![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কেবল এই সত্যটুকু জেনো, মানুষ হয়ে জন্ম আমাদের ধর্ম করেছে বন্য
একটা ধূয়াসে অন্ধকার পেরিয়ে হয়তোবা শুরু এভাবেই, এখান থেকেই। হয়তোবা আলো এখন আমাদের স্পর্শ সীমানার ভেতরেই।
আজ ৪ঠা নভেম্বর ২০১৮ হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে এক বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি মাওলানা মুফতিরা এক বিরাট জন সমাবেশের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন। দাওরায়ে হাদিস নামের কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সনদকে বাংলাদেশের প্ৰচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় মাস্টার্সের সমমানের মর্যাদা দেয়াতে এই সংবর্ধনা ও সম্মান।
প্রথমত আমি খুবই লজ্জিত অনুভব করছি এই ভেবে যে একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক তার শিক্ষা নামের মৌলিক অধিকারের একটিকে সরকারি ঘোষণায় স্বীকৃত হওয়ার পর আজ তারা দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা থেকে সংবর্ধনা দিতে হচ্ছে। আসলে তারা এমন একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে বন্দি হয়ে আছে যে তারা জানেই না এই স্বীকৃতিটাও তাদের এক অন্যতম মৌলিক অধীকার।
খুবই দুঃখজনক ভাবে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকেই বাংলাদেশের মানুষকে মূলত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। যারা উচ্চবিত্ত তাদের সন্তানরা যাবে কিন্ডারগার্টেন বা দামী ইংলিশ মাধ্যম স্কুলে, মধ্যবিত্তদের সন্তানরা যাবে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আর নিম্নবিত্ত অনোন্যপায় পিতামাতার সন্তানের আশ্রয় হবে মক্তব বা মাদ্রাসায়। স্বাভাবিক ভাবেই রাষ্ট্র যখন তার নাগরিককে মৌলিক অধীকারের নিশ্চয়তা দিতে পারেনা নাগরিক তখন অশিক্ষা অথবা ভুল শিক্ষায় যদি চাপাতিজীবী ধর্মান্ধ মুসলিম হয়ে ওঠে রাষ্ট্রের তখন আর খুব কিছু করার থাকেনা।
১৮ এপ্রিল ২০১৪ চট্রগ্রামের এক জনসভায় হেফাজতে ইসলামের শাহ মোহাম্মদ শফি ঘোষনা দিয়েছিলেন, নাস্তিকরা মুরতাদ হয়ে গেছে তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব। এই ঘোষণার পরই বাংলাদেশ নামের এই ভূখণ্ডে নিহত হয়েছিলেন মুক্তমনা লেখক অভিজিৎ রায়, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন সহ অনেকে। সেই শফি সাহেব প্রধানমন্ত্রীর আজকের সংবর্ধনা সভার সভাপতি ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবে অনেকেই বিষয়টাকে রাজনৈতিক খেলা বা স্বার্থের বিষয় বলে ভাবছেন। আমি কোনভাবেই এটাকে রাজনৈতিক খেলা বা আওয়ামীলীগের স্বার্থ চিন্তার বিষয় বলে ভাবতে পারছিনা। আমি বরং একজন দূরদর্শী রাষ্ট্র নায়কের এক চরম সফলতার চিহ্ন হিসেবেই দেখছি এটাকে।
