নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢেউ টলোমল পদ্ম পুকুর

বাবুল অাবদুল গফুর

লেখক, চিত্রশিল্পী ও সরকারি চাকুরিজীবী

বাবুল অাবদুল গফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৪




রোদ্দুরে হেঁটে বেড়ায় মেঘের খোলা পিঠ
বাবুল আবদুল গফুর


কাজলের রহস্যজনক মৃত্যু কেউ সহজে মেনে নিতে পারছে না।
তমিজ উল্লাহর কনিষ্ঠ পুত্রের চরিত্রে অদ্ভূত রকম শক্তি ছিলো।
ঘটনা পরশুদিনের। মরিয়মের মা ভোরে ক্ষেতে যাচ্ছিলেন। কবরস্থানের পাশে কড়ই গাছের নিচে তিনি দেখলেন, কার যেন ঝুলন্ত লাশ! চিৎকার দিতে দিতে পালিয়ে এসে গ্রামে ছাওর করে দিলেন, কেডা জানি ফাঁস দিছে গলায়। সকাল থেকে দলে দলে মানুষ ঝড়ো হতে লাগলো। সকলের চোখ কপালে উঠে গেলো, কাজল শাড়ি পেঁচিয়ে কড়ই গাছের ডালে ঝুলে আছে। চোখ দুটি বিস্ফোরিত। জিহ্বাটা বের হয়ে আছে মুখের বাইরে। নাক আর গালে শাদা ফেনা।
গণি মিয়াজী বললেন, নামা হেতারে। লাশ গাছে ঝুলি থাকলে আত্মা কষ্ট পাইব, লাশকে কষ্ট দেওন ঠিক না।
কিন্তু কেউ এগুলো না।
মিরাজ বললো, কাকা লাশে হাত লাগন ঠিক অইত না। পরে পুলিশ জেরা কইরবো। আগে থানা আসুক।
-ধুর! কস কি, থানা জাইনবো কেমনে? নামা।
না, কেউ নামালো না। কাজলের মা, স্ত্রীর কান্নায় চারদিকে পরিবেশ শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। ছেলে বুড়ো সবাই যে যার মতো করে কাঁদলো। প্রতিবেশীদের কেউ কেউ সান্ত্বনা দিতে লাগলো। ইমাম সাহেব বললেন, কান্দন ঠিক না। মরা মাইনষের জইন্যে বেশি বেশি দোয়া করন সুন্নত। কান্দন নাজায়িজ।
কিন্তু ইমাম সাহেবেরে কথায় কাজ হলো না। বরং কান্নার রোল ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকলো।
সকাল দশটার সময় অফিসার ইনচার্জ জনাব তৈয়বুল হক আসলেন। তিনি সরাসরি প্রশ্ন করলেন, ঘটনাটা প্রথম কে দেখেছেন?
সবাই মরিয়মের মাকে দেখিয়ে দিলো। তিনি মরিয়মের মার কাছ থেকে কাগজে কখন, কিভাবে দেখলেন সবিস্তরে লেখে নিলেন। তারপর কনস্টেবলকে নির্দেশ দিলেন, লাশ গাড়িতে উঠাও।
এমন সময় গ্রামের মেম্বার দৌঁড়ে আসলো, স্যার। গরিবের পোলা, রাগের মাথায় কি-না কি করছে। থানায় নেওনের দরকার কি? এখানে দাফন করুক।’ তার কণ্ঠে মায়াভরা দরদ উথলে উঠলো।
-লাশের ময়নাদন্ত করতে হবে।
গ্রামের সবাই অনুরোধ করলো, কিন্তু তিনি শুনলেন না। বললেন, নিয়ম নাই।
২.
মানুষ যখন বিপদে পড়ে, কিছু মানুষের জন্য তা তামাশার খোরাক হলেও, বেশির ভাগ মানুষ তাদের সাথে সহমর্মিতা পোষণ করে। তাদের অন্যান্য সকল কাজে কম-বেশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। কাজলকে নিয়ে যাওয়ার পর, তার মা তিনবার বেহুঁশ হয়ে গেলেন। তার স্ত্রী ফরিদাকে দু’বার হাসপাতালে নিতে হলো। পরিবারে শোকের ছায়াটা সকলে পুরোপুরি গ্রাস করে নিলো।
সকালে মরিয়মের মা এসেছেন, রান্না করা ভাত-মুরগি নিয়ে কাজলের বাসায়। কাজলের মা’র সামনে হাতের ক্যারিয়ার খুলে ভাত তুলে দিলেন মুখে, খান বইন।
