নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢেউ টলোমল পদ্ম পুকুর

বাবুল অাবদুল গফুর

লেখক, চিত্রশিল্পী ও সরকারি চাকুরিজীবী

বাবুল অাবদুল গফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবন্ধ

২৮ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৪৯

যেভাবে লিখতে পারনে আপনিও
বাবুল আবদুল গফুর
পর্ব নং- ০২

বলা হয়ে থাকে ঢাকা শহরে যত না কাক আছে, তার দ্বিগুণ আছে কবি।শুধু ঢাকা শহরে নয়, সর্বত্র এ অবস্থা পরিব্যাপ্ত! সাধে কেউ এ কথা বলেনি। তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।যদি কেউ দুলাইন লিখতে পারে, মনে করে সে অনেক বেশি জানে। কখনও কখনও এমন সব লিখে, কি লিখেছে সে নিজেও জানে না।আবার কেউ কেউ শুধু কবি তকমা পাওয়ার জন্য লিখে। যে মানেরই হোক, সংশ্লিষ্ট প্রকাশের কাছে নিজের জনপ্রিয়তা কাজে লাগিয়ে, কখনও কখনও প্রকাশিত বইয়ের নিজেই ব্যয়ভার বহন করে প্রকাশ করে সেসব কাব্যগ্রন্থ কিংবা কথাসাহিত্য। কিন্তু আপনি যখন বই খুলে পড়ে দেখবেন হতাশ হবেন, মনে হবে- কিছু টাকা অপচয় করা ছাড়া কিছুই পেলেন না। সে যায় হোক। কথা দিয়েছিলাম ছন্দ নিয়ে আলোচনা করব। আজ সেই ব্যাপারে আলোচনা করতে আপনাদের সামনে হাজির হলাম।
- বাংলা কবিতায় সাধারণ তিনধরনের ছন্দ পরিদৃষ্ট হয়।যথা-

১। স্বরবৃত্ত ২। মাত্রাবৃত্ত ৩।অক্ষরবৃত্ত

কিন্তু এই তিনপ্রকার ছন্দ সম্পর্কে জানতে হলে, আমাদের আরও কিছু বিষয় আগেভাগে জানতে হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করছি।সেগুলো হলো-
১।বর্ণ
২।মাত্রা
৩।অক্ষর
অক্ষর আবার দুপ্রকার। যথা: ক)মুক্তাক্ষর খ)বদ্ধাক্ষর
৪।পর্ব
পর্ব এর ক্ষেত্রে অতিপর্ব নামে আরও একটি পর্ব আছে। তা নিচে আলোচনা করা হলো।

বর্ণ ও অক্ষর
সাধারণ অর্থে আমরা বুঝি, প্রতিটি বর্ণই এক একটি অক্ষর। কিন্তু বাংলা সাহিত্যে অক্ষর কোন বর্ণ নয়, উচ্চারণের হিসাব। বিষয়টা একটু কঠিন হয়ে গেলো মনে হয়? অসুবিধা নেই, আমি সহজ করে বলে দিচ্ছি।তার আগে খেয়াল ও সতর্কতার সাথে উচ্চারণ করি- মলম।
উচ্চারণ করলে কি হয়? ‘ম’ ‘লম’।খেয়াল করেন, আমরা মলম উচ্চারণের সময় ‘ম’, ‘ল’, ‘ম’ এভাবে উচ্চারণ করিনি। উচ্চারণ করেছি ‘ম’ তারপর ‘লম’। তার মানে ‘ম’ হলো একটি অক্ষর ‘লম’ হলো আরেকটি অক্ষর। মলম হলো দুটি অক্ষর নিয়ে গঠিত শব্দ। অর্থাৎ একবারে যত কম বর্ণ একত্রে উচ্চারিত হয়, তা অক্ষর।
আমি আরও একটি উদাহরণ দিচ্ছি।
ক্যালকুলেটর।
আমরা পড়ার সময় কিভাবে পড়ি? ‘ক্যাল’, ‘কু’, ‘লে’, ‘টর’। তার মানে ক্যালকুলেটর উচ্চারণ করতে আমদেরকে চারভাগে উচ্চারণ করতে হয়েছে।
প্রথমে-ক্যাল
২য়- কু
৩য়- লে
৪র্থ- টর
সব মিলেয়ে উচ্চারিত হলো ক্যালকুলেটর। অর্থাৎ ক্যালকুলেটর শব্দটিতে ৪টি অক্ষর রয়েছে।আশা করি অক্ষর সম্পর্কে আমি বুঝাতে পেরেছি।তাহলে মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষর কি?
মুক্তাক্ষর : একটি মাত্রা বর্ণ দিয়ে যখন অক্ষর হয়, তা হলো মুক্তাক্ষর। যেমন: মলমে মুক্তাক্ষর হলো, ম আর ক্যালকুলেটরে মুক্তাক্ষর হলো- কু, লে।
বদ্ধাক্ষর : দুই বা ততোধিক বর্ণ দিয়ে যখন অক্ষর হয়, তা হলো বদ্ধাক্ষর। যেমন : মলমে বদ্ধাক্ষর হলো, লম আর ক্যালকুলেটরে বদ্ধাক্ষর হলো- ক্যাল, টর।
এবার চলুন মাত্রা সম্পর্কে জানি।

