নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি উন্মনা হে, হে সুদূর, আমি উদাসী।\"

বাউন্ডুলে ঝড়

আমি উন্মনা হে, হে সুদূর, আমি উদাসী।

বাউন্ডুলে ঝড় › বিস্তারিত পোস্টঃ

শারদোৎসব প্রসঙ্গে

১১ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:১৬

শুনেছি ধানমন্ডি, বনানীতে, উত্তরায় অথবা ঢাকার অন্যান্য অভিজাত এলাকার দূর্গাপূজাগুলোতে কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। দেশবিদেশ থেকে টেকনিশিয়ান এনে লালনীল বাহারি রঙের লাইটিং করা হয়। নামীদামী শিল্পীদের এনে কন্সার্ট করা হয়। অনেক খাবারদাবারের আয়োজন করা হয়। হুলুস্থুল সব ব্যাপার-স্যাপার হয়। আর পূজোতে কারা কত হুলুস্থুল ব্যাপার-স্যাপার করতে পারে তা নিয়েও হয় হুলুস্থুল রকমের প্রতিযোগিতা। ব্যাপারখানা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে দুর্গা পূজাকে পূজা না বলে অর্থ অপচয়ের প্রতিযোগিতা বললেই ঠিক বলা হয়।

প্রশ্ন ওঠে, এই রকম হুলুস্থুল আয়োজন করতে যে অর্থ ব্যায় হয় তা আসে কোথা থেকে?

উত্তর সহজ, এই বিশাল অংকের টাকা আসে হুলুস্থুল রকমের কিছু ডোনারদের ডোনেশন থেকে। এই সব ডোনারদের আপনি দেখলেই চিনবেন। এদের চেনা খুব সহজ। আপনি যে কোন হুলুস্থুল রকমের পূজা মন্ডপে ঢুকবেন। দেখবেন মন্ডপগুলোতে বেশ কিছু আলাদা এন্ট্রি-এক্সিট থাকে। যেমন ধরেন, একটা পুরুষদের জন্য, একটা মহিলাদের জন্য আর আরেকটা থাকে কিছু বিশেষ মানুষদের জন্য। সাধারন মানুষদের এন্ট্রি-এক্সিট খালি মানুষের ভীর, পারলে একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে তারপর তাকে মাড়িয়ে ঢোকে পূজা দেখতে। আর বিশেষ মানুষদের জন্য তৈরি করা এন্ট্রি-এক্সিটগুলোতে থাকে লাল গালিচা বিছানো, বেশীরভাগ সময়ে সেগুলো থাকে ফাঁকা। কদাচিৎ সেই সব এন্ট্রির সামনে কিছু হুলুস্থুল রকমের দামী গাড়ি থামে। সেই সব দামী গাড়ি থেকে নেমে আসে হুলুস্থুল রকমের পেট মোটা কিছু মানুষ যাদের পড়নে থাকে দামী সুট অথবা দামী পাঞ্জাবী। তাদের সাথে থাকে হুলুস্থুল রকমের স্বর্নালংকারে মোড়ানো ফর্সা রমনীরা আর হুলুস্থুল রকমের নাদুস-নুদুস কিছু বাচ্চারা। আরো দেখবেন এরা ঢোকা মাত্রই আয়োজকরা স্যার স্যার করে এদের আপ্যায়নে ব্যাস্ত হয়ে পরেছে। এরা গিয়ে বসবেও একদম সামনের সারিতে। আর সামনের সারিতে কখনোই প্লাস্টিকের চেয়ার থাকে না, সেখানে থাকে দামী সোফা। এমনকি তাদের জন্য থাকে আলাদা করে রান্না করা প্রসাদের ব্যাবস্থা। এরা খেয়েও যায় আবার সাথে করে নিয়েও যায়। সুতরাং আপনার বুঝতে একটুও কষ্ট হবে না যে এরাই সেইসব হুলুস্থুল ডোনার।

মনে আবারো প্রশ্ন জাগতে পারে, এইসব হুলুস্থল রকমের ধনী ডোনাররা এইরকম হুলুস্থুল রকমের ডোনেশন দেয় কেন?

এর উত্তরও সহজ, এক কথায় দেওয়া যায়। এরা ইহজগতে টাকাপয়সা দিয়া দেবদেবীদের খুশি করতে চায়, পরকালে স্বর্গে যাবার পথটা পাকাপোক্ত করতে চায়।

এরপর যদি জিজ্ঞেস করেন এইসব হুলুস্থুল রকমের ধনী ডোনাররা এত অর্থ পায় কোথায় তাহলে নিশ্চিত মার খাবেন।

এত গেল পূজা মন্ডপের ভিতরের কথা, এবার একটু মণ্ডপের বাইরের কথা বলি। পূজা মণ্ডপের ত্রিসীমানার বাইরে দেখবে একদল কঙ্কালসার, নোংরা পথশিশু তীর্থের কাকের মত দাড়িয়ে থাকে।
অপেক্ষা করে কখন ওইসব নাদুস-নুদুস বাচ্চারা উচ্ছিষ্ট খাবার ছুড়ে ফেলে দেবে আর তারা সেগুলো কুড়িয়ে খাবে। আর মণ্ডপের নিরাপত্তা কর্মিরা এদেরকে মেরে তাড়িয়ে ব্যাস্ত সময় কাটাতে থাকে। কিন্তু কিচ্ছুক্ষন পরপরই এরা মণ্ডপের কাছে ফিরে আসে। সামান্য একটু উচ্ছিষ্ট খাবারের জন্য ঘন্টার পর ঘণ্টা দাড়িয়ে থাকে, মার খায়।

এমনিতে দুর্গা পূজার ইতিহাস খুব একটা ভালো না, নোংরাই বলা চলে। কিন্তু কালের বিবর্তে এটা যখন বাঙালির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন উৎসবগুলোর একটিতে পরিণত হয়ে গেছে তখন আমরা কি পারি না এই উৎসবটিকে আর একটু অর্থবহ করতে, আর একটু মানবিক করতে। খুব কঠিন কাজ তো না, সেই সব হুলুস্থুল রকমের ধনী ডোনাররা আর আয়োজকরা যদি অযথা লাইটিং আর কন্সার্টের পিছনে অর্থ অপচয় না করে ওইসব পথশিশুদের দুবেলা খাবারের ব্যাবস্থা করত, কিছু জামা কাপর কিনে দিত তাহলেই হত। সারাবছর না হোক অন্ততপক্ষে পূজার দিনগুলোতে যদি ওইসব রুগ্ন, কঙ্কালসার পথশিশুদের মুখে হাসি ফোটানো যেত তাহলে দুর্গা পূজা অতিতের সব নোংরা ইতিহাস পিছনে ফেলে প্রকৃত উৎসবে পরিণত হত। তাছাড়া যেকোন উৎসব যদি শিশুদের হাসিমুখ না দেখা যায় তাহলে কি সেটা উৎসব হয়! আর এতে করে দুর্গা দেবীও হয়ত সব দূর্গতি নাস করে পরকালে স্বর্গে যাবার রাস্তাটাকে আরো বেশী পাকাপোক্ত করে দিত।

সবাইকে শারদোৎসবের শুভেচ্ছা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.