![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বয়স
বাবুল আবদুল গফুর
তাহার সহিত আমার বিশেষ প্রকার দ্বন্ধ রহিয়াছে বলিতেছিনা। তবু তাহাকে ঘৃণা হয়। ওই যেমন কুকুর কামড়াইবে না জানিয়াও মানুষ অনেক সময় ধাওয়া করিয়া থাকে, সেই রকমই বলিতে পারেন! রফিকের সম্মুখে যখন এ সমস্ত কথা বলিয়া যাইতেছিলাম, তখন সে ক্ষতে আলগা মলম লাগাতেছিল।
থামিয়া কহিল, তোমার কথাবার্তার কোন শ্রী আছে?
কহিলাম, কেন?
তিনি তো তোমার ক্ষতি করেন নাই।
তাহলে তাকে শ্রদ্ধা করতে হবে?
রফিক কথার উত্তর দিল না। যেভাবে মলম মাজিতেছিল পায়ে, তাহাই করিতে প্রবৃত্ত হইল। মনে মনে অপমান বোধ করিলাম। রফিক আমার সম্পর্কে পাড়ার বড় ভাই। তাহার সাথে এই বিষয়ে কথাবার্তা বলার কারণ হইলো কবির বুড়া আমাকে বিশেষভাবে অপদস্ত করিয়াছেন।
বলিয়াছেন, যে সমাজে ছোট লোকের পোলার টাকা হয়, সে সমাজে বেঁচে থাকা দায়।
বলিলাম, কাকার রাগের কারণ কী?
তিনি আরও অগ্নিমূর্তি ধারণ করিয়া বলিলেন, নজুর বাপের গায়ে হাত তুলেছো কেন?
তিনি আমার মা-বাপ তুলে গালিগালাজ করেছেন।
-করুক। তোমার বাপ সম্পর্কে তার নানা। গালি দিতেই পারে। তোমার টাকা হয়েছে বলে, যাকে ইচ্চে মারবে? বড়াই বেশিদিন টিকে না।
আমি নিজেকে সংবরণ করিতে পারিলাম না, বলিলাম, আপনার দালালি করার কি দরকার? ঘটনা আমাদের হয়েছে- আপনাকে নাক গলাতে বলেছে কে?
কবির বুড়া চক্ষু বিস্ফোরিত করিয়া আমার দিকে চাহিলেন, কিছু বলিলেন না।
আমি কোন কথা বাড়াইলাম না। রফিকের কাছে আসিয়াছিলাম পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। ভাবিয়াছিলাম, সে হয়তো বুঝিবে, নজুর বাপের গায়ে আমি ইচ্ছে করিয়া হাত তুলি নাই।
রফিক মলমের ছিপি বন্ধ করিয়া বলিল, তোমার বয়স বাড়ার সাথে সাথে আক্কেল জ্ঞানও কমতেছে। মুরুব্বিদের সাথে ভালো ব্যবহার করলে দোষের কি? খামোখা নজুর বাপকে মারতে গেলে কেন?
বলিলাম, আমি কি ইচ্ছে করে তুলিছি নাকি? রাগ সামলাতে পারিনি। তাছাড়া এভাবে কথা বলতেছিলো, গায়ে হাত না দিয়ে উপায় ছিলো না।
-দিয়েছো, ভালো কথা। মাফ চেয়ে নিও। বলা যায় না, কার কখন মৃত্যু হয়। হায়াত মউত আল্লাহর হাতে। দুদিনের দুনিয়াতে কেন অহেতুক মানুষের অভিশাপ নিতে যাবে?
আমি কোন কথা না বলিয়া সেইদিন রফিকদার বাড়ি হইতে চলিয়া আসিলাম। মনে হইল, দুনিয়ার মানুষ সব এক- জ্ঞান দিতে ভালোবাসে ।
সতের বছর গত হইল, নজুর বাপ মারা গিয়াছেন। একদিন ভোর বেলা, ঘুম হইতে উঠিয়া শুনিলাম, নজুর বাপ এক্সিডেন্ট করিয়াছেন। হাসপাতালে যাওয়ার পথে তাহার মৃত্যু হয়। শুনিয়া আমি মর্মাহত হইলাম।
একদিন রাগের মাথায় যাহার গায়ে হাত তুলিয়াছিলাম, ভুল করিয়াছিলাম, আজ তিনি ক্ষমা না করিয়া হয়ত মারা গিয়াছেনর। নিজেকে মনে হইল, পাপিষ্ঠ নরপিশাচ। জিবনে কত মানুষকে যে অবজ্ঞা কিরিয়াছি, তাচ্ছিল্য করিয়াছি, তাহার সঠিক কোন হিসাব আমার নাই, কিন্তু জিবন সায়াহ্নে আসিয়া ভাবিলাম, যা করিয়াছি- তাহা কম নহে। ক্ষমা চাহিবার মত পরিস্থিতি আজ আমার নাই, আমার দুইটি কিডনি নষ্টপ্রায়। ডাক্তার বলিয়াছে, শরীরে মরন ক্যান্সার বাসা বাঁধিয়াছে- যতটুকু বাঁচিয়া আছি তাহাও অকল্পনীয়।
বিছানায় শুইয়া মনে হইল, এত বৃহৎ ক্ষমাহীন হায়াত লইয়া ওপারে কতটুকু শান্তিতে থাকিব? জিবনে যাহা ভুল, তাহা সংশোধন করিবার সুযোগ খোদা বারিক দুইবার দেন নাই।
চোখ ফাটিয়া জল ঝরিয়া পড়িতে মরিয়া হইয়া আছে, কিন্তু শক্তি যে হারাইয়াছি! সেই কান্না বুকের ভেতর একপ্রকার ঘূর্ণিঝড় হইয়া তনছন করিয়া দিতেছে আমাকে! আমি বিছানায় নিথর পড়িয়া দেখিলাম- দল বাঁধিয়া অসংখ্য নেকড়ে আমার দিকে তেড়ে আসিতেছে…..!
©somewhere in net ltd.