নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি তুমি ভাল লেখক হতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে ফ্রি তে লেখার অভ্যাস করতে হবে ।

আজমল আমীর বাপ্পি

ভবঘুরে

আজমল আমীর বাপ্পি › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি মায়াবি রাত অথবা একজন মদ্যপ রিকসা চালকের গল্প

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৪১

সন্ধ্যা থেকেই ঝুম বৃষ্টি,থামার নাম গন্ধ নাই। এমনি তে বৃষ্টি দেখতে ভালোই লাগে, কিন্তু আজকে মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আম্মুর দিকে তাকাতে পাচ্ছি না, যে কোন সময় কেঁদে ফেলতে পারি। এই বুড়ো বয়সে কান্না কাটি বিরাট লজ্জার ব্যাপার। আম্মুও কোন রকম কান্না সামলে আমার ব্যাগ গুছিয়ে দিচ্ছে। টিকিট আগে থেকে কাটা আছে, তাই কোন ভাবে আজকের যাত্রা বাতিল করা যাচ্ছে না। অনেক তো, প্রায় ২২ দিন থাকলাম এবার। খেয়ে পড়ে শুয়ে বসে রেস্ট নিতে নিতেই টায়ার্ড হয়ে গেছি। ভার্সিটির ছোট ভাই এ রাও চাকরি করতে লাগছে, এবার সত্যিই কিছু একটা করা লাগবে, কিন্তু আমার যোগ্যতা সিমিত ! এখানেই সৈনিকের বন্দুক অক্ষম, এটা তো আমি ছাড়া আর কেউ বুঝে না। অবশ্য এখন আরেক জন বুঝে, তাই হাত শক্ত করে ধরার বদলে হাত কেটে দিল। যাই হোক মূল গল্পে আসি।।
উপর ওয়ালার কৃপায় বৃষ্টি থামল। ব্যাগ দুই টা তে অসুবিধা নাই। অসুবিধা হচ্ছে বালিশে। জী না কোলবালিশ না, মাথার বালিশ। একদম পিউর শিমুল তুলা দিয়ে বানানো নরম তুলতুলে বালিশ। ভয়াভহ ধরনের স্লিপিং ডিসঅর্ডার কে কাবু করার জন্য হুজুরের ফু দেওয়া বালিশ। এই বালিশ মাথায় দিয়ে ঘুমাই লে সব ধরনের পেরেশানি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে কিনা আমি নিশ্চিত না। ওইটা ঘুমাইলে বুঝা যাবে। বালিশের খুশিতে আম্মুকে সালাম না করেই বাসা থেকে বের হলাম, ঢাকাই এসে কখন আমি এ বালিশে মাথা রেখে ঘুমাবো এই চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক করছে।

কিন্তু আজকে যে আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে সেটা তখন ও বুঝিনি। রাত তখন মাত্র সাড়ে দশ টা। অথচ দেখে মনে হচ্ছে গভির রাত। একেতো আবহাওয়া খারাপ, তারপর বাংলাদেশ আফগানিস্তান ওয়ানডে খেলা, রাস্তায় দু একটা কুকুর আর দু এক টা চা এর স্টল খোলা, কিন্তু মানুষ জন তেমন একটা নেই। অনেক খোজা খুজির পর দেখলাম এক জন রিকসার উপর জুবু থুবু হয়ে ঘুমাচ্ছে, ওনার ঘুম দেখে আমার ই ঘুম পাচ্ছে, অগ্যতা কোন উপায় না দেখে উনাকে ডাকলাম, আশ্চর্য ব্যাপার একবার ডাকাতেই উনার ঘুম ভেঙে গেল, বললাম ভাই বিনোদ পুর। উনি বিরক্ত হলেন কিন্তু ভাব ভংগি দেখে মনে হল। যাবেন। তখন উনার চেহারা দেখা হয় নি। আমি উঠে বস লাম, উনি আয়েশি ভংগিতে প্যাডেল দিতে লাগল। এক মিনিট হল রিকসায় চড়া, কিন্তু যাচ্ছে না থেমে আছে বুঝতে পারছি না, এত স্মুথ আর স্লো গতিতে কেউ রিকসা চালাতে পারে এটা আমার জানা ছিল না, জাই হোক বৃষ্টি হওয়াতে ঠান্ডা বাতাস হচ্ছিল, রিকসাই বসে থাকতে খারাপ লাগছিল না।

