![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সহজিয়া
বাবুল আবদুল গফুর
-তোমার নাম মিতু না হয়ে তিতো হলো হতো।
-কেন?
-তোমার মধ্যে তিতো তিতো একটা ভাব আছে!
মিতু আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকালো। গড়পড়তা মেয়েদের মতো। আমি আরেকটু রাগানোর জন্য বললাম, গোল আলুর মতো হয়ে যাচ্ছো দিনকে দিন। কি খাও?
মিতু সত্যি সত্যি রেগে গেলো। আমাকে দ্বিতীয় কথা বলার সুযোগ না দিয়ে হনহন করে উঠে গেলো বসা থেকে। আমি মিতুর পিছু পিছু এসে হাত ধরে থামানোর চেষ্টা করলাম, মিতু ছেলেমানুষি করো না।
মিতু চোখে লাল করে বললো, ছেলেমানুষি মানে? কি বলতে চাও তুমি। একটার পর একটা স্ল্যাংক করে যাবে, আমি গিলবো? খবরদার আমার পিছু নিবে না।
-সরি। আমি তোমাকে স্রেফ রাগানোর জন্য বলেছি। তুমি সত্যি সুন্দর।
-গাছের গোড়া কেটে দিয়ে আগায় জল ঢালতে হবে না। আজ থেকে তোমার সাথে আমি নেই। মোবাইলে ফোন দিবা না। খবরদার। দিলে আমি বাড়িতে জানাবো।
মিতুকে অনেক চেষ্টা করলাম বোঝাতে। একরোখা মেয়ে, আমার কথা শুনবে না। শেষ পর্যন্ত মোবাইলের সিম কার্ড খুলে হাতের আঙ্গুলের ফাঁকে নিয়ে টাশ করে ভেঙ্গে ফেললো। আমি প্রায় বেকুবের মতো হয়ে গেলাম। মিতু সামান্য কথাকে এভাবে নিবে, ভাবতেও পারিনি।
মিতু চলে যাবার পর মনে হলো, এতোটা করা আমারও উচিত হয়নি। কিন্তু দুষ্টমি করতে গিয়ে এতো হবে জানলে, আমি সত্যি রাগাতাম না।
মিতুর সাথে আমার সম্পর্ক প্রায় দু’বছর হলো।
কলেজ জিবনের প্রথম পরিচয়। আমাদের ওরিয়েন্টশন ক্লাসে ছিলেন মোফাজ্জল স্যার। স্যার বললেন, তার নম্বরটা রাখার জন্য। যে কোন বিপদে, প্রয়োজনে তার সাথে পরামর্শ নিতে এ নম্বর সবার দরকার হবে। কারণ তিনি কলেজ শাখার †কা-অর্ডিনেটর। নম্বরটা লিখতে যাবো, †দখি পকেটে কলম নাই। কোথাও পড়ে গেছো হয়তো। মিতুকে বললাম, কলম হবে প্লিজ?
মিতু বললো, প্রথম কলেজে এসেছেন, এতটুকু কাণ্ডজ্ঞান নেই, কলম রাখবেন!
-থাকলে দাও। এতো কথা শুনাচ্ছেন কেন?
মিতু কলম দিলো। কিন্তু তার চোখ দেখে মনে হচ্ছে কোন অপরাধ করতেছে। তারপর ধীরে ধীরে পরিচয়। এক পর্যায়ে প্রেম।
কলেজ শেষে প্রতিদিন কোন না কোন ছুঁতোয় মিতুকে রাগাতাম এবং শেষ পর্যন্ত সে রেগে চলে গেলে, আবার আফসোস হতো।
বিচিত্র মনে হতো সব। অনেকবার ভেবেছি, আর নয়, এবার সত্যি সত্যি রাগের কোন কথা বলবো না। কিন্তু না, সামনে আসলে আর কিছুই মনে থাকে না। আমি একটার পর একটা খোঁচাতে থাকি, মিতু বেলুনের মতো ফোলতে থাকে। শেষ পর্যন্ত রাগারাগি করে চলে যায়, আর আমি আফসোস করি, আর করবো না।
যদিও এভাবে আমরা মন্দ ছিলাম না।
২.
কাপাসগোলা ওয়ালট্রিট বাইলেনে টিউশনি করাতাম আমি। আজ তিনদিন হলো, যাইনি।
বিকালে ফোন এলো, স্যার কি অসুস্থ? ক’দিন হলো আসেন না!
