![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বেশ কিছুদিন আগের কথা ডিসেম্বর মাস ২০০৯ সাল।পরিচিতদের মধ্যে যোদ্ধঅপরাধের বিচার নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়ে গেছে। একটা বিষয় উপলব্ধি করলাম, ৭১ এর যুদ্ধ অপরাধ অথবা অপরাধী কিংবা মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমার জ্ঞান ভেজালে ভরা পাঠ্য পুস্তকে, নম্বরের লোভে পড়া কয়েকটি রচনামূলক প্রশ্ন আর টিভি-পত্রিকায় দেখা বিশেষ দিবসের কিছু প্রতিবেদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
কথা হচ্ছিল এক বড় ভাইয়ের সাথে, নিজের অজান্তেই খুব দামী একটা কথা বলেছিলেন তিনি, সেদিন বুঝি নাই, চোখ-মুখে ঘৃনা আর ক্রুধ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, "৩০ লক্ষ নির্যাতিতের কথা বাদ দিলাম ! শুধুমাত্র ১৪ ডিসেম্বর এই কুকুরের দল যে কয়জন বাঙালিকে হত্যা করেছে,জাতির মেধা কে ধংস করে আমদের অন্ধকারে ফেলে রেখেছে তাদের একজন হত্যার বিচারে, সবকয়টা জীবিত রাজাকার কে ১০ বার করে ফাসি তে ঝুলালেও আমার মনে হবে প্রতিশুধ নেওয়া হলো না ।"
অনেক দিন পরে মনে হল খতিয়ে দেখা উচিত আসলে কি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ঐদিন আমাদের কাছ থেকে? কিবা তার ফলাফল ??
উত্তর সহজ জাতির শ্রেষ্ঠ মেধাবী সন্তানদের, আর ফলাফল আজকের বাংলাদেশ।যেখানে সরকারী দলের আনাচে-কানাচে লোকিয়ে থাকে রাজাকার- আলবদর আর বিরুধী দলের সাংসদরা টিভি শো তে গিয়ে বলে জাহানারা ইমাম ছিলেন রাজাকার।এই লজ্জা বাঙালি কি দিয়ে ঢাকবে? ঠান্ডা মাথায় জাতির মেরুদন্ডতাটাকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য করা হয়েছিল এই মাস্টার প্লান।মেজর জেনারেল ফরমান আলী (তত্কালীন মিলেটারী পুলিশ কমান্ডার ) কে বলা হয় ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ডের মূল হুতা, প্রমান হিসেবে স্বাধীনতার পর কেন্টনমেন্টে ফেলে যাওয়া তার ডায়রি থাকে পাওয়া যায় বাঙালি বুদ্ধিজীবিদের এক তালিকা, যাদের বেশির ভাগকেই খুন করা হয়েছিল।আর এই সুবিশাল আয়জনের নেতৃত্বে ছিল আমাদের আজকের ভোটারদের প্রাণ প্রিয় রাজাকার-আলবদররা।
The Times, December 23, 1971
"It is now known that on Sunday December 12, as the Indian columns were closing on Dacca....a group of senior Pak army officers and their civilian counterparts met in the city's Presidential residence. They put together the names of 250 peoples to be arrested and killed, including the cream of Dacca's professional circles not already liquidated during the civil war. Their arrests were made on Monday and Tuesday by marked bands of extreme right-wing Muslims belonging to an organization called the Al-Badar Razakar...Only hours before the official surrender was signed (on 16th), the victims were taken in groups to the outskirts of the city where they were summarily executed."