কিন্তু একি রিকসা চলছে তো চলছেই। মাত্র পাচ মিনিটের পথ অথচ মনে হচ্ছিল আমি অনন্ত কাল ধরে রিক সার উপর বসে আছি। এই যাত্রার বুঝি কোন শেষ নেই। আরো অদ্ভুদ ব্যাপার রিকসা ওয়ালা অত্যান্ত কূজো হয়ে, প্রায় হ্যান্ডেলের সাথে মাথা লাগিয়ে রিকসা চালাচ্ছে, যে কেউ দেখে বলবে উনি ঘুমায় আছে।

চারিদিক আবছা মায়াবি আলো এক অদ্ভুদ পরিবেশ সৃস্টি করেছে। সেই সাথে ঝি ঝি পোকার আওয়াজ আমাকে যেন বধির মোহাচ্ছন্ন করে তুলেছে। আমি যেন কোথায় হারিয়ে যাচ্ছি। আমার আশৈশব ও কৈষরের স্মৃতি গূলো যেন সিনামার মন্তাজ এর মত চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় কোন কূপের মধ্যে পড়ে জাচ্ছি। হঠাৎ বেল বাজাতে মনে হল আমি রিকসার উপর আছি। কিন্তু বেল কেন বাজালো বুঝলাম না, রাস্তায় তো কেউ নেই, এর পর খেয়াল করলাম উনি মাঝে মধ্যেই বেল বাজাচ্ছে, ভাব লাম জিজ্ঞেস করি, কিন্তু থাক কি দরকার বলে ঘড়ি দেখলাম, দেখি দশ টা পঞ্চাশ , মামাকে একটু জোড়ে চালাতে বলতে বলতেই বিনোদপুর পৌছে গেলাম। নেমে ভাড়া দেওয়ার সময় দেখি ও মা এ কি, এ তো আমাদের পাড়ার সেই আলংগির পাগলা। প্রসিদ্ধ মাতাল হিসেবে এক সময় যার বিশেষ সুনাম ছিল, পরে টাকার অভাবে নেশা মদ থেকে গাজাই ট্রাঞ্জেকসন হয়ছে। বছর দুই আগে আমাদের বাসার আসে পাশে তার গাজার দলবল সহ এক বার দেখে ছিলাম। যাই হোক যা ভাড়া তার থেকে দশ টাকা বেশি দিয়ে আপাতত রিকসা থেকে নামলাম অটো তে উঠব বলে।

অটোতে উঠে পাড়ার এক বন্ধু কে ফোন করলাম যে আলংগির কে চিন্তো। বললাম " আজ তো মামার গাজার খোরাক আমার পকেট থেকে গেল। সাত ছিলিম গাজা আর পান খাওয়ার পর মামাই কোন স্পিডে রিক সা চালাই এটা দেখতে পারলে ভালো হত "
আমার ফ্রেন্ড যা রিপ্লাই দিলো তার সারমর্ম হল

"গত বছর এই রকম কোন এক বৃষ্টি স্নাত রাতে মদ খেয়ে মাতাল অবস্থায় রেল লাইন ধড়ে হাটার সময় ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে ও মারা যায়। এর পর নাকি রাতের বেলা মাঝে মধ্যে ওকে স্টেশন এর চিপায় চাপায় মদের বোতল হাতে পড়ে থাকতে দেখা যায়, অবশ্য প্রত্যক্ষ দর্শক দের বেশি ভাগ ই তার সাবেক সূড়া সাথি না হয় মদের চালান কারি
।সব থেকে মজার ব্যাপার হচ্ছে যারা এক সময় টাকার অভাবে তার কাছে মদ বেচত না তারা এখন তাকে ফ্রি তেই মদ খাওয়াই, অবশ্য সে নাকি এখন মদ কিনেই খাই,এবং ভাল ব্রান্ড এর মদ ছাড়া অন্য কোন মদ সে ছুঁয়েও দেখেনা ।""

এখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটা, একা একা ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দিগন্ত বিস্তৃত ধু ধু অন্ধকার দেখছি, প্রখর রোদের যেমন তিবরতা তেমনি প্রচণ্ড আধারের ও একটা তিব্রতা আছে, একাকিত্তের তিব্রতা। আধার আমাদের অনেক কিছু বলে, কিন্তু আমরা শুধু আলোর কথাই শুনি ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৪৯

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: ব্লগে সু-স্বাগতম।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৪

আজমল আমীর বাপ্পি বলেছেন: ধন্যবাদ , আপনাদের সঙ্গী হতে পেরে খুশী হলাম ,আশা করি পাশে থাকবেন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.