নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঢেউ টলোমল পদ্ম পুকুর

বাবুল অাবদুল গফুর

লেখক, চিত্রশিল্পী ও সরকারি চাকুরিজীবী

বাবুল অাবদুল গফুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উপন্যাস

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:০৪

কলাপাতার ঘোড়া
বাবুল আবদুল গফুর




প্রথম পরিচ্ছেদ
শেষ পর্য়ন্ত মেম্বারের প্রস্তাবে সবাই রাজি হলো। মেম্বার সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন, গ্রামে থাকতে হলে সমিরকে গ্রামের রেওয়াজ মানতে হবে। তার বউয়ের জন্য গ্রামের আর দশটা জোয়ান পোলা নষ্ট হবে, তা মানতে পারবেন না।
বাঁধ সাধলেন আনুর বাপ। গ্রামের বর্ষীয়ান মুরব্বি হিসেবে তার যথেষ্ঠ সুনাম আছে। বললেন, মেম্বর সাব যা বললো তা মানা যায় না। মানার মত না। সমিরকে গ্রাম ছাড়তে হবে। মগের মুল্লুক না। তার বউ যা করে যাবে মেনে নিতে হবে।?
মেম্বার থামলেন, না কাকা। মেয়েটার বয়স তেমন হয়নি। ভুল করতেই পারে। কিন্তু গ্রাম ছাড়তে হবে কেন? শুধরালে হয়।
নজু শেখ কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, মেম্বার আবার থামালেন।
মেম্বার সমিরের দিকে তাকিয়ে বললেন, মেয়ে মানুষকে শাসন করতে হয়, না হলে বেঘাত ঘটে। তোরও তাই। এতো লাই দেওয়া ঠিক না।
সমির বললেন, চাচা আমার বউয়ের দোষ কি সত্য না মিথ্যা, তা তো যাচাই করলেন না। কেবল আনুর বাপের কথায় কেমন বিচার করলেন আমি বুঝলাম না।
-তুমি কথা বেশি বলো না সমির। আনুর বাপ কি মিছা কথা বলতেছে? বুড়ো মানুষ। তোর সাথে উনার কি শত্রুতা, অ্যাঁ? ঘটনা যা ঘটেছে, সত্য। তুই গিয়ে বউকে শাসন কর। রাস্তাঘাটে যাতে কারও সাথে হাত ধরাধরি করে হাসি ঠাট্টা না করে।
আনুর বাপ বিস্মিত হয়ে বললেন, সমির কি আমার কথাকে মিছা মনে করে? আমি এই বয়সে মিছা কথা বললো, কেন? আমার কিসের ফায়দা?
সমির আর কোন কথা বলার সুযোগ পেল না। তার ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি মনে হলো। কিন্তু আনুর বাপ বুড়ো মানুষ, মিথ্যা কথা বলারও কারণ নেই। তার বউ কি তবে? না, শফিকাকে সে ভালো করে চিনে। তার চরিত্রে কেউ কোনদিন খুঁত দেখেনি। ব্যাপারটা আসলে কতটুকু সত্য শফিকার সাথে কথা বলা দরকার।

ঘটনা হলো গতকালের। জুমার নামাজের আগে পুকুর ঘাটে শফিকার সাথে মোতালেবের দেখা হয়। কি বিষয়ে যেন তার সাথে শফিকার হাসাহাসি হয়। হঠাৎ মোতালেব শফিকার হাত ধরে ফেলে। গোসল করতে এসে আনুর বাপের চোখে পড়ে তা। তা নিয়ে চলে মেম্বারের বাড়িতে শালিশ। আনুর বাপের এক কথা। গ্রামে কোন পাপাচার তিনি বেঁচে থাকতে হতে দিবেন না। মোতালেব গ্রামের ছেলে। তার চরিত্র সম্পর্কে গ্রামে বিরূপ ধারণা সকলের। গত মাসে মুন্সির হাট বদি উল্লাহর মেয়ের সাথে হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলে লোকজন। প্রচণ্ড মারধর করে লোকে। সেই মোতালেবের সাথে শফিকার হাত ধরাধরি আনুর বাপ সহ্য করতে পারেনি। তিনি আঁচ করলেন, একই ঘটনা হয়তো এ গ্রামেও ঘটবে। তার আগেই বন্ধ করা দরকার। তাই সময় থাকতে সমিরকে সতর্ক করা উচিত।
শুনে বিশ্বাস করেনি সমির। শফিকা ভদ্র বংশের মেয়ে। তার বাপ মায়ের ফরেজগারিত্ব সম্পর্কে গ্রামের সবাই জানে। তাছাড়া বিয়ের সময়, সমির শফিকার রূপ দেখে বিয়ে করেনি। তার গুণে মুগ্ধ হয়েছিলো সে। কিন্তু আনুর বাপের দ্বীনদারিত্ব নিয়েও সন্দেহ নাই, ভালো লোক। ঘটনা কি? সমির ঠিক করলো শফিকার সাথে কথা বলে জানা যাবে। বেগতিক হলে মোতালেব কে সে ছাড়বে না।

