নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢেউ টলোমল পদ্ম পুকুর

বাবুল অাবদুল গফুর

লেখক, চিত্রশিল্পী ও সরকারি চাকুরিজীবী

বাবুল অাবদুল গফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধ

২৭ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৫৫

যেভাবে লিখতে পারেন আপনিও
বাবুল আবদুল গফুর
পর্ব : ০১
[লেখালেখির ব্যাপারে যাদের হাতেখড়ি, যারা ভাবছেন কিভাবে লেখালেখি করা যায় অথচ লেখালেখির ব্যাপারে কোন ছক/ধারা খুঁজে পাচ্ছেন না, তাদের জন্য এ লেখাটি তুলে ধরলাম]

অনেকে জানতে চেয়েছেন, কিভাবে কবিতা লেখতে হয়। কিভাবে একজন কবি হয়ে উঠা যায়। যদিও আমি বাংলা সাহিত্যের একজন মূর্খ পাঠক। যার সামান্য অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আজ তার সদুত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো।
- মূলত কবি হওয়ার বা কবিতা লেখার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম-কানুন নেই। একজন মানুষ তার ভেতরের সত্ত্বাকে কিভাবে উপলব্ধি করেন, নিজের চিরচেনা পরিবেশকে কিভাবে খতিয়ে দেখেন তা বলতে গেলে জনে জনে আলাদা। স্কুলে ভর্তি হতে গেলে কিছু নিয়ম-কানুনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু একজন মানুষ নিজের অস্তিত্ব বা উপলব্ধিকে প্রকাশ করার জন্য কোন প্রথাগত নিয়ম নেই।
- লেখার জন্য চাই নিবিষ্ট মন। গভীরতম অর্ন্তদৃষ্টি। যেকোন ঘটনাকে এমনভাবে দেখতে হয়, যেন ঘটনাটির শুদ্ধতমরূপ সহজে বের করে আনা যায়। উদাহরণ দিচ্ছি, কোন স্থানে বন্যা হলো, গভীরভাবে যদি দেখা যায় মানুষের কষ্ট, সেই সাথে উক্ত অঞ্চলের পরিস্থিতি, বাস্তুসংস্থানের ক্ষতি, বন্যা পরবর্তী মানুষের হাহাকার তবে হৃদয়ে একধরনের অনুরণ হয়। মূলত কবিতার অনুপ্রয়াস এখানেই। এবার শুধু প্রকাশের জন্য চাই শব্দের খেলা, ছন্দের কারসাজি। যেমন:
আমি পরাজিত হতে হতে/ আজ কিছু নেই হারানোর ভয়
হে বন্যা, কতটা সাহস তোমার?/ কতটুকু করে দেবে ক্ষয়?
দেখলেন, কত দ্রুত উপলব্ধির জোরে ও শব্দকৌশলীতে লেখা হলো কবিতাটি!
- উপলব্ধির পাশাপাশি থাকতে হবে শব্দ সম্পর্কে গভীর জ্ঞান। এজন্য প্রয়োজন প্রতিটি অঞ্চলের ভাষার বিশেষ করে উপভাষা, চলিতভাষা কিংবা সাধুভাষার শব্দ প্রয়োগের দুর্দান্ত জ্ঞান।আর এজন্য আমাদের প্রধান হাতিয়ার অভিধান। সময়কে ভাগ করে নিয়মিতভাবে অভিধান পাঠ করতে হবে। যদিও বিষয়টি বিরক্তিকর।কিন্তু ভালো লেখক মানেই অভিধানের একজন দক্ষ ও নিয়মিত পাঠক।
- বানানশুদ্ধি হলো লেখার সবচেয়ে মৌলিক হাতিয়ার। শব্দের সামান্য হেরফেরে কবিতার মূলভাব ও প্রেক্ষাপট বদলে যায়। উহারণ দিচ্ছি, দাঁড়ি/দাড়ি, বান/বাণ, পানি/পাণি, আপন/আপণ শব্দগুলোর মধ্যে বিস্তর পার্থক্য। তাই বানানশুদ্ধ না করে কখনও লেখায় হাত দেওয়া যাবে না।
- ছন্দের ব্যবহার কবিতাকে করে তুলে সুখপাঠ্য ও শ্রুতি মধুর। যদিও বিষয়টি বেশ জটিল। এজন্য প্রয়োজন পরিপূর্ণ জ্ঞান। ধ্বনি,বর্ণ,অক্ষর, মাত্রা, মুক্তাক্ষর, বদ্ধাক্ষর, পর্ব, বাক্য ইত্যাদির নানান ধরনের প্রকাশভঙ্গি কবিতাকে নানান শ্রেণিতে বিভক্ত করে। বাংলা সাহিত্য ছন্দ মূলত দু’প্রাকর। তা হলো- ১। স্বরবৃত্ত ও ২। অক্ষরবৃত্ত। যদিও মাত্রাবৃত্ত নামে আরও একটি ছন্দ প্রচলিত। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে তা অক্ষরবৃত্ত ছন্দের একটি অংশ। এসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে, পাঠকমাত্রই ছন্দের গাঁথুনির তালে তার নার্ভের উঠানামাকে হিসেব করে। কিছুদিন আগে এক ছোট ভাইয়ের একটি সনেট পড়লাম। লেখার মান মোটামুটি ভালো- কিন্তু যখন মাত্রা মিলাতে গেলাম, দেখি তিনি কোথাও সঠিকভাবে মাত্রা সমন্বয় করেনি। এটা মূলত তার ছন্দ সম্পর্কে অনভিজ্ঞতার বহি:প্রকাশ। তাই ছন্দের জ্ঞানকে ভালোভাবে আয়ত্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কোন কবিতার প্রতিটি লাইন ১৪/১৮ অক্ষরের হলে তা সনেট হয় না।
- প্রয়োজন পড়াশোনার। একজন ভালো লেখক মানে সবচেয়ে ভালো পাঠক। তাকে বিভিন্ন বিষয়ে ভাগ করে করে পড়তে হবে। পড়ালেখায় কখনও গাফেলতি করা যাবে না। রবিন্দ্রনাথ শুধু তিনঘন্টা ঘুমাতেন, বাকী সময় কেবল পড়তেন আর পড়তেন। আল মাহমুদ তারচেয়ে ভয়ংকর পাঠক। তাঁরা পড়াশোনাটাকে নিজের স্ত্রীর চেয়েও ভালোবাসতেন, বাসেন।তাই পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই এবং কোন বিকল্প নেই।
আজ এতটুকুই। আগামী পর্বে আরও বিশদ আলোচনার পাশাপাশি ছন্দ নিয়েও আলোচনা করবো। এখন ছোট একটি কবিতা লেখে শেষ করছি।

চলে যাওয়া
বাবুল আবদুল গফুর

মেঘ নেই/তবু ভালো আছি/ভালো
রোদ নেই/তবু ভালো আছি/ভালো।

পথ নেই/কতদূর পথ/আরো
মত নেই/যেতে হবে দূর/আরো।

প্রস্তুত গাড়ি/কাঁধের থলে/জুতা
দুয়ারে প্রস্তুত/কান্নার উৎসব/তোতা

তবু ভালো আছি/প্রস্তুত যেতে/যাবো
যেতে হবে আজ/নিরুপায় সব/যাবো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.