নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি জানি না মায়ের কোন সংজ্ঞা আছে কিনা। আমার মতে মায়ের সংজ্ঞা মা নিজেই। মায়ের ক্ষেত্রে কোন সংজ্ঞা প্রযোজ্য বলে মনে হয় না। মা এমন একটি শব্দ যাকে ভাঙ্গা ও যায় না গড়াও যায় না। মায়ের সম্মান দিতে হয়ত আমরা সবাই পারি না। আসলে আমরা কোন সন্তানই মায়ের অনভূতিটাকে বুঝতে চাই না। তবু ও মা আমাদের নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবেসে যান ।
আমার মা, আমি যখন খুব ছোট আশে-পাশে কিছু একটা হলে বুঝতে পারি ঠিক তেমনই সময়ের একটা ঘটনা: আমাদের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে আমার দাদীর সাথে ঘুড়তে গেছি গিয়ে দেখি অনেক গুলো ছোট ছোট কুকুরের ছানা। আমার খুব ইচ্ছা হলো একটা কুকুরের ছানা বাসায় নিয়ে যাবো যেমন কথা তেমন কাজ একটা কুকুরের ছানা আমি কোলে তুলে নিলাম ঠিক তখনি মা এবং বাবা কুকুরটা তার বাচ্চাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।আমাকে কামড়িয়ে রক্তাত্ত করে দিল। আমার দাদী কি করবে বুঝে উঠতে পারছিলনা। কোন এক ব্যক্তি মারফত আমার মায়ের কাছে খবর গেল। আমার মা খবর পেয়ে পাগলের মত ছুটে আসলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে ছোট বাচ্চার মত ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলেন আর আমার শরিরে চুমো খেতে লাগলেন। আমার মা আমাকে কোলে তুলে ঝড়ের গতিতে ডাক্তারের কাছে ছুটলেন।ডাক্তার ড্রেসিং, ইন্জেকশন এবং ঔ্রষধ দিয়ে বিদায় করে দিলেন। মায়ের চোখে ঘুম হারাম, বাসায় এসে আমার সেবা শুরু করলেন। আমার মা আমাকে ডাক্তার দেখিয়ে বসে থাকেনি আমাদের গ্রমে দিপতা কবিরাজ নামে একজন লোক ছিলেন। আমরা দাদা বলে ডাকতাম তাকে, দাদা আমাকে দেখে বললেন দাদু ভাই ভয়ের কিছু নাই আমি আছিতো, দাদা আমাকে কবিরাজি চিকিৎসা শুরু করলেন। আমার মা কে বললেন ৭ টা কুয়ার পানি খাওয়াতে হবে। কুয়া থেকে পানি তোলার সময় দাদার পড়া ডাল কুয়াতে ফেলতে হবে। আমার মা আমাকে কোলে তুলে কোথায় কুয়া আছে খুজতে শুরু করলেন একেক টা কুয়ার সামনে গিয়ে আমাকে কোল থেকে নামিয়ে কুয়ার ভিতরে ডাল ফেলে রশি লাগানো বালতি দিয়ে পানি তুলে গ্লাসে দিয়ে বলে বাবা বিসমিল্লাহ বলে পানিটুকো খেয়ে নাও, এই ভাবে আমাকে কোলে করে ৭ টা কুয়ার পানি আমাকে খাওয়ালেন। আর ১ মাস যাবৎ আমার মা রাত্রে একটু সময়ের জন্যও ঘুমায়নি। মা মাগো ও মা তুমি এতো ভালো কেন। মা ও মা তোমাকে অনেক মনে পড়ছে। মাগো তোমাকে যে এক মূহর্তের জন্যও ভূলতে পারি না। গরমের দিনে যেন মায়ের খোকা বাবু কষ্ট না হয় সেই জন্য সার রাত জেগে তালের পাখা দিয়ে বাতাস করতো, শিতের দিয়ে যেন শিতে কষ্ট না হয় মা আমাকে বুকের ভিতর জরিয়ে রাখতো। আমার আবার একটা খারপ অভ্যাস ছিল আমি রাত্রে না খেয়েই ঘুমিয়ে যেতাম, মা আমাকে মনের ভূলেও না খেয়ে রাত্রে ঘুমাতে দিত না। সকালে যখন স্কুলে যেতাম মা আমাকে গোসল করিয়ে শরিরে তৈল মেখে জামা-প্যন্ট পড়িযে নিজে হাতে খাবার খাওয়িয়ে স্কুলে দিয়ে আসতেন, বিকেলে স্কুল থেকে ফিরতে দেরি হলে মা আমাদের বাড়ির পাশে আম গাছের কাছে দাড়িয়ে ওই দূরে চাতক পাখির মত তাকিয়ে থাকতেন আমার খোকা বাবু কখন আসবে। আমাকে দূর থেকে দেখেই দেৌড়িয়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলতেন বাবা এতো দেরি হলো কেন আরো কত কি? মা বলো তোমার এতো আদর-ভালোবাসা কি করে ভূলে থাকি? মা গো ও মা আমি কি ঠিক ভাবে তোমার দেখা-শুনা করতে পারছি?? ২০০৬ সাল থেকে তোমার কাছ থেকে দূরে আছি যদিও ২-৩ মাস পর পর বাড়িতে গিযে তোমাকে দেখে আসি কিন্তু এই ২-১ দিন তোমাকে দেখে যে আমার কলিজা ঠান্ডা হয়না, মাগো জানো যখন বাজার থেকে বড় কোন মাছ বা মাংস কিনে আনি তোমার বউমা রান্নাকরে খাওযার জন্য ডাকে বিশ্বাস করো মা আমি ওই খাবার খাইতে পারি না আমার মুখের মধ্যে খাবার যায়না খাইতে বসে কেন যেন মনে হয় আমার কি যেন নাই, তখন আমার বুক ফেটে কান্না আসে।
শহরের এই যান্ত্রিক জীবনে চলার পথে যদি কখনো একটু অসুস্থ হয় তখন মাকে অনেক মনে পরে, বিধাতার কি খেলা যখন মাকে মনে পরে ঠিক তখনি মা আমাকে ফোন দিয়ে বলে বাব তোমার শরির টা ভালো তো, অনেকখন ধরে আমার যেন কেমন লাগছে আমার মন বলছে তোমার শরির অসুস্থ, আমি বলি না মা আমি ঠিক আছি তখন মা বলেন না বাব তোমার কিছু একটা হয়েছে। মাগো তুমি কেমনে বোঝ যে তোমার খোকার শরির অসুস্থ ও মা মাগো তুমি যে মিশে আছো আমার শিরায় শিরায়। মাগো তুমি কোথায় তোমাকে অনেক miss করছি মা। জানো মা তোমাকে রেখে শহরের এই যান্ত্রিক জীবন আমার এক মূহর্ত ভালো লাগেনা।
মাগো তোমার কথা যদি পৃথিবীর সব সাগরের পানি কালি বানাই পৃথিবীর সকল গাছ যদি কলম বানাই তবুও তোমার কথা লিখে শেষ করা যাবে না।শুধু এতাটুকো বলবো মা তুমি আমার পৃথিবী তুমিই আমার বেহেস্ত।
©somewhere in net ltd.