নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিশ্ব দখলের আশায় উন্মু্‌খ , ছদ্মবেশী তিন উন্মদ!!!

বারাক ওসামা বিন পুতিন

আমি একের ভিতর তিন। আমার নামই আমার পরিচয়!!!!!

বারাক ওসামা বিন পুতিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মারগারেট থ্যাচারঃ ইতিহাসে লৌহমানবী খ্যাত ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী

২০ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৩:১০


মারগারেট হিলডা থ্যাচার (Margaret Hilda Thatcher) একজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এবং কন্সারভেটিভ পার্টির নেত্রী ছিলেন। তিনি বিংশ শতাব্দীর দীর্ঘ সময় শাসন করা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও এখন পর্যন্ত সেদেশের একমাত্র নারী প্রধানমন্ত্রী। তার আপসহীন রাজনীতি ও নেতৃত্বের ধরনের জন্য একজন সোভিয়েত সাংবাদিক তাকে লৌহমানবী বলে খেতাব দেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি যে নীতিগুলোর বাস্তবায়ন করেছিলেন আজ সেগুলো থ্যাচারিজম নামে পরিচিত।
মারগারেট হিলডা রবার্টস জন্মে ছিলেন ১৯২৫ সালের ১৩ অক্টোবর লিংকনশায়ারের গ্রান্থামে। তার বাবার নাম ছিল আলফ্রেড রবার্টস ও মায়ের নাম ছিল বিয়েট্রিশ ইথেল। তিনিই গ্রান্থামে বড় হয়েছেন এবং সেখানে তার বাবার দুটো মুদির দোকান ছিল। তার বাবা স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন এবং মেথডিস্ট চার্চে ধর্মযাজক হিসেবে কাজ করতেন। আলফ্রেড ১৯৪৫-১৯৪৬ সাল পর্যন্ত গ্রান্থামের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি হান্টিং টাওয়ার রোড প্রাইমারি স্কুলে অধ্যয়ন করেন এবং সেখান থেকে বৃত্তি পেয়ে কেস্টেভেন এন্ড গ্রান্থাম গার্লস স্কুলে যান। তার রিপোর্ট কার্ড থেকে জানা যায় তিনি খুবই পরিশ্রমী ছিলেন এবং পিয়ানো, ফিল্ড হকি, কবিতা আবৃত্তি, সাতার ও দৌড় প্রতিযোগিতায় উত্তরোত্তর উন্নতি করছিলেন। ১৯৪৭ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে থেকে কেমিস্ট্রিতে দ্বিতীয় শ্রেণি নিয়ে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। কেমিস্ট্রি পড়ার সময়ও তিনি আইন বিষয়ে পড়ার ও রাজনীতি করা নিয়ে ভাব ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কন্সারভেটিভ এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তিনি কলচেস্টারের বি এক্স প্লাস্টিকে রিসার্চ কেমিস্ট হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪৮ সালে তিনি আই সি আই তে চাকরির জন্য আবেদন করেন কিন্তু প্রত্যাখ্যাত হন এই বলে যে তিনি খুবই উদ্ধত, একগুঁয়ে ও স্বমতে ভয়ংকরভাবে অটল থাকা একজন ব্যক্তি। ১৯৪৮ সালে মারগারেট পার্টি কনফারেন্সে যোগদান করেন এবং এসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা তার প্রতি এতটাই মুগ্ধ ছিলেন যে তারা তাকে ডার্টফোর্ডের প্রার্থী হিসেবে আবেদনের জন্য প্রস্তাব করেন যদিও তিনি অনুমোদিত প্রার্থী তালিকার মধ্যে ছিলেন না। মাত্র ২৫ পঁচিশ বছর বয়সে তিনি ডার্টফোর্ডের কন্সারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। কন্সারভেটিভ পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ের পর দেয়া ডিনার পার্টিতে তার সাথে দেখা হয় একজন সম্পদশালি ও সফল ব্যবসায়ী ডেনিস থ্যাচারের সাথে।
১৯৫০ ও ১৯৫১ সালে লেবার পার্টির নিরাপদ আসন ডার্টফোর্ড থেকে তিনি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন কিন্তু দুইবারই ব্যর্থ হন তবে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনেন । একই সাথে সবচেয়ে কম বয়সী এবং একমাত্র মহিলা প্রার্থী হিসেবে মিডিয়া আকর্ষণে সক্ষম হন। এসময়ই তিনি ডেনিস থ্যাচারকে বিয়ে করেন এবং একই বছর তাদের জমজ সন্তান ক্যারল ও মার্ক জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫৯ সালে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে তিনি মেম্বার অফ পার্লামেন্ট নির্বাচিত