মাত্রা
আগেই বলে রাখি। মাত্রা আর অক্ষর বলতে গেলে একই জিনিস।তবু তাদের মাঝে কিছু পার্থক্য বিদ্যমান।মাত্রা হলো বলার ভঙ্গি। খেয়াল করুন, যখন ক্যালকুলেটর বলেছি, তখন চারটি অক্ষরে তা পড়েছি। আর এ চারটি অক্ষর হলো এক একটি মাত্রা।যেমন: ক্যাল, কু, লে, টর হলো চার মাত্রা ও চার অক্ষর বিশিষ্ট একটি শব্দ। তাহলে এদের মধ্যে প্রকৃত পার্থক্য কোথায়? তাদের মধ্যে পার্থক্য হলো- মাত্রা কখনও কখনও দুই/তিন/এক বা একাধিক বর্ণের হয়।আসলে, মাত্রা বর্ণের পরিমাণের উপর না, বলার ভঙ্গির উপর নির্ভর করে। পরে কোনদিন শুধু মাত্রার উপর আলোচনা করবো।

পর্ব
পর্ব কী? কোনদিন খেয়াল করেছেন? কখনও কখনও ছন্দ ছাড়াও মনে হয় কোন কোন কবিতা ছান্দসিক। এর কারণ কী? তার কারণ হলো পর্ব। আগে একটি উদাহরণ দেখি।
এইখানে তোর/দাদির কবর/ডালিম গাছের/তলে
হাজার বছর/ভিজিয়ে রেখেছি/দুনয়নের/জলে।
-কবর/জসিম উদদীন
খেয়াল করেছেন, যখন আমরা কবর কবিতাটির প্রথম দুলাইন উচ্চারণ করলাম, কিভাবে উচ্চারণ করলাম? এক নি:শ্বাসে কতটুকু উচ্চারণ করলাম? আবার উচ্চারণ করুন- এইখানে তোর/দাদির কবর/ডালিম গাছের/তলে, হাজার বছর/ভিজিয়ে রেখেছি/দুনয়নের/জলে-এভাবে নয় তো? হ্যাঁ এভাবেই উচ্চারণ করেছি।প্রথমে এইখানে তোর, তারপর- দাদির কবর, তারপর- ডালিম গাছের, তারপর-তলে…..! অর্থাৎ এক নি:শ্বাসে আমরা উচ্চারণ করেছি, এইখানে তোর, তারপর- দাদির কবর, তারপর- ডালিম গাছের, তারপর-তলে……। আর এটাই হলো পর্ব। বলা যায়, পাঠক এক নি:শ্বাসে একটি বাক্যের যতগুলো শব্দ একসাথে উচ্চারণ করতে পারে, তা হলো পর্ব।
অতিপর্ব : কখনও কখনও দেখা যায় কেবল একটি শব্দ এক নি:শ্বাসে উচ্চারিত হয়। লক্ষ্য করুন-
‘এইখানে তোর/দাদির কবর/ডালিম গাছের/তলে’

এখানে ‘তলে’ শব্দটি এক নি:শ্বাসে উচ্চারিত হয়েছে। যদিও এর আগের তিনটি পর্বে দুটি করে শব্দ বিদ্যমান। কিন্তু ‘তলে’ একটি শব্দ।যা উচ্চারণ করা হয়েছে কেবল আলাদা একটি নি:শ্বাসে। আর এটাই হলো অতিপর্ব। অর্থাৎ যখন একটি শব্দ নিয়ে একটি পর্ব বুঝাবে, তখন তাকে অতিপর্ব বলে।

আসুন এবার ছন্দ শিখি।

প্রথমে বলা হয়েছে ছন্দ তিনপ্রকার। যথা- ১। স্বরবৃত্ত ২। মাত্রাবৃত্ত ও ৩। অক্ষরবৃত্ত।
আজ কেবল স্বরবৃত্ত নিয়ে আলোচনা করবো। টাইপ করতে করতে হাত ব্যথা করতেছে।
স্বরবৃত্ত
যে সকল কবিতার মুক্তাক্ষর ও বদ্ধাক্ষরে একমাত্রা হয়, তাকে স্বরবৃত্ত ছন্দের কবিতা বলে। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি লাইনে সাধারণত মাত্রা সংখ্যা সমান থাকে।
উদাহরণ দিচ্ছি-
‘‘খোকন খোকন/ ডাক পারি
খোকন মোদের/ কার বাড়ি”

চলুন কবিতাটি বিশ্লেষণ করি

। । । । । । ।
খো কন খো কন ডাক পা রি
। । । । । । ।
খো কন মো দের কার বা রি
[এখানে (।) চিহ্ন দিয়ে মাত্রা বুঝানো হয়েছে]
এবার খেয়াল করুন,
প্রথম পর্বে- ৪টি অক্ষর অর্থাৎ ৪ মাত্রা
২য় পর্বে – ৩টি অক্ষর অর্থাৎ ৩ মাত্রা
৩য় পর্বে- ৪টি অক্ষর অর্থাৎ ৪ মাত্রা
৪র্থ পর্বে – ৩টি অক্ষর অর্থাৎ ৩ মাত্রা
সব মিলিয়ে প্রথম লাইনে ৭ মাত্রা এবং ২য় লাইনে ৭ মাত্রা। আবার খেয়াল করুন।
খোকন খোকন/ ডাক পার=৭ মাত্রা
খোকন মোদের/ কার বাড়ি=৭ মাত্রা
দেখা যাচ্ছে দুই লা্ইনে মাত্রা সংখ্যা সমান। অতএর্ এটি একটি স্বরবৃত্ত ছন্দে রচিত ছড়া।

আজ এ এতটুকুই। ভালো থাকবেন। কাল যদি বেঁচে থাকি মাত্রা বৃত্ত নিয়ে আলোচনা করবো।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.