বললাম, অসুস্থ না, হাতে কাজ ছিলো কিছু। কাল আসবো।
-জ্বি স্যার।
ফোন কেটে দিয়ে মনে হলো, রাজ্যের মাথাব্যথা সব আমার। মিতুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিনড়ব। টিউশনিতে যাওয়া হয়নি। বাড়িতে শুয়ে থাকতে থাকতে শরীর ব্যথা করতেছে। আশা ছিলো, মিতু কোন না কোন ছুঁতোয় ফোন দিবে। আগেও অনেকবার ফোন দিয়েছে।
একদিনের কাণ্ডটা বলি। মিতুর সাথে প্রচণ্ড- ঝগড়া। সে বারবার অভিযোগ করতেছে, আমার মোবাইলে প্রিয়াংকার নম্বর সেভ করা কেন?
আমি বললাম, প্রিয়াংকা আমার ক্লাসমেট। †যকোন প্রয়োজনে লাগতে পারে। আর তুমি বলো, আমি মাসে ক’দিন ক্লাস করি?
-আমি তোমাকে কখন সাহায্য করিনি?
-করেছো, করে যাচ্ছো। আচ্ছা আমি ডিলিট করে দিচ্ছি।
-না ডিলিট করতে হবে না। একবার যখন রেখেছো, ডিলিট করবে কেন? আমার কথায়? করতে হবে না। তুমি প্রিয়াংকার মোবাইলে ফোন দিবে। আমার কাছে ভুলেও না। আমার ফোন সুইচ অফ!
মিতু সাথে সাথে মোবাইল বন্ধ করে দিলো। সেদিন আর খুলেনি। পরদিনও না। আমি বার কয়েক চেষ্টা করলাম, কিন্তু কিছুতে ফোনে পাচ্ছিলাম না।
দ্বিতীয় দিন হঠাৎ ফোন দিলো মিতু। ঝটপট বলে গেলো, তোমাকে ফোন দিচ্ছি না। তোমার সাথে কথা বলার আমার রুচি নেই। আমার হাজারীনাগের রসায়নটা দরকার। দয়া করে বাবু মোল্লার দোকানে রেখে যাবে।
হুট করে ফোন কেটে দিলো। আমি ফোন ব্যাক করলাম, মোবাইল বন্ধ।
এবারও মনে হলো, কোন না কোন ছুঁতোয় ফোন দিবে।
কিন্তু তিনদিন হলো। মিতুর ফোন এলো না, এমনকি কলেজে পর্যন্ত আসেনি। আমি অস্থির হয়ে গেলাম। মিতু এ সামান্য কথাতে এতোটা আঘাত পাবে, কল্পনাও করা যায় না। নিজেকে শান্ত রাখা আমার কাজে কঠিন মনে হলো।
৩.
পরদিন সকালে মিতুর বাসায় হাজির হলাম। মিতুর মা আমাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালেন, তোমাকে তা চিনলাম না বাবা?
-জ্বি আন্টি, আমি মিতুর ক্লাসমেট, ফারিক। মিতু বাসায় নেই?
-আছে। বিশেষ দরকার?
-জ্বি আন্টি। আমার প্র্যাকটিক্যাল নোটখাতাটা নিতে এসেছি। সামনের সপ্তাহে পরীক্ষা কিনা! ভাবছিলাম, মিতু ক্লাসে গেলে নিয়ে যাবে। কিন্তু ক’দিন হলো যাচ্ছে না। তাই বাড়িতে চলে এলাম।
-ভালো করেছো। কলেজে যায়নি মানে, কত বললাম, ক্লাস ফাঁকি দিস না, শুনেনি। কাল তার ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে। সকাল থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য কত কি করতেছে! আন্টি একটু থেমে আবার বললেন, তুমি বসো, আমি মিতুকে ডাকতেছি। সাজগোছ শেষ হয়েছে কিনা কে জানে!
আন্টি মিতুকে ডাকতে চলে গেলেন। বুকের ভেতর প্রচণ্ড ফাঁকা মনে হলো। মিতু সত্যি ভালোই আছে। এই যে, আমার সাথে রাগারাগির পর সিম ভেঙ্গে ফেললো, কথা বলেনি- সে জন্য হয়তো তার বিন্দু পরিমাণ কষ্ট নেই। মানুষ এমন, যখন চায় সে কষ্টকে সুন্দর সাজিয়ে রাখতে পারে, আর যখন ইচ্ছা নিজের জন্য যে কোন ছুতোয় সুখে থাকতে পারে। মিতুর জন্য আমার বুকের ভেতর হৃদস্পন্দনগুলো মনে হলো এক একটা হাতুড়ির আঘাত। কিন্তু আমার কম্পমান চোখের পাতা দেখে মিতু বুঝবে কিনা কে জানে, ঘুমানোর জন্য আমি কত ব্যস্ত ছিলাম!
ছোট দেয়ালের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষায় থাকলাম, মিতু আসলে তার চোখ দুটি দিয়ে ভেতরটা দেখার। সেখানে আসলেই আমি কতটা স্বাধীন!
©somewhere in net ltd.