হন। তার কৈশোরকালীন সময়েই তার প্রতিভা এবং কাজের প্রতি অনুপ্রেনার কারণে তার মধ্যে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। যদিও তিনি এ ব্যপারে হতাশা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে তার জীবদ্দশায় কেউ মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না কারণ পুরুষ জনগোষ্ঠী কুসংস্কারাচ্ছন্ন। ১৯৬৪ সালে কন্সারভেটিভ পার্টির পরাজয়র পর তিনি তার দলের ভূমি ও গৃহায়ন দপ্তরের মুখপাত্র নির্বাচিত হন। সে সময় তিনি ভাড়াটিয়াদের কাউন্সিল হাউস কেনার পক্ষে অবস্থান নেন। লেবার পার্টির উচ্চ রাজস্ব নীতির কড়া সমালোচকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও তিনি পুরুষ সমকামিতার বৈধতা ও গর্ভপাতের পক্ষে আনীত বিলের সমর্থক ছিলেন। এমনকি মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি বহাল রাখার পক্ষে তিনি কাজ করেন। ১৯৭০ সালে সাধারণ নির্বাচনে কন্সারভেটিভ পার্টির জয় লাভের পর তিনি ক্যাবিনেটে শিক্ষা মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। দায়িত্ব গ্রহণ করেই তিনি জনগণের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হন। তিনি স্কুলগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনগুলো অগ্রাধিকার দেন। তবে রাষ্ট্রীয় শিক্ষা পদ্ধতি খাতের ওপর ব্যয় কমিয়ে দেন। যার ফলে সাত থেকে এগার বছরের শিশুদের মধ্যে বিনা মূল্যে দুধ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হয়। পরে জানা যায় তিনি এটি করতে চান নি কিন্তু রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ সঙ্কটের কারণে এমনটা করতে বাধ্য হন। জনশ্রুতি আছে এ সিদ্ধান্তের ফলে গণবিক্ষোভের মুখে তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবে ছিলেন পরে তার আত্মজীবনীতে তিনি লিখেন ‘এ অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মূল্যবান পাঠ শিখেছি। স্বল্প রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ব্যাপক রাজনৈতিক জঘন্যতা মেনে নিতে হয়েছিল।‘
কন্সারভেটিভ পার্টি ১৯৭৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে হারের পর লেবার পার্টি সংখ্যালঘু সরকার গঠন করে। এর ফলে কন্সারভেটিভ পার্টিতে এডওয়ার্ড হিথের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পরে। যার ফলে মারগারেট হয়ে উঠেন তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জার। তিনি হিথকে প্রথম ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন। দ্বিতীয় ব্যালট নির্বাচনে পরাজিত করেন হোয়াইট ল-কে। এর ফলে মারগারেট হয়ে উঠেন দলীয় প্রধান ও বিরোধীদলীয় নেত্রী। ১৯৭৬ সালের ১৯ জানুয়ারি কেন্সিংটন টাউন হলে এক বক্তৃতায় তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ে কঠোর আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেন। এর উত্তরে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্রিকা “ক্রাস্নায়া জাভেজডা” তাকে আয়রন লেডি বা লৌহমানবী বলে আখ্যা দেয় এবং তিনি আনন্দের সাথে এ উপাধি গ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালে ব্রিটেনের অর্থনীতি খুবই নাজুক অবস্থার সম্মুখীন হয় এবং ১৯৭৮ সালের মাঝামাঝি এসে অর্থনীতি কিছুটা উন্নতির দিকে যায়। সে বছর ফরেইন মিনিস্টার জেমস কেলাঘান ঘোষণা করেন যে ঐ বছর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। থ্যাচার সে সময় লেবার পার্টিকে মুরগির বাচ্চা বলে অভিহিত করেন। ১৯৭৮-৭৯ সালে লেবার পার্টীকে জনরোষের মুখে পড়তে হয়। তারপর একটি সাধারণ নির্বাচন ঘোষণা করা হয় ১৯৭৯ সালে। কন্সারভেটিভরা ৪৪ আসন পেয়ে হাউস অফ কমনসে সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায় যার ফলশ্রুতিতে মারগারেট থ্যাচার ব্রিটেনের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হয়ে উঠেন।
