![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কলাপাতার ঘোড়া
বাবুল আবদুল গফুর
তৃতীয় পরিচ্ছেদ
গ্রাম অঞ্চলে সকাল হতে দেরি হয়। সূর্য় উঠবে উঠবে করেও অলসতা ছাড়ে না। কিন্তু পাখিগুলো উঠে যায় ঠিকঠাক। তাদের উৎসবমুখর চিল্লাচিল্লিতে ঘুম ভাঙ্গে সমিরের। ব্যতিক্রম তেমন একটা হয় না।
ফজরের নামাজ পড়েই আজ প্রজেক্টে মাছ মারার কথা আছে। সলিমকে ফোন করা দরকার। সমির শফিকাকে ধাক্কা দিলো, উঠো।
শফিকা ঘুমের ঘোরে বললো, আজান দেয়নি। এতো ভোরে-
-আরে উঠো। আমি প্রজেক্টে যাবো।
শফিকা তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় বললো, যাও।
-আমার মোবাইল পাচ্ছিনা। সলিমকে ফোন দিতে হবে।
শফিকা আধোঘুম অবস্থায় বালিশের নিচে হাত দিয়ে মোবাইল বের করে সমিরকে দিলো। সমির সলিমকে ফোন দিয়ে দেখলো, মোবাইল বন্ধ। সমিরের বিরক্ত লাগে। এক আজব মানুষ! বিপদে আপদে কোনদিন জরুরি কোন কাজে পাওয়া যায় না। সমির অনেকবার বলেছে, মোবাইল বন্ধ করে রাখা খুব খারাপ। বিপদে আপদে লাগে। কিন্তু কাজ হয়নি। কোনদিন বলে, চার্জ ছিলো না, কোনদিন রিংটোন অফ ছিলো শুনেনি, কোনদিন বা সঙ্গে ছিলো না- কত অজুহাত। সমিরের রাগ উঠে গেছে প্রায়। তবু সংবরণ করলো। আগে প্রজেক্টে যাওয়া দরকার।
সমির শফিকাকে আবার ধাক্কা দিলো, আহা উঠো। ফজুকে তুলে দাও।
শফিকা তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাবটা কিছুটা কেটে গেছে মনে হয়। চোখ মুছে হাই তুলতে তুলতে বললো, তোমার পায়ে তো ব্যথা, কিভাবে যাবে? বাদ দাও।
সমির বললো, কিছু করার নিই। যেতে হবে। সলিমকে আমার বিশ্বাস লাগে না। গতবার দেখনি, শুধু কাতাল আর তেলাপিয়া তুলেছে বললো, রুই মাছ তুলেনি, বিশ্বাস হয়? একটু খটকা আছে।
-তুমি না গিয়ে অন্য কাউকে পাঠাও।
-কাকে পাঠাবো। তুমি যাবে?
শফিকা চোখ বড় বড় করে সমিরের দিকে তাকালো, ঠিক আছে, গেলাম।
সমির বললো, ফজুকে ডাকো।
শফিকা বিরক্ত হয়ে বললো, এত ভোরে?
-ডাক।
শফিকা কণ্ঠস্বর দৃঢ় করে বললো, ঘুমাক।
সমির বাড়াবাড়ি করলো না। মন চাইছিলো, মেয়েটার সাথে কথা বলে যাবে। এই বাড়ির প্রতি আকর্ষণের বিরাট একটা অংশ জুড়ে ফজু। সমির আর কথা বাড়ায় না।
শফিকা বললো, কিছু খাবে?
-এতো ভোরে তুমি কি দিবে? কিছুই তো করোনি।
-কলা ছিলো। খেয়ে পানি খেলে পেট ঠাণ্ডা হবে। এমনিতে গ্যাস্ট্রিকে মরো! কলা খেয়ে পানি খাও।
-দাও।
শফিকা কলা আর পানি এনে সমিরকে দিয়ে বললো, এতদূরে হেঁটে যাবে? পা-ও এখনো পুরোপুরি সারেনি। ট্যাক্সি ডাকো।
শফিকার কণ্ঠে দরদ দেখে সমিরের ভালো লাগে। বললো, মাথা খারাপ! কিভাবে ভাবলে- আমি এতদূর হেঁটে যাবো?
