![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের জরাজীর্ণ অন্ধকারের ভেতর এক ঝলক আলো খুঁজে ফিরছি ; এই আলোটুকুর নামই জীবন, এই আলোটুকুর নামই প্রাণ।
আজ সারাদিন লাইব্রেরিতে পড়াশুনা করেছি। তারপর আমাদের মাস্টার্স এর শিক্ষাসফর নিয়ে আলোচনা করে রাত ১১ টার পরে হলে ফিরেছি। শরীর বড় ক্লান্ত। ঘুমে আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে। যেন ঘুমদেবী আমার চোখে ভর করেছে। গতকাল শত চেষ্টা করেও এই সময় ঘুমাতে পারছিলাম না। আর আজ শত চেষ্টা করেও জেগে থাকতে পারছি না। তাই রাত সাড়ে এগারটার দিকে শুয়ে পড়ি। কিন্তু ঘুম আর হলো না। বারটা বাজার কয়েক মিনিট আগে তল্পিতল্পাসহ এক ছোট ভাই এসে উপস্থিত।
আমি বললাম, কী ব্যাপার? হল থেকে চলে আসলে কেন?
-ভাই, হল থেকে বের করে দিয়েছে, সে উত্তর দিল।
-কেন?
-হলের এক বড় ভাই বলেছে, হলে থাকতে হলে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রত্যেককের নিজ নিজ এলাকায় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের যে শাখা সংঘটন রয়েছে, সেই সংঘটনের নির্দিষ্ট প্যাডে একজন নেতার দেওয়া প্রত্যায়নপত্র আনতে হবে।
-কী প্রত্যায়নপত্র আনতে হবে?
-প্রত্যায়নপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে, আমরা বর্তমান ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন করি বা তাদের রাজনীতি করি, আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের। আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী না।
-এটা কী প্রত্যায়নপত্র দিয়ে প্রমাণ করা যাবে?
-না গেলে আর কি করা। বড় ভাই আরও বলেছে, প্রত্যায়নপত্রে যেন স্বাক্ষরকারী নেতার ফোন নম্বর থাকে। যাতে হলের পক্ষ থেকে পরে যোগাযোগ করে বিষয়টি যাচাই করা যায়।
-আর?
-আর প্রত্যায়নপত্র নীলক্ষেত থেকে বানিয়ে আনলে পিঠের চামড়া থাকবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে।
-এত রাতে সবাই কে হল থেকে বের করে দিল, ঢাকায় যাদের থাকার জায়গা নেই তারা কোথায় যাবে? তোমরা কিছু বলনি যে, ভাই, আমরা এত রাতে কোথায় যাব?
-আমরা বলেছিলাম। কিন্তু কোন কাজ হয়নি। আরও বলেছি, ভাই, আজ রাতটা অন্তত থাকতে দেন। আমরা আগামীকাল সকালেই চলে যাব।
-তখন কী বলল?
-বলল,হলে কাউকে পেলে খুনোখুনী হয়ে যাবে কিন্তু। ১৫ মিনিটের মধ্যে হল থেকে তোমাদের যা কিছু আছে নিয়ে বের হয়ে যাও।
-অন্য কোন নেতা কিছু বলল না?
-না, যেখানে হলের সাধারণ সম্পাদক আমাদের হল থেকে বের করে দিচ্ছেন, তখন অন্য বড় ভাইয়েরা আর কি বলবে।
-প্রত্যায়নপত্র দিতে হবে তোমাদের আগে থেকে বলেনি?
-বলেছিল।
-কে বলেছিল?
-হলের পোস্টেড অন্য বড় ভাইয়েরা গতকাল বলেছিল প্রত্যায়নপত্র আনতে হবে।
-বলেছিল, তাহলে তোমরা ব্যবস্থা নিলে না কেন?
-ব্যবস্থা তো নিচ্ছি। কিন্তু ওনারা সে সময় তো দিলেন না। আমাদের বলেছিল ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে জমা দিলে হবে। আমরা তো বাড়িতে জানিয়ে দিয়েছি। বলেছে পাঠিয়ে দেবে।
-তাহলে এখন আবার বের করে দিল কেন?
-আজ আমাদের বের করে দিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক। যারা বলেছিল তারা বের করে দেয়নি। আর আমাদের যখন বলেছিল প্রত্যায়নপত্র লাগবে তখন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না।
-তোমারা সাধারণ সম্পাদক কে বলনি, ভাই, আমাদের কে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে।
- বলেছি, কিন্তু তিনি বললেন, আমি সময় দিতে বলিনি, আর এখন আমি যা বলব তাই হবে।
-তারপর?
