![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘আয়াত-উল-কুরছি’। কোরানের একটি আয়াত। আয়তুল-কুরছি সবে নতুন শিখেছি। আব্বা এর গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বাস্তবে এর যে সুফল পেয়েছি, সেটি তুলে ধরছি
গ্রামের বাড়ীতে থাকি। ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ি। যদিও এমনটি হবার কথা নয়। তবুও কোন না কোন কারনে নদীর ওপারে নতুন বাজরের দিক থেকে একা বাড়ীতে ফিরতে হচ্ছে। বড় ফুফুর বাড়ী থেকে ফিরছি।
রাত তখন এগারোটার কাছাকাছি। সেটি এখনকার শহুরে মোবাইল কিংবা স্যাটেলাইট টিভির যুগ ছিল না। এমনকি গ্রামের নতুন প্রজন্মের অনেকের পক্ষেও সে সময়ের গ্রাম বাংলার রাতের চিত্র কল্পনায় আনা সম্ভব নাও হতে পারে। আটটা-ন’টা বাজতেই রাত গভীর হয়ে যায়। এ সময় অনেকে পরিশ্রান্ত দেহে ঘুমিয়েও পড়ে। সত্যি বলতে মানুষের করারও তেমন কিছু নেই। চুয়াত্তর পঁচাত্তর এর কথা।
অন্ধকার নির্জন পথ-ঘাট। বাড়ীর দিকে একা রওনা দিতে যখন বলতে গেলে এক রকম বাধ্য হলাম তখন প্রথমেই মনে হলো কবর স্থানটির কথা। মনে মনে ভাবতে লাগলাম এ স্থানটি কিভাবে পার হবো? ভয় এমনভাবে পেয়ে বসলো, কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়লাম। মাথা কাজ করছে না। শরীর ঘামাতে শুরু করে দিল। মেজ চাচা অনেক সময় রাত করে বাড়ী ফিরেন। সে আশায় নদীর ঘাটে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আরোও দেরী করে ফেললাম। মাথায় অল্প সময়ে কত দ্রুত নানান হিসেব-নিকেশ কাজ করছে। কবর স্থানটি পার হওয়া যতটা ভয়ের কারন হতে পারে তার চেয়ে বেশী ভয়ের ব্যাপার হবে সারা রাত বাইরে বসে ভাবতে ভাবতে কাটিয়ে দেয়া। কিছু একটা করে ফেলতে হবে। এখনই। উপায়ন্তর না পেয়ে অবশেষে রওনা হলাম।
মানুষ যখন কোন ঝুঁকিপূর্ন কাজে পা বাড়ায় তখনও সে অন্তরে একটি ভরসার স্থান সৃষ্টি করে নেয়। একমাত্র ভরসা আব্বার শিখিয়ে দেয়া আয়তুল কুরছি।
নদী পাড় হয়ে নৌকা থেকে নেমে বাড়ীর দিকে হাটতে শুরু করলাম। আশেপাশে কোন সঙ্গী সাথী নেই। অনেক সময় দু চারজন জুটে যায়। আজ একা। জুট মিলের রাস্তা ধরে হেটে চলেছি। দুপাশে দুটি জুট মিলের উচু দেয়াল দাড়িয়ে আছে। মাঝখানের চিপা গলির অন্ধকারে একা। গলি পেরিয়ে মিল গেটের সামনের রাস্তা ধরে চলছি। গেটের সামনে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছে। একটু সামনে এগুতেই আবার অন্ধকার। বেশ খানিকটা পথ হেটে ডান দিকে বাড়ীর রাস্তায় প্রবেশ করেছি।
কবরস্থানের কাছাকাছি চলে এসেছি। মনে মনে আয়তুল কুরছি পড়ে চলেছি। পড়ছি আর পড়ছি। কবর স্থানের সামনে চলে এসেছি। আয়তুল-কুরছি পড়ছি ... পড়ছি ...। কি হলো জানিনা। হঠাৎ মনের মধ্যে একটা পরিবর্তন ঘটলো। সাহসের মাত্রা ধারণাতীতভাবে বেড়ে গেল। শরীরের সব জড়তা চলে গেলো। বুকটা ফুলে ফেপে উঠলো। মনে হলো যেন উল্টো জ্বীন ভূত পালিয়ে যাবে। ভয় ও দ্বিধাহীনচিত্তে দিব্যি হেঁটে কবরস্থান পাড় হয়ে চলে এলাম। বয়স তখন অল্প। ভয়ের মাত্রা বেশী।
কবরস্থান ফেলে একটু সামনে এগিয়েই সরু পথের দু’দিকটায় বড় বড় সব তাল গাছ, শুপারি গাছ, বাঁশ ঝাড়। এখানটায় গাছ গাছালির অন্ত নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার ...। এ সময় পিছনে আড় চোখে দেখার চেষ্টা করতে লাগলাম। পুরোপুরি পিছনে ফিরে দেখার সাহস পাচ্ছিলাম না। মনে হলো পিছন পিছন কেউ একজন আসছে।
ঘরের দরজার কাছে এলে দরজা খোলার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত ভয়ের অনুভূতি কাজ করতে থাকলো। ঐ মুহুর্তটুকু শরীর ঘামাতে লাগলো। মনে হলো সময় পেরুতে চাচেছ না। শরীর আর চোয়াল দরজার সাথে লাগিয়ে মৃদু স্বরে ডাকতে থাকলাম। ক’টা মুহুর্ত ঘোরের মধ্যে কাটালাম ...। এক বিস্ময়কর অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা।
ছোট্ট মাথার ল্যাবরেটরীটা ঘটনাটি নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো। কি আছে এই আয়তুল কুরছিতে? কবরস্থানের কাছে এসে কেন হঠাৎ শরীরের সব জড়তা চলে গেল? সাহসটা ফুলে ফেঁপে উঠলো? স্বশরীরে কেউ এসে তো কোন সাহায্য করে নাই! অথবা কেউ তো শরীরে উপর থেকে সাহস নামক কোন কঠিন তরল বা বায়বীয় পদার্থ ঢেলে দিয়ে যায় নাই! তবে এতো সাহস কোথা থেকে এলো?
