নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ২৮.০৭.২০১৪ ইং তারিখে পশ্চিম আকাশে শাওয়ালের একফালি চাঁদ সওগাত নিয়ে এসেছিল ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ। এ আনন্দ পৌঁছে যাক সবার ঘরে। সবার জীবন হয়ে উঠুক আনন্দময় ও উৎসবমুখর। অন্যান্য উৎসব থেকে ঈদের পার্থক্য হল- সবাই এর অংশীদার। সবার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দেয়ার মধ্যে রয়েছে অপার আনন্দ। ঈদের দিন ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই এক কাতারে শামিল হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ঈদের আগের এক মাস সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আমরা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করি। অপরের দুঃখ-কষ্ট বুঝতে সচেষ্ট হই। রোজার প্রধান লক্ষ্য ত্যাগ ও সংযম। ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ত্যাগের অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারলে তা হবে সবার জন্য কল্যাণকর। দুর্ভাগ্যজনক যে, রমজান সংযমের মাস হওয়া সত্ত্বেও একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মানুষের বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিয়ে অধিক মুনাফা লুটেছে। এর পাশাপাশি মানুষ কষ্ট পেয়েছে যানজটে। ঈদে স্বজনদের কাছে ফিরে যেতেও মানুষকে অশেষ ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হয়েছে। এবার রমজান মাসে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতিও মোটা-মোটি স্বস্তিদায়ক ছিল । তবে কিছু কিছু জায়গায় হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাই ও প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে ।
আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে অনেক সমস্যা আছে, আছে অনেক সংকট। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন জাতীয় উৎসবে শ্রেণী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ শরিক হই। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রিয়জনকে নতুন পোশাক ও উপহার সামগ্রী কিনে দেই। ঈদের আগে আলো ঝলমলে শপিংমলের পাশাপাশি হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানেও ভিড় পরিলক্ষিত হয়। যারা সারাবছর জীর্ণ পোশাকে থাকে, তারাও ঈদের দিনে সন্তানদের গায়ে নতুন পোশাক পরাতে চায়। প্রতিবছর ঈদের আগে বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় বেতন-বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ লক্ষ্য করা যায়। তবে স্বস্তির বিষয়, এবার এ নিয়ে বড় ধরনের কোনো অঘটনের খবর পাওয়া যায়নি। তবে কোনো কোনো শিল্প-প্রতিষ্ঠানে বেতন-বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে। শ্রমিকদের সময়মতো ন্যায্য মজুরি পরিশোধ করা ইসলামের বিধান। অনেক ক্ষেত্রে, বিশেষ করে ঈদের আগে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হয় না, এটি দুঃখজনক। ঈদের আনন্দ কেবল একা ভোগ করলে হবে না, গরিব-দুঃখী মানুষকে তাতে শামিল করতে হবে। এটিও ইসলামের শিক্ষা। এ কারণেই ধনীদের জন্য জাকাত ফরজ করা হয়েছে।
ঈদের নামাজ আদায়ের আগেই ফিতরা দেয়ার নিয়ম। ফিতরার উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যের কারণে যাতে কেউ আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করা। সচ্ছলরা সঠিক নিয়মে জাকাত-ফিতরা দান করলে দরিদ্ররাও ঈদের খুশির ভাগ পেতে পারে আমরা কি ফেতরা এবং জাকাত সঠিক ভাবে আদায় করেছি??? বিবেকের কাছে প্রশ্ন, রমজান সংযমের মাস হলেও অনেকে খাওয়া-দাওয়া ও কেনাকাটার পেছনে অঢেল অর্থ ব্যয় করেন। দরিদ্র স্বজন বা প্রতিবেশীর প্রতি তারা কোন দায়িত্ব পালন করেন না। ব্যক্তিগত ভোগ-বিলাসে ব্যস্ত থাকেন। এটি ইসলামের বিধানের পরিপন্থী। ঈদ উদযাপনের সময় আমাদের এ কথাটিও মনে রাখতে হবে। ঈদে হাসপাতাল, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম যেন অচল বা স্থবির হয়ে না পড়ে, সরকারকে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। উৎসব-আনন্দে সংশ্লিষ্টরা যেন দায়িত্বের কথা ভুলে না যান।
ঈদ আসে সাম্যের দাওয়াত নিয়ে। অনেকে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতাকে বড় করে দেখেন। এর মর্ম অনুধাবন করেন না। ইসলাম বিশ্ব সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে আনন্দ ও সম্প্রীতির বড় অভাব। ঈদ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেত্রী শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। এ দৃষ্টান্ত কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে যদি তারা রাজনীতিতেও শুভেচ্ছা ও সম্প্রীতির সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারেন, তা হবে সমগ্র জাতির জন্য আনন্দের সংবাদ। ঈদুল ফিতরের আনন্দ আমি সবার সাথে ভাগা-ভাগি করে নিয়েছি আর আপনি??? আশা করি আপনিও নিয়েছেন, এটাই প্রত্যাশা সবার কাছে ।
©somewhere in net ltd.