বাংলাপিডিয়ার করা তালিকা অনুযায়ী শুধুমাত্র ১৪-১৬ ডিসেম্বর খুন হওয়া বুদ্ধিজীবিদের তালিকা নিম্নরূপ-
Academics - 991
Journalist - 13
Physician - 49
Lawyer - 42
Others (litterateur, artist and engineer) - 16
এদের কতজনকে চিনি আমরা? একবার কি কেউ ভেবে দেখেছি এরা যদি আজ বেছে থাকত বাংলাদেশের চেহারা হয়তবা ভিন্নও হতে পারত।মানুষকে বলতে শুনি "বিদ্যানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে দামী". তাই যদি হয় বাংলার মাটিতে যেন তার শ্রেষ্ঠ সন্তান খুনিদের আশ্রয় না হয়।যারা চলে গেছে হাজার ডাকলেও তারা ফিরে আসবে না, কিন্তু তাদের সম্পর্কে জানা এবং খুনিদের বিচার করা আমাদের দায়িত্ব।যে জাতি তার অতিত সম্পর্কে জ্ঞান রাখে না তার ভবিষৎ কন্টকময়।
ডা: মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি (১৯৩২-১৯৭১):
পাবনার সূর্য সন্তান, ৭১ এর পাক বাহিনী আর তাদের পুস্য রাজাকার-আলবদর কিলিং স্কোয়াডের নির্মম শিকার, এই প্রতিভাবান চিকিত্সক ও শিক্ষক। দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে তার সিদ্দ্ধেসরির ৭৫ নম্বরের বাড়ি ঘেরাও করে রাজাকার বাহিনী, এরপর পাকিস্তানি আর্মি এসে তাকে নিয়ে যায় লালমাটিয়া শরীর-স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, বর্বরিচিত টর্চার করার পর মধ্যরাতের দিকে, অন্য সব বুদ্ধিজীবিদের সাথে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রায়েরবাজার। এরপরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা।তার সম্পর্কে যা আমরা অনেকেই হয়ত জানিনা তা হলো ...
১৯৫৫ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে MBBS পাশ করেন তিনি। এসময় সমগ্র পাকিস্তানে MBBS পরীক্ষায় সর্বাধিক পরিমান নম্বর পেয়ে স্বর্ণ পদক জিতেন ।এইটাই হয়তবা ছিল পাকিস্তান সরকার থেকে তার নেওয়া শেষ পুরস্কার,কেননা ১৯৭০ সালে তাকে পাকিস্তান সরকার শ্রেষ্ঠ প্রফেসর পদকে ভুষিত করলেও তিনি তা ঘৃণাভরে প্রতাখ্যান করেন।
৬০ সালের দিকে চলে যান স্কটল্যান্ড, সেখানে বহু হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে গবেষণা ও পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। ৬২ সালে ইংল্যান্ড থেকে তিনি MRCP(Magnetic resonance cholangiopancreatography) তে ডিগ্রী লাভ করেন। অসধারন মেধা আর ইর্ষনীয় ফলাফল অল্প বয়সেই তাকে এনেদিয়েছিল চূড়ান্ত সাফল্য, পশ্চিম লন্ডনের হ্যামারস্মিথ হসপিটালে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেছেন ডা: রাব্বি। তিনি পারতেন অর্থ আর সন্মান নিয়ে বিলেতে বাবু জীবন-যাপন করতে, দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি ভালবাসা ফিরিয়ে আনে তাকে।
আজীবন মানুষের সেবা করেছেন এই নিস্বার্থ সুপুরুষ ডাক্তার।৬৮ সালে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ MRCP সদস্য যিনি ঢাকা মেডিকেলের মেডিসিন ও কার্দীয়লোজি ডিপার্টমেন্টএর প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। ছাত্র ও সহকর্মীদের মধ্যে বাপক জনপ্রিয় ছিলেন তিনি, গণমুখী চিক্ত্সায় বিশ্বাসী ছিলেন এই মানবতাবাদী চিকিত্সক। শত-শত ছাত্র ও সহকর্মীকে উত্সাহিত করেছেন বিনামূল্য চিকিত্সা সেবায়।যার প্রতিদান সরূপ ১৫ ডিসেম্বর পাশবিক অত্যাচারের মাধ্যমে হত্যা করা হয় এই সন্মানী শিক্ষক কে।
চলবে...
View this link
View this link
View this link
View this link
©somewhere in net ltd.