন্ম নেয় নতুন এক বিশ্বাস, নতুন এক নির্ভরতা, নতুন এক ভালোলাগা...”
তারপর... নিঃশব্দে কেটে যায় অনেকগুলো মুহূর্ত। দুপ্রান্তেই নিস্তব্ধতা। কল্পনার রং অদ্ভুত এক ভালোলাগায় রেনু রেনু হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ওদের গায়। অজানা এক সুবাসে ভরে থাকে সারা ঘর। শাহেদের দু’হাত তখনো বুকের কাছে জড়ো করা, অদৃশ্য কোন অস্তিত্বের স্পর্শ খুঁজে বেড়াচ্ছে যেনো। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আছে এখনো। ছন্দময় টুংটাং শব্দে ম্যাসেজ আসে,
“কিছু বলো...”
“আই লাভ ইউ...”
“আই লাভ ইউ ট্যু!”
২| ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:২৪
কনফুসিয়াস বলেছেন: ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:১৮
রাজীব নুর বলেছেন: বড় দিনের শুভেচ্ছা।