সাহসটি আসলে নিজের ভিতরেই ছিলো। সারা জীবনের সঞ্চিত ভয়ের উদ্দীপকগুলো ভয়টাকে এমনভাবে বৃদ্ধি করে রেখেছে যে, সে সবকিছুকে ছাপিয়ে উপচে পড়ছিলো। যখন সাহসটাকে ভয়ের উপরে ঠেলে উঠাতে সক্ষম হয়েছি তখন ভয় চাপা পড়ে গেছে আর সাহসটা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। ভয়-সাহস ইত্যাদি নামক গুন বা অনুভূতিগুলি নিজের ভিতরেই বিরাজমান। যখন যেটাকে জাগিয়ে তোলা যায় তখন সেটাই জেগে উঠে। এখানেও তাই ঘটেছে। সাহসটিকে জাগিয়ে তোলা সম্ভব হয়েছিল। কিভাবে? আয়তুল কুরছির সহায়তা নিয়ে।
আয়তুল কুরছি এখানে কি কাজ করেছে? সে সাহসটিকে জাগিয়ে তুলতে সহায়তা করেছে। সাহসটিকে জাগিয়ে তুলতে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করেছে। বিভিন্ন সঞ্চিত সুপ্ত গুনের আধার মানুষ। যখন যে গুনটিকে জাগিয়ে তুলতে চায় ভাল মন্দ নির্বিশেষে তা জাগিয়ে তোলা সম্ভব। প্রয়োজন সঠিক উদ্দীপক ও আন্তরীক সাধনা।
প্রশ্ন হচেছ আয়তুল-কুরছি কেন এ অসাধ্য সাধন করতে পারলো? কেন সে এখানে সফল উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে সক্ষম হলো?
কারণ তার সক্ষমতার উপর সন্দেহাতীতভাবে ভরসা রাখি। কেন ভরসা রাখি? কারণ, প্রমান অপ্রমানের উর্ধ্বে উঠে তার সক্ষমতার উপর ভিতরে বিশ্বাস স্থাপিত হয়ে আছে। কিভাবে এ বিশ্বাস স্থাপিত হলো? শিক্ষাদাতার মাধ্যমে। শিক্ষাদাতা এমনটি শিখিয়েছেন। কেন শিক্ষাদাতা এমনভাবে বিশ্বাস স্থাপনে সক্ষম হলো? কারন বিশ্বাস ও ভালবাসা। কেননা শিক্ষাদাতা হচেছন মা - বাবা। জানি, বুকে আগলে রেখে তারা বড় করেছেন। এ পৃথিবীতে একমাত্র তারাই সর্বশেষ মঙ্গল কামনাকারী। তাদের ভালবাসি। ভক্তি করি। বিশ্বাস করি। তাদের প্রদত্ত শিক্ষাটিকেও তাই সত্য বলে জানি। সে সত্যে বিশ্বাস রাখি। কারো প্রতি ভক্তি ও ভালবাসা ছাড়া তার প্রদত্ত শিক্ষায় বিশ্বাস আসে না।
কি অভাবনীয় এ বিশ্বাসের ক্ষমতা! কি না করতে পারে এই বিশ্বাস! তাই বুঝি এ জগতে এত উপরে বিশ্বাসের মর্যাদা।
বিশ্বাসের শক্তি সৃষ্টির ক্ষমতা আছে। কিন্তু বিশ্বাস নিজে ভাল মন্দ বুঝে না। ভাল মন্দ বুঝতে হয় বিশ্বাসীকে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা- যে বিশ্বাসের এত অভাবনীয় ক্ষমতা, সে বিশ্বাস যেন মানুষের মাঝে ভূলভাবে গড়ে না উঠে। তা দিয়ে মানুষ যেন ভুল পথে চালিত না হয়।
আল্লাহতে আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহর রাসুলে আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহর ফেরেশতাগনে আমাদের বিশ্বাস। পরকালে আমাদের বিশ্বাস। আল্লাহর কোরান ও তার নির্দেশিত পথে আমাদের বিশ্বাস। কোরান বলছে-
“… nor take the life which Allah hath forbidden save in (course of) justice, … and whoso doeth this shall pay the penalty;” (Al-Quran 25:68)
©somewhere in net ltd.