শফিকার মুখ থেকে একটি কালো ছায়া দ্রুত সরে যায়।
উঠানে গাড়ির আওয়াজ শুনে সমির বললো, দেখোতো সাদিক কি-না।
-কে?
-সাদিক। ট্যাক্সি নিয়ে আসতে বলেছিলাম।
শফিকা বাহির থেকে ঘুরে এসে বললো, হুঁ। গাড়ি এসেছে। বের হবে এক্ষুনি?
-হুঁ।
অনেকটা খুঁড়ে খুঁড়ে হেঁটে গাড়িতে উঠলো সমির। পেছনে শফিকা শক্ত করে ধরে আছে। গাড়িতে উঠে বসে শফিকাকে বললো, ফজুর জ্বর কমলে স্কুলে পাঠিয়ে দিও। অনেকদিন স্কুল কামাই হয়েছে।
সাদিককে লক্ষ্য করে বললো, চল্।
সাদিক গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো, মাছ কি বেশি মারবেন চাচা?
-বেশি। কেন?
-ভোর ভোর বের হচ্ছেন তাই। মা ডেকে না দিলে উঠতেই পারতাম না।
-মাছ ভোরেই মারতে হয়।
-কাকে দেন?
-সলিমকে।
বাঁ দিকের মোড়টা সতর্কতার সাথে পার হতে হতে সাদিক বললো, ও তো বাটপার। দেন কেন?
সমির একটু বিস্মিত হলো। সাদিকের কাছে এটা আশা করেনি সে।
তারপরও উত্তর দিলো, কি করার আছে বল্। মানুষ নিজের ইনসাফি নিজে না বুঝলে, কে বুঝাতে পারে।
সাদিক বললো, বাজারে তার বদনাম। ওজনে কম দেয়। পঁচা মাছ দেয় বেশি।
সমির ভাবলো এ বিষয়ে কথা না বলাই ভালো, বাদ দে ওসব।
সাদিক আর কথা বাড়ালো না।
মণিমুন্সির হাটের কাছাকাছি আসতে সাদিক বললো, চাচা দোকান খুলেছে। খুব ভালা মুগ ডাল আর রুটি পাওয়া যায়। নামবেন?
সমির তাড়া দিলো, না। দেরি হয়ে যাচ্ছে। আগে প্রজেক্টে যায়। এতক্ষণে মনে হয় তারা এসে গেছে। যা-
গাড়ি থামলো না।
সাদিক যেতে যেতে বললো, চাচা আনুর বাপের সাথে কি আপনাদের ঝগড়া?
সমির বললো, না। কেন?
-বুড়োটা বজ্জাত। খালি মানুষের নামে বদনাম ছড়ায়।
সমিরের বিষয়টি অন্যরকম লাগলো। উৎসাহি হয়ে বললো, কি হয়েছে?
সাদিক বললো, গত বছর বুড়োর বড় ছেলে তৈয়বের সাথে জমি নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়। বিচারে হারে। মানুষকে বুঝাচ্ছে, আমি নাকি মারতে গেছি। কেমন লাগে বলেন?
-কিন্তু লোকে তো বলে ভালো।
-কিসের ভালো। টাকা থাকলে কার প্রশংসা করে না মানুষ? তাই বলে ভালো মানুষ হয়? মুখে একগাল দাঁড়ি রাখলে ভালো মানুষ বলা যায় না। আপনার বিরুদ্ধে কি বলেছে জানেন?
সমির শান্তভাবে বললো, কি?
-আপনি নাকি চাচিরে শাসন করেন না। শাসন করার মুরদ নাই। বউয়ের আঁচল ঘেঁষা পুরুষ। তাই চাচি যার তার সাথে মেলামেশা করে। পরশুদিন টঙের মোড়ে চা খেতে খেতে বলতেছে, কেমন বেহায়া!
