| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যদি কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয় ধর্ম কাকে বলে? অধিকাংশ উত্তরই আসবে আমি সঠিক জানি না। কারণ আমরা কখনো ও ভেবে দেখিনি যে কাকে ধর্ম বলে। তাত্ত্বিকভাবে ধর্মের সংজ্ঞা দেওয়া পরিপূর্ণভাবে দেওয়া সম্ভব নয়। যদিও কিছু কিছু মহান ব্যক্তিরা ধর্মের সংজ্ঞা দিয়েছেন নিম্নরূপঃ
জেমস জি. ফ্রেজার বলেন,"ধর্ম মানুষের চেয়ে উন্নত ধরণের একটি শক্তির বিধান, যে শক্তি মানব জীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ করে।"
টেলার বলেছেন, ধর্ম হচ্ছে প্রেতাত্মায় বিশ্বাস।
নাস্তিক কার্ল মার্কস বলেন,"ধর্ম হল আফিম এর মতো।"
মোট কথা হল ধর্ম হল স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস। অন্যভাবে বলা যায় ধর্ম হল স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক।
ধর্মের উপাদানঃ
ধর্মের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে অন্যতম উপাদানগুলো হলঃ-
১)বিশ্বাসঃ যেকোনো ধর্মের প্রধান এবং প্রথম উপাদান হল বিশ্বাস। আমরা মুসলমানরা বিশ্বাস করি যদি কোন ব্যক্তি নামাজ রোজা নাও পালন করে তারপরও সেই ব্যক্তি একদিন অবশ্যই বেহেশতে যাবে যদি সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ আছেন, তিনিই সবকিছুর মালিক। তেমনি অন্য ধর্মগুলোতেও স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন অত্যবশ্যকীয়।
২)আচারঃ ধর্মের অন্য একটি বিশেষ উপাদান হল আচার। প্রতিটা ধর্মেই নির্দিষ্ট আচার বিদ্যমান। মুসলমানরা নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, হজ্জ পালন করে ইত্যাদি। হিন্দুরা পূজার্চনা করে। বুদ্ধ,ইহুদি ও খ্রীস্টানরা তাদের আচার মেনে চলে। কোন ধর্মই খারাপ কাজ করতে বলে না।
৩)পবিত্রঃ সকল ধর্মেই কিছু পবিত্র বিষয় থাকে। মুসলিমরা মক্কা নগরী, মদিনা নগরীকে পবিত্র মনে করে,পবিত্র মনে করে জমজম কুপের পানি। হিন্দুরা তুলসি গাছকে পবিত্র ভাবে।
৪)অপবিত্রঃ মুসলিম ধর্মে মদ্যপান, সুদ খাওয়া, শুকরের মাংস ভক্ষণ ইত্যাদি পরিহার করতে বলে। বুদ্ধ ধর্মে জীবহত্যা মহাপাপ। খ্রিস্টান, ইহুদিদের ধর্মে এমন বিধিনিষেধ খুবই কম।
ধর্মের বিবর্তন বা ভিন্নতাঃ
১)Fetishism: একটা সময় ছিল যখন বিশ্বাস করা হত যে সকল কিছুরই শক্তি আছে। অর্থাৎ তখন স্রষ্টাতে বিশ্বাস করা হত না।
২)Totem-ism: একটা সময় আসল যখন মানুষ পশু,পাখি,গাছপালাতে স্রষ্টার খোঁজ করতে লাগল।
৩)Animism: বিবর্তনের ধারাতে মানুষ প্রেতাত্মা,ভুত মৃত মানুষের আত্মাকে স্রষ্টা হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করল।
৪)Polytheism: এই সময় এসে মানুষ একাধিক স্রষ্টার উপর বিশ্বাস আনতে শুরু করল। হিন্দুরা একাধিক স্রষ্টাতে বিশ্বাস করে।