আমাদের বুদ্ধিজীবী কবি সাংবাদিক লেখক প্রকাশক ব্লগার নামের সোনার মানুষগুলোকে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে খুন করেছে তারা করা, তারাও কিন্তু আমাদেরই সন্তান। তারা সংখ্যায় কত সেদিন শাপলা চত্বরে এবং আজ সংবর্ধনা সভায় আমরা তা দেখেছি। চিহ্নিত দু চার জনকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হলেও লক্ষ লক্ষ হিসেবের এই ছেলেগুলোকে বিচারের আওতায় এনে জেলে পুরে দেয়া কি সম্ভব ছিল? তাহলে সরকার বা প্রধানমন্ত্রীর কি করণীয় ছিল? একমাত্র যে কোন কৌশলে তাদের খুব কাছে চলে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প ছিল না. এবং সেটাই করেছে সরকার সেটাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের বাস্তবিক অবস্থা বিবেচনায় জনসাধারণের বিরাট একটা অংশ তাদের সন্তানদেরকে মাদ্রাসা নামের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত করতে চাইছেন। সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত করে দেয়া ছাড়া আর কোন পথ খুলা নেই। দাওরায়ে হাদিস মাস্টার্সের সম্মান পাওয়াই শেষ কথা নয়, পর্যাপ্ত মনিটরিংও সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষাকেও বাংলাদেশের মূল শিক্ষানীতির আওতায় নিয়ে আসা খুবই প্রয়োজন। একমাত্র এই উপায়েই মাদ্রাসাগুলো থেকে জঙ্গি উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব।
যতদূর জানি সেই ইংরেজ আমল থেকেই খারিজী বা কওমি শিক্ষাধারাকে রাষ্ট্রের মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করার একটা প্রচেষ্টা রয়েছে। বিভিন্ন সময়ের সরকার বা নীতিনির্ধারকদের খুব কাছাকাছি অন্য একদল ইসলামী ধারার চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বরা থাকার কারনে এবং কওমী নীতিনির্ধারকদের অজ্ঞতার কারণে তা হয়ে উঠেনি। এই উপমহাদেশে সম্ভবত এই প্রথম দাওরায়ে হাদীসকে মাস্টার্সের স্বীকৃতির মাধ্যমে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে থাকা বা অন্ধকারের থাকা এই শিক্ষাধারাকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতির সাথে জড়িত করে নেয়া গেল। এই জড়িয়ে যাবার মাধ্যমেই কিন্তু সরকার আগামীতে তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার করতে পারবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার সাথে জড়িত আমাদের সন্তানগুলোদেরকেও বিজ্ঞানমনস্ক এবং বাস্তবমুখী করে তুলতে সক্ষম হবে। অতি রক্ষণশীল এই শিক্ষাধারার সাথে জড়িত এই ছেলেগুলো আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস জানেনা, তথ্য প্রযুক্তির এই যুগেও তারা পৃথিবী সম্পর্কে অজ্ঞ। সুযোগ পেলেই, স্বঘোষিত সর্বজান্তা জাহেল মাওলানা মুফতিদের হাত থেকে উদ্ধার করে প্রকৃত মুসলিম চিন্তাবিদদের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারলে তারাও দেশ প্রেমিক মানবিক নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।
দেশের প্রতি স্বাধীনতার প্রতি এই ছেলেগুলোর দরদ না থাকলে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে দাঁড়িয়ে তারা আজ সেলফি তুলতো না, মুক্তিযোদ্ধ যাদুঘরে গিয়ে বিমর্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতামনা তাদেরকে।