সমিরের প্রচণ্ড খারাপ লাগলো শুনে। এলাকার নামকরা মুরুব্বি বলে সম্মানও করতো আনুর বাপকে সমির। কিন্তু সাদিকের কথা শুনে একা প্রকার ঘৃণা হলো। বুড়ো বয়সে, তার কিসের দায় পড়েছে সমিরের বদনাম করার? নাকি সাদিক মিথ্যা বলতেছে কে জানে। হতেও পারে। বুড়ো হয়তো কোন কারণে গালি দিয়েছে তাকে- যার কারণে বুড়োর প্রতি এতো ক্ষোভ! মানুষকে বিশ্বাস করা কঠিন, তারচেয়েও কঠিন উনিশ একুশ বছরের ছেলেদেরকে বিশ্বাস করা।
সমির বললো, মিথ্যা বলছিস নাকি?
চলন্ত অবস্থায় মনে হলো সাদিক জিহ্বায় কামড় দিয়েছে, কি বলেন চাচা? আমি মিথ্যা বলতে যাবো কেন? বুড়ো খারাপ- এটা বলতে মিথ্যা বলার কি দরকার!
সমির কথা থামিয়ে বললো, ডানদিকের মোড়ে গিয়ে দাঁড়াবি।
সাদিক ডানদিকের মোড়ে ছোট টিলার ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া রাস্তার মুখে এসে দাঁড়ালো, এখানে?
সমির বাহিরের দিকে তাকিয়ে বললো, হুঁ।
পুকুর পাড়ে এসে দেখলো, সলিম জাল টানতেছে। সমিরকে দেখে পুকুরের মাঝখানে থেকে ডাক দিলো, ভাঙা পা নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো?
সমির উত্তর দিলো না। বললো, কতক্ষণে এলে?
-আযানের আগে।
-ভোরে দিলে যে?
-রোদে মাছ মারি জুৎ নাই। দুই টান দিতে দিতে বেইল তিন বাঁশ উঠে। ভোরেই ভালো।
সমির খেয়াল করলো, আজ বাঁদিকের দড়িতে চারজন, ডানদিকের দড়িতে তিনজন জাল টানতেছে। সলিম মাঝখানে আছে। যদি কোন জায়গায় আটকে যায় অথবা নিচের দিকে আলগা থাকে, সে জন্য।
সলিম ডান পাশের দিকে তাকিয়ে বললো, জোরে টানো বাড়ুদা। দুই খ্যাপ মারতে মারতে বেলা হয়ে যাবে।
সমির পুকুর পাড়ের জামগাছের বড় শিকড়টার উপর পা টান টান করে বসলো। তাকে দেখে মনে হয় সলিম খুশি নয়। সমির বললো, আজ জাল কার থেকে নিলে?
-নগইন্যার। গণিরটা পেলাম না।
-খ্যাপে গেছে?
সলিম পানি থেকে মাথা তুলে বললো, হ। ভাবছি নিজেই একটা জাল কিনে নিবো। দিতে চায় না। খ্যাপ প্রতি পাঁশত চায়।
সমির সম্মতি দিলো, তুমি তো মাছ বেচ, ধরোও। নিজের একটা জাল থাকলে ভালো- কারও কাছে ধর্ণা দিতে হয় না।
সলিম পানিতে ডুব দিলো, অনেক্ষণ পর একটা রুই মাছ সহ পানির উপরে উঠে এসে বললো, কাদায় চাপা পড়েছে। হররা টানা দরকার।
সমির বললো, ভাবছি এবারে শুকায়ে কিছু কাদা সরাবো। চৈতের দিকে।
-সেটাই করেন। তা না হলো পরে মাছ বাঁচানো দায় হবে। সলিম নিজের হাতের রুই মাছটি দেখিয়ে বললো, গত বারেও সব এই সাইজের ছিলো । ছয়শো গ্রামের কাছাকাছি। তাই ধরেছিলাম না। এখনও দেখেন একই সাইজ।
সমির বিস্মিত হলো। গত পাঁচ মাসে মাছের সাইজ হওয়ার কথা ছিলো কেজির উপরে। কিন্তু এতো ছোট সাইজ হওয়ার কথা নয়। সলিমকে বললো, এখনও তো বেশ ছোট।
-ছোটই তো। মাছ বেশি ছেড়েছেন বলেন।
সমির দেখলো, সলিম ঠিক কথায় বলেছে। গতবার মাছের ব্যাপারীরা আনার সময় প্রায় মণ খানেক মাছ বেশি নিয়ে এসেছিলো। সমির কত বলেছে, অতিরিক্ত মাছ দেওয়া পুকুরে ভালো না। নিয়ে যান।
কিন্তু আনা নেওয়ার অসুবিধার অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে যায়নি। নিয়মিত মাছ কিনে বলে, সমির তাদের কথা ফেলতে পারেনি। আজ এই হাল।
সলিম জানতে চাইলো পোনা কোত্থেকে আনে।
সমির বললো, লোকাল। মনছুরের পোনা।
-তাই এই অবস্থা। লোকাল পোনা ভালো না। হ্যাচারী থেকে আনবেন।
সমির বলবো, কয় টান দিবা যেন আজ?