৫)Monotheism: এক স্রষ্টাতে বিশ্বাস আনায়ন হল মনথিইসম। মুসলমান,ইহুদি,খ্রিস্টানরা এক স্রষ্টাতে বিশ্বাস করে।
ধর্মের কাজঃ
১)মানসিক শান্তিঃ একমাত্র ধর্মই পারে মানসিক শান্তি আনতে। আমরা মুসলমানরা যখন মসজিদে অবস্থান করি তখন একটা বিশেষ শান্তি পাওয়া যায়। সবসময় মনে হয় মসজিদ কেমন যেন ঠাণ্ডা পবিত্র একটা স্থান। তেমনি অন্য ধর্মের মানুষরাও তাদের উপাসনালয়ে গিয়ে শান্তি অনুভব করে।
২)ঐক্যঃ যেকোনো ধর্মই ঐক্য সৃষ্টি করে। সকল ধর্ম পালনকারীদের ভিতর একটা গভীর ঐক্য থাকে। যদি কোন ধর্মের কেউ কোন ভাবে অন্য ধর্মের লোকের কাছে শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাহলে তাকে তার ধর্মের লোকজন একত্রিত হয়ে সাহায্য করে।
৩)সামাজিক নিয়ন্ত্রণঃ ধর্মের ভিতর সমাজ পরিচালনার দিকনির্দেশনা থাকে। ধর্মের সঠিক বাবহারই পারে সমাজ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে।
৪)সমাজের উন্নয়নঃ সমাজের উন্নয়ন সাধন করা ধর্মের মুল উদ্দেশ্য বলা যায়। কারন যে সমাজ যতবেশি উন্নত ওই সমাজের মানুষ তত বেশী শান্তিতে থাকে। তাই ধর্ম সবসময় সমাজ সুন্দর রাখার জন্য চেষ্টা করে যায়।
৫)বিনোদনঃ ধর্ম শুধু বিধিনিষেদ দেয় তা কিন্তু নয় ধর্ম বিনোদনের ব্যবস্থাও রাখে। মুসলমানরা বছরে ২ টা ঈদ উদযাপন করে। হিন্দুরা দুর্গাপূজা, কালীপূজা ইত্যাদি পালন করে। খ্রিস্টানরা বড়দিন উদযাপন করে। এমনি দেখা যায় সব ধর্মেই কিছু না কিছু বিনোদনের ব্যবস্থা রাখে।
৬) জীবনের মূল্যঃ শুধু ধর্মই বলে তোমাকে মরতে হবে। মৃত অবশ্যই আসবে। অর্থাৎ তুমি তোমার জীবনকে ব্যবহার কর। ভাল কিছু করে যাও, যেন তোমায় মানুষ মনে রাখে।
ধর্মের কিছু খারাপ দিকঃ
ধর্মের অনেক সময় খারাপ ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে তাদের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল করে নেয় ধর্মকে পুঁজি করেই। যেমন মাজার ব্যবসা একটা অত্যন্ত খারাপ কাজ, যার মাধ্যমে মানুষ ঠকানো হয়। যারা সাধারন মানুষ তাদের নিয়ে খেলা করা হয়। ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ কে দিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করানো হয়। বিভিন্ন দাঙ্গা হয়। অনেক সময় দ্বিধার সৃষ্টি হয়। অনেক উন্নয়ন কাজে বাঁধার সৃষ্টি করে। মানুষকে একটা গণ্ডির ভিতর রাখা হয়। হিন্দুদের ভিতর আগে সতীদাহ প্রথা চালু ছিল যা অতিঅমানবিক। বিধবাদের বিয়ে হত না। যদিও আজ এই প্রথা বিদ্যমান নেই। তবে গোত্র প্রথা চালু আছে যা ঠিক নয়।
আমরা ধর্ম চর্চা করি কিন্তু ধর্মকে সঠিকভাবে ধারণ করি না। আমাদের উচিত ধর্মকে সথিকভাবে ধারণ করা।
©somewhere in net ltd.