আজকের সংবর্ধনাকে বা হেফাজতে ইসলামের সাথে সরকারের ঘনিষ্টতাকে কেউকেউ খুব হাস্যকর ভাবে ভোটার রাজনীতি বলার চেষ্টা করছেন। এই ছেলেগুলো বা তাদের পরিবার নৌকা মার্কায় ভোট দেবে বলে আমি এখনো মনে করিনা। এখনো তারা অন্ধকারে আছে, ব্যালটে ভোট প্রদানের মাধ্যমে বেহেস্ত পাওয়া যায় বলে তাদের অনেকেই এখনো বিশ্বাস করে। আমার ধারণা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জানেন এরা নৌকার ভোটার হবে না। আমার মনে হয় কেবল শিক্ষা ব্যবস্থায় পিছিয়ে থাকা একটি বিরাট জনগোষ্ঠীকে আলোর অভিমুখে নিয়ে আসার চেষ্টা ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য আর কোন বিষয় চিন্তা করছেন না। বিষয়টা একেবারেই মানবিক, যেমনটি মানবিক রোহিঙ্গাদের আমাদের দেশে আশ্রয় দেয়া। ওদেরকে মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দেয়া আর এদেরকে আমাদের সন্তান হিসেবে আলোকিত হবার সুযোগ করে দেয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুব ভাল জানেন পর্যাপ্ত মনিটরিং ও যথাৰ্থ সিলেবাসের মাধ্যমে লেখাপড়ার সুযোগ পেলে দেশ দেশের জন্মের ইতিহাসের সাথে পরিচিত হলে এই ছেলেগুলো নিশ্চিত ভাবেই একদিন এই দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার রক্ষক হিসেবে নিজেকে তৈরী করবে সেদিন আর ব্যালটে শীল দেবার মাধ্যমে তারা বেহেস্ত পাওয়ার চিন্তা করবে না।
আরেকদল শিক্ষিত অথচ মননে মুর্খ্যকে শেখ হাসিনাকে মৌলবাদী হিসাবে আখ্যায়িত করতে দেখলাম। ভুলে গেলে চলবে কেন শেখ হাসিনা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলের প্রধান। ধর্ম নিরপেক্ষ মানে তো সকল ধর্ম। তাহলে শেখ হাসিনা যদি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদের সংবর্ধনা নিতে পারেন তবে ইসলাম ধর্মের কিছু মাওলানা মুফতিদের সংবর্ধনা নিতে পারবেন না কেন? উনি পূজায় গিয়ে সিন্ধুর লাগালেই কি কেবল ধর্মনিরপেক্ষ, মাওলানাদের সংবর্ধনা উনাকে ব্রাত্য করে দেবে?
মোল্লা মাওলানাদেরকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অনেক কথাই ব্যক্তিগত ভাবে আমার অপছন্দ। অনেক ব্লগার নিহতের পর শেখ হাসিনার বলা অনেক কথাই সমালোচনার যোগ্য, মদিনা সনদ বিষয়ে তাঁর অসচেতন ঘোষণারও আমি বিরোধী কিন্তু কওমী মাদ্রাসার এই শিক্ষাধারাটিকে রাষ্ট্রের মূল শিক্ষা ধারার সাথে সম্পৃক্ত করার তাঁর চেষ্টা সত্যিকার অর্থেই একটি মানবিক প্রচেষ্টা। আজ ঢাকার অলিতে গলিতে, অপরাজেয় বাংলায়, জাতীয় যাদুঘরে এই যে একদল চঞ্চল উচ্ছল আলোকিত উচ্ছসিত তরুণ দেখলাম মন ভাল হয়ে গেল। আচমকা আঁধার কেটে মনে হলো আমার বাংলাদেশ এক আলোর সরোবর।
২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৫৩
কলাবাগান১ বলেছেন: keep your friends close enemies closer
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৯
পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ##১৮ এপ্রিল ২০১৪ চট্রগ্রামের এক জনসভায় হেফাজতে ইসলামের শাহ মোহাম্মদ শফি ঘোষনা দিয়েছিলেন, নাস্তিকরা মুরতাদ হয়ে গেছে তাদেরকে হত্যা করা ওয়াজিব।
উপযুক্ত তথ্যপ্রমান/লিংক দিন??
##ধর্ম নিরপেক্ষ মানে তো সকল ধর্ম। তাহলে শেখ হাসিনা যদি হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান পরিষদের সংবর্ধনা নিতে পারেন তবে ইসলাম ধর্মের কিছু মাওলানা মুফতিদের সংবর্ধনা নিতে পারবেন না কেন?
ভালো পয়েন্ট।
তবে শেখ হাসিনাও যে ক্ষমতালোভী, লাঠি না ভাঙিয়া সার্প মারায় ওস্তাদ, ইহা বলাই বাহুল্য।
৪| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪২
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: পড়লাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: হেফাজত দের বিষয়ে সাবধান থাকতে হবে। ওরা বড় ভয়ঙ্কর।