![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারাদেশে ১২ জানুয়ারি থেকে বেসরকারী স্কুল ও কলেজে অবিরাম শিক্ষক ধর্মঘট শুরু হচ্ছে। শিক্ষক সমাজের এ ধর্মঘট হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা কোন কিছু নয়। দীর্ঘদিনের দাবী এবং উক্ত দাবী বাস্তবায়নে সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাস্তবায়নে চরম অনীহা ও শৈথল্য প্রকাশের বহি: প্রকাশই হলো অবিরাম ধর্মঘটের কর্মসূচী। আর সরকার এ আন্দোলনকে নানান কুটকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন শুরু থেকেই। বিভিন্ন গ্রুপের সাথে বৈঠকের নাম করে আন্দোলনের মূল স্রোত ধারাকে পাশ কাটিয়ে জনগনের দৃষ্টিভংগিকে অন্যদিকে ফেরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।দাবী পুরণের আশ্বাস দিয়ে শুভংকরের ফাঁকি খেলায় মেতে উঠেছেন। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে এমনটি আচরণ মোটেও কাম্য নয়।
বলা হয়ে থাকে শিক্ষকরা জাতির বিবেক।মানুষ গড়ার কারিগর। বিভিন্ন সময় সরকারী প্রেসনোটে শিক্ষক সমাজকে সম্মান করে অনেক বিশেষনই দেয়া হয়। কিন্তু জাতির বিবেক বলে শিক্ষক সমাজ আজ সমাজ থেকে সালাম ছাড়া আর কিছুই পায় নাই। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে যে বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশী মূল্যায়ন করা দরকার দুভার্গ্যজনক হলেও সত্যি আজ সে বিষয়টিই সবচেয়ে বেশী উপেক্ষিত রয়ে গেছে। দেশের ৮৫% শিক্ষার্থী যে সব শিক্ষায়তনে অধ্যয়ন করে সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীরাই সবচাইতে বেশী অবহেলিত। সৃষ্ঠি করা হয়েছে পাহাড়সম শিক্ষা বৈষম্য।
শিক্ষকরাতো থাকার কথা শ্রেণীকক্ষে কিন্তু আজকে রাজপথে নামতে বাধ্য করা হচ্ছে। শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসছেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে, শিক্ষক আন্দোলনে এ যাবৎ কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কিংবা ঘটবে এমনটিও আশা করা যায় না। কারণ শিক্ষকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বিশ্বাসী, সরকার এটাকে বোধ হয় আন্দোলনের দুর্বল পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করছেন। আজ যদি ছাত্র কিংবা শ্রমিক আন্দোলন হতো তাহলে এতদিনে হয়তো অনেক গাড়ী ভাংচুর হতো, পুলিশের সাথে কয়েক দফা সংঘর্ষ হতো ।কিন্তু সম্মানিত শিক্ষকরা তা কিন্তু করেননি। সরকার শিক্ষক আন্দোলনে এ ধরনের কোন গোলযোগ হবে না এ সম্পর্কে যথেষ্ট আস্থাবান। সুতরাং আন্দোলনকে কিভাবে কুটকৌশল প্রয়োগ করে দমন করা যায় সরকার এ চিন্তা ভাবনা করেছেন শুরু থেকেই। সুতরাং সমস্যা যে তিমিরেই ছিলো সে তিমিরেই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু বাঁধা দিলে লড়াই ও বাঁধতে পারে।
একটি গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে অন্যান্য সকলের মতো শিক্ষক সমাজের ও প্রত্যাশা অনেক। সে প্রত্যাশা নিয়েই আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলাম। এখানে শিক্ষক সমাজের ভূমিকা অনন্য, অসাধারণ। এটা অবশ্যই এ নির্বাচিত সরকারের স্মরণ থাকার কথা । অতীত ভুলে গেলে অতীতের মতই নির্মম ভাগ্যকে বরণ করতে হবে। সরকার বেসরকারী খাতকে উৎসাহিত করছেন একথা পত্র পত্রিকায় হরদম প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু বেসরকারী স্কুল,কলেজের শিক্ষকদের প্রাপ্তিকে উপেক্ষা করছেন কিভাবে বুঝি না। যেখানে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ী আমাদানীর বিল বিনা বাঁধায় পাশ হয়ে যায়, সেখানে শিক্ষকদের বেঁচে থাকার নূন্যতম দাবীকে অযৌক্তিক বলে মনে করেন কিভাবে?
