নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢেউ টলোমল পদ্ম পুকুর

বাবুল অাবদুল গফুর

লেখক, চিত্রশিল্পী ও সরকারি চাকুরিজীবী

বাবুল অাবদুল গফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোটগল্প

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬




চিরন্তন মেঘের আবেশ
বাবুল আবদুল গফুর


শুক্রবারে এখানে হাট বসে। শনিবারে তাই বলতে গেলে বেচাকিক্রি একপ্রকার বন্ধই থাকে। নাজের আলী ঠিক করলেন আজই তিনি মেয়ের বাড়িতে যাবেন। মেয়ের ও মেয়ের জামাইয়ের মোবাইল বন্ধ। কোনভাবে তাদের সাথে যোগাযোগ করা গেলো না। বড় দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে!
দোকানে তালা লাগিয়ে তিনি একটা সিএনজিতে উঠে পড়লেন। মেয়ের সবচেয়ে পছন্দের বিডি আমের আচার নিলেন তিন বোয়াম। জামাইয়ের জন্য নিলেন দুটি জ্যান্ত দেশি মোরগ। বিয়াই বেঁচে নেই। থাকলে ভালো হতো। বিয়াই ছাড়া সেখানে নিঃসঙ্গ মনে হয় নাজের আলীর। তবু মেয়ে আছে করার কিছু নেই। জগৎটা বড় কষ্টের, বিশেষ করে যার মেয়ে আছে তার জন্য জগতটা দোযখের মত।
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিরাজের সাথে দেখা হয় তার। সিরাজ এ এলাকায় ঘর জামাই থাকে। নাজের আলীর ব্যাপারটা দৃষ্টিকটু লাগে। মা বাপ থাকতে একটা সামর্থ্যবান পুরুষ শ্বশুড় বাড়িতে ঘরজামাই থাকবে, তা খুব বেমানান দেখায়।
সিরাজ নাজের আলীকে দেখে খুশি হলো, চাচা রুজিনার শশুড় বাড়িত যাচ্ছেননি?
-হ। মনডা ভালা না সিরু। জামাইর মোবাইলখানও বন্ধ, মেয়েডারও। তোর খবর কি হেয়া ক! বাপজানের লগে কথা অইছেনি?
সিরাজের চেহারা কালো হয়ে যায়। নাজের আলীর বুঝতে অসুবিধা হয় না, সিরাজের সাথে তাদের যোগাযোগ বন্ধ। সান্ত্বনার সুরে বললেন, খোঁজ খবর লইস। বাপ মাও কারও জিন্দেগিভর বাঁচি থাহেনা বাজান। হারালে বুইঝবি!
সিরাজ নাজের আলীর কথায় তেমন বিচলতি হলো না, বললো, চাচার লগে কি বাপজানের দেহা অয়ছেনি?
-হ। পরশুদিন। গতরে জ্বর লই দোয়ানে আইছে সদাই নেওয়ার লাইগ্যা! বয়স বাড়ইতছে তো!
-আপ্নে কবে ফিইরবেন? ওহানে বেশিদিন থাহন ভালা অইবে না চাচা? মোড়ক লাইগছে হুনলাম।
-বেশিদিন থাহনের জু আছেনি? দোয়ান বান্ধি আইছি। কেডা কইছে তোরে?
-হুনছি, বে-গে জানে।
-আইচি যহন এদ্দুর, ফিরি যাই কেমনতরা? আহি! ভালা থাহিস!
-যাইন।
সিরাজ সালাম দেয়। নাজের আলীর কাছে মানুষের জিবনকে একটা সুন্দর দুর্ভোগ মনে হয়। মা বাপ স্ত্রী পুত্র সকলকে যে মিথ্যা ভালোবাসার অজুহাতে বেঁধে রাখে, তাও মিথ্যা। প্রয়োজন শুধু একটা আঘাতের। তারপর সব বন্ধন তছনছ হয়ে যায়। একজন মানুষের কাছে প্রিয় বলতে কিছুই নেই, এমনকি সে নিজেও না।
বটতলী মোড় থেকে রিক্সাতে উঠলেন নাজের আলী। গ্রামের সহজ সরল পথে রিক্সায় যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
২.
নাজের আলীকে দেখে তেড়ে আসলেন বিয়াইন মফিদার মা।
-কিল্লাই আইছেন, অ্যাঁ? ভাঙ্গনের বান কাটি দেওনের লাগি? দূরঅয় যান- এহান থেইক্কা। আপ্নার মাইয়া বংশের মুহে কালি দিছেরে বিয়াই- বলতে বলতে তিনি ডুকরে উঠলেন। নাজের আলী আকস্মিক ঘটনার কিছু বুঝলেন না, স্তব্ধ হয়ে গেলেন। উঠানে শোরগোল শুনে ঘর থেকে বের হয়ে এলেন মেয়ের চাচী শ্বাশুড়ী। তিনি নাজের আলীকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন, বিয়াই এইহানে আহেন।
নাজের আলী জানতে চাইলেন, বিয়াইন কি অইছে, আমি তো কিছু ঠাওর পাচ্ছি না।
-কমু। আগে আহেন।
নাজের আলীকে চা নাস্তা দেওয়া হলো। বিয়াইন বলতে গিয়ে কিছু যেন বারবার লুকাচ্ছে। নাজের আলী লক্ষ্য করে বললেন, মাইয়া আর জামাইর মোবাইলডা বন্ধ। পরাণডাও জ্বলতাছে। ভাবলাম একবার দেখে আহি। ঘটনা কি বিয়াইন?
নাজের আলী ঘটনা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলেন। তার মেয়ের সাথে নাকি এ গ্রামের নজু শেখের পোলার সম্বন্ধ। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার জামাই তাকে মারধর করেছে। কিন্তু কাল সে নজু শেখের পোলার সাথে পালিয়ে যায়। নাজের আলীর বিশ্বাস হয় না। তার মেয়ে তো এমন হবার কথা নয়! গুণে মানে লক্ষ্মী! ঘটনা কি সত্যি, না অন্য কিছু? তিনি মেয়েকে তো এমন শিক্ষা দেয়নি!
নাজের আলীর হঠাৎ নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে হলো। মানুষের শিক্ষা, মান সম্মান বংশ-আভিজাত্য কখনও চিরস্থায়ী গৌরবের নয়! নাজের আলীর জিবনে আজ তাই প্রমাণ হলো। তার চোখে নিজের অজান্তেই ঘনীভূত ব্যথায় জমে উঠলো অশ্রু!
তিনি মেয়ের জামাইর সাথে দেখা করতে চাইলেন, কিন্তু মেয়ের জামাইকে পেলেন না। প্রশস্ত উঠানে দাঁড়িয়ে তিনি বিয়াইনের দিকে তাকিয়ে বললেন, যাচ্চি বিয়াইন। মাফ কইরেন।
তার সেই কথা বিয়াইনের কান পর‌্যন্ত পৌঁছালো কি-না কে জানে। কিন্তু বিয়াইনের চোখের জ্বলন্ত দৃষ্টি তার কাছে দুর্বোধ্য মনে হলো, সেখানে ঘৃণা আর প্রতিশোধের কঠিন বন্দোবস্ত!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.