সলিম হাতের আঙ্গুল দেখিয়ে বললো, দুই। আপনার কাজ থাকলে চলে যান। বাজারে আসবেন।
সমিরের সন্দেহ আরো বাড়লো। সলিমকে সে অগাধ বিশ্বাস করে অথচ তাকে ঠাকাচ্ছে মনে হয়। গতবার রুই মাছ না মারার বিষয়টি সমিরের কাছে অবিশ্বাস্য লাগে।
সমির বললো, পায়ের ব্যথা পুরোপুরি সারেনি। বাজারে যাওয়া ঠিক হবে না। এখানে না আসলে সারাদিন মনে হয় কি যেন করিনি। প্রজেক্টের প্রতি একটা মায়া জমে গেছে।
কথাটা অস্বীকার করে না সলিমও। সে জানে তার বড় চাচা কলিমুল্লাহ, চাচিকে এসে বলতো, ভাত বাড়ো- আমি খামার থেকে আসতেছি। চাচার মনে হয়, খামারে এক ঘুরান না দিলে ভাত পেটে যেতো না। কতবার চাচি খোটা দিয়েছে, চাচা শুনেনি। এক ধরনের মায়া জমে যায় এসব কাজের প্রতি। সলিম জানে, এই টানটা সমিরেরও আছে।
তাছাড়া যাবেই বা কোথায়? পিতা মারা যাওয়ার সময় ভিটে বাড়ি আর আড়াই একর এ প্রজেক্টটি রেখে গেছে কেবল। আর কোন বিষয় সম্পত্তি তার ছিলো না। তাও অনেক-এতটুক না হলে কোথায় গিয়ে থামতে হতো কে জানে! এ দুনিয়ার খুব কম সংখ্যক মানুষের মাথা গুঁজার ঠাঁই আছে। এ প্রজেক্টের প্রতি তাই সমিরের আন্তরিকতা থাকা স্বাভাবিক।
সলিম বললো, দেখি আজ বড় মাছ পড়ে কিনা। ভাবির জন্য পাঠাবো।
সমির মৃদু হাসে।
সলিম বললো, পুকুরে মনে হয়, একটা বড় মাছ আছে। বোয়াল হবে।
-আমিও বুঁদ তুলতে দেখেছি অনেকবার।
বাড়ু ডাক দিলো, সলিম দা- নিচে জাঁগ পড়লো কিনা দেখেন তো! জাল চলে না।
মুহুর্তে সলিম পানির মধ্যে উধাও হয়ে গেলো। তারপর উঠে বললো, জাঁগই।
সমির বললো, গতবার দিয়েছিলাম। এখনও আছে। সাবধানে টান দাও বাড়ু। জাল ছিঁড়ে যাবে নাহলে।
সলিম প্রসঙ্গ পাল্টায় না, জাল ধরে ভাসতে ভাসতে বললো, গতবার জালে ধরা পড়েছিলো প্রায়। প্রথমে ভেবেছিলাম জাঁগ হবে। পরে বুঝেছি, মাছ। জাল আলগা করে চলে গেলো। বোয়াল মাছই। অন্য মাছের সাধ্য নাই এই জাল আলগাবার। তাছাড়া বড় কাতাল বলতে ওই কেজি তিনেক- সাইজের, এরা জাল আলগাতে পারবে না।
সমিরও মাথা নেড়ে সাঁই দেয়।
এমন সময় শফিকা ফোন দিলো। বললো, ফজুর জ্বর বাড়তেছে। জলপট্টি দিলাম। তুমি একবার বাড়িতে এসো। ডাক্তার দেখালে ভালো হতো। সমির আসতেছি বলে- ফোন কেটে দেয়।
সলিম বললো, কি হয়েছে?