-আমি আবার ভাইকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ভাই, আমরা যদি ১৫ তারিখের আগেই প্রত্যায়নপত্র নিয়ে আসি তবে আমাদের হলে থাকতে দিবেন? উনি বললেন তা হবে না। ১৫ ফেব্রুয়ারির আগে জমা দিতে হবে। তারপর আমরা প্রত্যায়নপত্র যাচাই-বাছাই করব। তারপরে বিবেচনা করে দেখব, কাকে হলে উটানো যাবে আর কাকে যাবে না।
-তার মানে ১৫ তারিখের পরে হলে উঠতে হবে?
-হ্যাঁ।
-তখন তোমরা কি বললে?
-আমরা আর কি বলব। আমরা বললাম, তাহলে আর কি করা। এখন আপনি যা বলছেন, আমাদের তো তাই শুনতে হবে। আপনি তো আমাদের বড় ভাই।
-ও, আর যারা তোমাদের বলেছিল ১৫ তারিখের আগে দিলে হবে তারা কিছু বলল না?
-হ্যাঁ, আসার সময় এক বড় ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছিল। তিনি বললেন, আমরা তোমাদের জন্য কিছু করতে পারলাম না। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভাই শুনল না। কি আর করবা, ১৫ তারিখে প্রত্যায়নপত্র নিয়ে আস, দেখি তোমাদের জন্য কি করতে পারি।
-কি আর করবা, বুঝতেই তো পারছ। ক্যাম্পাসের রাজনৈতিক অবস্থা কি রকম। আমি আর তোমার জন্য কি করতে পারি।
-সেটা তো আমি বুঝি।
-থাক আমার এখানে। আর বাড়িতে বলে দাও। প্রত্যায়নপত্র পাঠিয়ে দিতে।
-আমি বলে দিয়েছি। বলেছে কালই পাঠিয়ে দিবে।
- ঠিক আছে। এখন তুমি বিছানা পেতে শুয়ে পড়। অনেক রাত হয়ে গেছে।
এই বলে আমিও শুয়ে পড়ি। কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বার বার মনে পড়ছিল, সেই সকল নবীন ছাত্রদের কথা যাদের ঢাকায় কোথায়ও থাকার জায়গা নেই। যারা দেশের বিভিন্ন প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে পড়তে এসেছে। যাদের অনেকেই আছে, যারা ঢাকার রাস্তাঘাট এখন ভাল মত চিনে উঠতে পারেনি। তারা এই মদ্যরাতে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, কোথায় পাবে, একটা রাতের জন্য একটু আশ্রয়। ঢাকার এই ইট কাঠের জঙ্গলে কোথায়ও আশ্রায় পাওয়া প্রায় অসম্ভব। এ শহর যে বড় নিষ্টুর, বড় নির্দয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র হিসেবে আমি বিবেকের বিষাক্ত দংশনে জর্জরিত হচ্ছিলাম। নবীন ছাত্র ভাইয়েরা আমাকে ক্ষমা কর। আমি আজ লজ্জিত, তোমাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।
এই নির্ঘুম মধ্যরাতে আমার আরও একটা কথা মনে হচ্ছিল। এই মানবিকথাহীন পাষন্ড রাও নাকি আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের আদর্শের সৈনিক। এরাই নাকি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লালনকারি। আজ যদি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বেঁচে থাকতেন, তবে তিনি নিজেও লজ্জা পেতেন। এই কথা শুনলে মুখ লুকানোর জায়গা খুঁজে পেতেন না। আজ বাংলায় তার আদর্শ প্রত্যায়নপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আদর্শ কি এতই তুচ্ছ? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি এতই সস্তা যে তা আজ প্রত্যায়নপত্র দিয়ে প্রমাণ করতে হবে? ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমাদের, স্বাধীনতার জনক, মহান নেতা ক্ষমা করো আমদের। ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও আড়াই লক্ষ মা-বোন ক্ষমা করো, ক্ষমা করো আমাদের। তোমাদের এই বাংলার নগণ্য মানুষ গুলোকে ক্ষমা কর। আমরা তোমাদের আদর্শ লালন করতে পারিনি, তোমাদের চেতনা ধরে রাখতে পারিনি।
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:১৫
বাংলার পাই বলেছেন: ঠিক বলেছেন। এই লেজুড়বৃত্তি ছাত্র রাজনীতির মত অপরাজনীতির কারনেই আমাদের দেশে কোন ভাল মানের নেতা গড়ে উঠল না।
আর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১:১৩
মিজানুর রহমান মিলন বলেছেন: খুবই করুণ অবস্থা ! লেজুরবৃত্তি ছাত্র রাজনীতি হলো আর এক অপরাজনীতি।