শিক্ষকরা যে দাবী উঋাপন করেছেন এতে যে শিক্ষকরাই শুধু উপকৃত হবে তাই নয়। এখানে উপকৃত হবে সমগ্র দেশ ও জাতি। একটি দেশে বৈষম্যমূলক শিক্ষানীতি থাকতে পারে না। কিন্তু বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষকদের যে দুরাবস্থা চলছে তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানেন।শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি সুখকর সংবাদ নয়।দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে প্রাপ্তি ও সুযোগ সুবিধার দিক থেকে সরকারী ও বেসরকারী অন্যান্য সেক্টরের নিম্মশ্রেণির কর্মচারীর চাইতেও অনেক পিছিয়ে। কিভাবে সে ব্যাখাটা এখানে নাইবা দিলাম।এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে।সরকারী কর্তারা বলেন ’জানেন জানেন’।কিন্তু এ জানার কোন শেষ নাই।মন্ত্রী ,কর্তারা শিক্ষকদের সাথে দরকষাকষি করেন জিনিষপত্রের দামের মত তাদের প্রাপ্তি নিয়ে। এ লজ্জা কোথায় রাখি?আলদা স্কেলের কোন খবর নাই। এদেশে সবার খবর থাকে- শিক্ষকদের খবর চলে যায় অন্তরালে। বিশ্বব্যাংক ও আই, এম, এফ তাদের রিপোর্ট বলেছে যে,বাংলাদেশের সামগ্রিক জনগোষ্ঠীর ৮৫% এর বেশী ছাত্র যেহেতু বেসরকারী স্কুল কলেজ অধ্যয়ন করে সেহেতু এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি আর্থিকভাবে সাহায্য করা যায় তাহলে দেশের বৃহত্তর শিক্ষার মান যে বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সরকার এব্যাপারে কার্যকর কোন ভূমিকা গ্রহণ করেননি। শিক্ষার মত একটি জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে অবহেলা সমীচীন নয়। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরকার বিভিন্ন সময়ে আন্দোলনকে অবদমিত করার চেষ্টা করেছেন। যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে অনেক কিছুরই পরিবর্তন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তা সহজে হয় না। দক্ষিণ আফ্রিকার সাদা কালোর জংলী আইন পরিবর্তন হয়ে সেখানে নির্বাচনের মাধ্যমে সাড় তিনশো বছরের কলংক ইতিহাস মুছে ফেলা হয়েছে অনেক আগে। কিন্তু আমরা দিন দিন বিভেদের প্রাচীর সৃষ্টি করছি।
সরকারী কর্মচারী ও সরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষকরা যেখানে মূল বেতনের উপর একটা শতকরা হারে বাড়ী ভাড়া পান। সেখানে বেসরকারী স্কুল কলেজের শিক্ষকদের ,কর্মচারী,পিওন এর জন্য সুনির্দিষ্ট ১০০(একশত) টাকা বাসা ভাড়া একটা ‘মসকরা’ ছাড়া আর কিছুই নয়।বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতেও রয়েছে পাহাড় সম বৈষম্য।কোন কোন প্রতিষ্ঠান আর্থিক অবস্থার কারণে শিক্ষকরা যে সুযোগ সুবিধা পান অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা হয়তো সেটা পান না।আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে আয় থাকলেও দুর্নীতি কবলে পড়ে শিক্ষকরা বঞ্চিত হন।এসব কিছু হচ্ছে সরকারের সুষ্ঠু নজরদারীর অভাবে ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠু নীতি মালার আওতায় না আনার কারণে।বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় বেসরকারী শিক্ষকদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।সামাজিক একটা অবস্থানের কারণে না পারছেন তারা উপরে যেতে না পারছেন তারা নীচে নামতে।শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি দেখানো হচ্ছে তা শিক্ষকেরই অবদান।কিন্তু শিক্ষার অগ্রগতির সাথে শিক্ষকের কি অগ্রগতি হয়েছে তা কি কেউ ভেবেছেন?
এজাতির ক্রান্তিকালে শিক্ষকরা বহুবার বহু দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু জাতি আজ শিক্ষকের ভার নিতে রাজী নন। যে জাতি শিক্ষকের ভার নিতে পারে না, সে জাতির জাতির শিক্ষা ভবিষ্যত অন্ধকারাচ্ছন। বিষয়টি অতীব পরিস্কার। থানা অফিসে অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচীতে আমার স্কুল কলেজে পড়াকালীন সময়ের অনেক সম্মানিত শিক্ষককে আমি দেখেছি আন্দোলনে সামিল হতে। তাঁদের দেখে দীর্ঘদিন আগে আমার ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ে যায়। তাঁদের যে দৈন্যদশা ছিলো আজ অনেক দিন পরে সে দৈন্যদশা যে ঘুচে নি তা ভালোভাবে বোঝা গেলো। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক । বাঁচার তাগিদে শিক্ষকরা শিক্ষকতার পাশাপাশি বিকল্প আয়ের পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন। এতে শিক্ষার গুনগত দিক বিঘিœত হচ্ছে সন্দেহ নেই। একথা ঠিক যে জীবন ধারনের ন্যূনতম ব্যয় মিটানোর নিশ্চয়তা যেহেতু তারা সরকার থেকে পাচ্ছে ন্ াসেহেতু শিক্ষা ক্ষেত্রে তারা সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। সুতারাং এ পরিস্থিতি থেকে উত্তোরন হওয়া দরকার। শিক্ষা জাতির গুরুত্বপূর্ণ খাত। একথা নতুনভাবে বলার অবকাশ নেই। এখানে বৈষম্য থাকবে- শিক্ষকরা আন্দোলনের মাধ্যমে ন্যায্য দাবী আদায়ের জন্য রাজপথে নামবে। এটা অনভিপ্রেত। স্বাধীনতা উত্তর এদেশে অতি জনগুরুত্বপূর্ণ খাত যেমন সামরিক বাহিনী পুলিশ বাহিনী ,সরকারী সচিবালয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে কোন দাবীর জন্য আন্দোলন হতে দেখেনি। কেন? এখানে কর্মরত অধিকাংশই এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যাওয়া ছাত্রছাত্রী। মানুষ গড়ার আঙিনায় যারা রয়েছেন তাদেরকেও মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার অধিকার দিতে হবে। এটি তাদের নৈতিক প্রাপ্য।দাবী করে আদায়ের বিষয় নয়। সুষ্ঠ জবাবদিহিতা গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত। দেশে আজ এটির বড়ো অভাব। আশা করি সরকার শিক্ষকদের মন মানসিকতা বুঝবেন। সচেতন অভিবাবক মহল ও এর গুরুত্ব অনুধাবন করবেন। একথা জেনে রাখা দরকার যেখানে বেঁচে থাকর ন্যূনতম চাহিদার নিশ্চয়তা পাওয়া যায়না, সেখানে মিঠে কথায় সহজে মন গলে না।
©somewhere in net ltd.