-মেয়েটার জ্বর।
-আর বলেন না, আমার ছোট মেয়েটারও জ্বর। এই জ্বর ছাড়ে তো, কাল সর্দি- লেগেই আছে।
নগেন এলো। সমিরকে নমস্কার দিয়ে বললো, আজ আপনার এখানে মাছ মারতেছে জানিনা। কিছুক্ষণ আগে শুনলাম। আর কতক্ষণ লাগবে দাদা?
সলিমই উত্তর দিলো, ঘন্টা খানেক লাগবে। কেন?
-চাটুয্যের ওখানে জাল দিতে হবে। সকাল থেকে চাটুয্যে মশাই বাড়িতে এসে বসে আছেন।
সলিম বিরক্ত হলো, তোমার মিয়া এই এক সমস্যা, আমি কোন জায়গায় মাছ মারতে গেলে তোমার কাজ বেড়ে যায়।
নগেন সমিরের দিকে তাকিয়ে বললো, দেখেছেন দাদা, টাকাও কম দেয়, আরও কত কথা।
সমির কিছু বলতে যাচ্ছিলো, তার আগেই নগেন বললো, এ জন্য তোমাদের জাল দিতে মন চায় না।
সলিম রাগত স্বরে বললো, আর আনবোই না। প্রয়োজনে মাছ ব্যবসায়ই ছেড়ে দেবো। জাল আর নাই মনে করেছো দুনিয়ায়?
নগেন ক্ষেপে গেলো, হেটাম যখন এতই- নিজেই কিনেও নিও একটা। আমারটার জন্য যাও কেন? নয়টার সময় আমার জাল লাগবে। দিয়ে আসিও।
সমির দুই পক্ষকে ধমক দিলো, কি শুরু করলে তোমরা। আর নগেন, তুমি ব্যবসা করতেছো- একটু সয়ে টয়ে নিতে হয়। এদিক ওদিক তো হবেই।
নগেন বললো, সে আমিও জানি দাদা। কিন্তু মুখের ভাষাটা দেখেছেন তার?
সলিম লুঙ্গির খুচ খুলতে খুলতে অস্ফুট ভাবে বললো, ধন পেয়েছে-
মাছ উঠাতে উঠাতে প্রায় সকাল নয়টা হয়ে গেলো। বড় পাঁচটা খাঁচায় আলাদা আলাদা রাখা হলো মাছগুলো। দুইটি খাঁচায় তেলাপিয়া, দুইটিতে রুই আর একটিতে কাতলা মাছ। মাছের অশান্ত ঝাপটায় সমিরের গায়ে পানি ছিটকে পড়তেছে বারবার।
সলিম বললো, কিভাবে যাবেন আপনি?
-সাদিককে ফোন দিয়েছি, আসতেছে বললো।
প্রায় সাড়ে চার মণ মাছ নিয়ে সলিম চলে যায়। সমির হিসেব করে দেখলো, তার হাতে সলিম সতের হাজার পাঁচশত টাকা দিয়েছে। বাকিটা বিকেলে দিবে। সমিরের খুশি লাগে। মেয়েটার স্কুলের ফি বাকি, মায়ের অসুখের জন্য বোনকে টাকা পাঠাতে হবে, ফজু ফ্রক চেয়েছিলো, ডাক্তার খরচ- সব মিলিয়ে একটা সমাধানের উপায় খুঁজে পায় সে। কিন্তু অবাক করলো সমিরকে, শফিকার ব্যাপারে। ছোট্ট সংসারে, কত কিছুই তো মানুষ আশা করে, আবদার করে- কোনদিন শফিকা সে আবদারটুকু তাকে করেনি। মেয়েদের চাহিদার কমতি কম, কিন্তু শফিকাকে সচরাচর মেয়েদের চেয়ে অনেক ভিন্ন মনে হলো সমিরের।
একজন পুরুষ সুখী হওয়ার জন্য একজন পরিতুষ্ট স্ত্রীই যথেষ্ট। সমিরের কাছে, শফিকার আজ অন্যরূপ ধরা পড়লো হঠাৎ। তার কাছে শফিকাকে আজ খুব দামি মনে হলো।
©somewhere in net ltd.