মারগারেট থ্যাচার প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৭৯ সালের ৪ মে, এ সময় তিনি ১০ ডাউনিং স্ট্রীটে এসে উঠেন। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থ্যাচার সাপ্তাহিকভাবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে দেখা করতেন। ১৯৮৬ সালের দিকে দ্যা সানডে টাইমস এর একটি প্রতিবেদন রানী এবং প্রধানমন্ত্রীর সাথে মতানৈক্যের সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে প্রাসাদ থেকে এ দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়। থ্যাচার নিজেও পরবর্তীতে লেখেন যে সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর রানীর সন্তোষজনক মনোভাব ছিল।
তার শাসনামলে তিনি প্রত্যক্ষ ট্যাক্স কমিয়ে দিয়ে পরোক্ষ ট্যাক্স বাড়িয়ে দেন। অর্থের সরবারহ কমানোর জন্য সুদের হার বাড়িয়ে দেন যাতে করে মুদ্রাস্ফীতি কম থাকে। সরকারি খরচের সীমা রেখা বেধে দেন এবং সামাজিক কার্যক্রম, শিক্ষা, আবাসন খাতে ব্যয় কমিয়ে দেন। শিক্ষা খাতে ব্যয় কমানোর জন্য তিনিই প্রথম অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট প্রধানমন্ত্রী যাকে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হয়নি। তিনি ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা হ্রাস করেন কারণ তার মতে এটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যাহত করে ও অর্থনৈতিক ক্ষতি সাধন করে। তার সময়ে তিনি ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা প্রায় ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম হন।
১৯৮৪সালে ১২ অক্টোবর সকালে এক হত্যা চেষ্টায় তিনি অল্পের জন্য বেচে যান। এ হামলায় পাঁচ জন নিহত হয়।
থ্যাচার কন্সারভেটিভ পার্টির এম পি স্যার এন্থনি মেয়ের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। তবে তিনি সাফল্যের সাথে তা উৎরে যান। বিভিন্ন সময় জনমত জরিপে তিনি ধারাবাহিকভাবে জনপ্রিয়তা হারান। তবে তিনি এসব জরিপকে তোয়াক্কা করতেন না। ১৯৯০ সালের ১ নভেম্বর থ্যাচারের সবচেয়ে পুরনো ক্যাবিনেট মন্ত্রী গফ্রি হয়ি ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার হিসেবে পদত্যাগ করলে থ্যাচারের প্রধানমন্ত্রীত্ব হুমকির মুখে পরে। পরের দিন মাইকেল হাসেলটিন কন্সারভেটিভ পার্টির নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করেন। যদিও থ্যাচার প্রথম ব্যালট জয় পান কিন্তু মাইকেল যথেষ্ট সমর্থন পাওয়ায় দ্বিতীয় ব্যালট আদায় করে নিতে সক্ষম হন। তবে দ্বিতীয় ব্যালটে থ্যাচার চার ভোট কম পান। প্রাথমিকভাবে তিনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে ক্যাবিনেটের পরামর্শে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। তারপর ডাউনিং স্ট্রীট পরিত্যাগ করেন। এসময় তিনি নিজেকে বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হয়ে বিতাড়িত হয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। থ্যাচারের পর জন মেজর পার্টির নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পদত্যাগের পর তিনি দুই বছর ফিনচলির এম পি ছিলেন এবং ১৯৯২ সালে তিনি ৬৬ বছর বয়সে হাউস অফ কমন থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পর তিনি বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দিতেন ও বই লিখে সময় কাটাতেন।
মৃত্যু
মারগারেট থ্যাচার ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল ৮৭ বছর বয়সে মারা যান। মৃত্যুর সময় তিনি লন্ডনের রিজ হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তার মৃত্যুতে যুক্তরাজ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সেন্ট পল ক্যাথেড্রাল চার্চে সামরিক সম্মানের সহিত শেষকৃত্য অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। এ সময় রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ উপস্থিত ছিলেন। এরপর তাকে মর্টলেক ক্রেমাটরিয়মে দাহ করা হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.