কাজলের মা’র সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নাই। তার চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরে যাচ্ছে।
-খান বইন। ভাঙ্গি পইড়লে চইলবো? বালা-মুছিবত আল্লার দান। রহমত। খান-
তারপরও এক লোকমা ভাত তাকে খাওয়াতে পারলেন না তিনি। কাজলের স্ত্রীর কাছে গিয়েও কোন লাভ হলো না। উল্টো কাজলের স্ত্রী মরিয়মের মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো, কাকি কেন্ নুনার ছিটা দিতে আইছেন? আমি কেমন করে দিন কাটামু কও চাচি!ি মরিয়মের মা’র চোখে জল এসে গেলো।
এমন সময় চৌকিদারসহ পুলিশ আসলেন উঠানে।
মোটামুটি বয়সের একজন পুলিশটি বললেন, কাজলের স্ত্রী আছেন?
মরিয়মের মা বললেন, হ আছে বাজান। এই- তিনি তাকে জড়িয়ে ধরা কাজলের স্ত্রীকে দেখিয়ে দিলেন।
পুলিশটি বললেন, তাকে এরেস্ট করতে এসেছি। নিয়ে আসেন।
শুনে কাজলের মা দৌঁড়ে এলেন, বাজান আমার পোলাডা গেলো। এটুকও নিও না। আমি কারে নিই বাঁচি থাকমু ক? কারে নি বাঁচি থাকমু- বলতে বলতে তিনি অজ্ঞান হয়ে গেলেন। ততক্ষণে দেখতে আসা অনেকের একটা ছোট ভিড় জমেছে উঠানে। তারা দৌঁড়ে এসে কাজলের মাকে ধরলো। পুলিশের লোকটি বললেন, কর্তব্য। আমি কাউকে চাইলে ইচ্ছে করে গ্রেফতার করতে পারি না। কাজলের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য তার স্ত্রীর জবানবন্ধি নেওয়া জরুরত।
৩.
সাত আট দিন পর খবর এলো কাজলের স্ত্রী ফরিদা ১৬৪ ধারায় জবানবন্ধি দিয়েছে। সে নিজেই কাজলকে হত্যা করেছে। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে কেন হত্যা করেছে, তার কারণ স্বীকার করেনি। প্রথমে শুনে কেউ বিশ্বাসই করতে চায়নি, ফরিদা কাজলকে হত্যা করতে পারে। কিন্তু ধীরে ধীরে লোকজন দেখলো, ঘটনা যা শুনেছে আসলেই সত্যি! সবাই তাজ্জব, এ কেমন পাষণ্ড স্ত্রী?
গণি মিয়াজী বললেন, আগেই ঠাওর করছিলাম। ঘটনা এমন ঘটবে। ভালা বংশের মাইয়া না হইলে যেমুন হয়-
-হ গণি। জাত-পাত না দেখি বিয়া করাইলে এমুন তো হবেই।
তার কথা শুনে সাঁই দেয় গণি মিয়াজী। তার অর্ধাবৃত চোখ দুটি মাটির দিকে তাক করে, মাথা দোলাতে লাগলেন, আচ্ছা লালু, তুই খেয়াল করছসনি অইদিন?
লালমিয়া চুপ থাকেন। গণি মিয়াজী কথায় ফাঁক না দিয়ে, মাইয়াটির কান্দন দেখি বুঝন যায়, হে এ কামটি করতে পাইরবো? কিন্তুক তাই দেইখলো মাইনষে। মেকি কান্দনের একখান ভাব থাকে, হেতিরে দেখি বুঝনের কোন কায়দা আছিলো? কি কারবার না হেতি দেখাইলো! মাবুদ-
লাল মিয়া আরো গম্ভীর হয়ে যায়, সত্যি তো! নিজের স্বামীকে খুন করে কি নিঁখুতভাবে না করে গেলো অভিনয়। কি জন্য নিজের সোনার সংসার জলাঞ্জলি দিলো মেয়েটি লাল মিয়ার মাথায় আসে না। তার হঠাৎ বুকের ভেতর অস্থির লাগে। মনে হয়, স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাও কি মানুষকে সবটুকু বুঝতে পারে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.