বাড়িতে এসে মনে হলো, বাজার থেকে সে নুন আনেনি। শফিকা যাওয়ার সময় বারবার বলেছে, আড্ডা-ফাড্ডায় বসে নুনের কথা ভুলে যেও না। কাল থেকে নুন নেই। বাড়িতে ঢুকে শফিকাকে বললো, নুন আনতে ভুলে গেছি।
শফিকা চোখ টান করে বললো, জানি। পাঁচ বছর যাবৎ সংসার করি, তোমার হালচাল আমি বুঝবো না?
-তোমার সাথে আমার কথা ছিলো বিশেষ।
-পরে বলো। আমি চুলায় তরকারি দিয়েছি। দুপুরে খেতে হবে।
শফিক কথা বাড়ালো না। বললো, লুঙ্গিটা আর সাবানটা অন্তত দাও। গোসল করবো। গায়ে চুলকানির মতো বিচি উঠেছে। গোসল করলে মনে হয় শান্তি লাগবে।
-লুঙ্গি বাইরে দড়িতে আছে। তোয়ালে দিচ্ছি।
-ফজু কই?
-তোমার মেয়ের হিসাব আমি কি করে বলবো? বড়োতে চাচির সাথে হয়তো। তুমি একটু দাঁড়াও আমি তরকারি দেখে তোয়ালে নিয়ে আসতেছি।
শফিকা চলে যাওয়ার পর সমিরের মনে হলো আনুর বাপ মিথ্যা বলেছে হয়তো। এতো সাবলীল একটা মেয়ে তাকে ঠকাতে পারে না। যে অপরাধ করে, তার চোখ কখনও এতো মসৃণ নয়।
শফিকা তোয়ালে দিতে দিতে বললো, তোমাকে আব্বা ফোন দিছিলো?
-না। কেন?
-কালকে আসার কথা বলেছে। নাতি দেখবে। পুকুর থেকে মাছ তুলেছে, তোমার জন্য মা মোচা দিবে বলেছে।
-আসুক। মোচা দরকার নাই। আমি গোসল করে আসতেছি। তরকারি হলে, ভাত ভাড়ো। গরম খেতে আমার খারাপ লাগে।

পুকুর ঘাটে করিমের সাথে দেখা হয় সমিরের। করিম সমিরের ছোট বেলার বন্ধু। মক্তবে, স্কুলে তারা একসাথে পড়ালেখা করেছে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, করিম আজ স্কুলের টিচার। সমির মাছচাষ করে জিবন কাটায়। তবে করিম ভালো ছেলে। মা-বাপ না থাকলেও একজন ছেলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত করিম।
সমিরকে দেখে, করিম বললো, তোর মেয়েটা এমন সেয়ানা, বুঝা যায় না।
সমির হেসে বললো, কি হলো?
-কালকে যখন পড়া জিজ্ঞাস করলাম, বললো-শিখিনি। জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
-ঘুমিয়েছিলাম তাই।
-তোমার ব্যাপারে তোমার আব্বুকে জানানো দরকার। প্রায় সময় তুমি পড়া শিখে আসো না। কি উত্তর দিয়েছে জানিস? বললো, আব্বু কে বলে লাভ হবে না স্যার। আব্বু নিজেই পড়তে জানে না।
দুই বন্ধু খলখল করে এসে উঠলেন। সমির বললো, বিয়ে করবি না? বয়স তো কম হলো না। তোর বত্রিশ মনে হয়। ক’দিন আর বাঁচবি বল?
করিম বললো, করবো। ভালো মেয়ে পাচ্ছি না। তোর বউয়ের মতো চরিত্রবান হলেই হয়। আচ্ছা ভাবিকে বলনা, তার কোন আত্মীয় স্বজন আছে কিনা।
সমির মাথা দুলায়ে বললো, বলে দেখবো। তুই বাড়িতে আসিস।
করিম আসার কথা বলে চলে গেলো। সমিরের কাছে করিমের বিয়ের ব্যাপারটা খটকা লাগে। বয়স হয়েছে বিয়ে করবে তা না, আজ বত্রিশ বছর হলো, বিয়ের নামগন্ধ পর্য়ন্ত নেয় না। কি মানুষরে করিম!

গোসল সেরে খেতে বসলো সমির।
শফিকাকে উদ্দেশ্য করে বললো, মা কবে আসবে বলেছে?
-বড় আপুর সাথে কথা বলেছি, তিন চারদিন পর পাঠায়ে দিবে বলছে।
-মার কাণ্ড দেখেছো। যেখানে যায়, মাসখানেক থাকবে। খারাপ লাগে। মা না থাকলে পুরো বাড়িটা আঁধার আঁধার লাগে। ফিজু এখনো আসেনি।
-নিতে গিয়েছিলাম, চাচি বললো, খেয়ে দেয়ে যাবে। মিতুর সাথে খেলতেছে, খেলুক।
সমির ভাত মুখে তুলে নিতে নিতে বললো, ও।
-তুমি জানি কিসের কথা বলছিলে তখন?
সমির প্রথমে ভাবলো, বলবে না। পরক্ষণে মত পাল্টালো। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বুঝাবুঝি থাকা ভালো নয়। বলা দরকার। হাতের আঙুল গালে চুষতে চুষতে বললো, মোতালেবের সাথে গতকাল পুকুর ঘাটে দেখা হয়েছিলো?
শফিকা অবাক হলো, হ্যাঁ! কেন?
-তাই নিয়ে আজ মেম্বারের বাড়িতে শালিশ বসেছে। মোতালেব ভালো না। তার যথেষ্ট বদনাম আছে। তুমি হয়তো জানো না, তাই কথা বলেছো। গ্রামে সবাই থাকে এড়িয়ে চলে।
শফিকা এবার সত্যি সত্যি বিস্মিত হলো, কি বলো শালিশ বসেছে? কি জন্যে? আমি কি করেছি?
-মোতালেব নাকি তোমার হাত ধরেছে, আনুর বাপ মেম্বারকে বলেছে।
শফিকা এবার ক্রোধান্বিত হয়ে উঠলো, কি বলে বুড়ো! তার মেয়ে নাই, একটা মানুষকে অপবাদ দেওয়ার আগে ভাবা উচিত। মোতালেব কেন আমার হাত ধরবে?
-বাদ দাও সে কথা। পথেঘাটে আর দেখলেও মোতালেবের সাথে কথা বলার দরকার নাই। খারাপ থেকে বিরত থাকা ভালো। কি দরকার সমাজে বদনাম কুড়ানোর!
শফিকা বললো, আমি কিছু করিনি। সেই তো বললো, ভাবি সমির দা অনেক ভালো মানুষ! ফেরেস্তা! আপনার ভাগ্য তাই এমন জামাই ফেলেন। আমি বললাম, ভালো না ছাই। যন্ত্রনা। পুরুষ মানুষ আবার ভালো হয় নাকি?
সে বললো, হয়। যেমন আমাদের সমির দা।
তারপর একটা চুটকি বললো, তাই শুনে হাসি সংবরণ করতে পারিনি।
সমির বললো, এটাই দোষের জন্য যথেষ্ট। এটা গ্রাম। মাথায় কাপড় না থাকলে পর্য়ন্ত মাইনষে খারাপ ভাবে। সেখানে হাসাহাসি মানবে কেমন করে?
শফিকা আর কথা বাড়ায় না। ভাতের ডেকচিটা তুলে ধরে বললো, আর একমুঠ দিই?
[চলমান]

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৪:৫০

অপরিচিত মানব শুণ্য বলেছেন: অসাধারণ....
পরিবর্তীপর্বের অপেক্ষায়...!!

ধন্যবাদ।

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৭

বাবুল অাবদুল গফুর বলেছেন: ধন্যবাদ। আমাকে উৎসাহিত করার জন্য!

২| ০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: দু একটা শব্দ বিভ্রাট থাকলেও সাবলীলতা দারুন ভাবে টেনে নিল :)

দারুন। এটা কি প্রকাশিত উপন্যাস থেকে শেয়ার করছেন? না নতুন?

+++

০৫ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:৩৩

বাবুল অাবদুল গফুর বলেছেন: নতুন। আমার অসংখ্য কবিতাগ্রন্থ ও উপন্যাস, ছোটগল্প গ্রন্থ রয়েছে। প্রকাশের মাধ্যম পাচ্ছি না। তাছাড়া নিয়মিত গানও লিখি। শব্দ বিভ্রাটের মূল কারণ টাইপিং। লিখতে লিখতে সূক্ষ্ম ভুলগুলো চোখে তেমন পড়ে না। আপনার মন্তব্য জন্য ধন্যবাদ। আমার কাছে আপনার মন্তব্য লেখা চালিয়ে যাওয়ার নিঃশ্বাস!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.