নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখা হোক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার

বাসুদেব খাস্তগীর

অতি সাধারণ অসাম্প্রদায়িক মানুষ

বাসুদেব খাস্তগীর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেসরকারী শিক্ষকদের আর্থসামজিক অবস্থান ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

২১ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৫



বাংলাদেশের বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষপটে বেসরকারী শিক্ষকদের অবস্থান অত্যন্ত নাজুক।সরকার আসে সরকার যায় বেসরকারী শিক্ষকদের ভাগ্য যে তিমিরে সে তিমিরেই রয়ে যায়। অনেক দিনের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি এদেশের বেসরকারী শিক্ষকরা দেশের রাজনৈতিক দলাদলির শিকার। রাজনৈতিকদলগুলোর যাতাঁকলে পিষ্ট হয়ে ভাগ্য বিড়ম্বিত বেসরকারী শিক্ষকরা আজ বড় অসহায়। অতীতে বেসরকারী শিক্ষকদের ‘বেদরকারী’ বলেও উপহাস করেছেন সরকারী মহলের কেউ কেউ।এখন উপহাস করার ধরণ বা রকম টা শুধু পাল্টেছে।অন্যান্য পেশার তুলনায় অত্যন্ত মর্য়দাকর পেশা হিসাবে চিহ্নিত পেশাটিতে নিয়োজিত ব্যক্তি বর্গের প্রাপ্তি ও সুযোগ সুবিধা অনেক অনেকগুন পিছিয়ে।অথচ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯০ ভাগই বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থার নিয়ত্রণে। এ ৯০ ভাগ বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরম অবহেলায় রেখে সরকার কিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখে আমাদের ভাবতে অবাক লাগে।এক শ্রেণীর সরকারী আমলার রোষানলে পড়ে ও বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্খ চরম অবহেলার শিকার ও শিক্ষকদের জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। ১৯৯৩ সনে শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যারয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে যখন কলেজ শিক্ষকতায় প্রবেশ করেছিলাম তখন মনে হয়েছিলো মর্যদা পূর্ণ এ পেশা জীবন ওজীবিকার চাহিদা মিটাতে সক্ষম হবে। কিন্তু প্রায দুই দশক শিক্ষকতা করে আজ মনে হচ্ছে জীবনের বড় ভুলটিই কী তখন করেছিলাম? তা না হলে এক জন শিক্ষকের জীবনযাত্রা অন্য পেশায় নিয়েজিত ব্যক্তির তুলনায় এত বিস্তর ব্যবধান থাকবে কেন? তখন এ পেশায় না গিয়ে অন্য পেশা বেছে নেয়ার যথেষ্ঠ সুযোগ ছিলো। সে সুযোগকে যদি কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে জীবনের ভাগ্যটা হয়তো অন্য রকম হতে পারতো। তখনকার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া সমসাময়িক বন্ধু বান্ধবরা যারা এ পেশায় আসেনি , অন্য সেক্টরে কাজ করছেন তাদের আর্থসামাজিক অবস্থান ও আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থানের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। পেশায় থেকে আমি অনৈতিক কিছু মোটেও আশা করি না।গাড়ি ,বাড়ি,অট্টালিকা কিংবা ফ্ল্যাটের স্বপ্ন ও দেখি না। কিন্তু তাদের সাথে আমাদের জীবন যাত্রা তো এতটুকু পার্থক্য হওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে তাই।বাংলাদেশের সমস্ত বেসরকারী শিক্ষকদের অবস্থা একই। বড় হতাশা থেকে এ কথা গুলো বলা।ঐ সব বন্ধু বান্ধবরা আজকাল আমাদের তেমন একটা খোজঁ খবর রাখেন না।বেসরকারী শিক্ষকদের অধিকাংশ তাদের ছেলে মেয়েদের ভালো স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন দেখেন বলে মনে হয় না।্এক শ্রেণীর মানুষের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা।অথচ মানুষ গড়ার কারিগররাই আজ তাদের সন্তানাদি নিয়ে বড় বেকাদায়।ধনী ,গরীব , মধ্যবিত্ত এ তিন শ্রেণীর মধ্যে বেসরকারী শিক্ষকদের অবস্থান বোধহয় কোথাও নেই। দেশের ৯০ ভাগেরও বেশি শিক্ষা ব্যবস্থার

নিয়ন্ত্রনকারী শিক্ষকদের নিয়ে যারা ভাবেন না আমরা নিশ্চিত এ জাতির ভাগ্য সহজেই পরিবর্তন হতে পারে না। সমাজ জাতি আশা করে মেধাবী ছাত্র ছাত্রীরাই শিক্ষকতায় আসবে এবং তাদের হাতেই গড়ে উঠবে আগামী প্রজম্মের ভবিষৎ।

কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক জনক হলেও সত্যি এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে সে পর্যায়ে নেই। কারন মেধাবীূ ছাত্র ছাত্রীরা বর্তমানে এ পেশায় আসতে মোটেও আগ্রহী না।গ্রামাঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে তাকালেই বিষয়টি নজরে আসে।া গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ স্কুলে অংক ও ইংরেজী পড়ানোর শিক্ষকের বড়ই অভাব।স্বাধীনতা পরবর্তী একটি প্রজম্মের পরে ভালো অংক ও ইংরেজী জানা শিক্ষকদের একটি অংশ মৃত্যু ও অবসর জনিত কারণে চলে য্ওায়ায় এখানে যে শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজেই অনুমেয়। এজন্য গ্রামাঞ্চলের অভিবাবকরা তাদের সন্তান সন্তানাদির পড়া লেখা নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। কারণ বর্তমান যুগের চাহিদায় একজন শিক্ষকের নূন্যতম যে সুযোগ সুবিধা থাকা দরকার তার লেশমাত্রও নেই।যা কিছু আছে শহর কেন্দ্রিক ও সরকারি স্কুল ভিত্তিক। কিন্তু যে দেশের ৯০ ভাগ শিক্ষা ব্যবস্থা বেসরকারী সেখানে প্রায় সবখানে একই অবস্থা।এ বেসরকারী শিক্ষা তো অন্য কোন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মত নয় । এটি শিক্ষা। এ কথা সবাইকে বুঝতে হবে। যার ভিত্তির উপর অন্য সব প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়ে থাকে।একজন মেধাবী ছাত্র কেন বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় আসবে? সে চাইবে বড় বহু জাতিক কোম্পানী কিংবা কোন মোবাইল ফোন কোম্পানীতে জয়েন্ট করতে। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে অচিরেই এ দেশের বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এ নিয়ে এখনি ভাবা দরকার।

অনেকে বলে থাকেন এ পেশার পাশাপাশি শিক্ষকদের অনেক কিছু করার সুযোগ থাকে।থাকে সত্যি কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার পেশার প্রতি নিবেদিত হওয়ার মাত্রা কমে যায় এবং হচ্ছে টাও তাই।পেশায় যদি পেশাদারিত্ব না থাকে তাহলে সেখানে ভালো কিছু আশা করা যায় না।বাংলাদেশের বেসরকারী শিক্ষকদের শিক্ষকতার পাশপাশি অন্য কিছু করার প্রবণতা শিক্ষার মৌলিকত্ব নষ্ট করছে। রাষ্ট্রের বর্তমান শিক্ষা কাঠামো তাদেরকে এটা করতে বাধ্য করছে এবং তারা এটা করার চেষ্টা করছে বাধ্য হয়েই। রাষ্ট্র যদি তাদের নূন্যতম সুযোগ সুবিধা দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় আবদ্ধ রাখতে পারতো তাহলে এমনটি হতো না।শিক্ষকদের কাজ হচ্ছে শিক্ষাদান ,লেখালেখি পড়াশুনা, গবেষণা।বর্তমান আর্থসমাজিক প্রেক্ষাপটে শিক্ষকরা এ মৌলক বিষয় থেকে ক্রমাগত দুরে সরে যাচ্ছে। জীবিকা অর্জনের বাহন হিসাবে পেশাকে নিতে না পারলে সেখানে ভালো উৎপাদনশীলতা আশা করা যায় না।দীঘৃদিন এ পেশায় নিয়োজিত থেকে একটা ধারণা জম্ম নিয়েছে যে,বেসরকারী শিক্ষকদের কিভাবে না দিয়ে পারা যায় তার একটা নিরন্তর প্রচেষ্টা সব সরকান মহলেই। সব সরকারের আমলেই এটা দেখেছি।বিরোধী দলের কোন কোন নেতা এখন বলছেন ক্ষমতায় গেলে বেসরকারী শিক্ষকদের সব দাবী মেনে নেয়া হবে। শুনে আমাদের হাসি পায়। আমদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, যে যায় লংকায় সে হয় রাবণ। কোন কারণে ইনক্রিমেন্ট, টাইম স্কেল বা অন্য কোন কারনে শিক্ষকদের পাওনা হলে দেখা যায় হাল নাগাদ চলতি বকেয়া টাকাটা দিয়ে বাকী গুলো আর পরিশোধ করে না। অনেক শিক্ষকের ব্যক্তিগত জীবনে এ ধরণের অভিজ্ঞতা আছে। “না দিয়ে তো শিক্ষকদের পারা যায়”-এ এক ধরণের হীন প্রবণতা। অন্য কোন সেক্টরে কি তা সম্ভব ? বেসরকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করার ইতিবৃত্ত বলে শেষ করা যাবে না।এ পেশায় এসে যেন দু:খের অন্ত নেই।দীর্ঘ বিশ বছর চাকুরী করে ও কোন পদোন্নতি নেই। শুধু একটি টাইম স্কেল পাওয়া।যা বেতন তা এখানে উল্লেখ না করাই ভাল।এটা দিয়ে বর্তমান যুগে একটা ভালো থাকার জায়গাও মিলবে না। ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা ও জীবন ধারনের ব্যয় নির্বাহ তো দুরের কথা। পারিবারিক অর্থর্ বিত্ত না থাকলে এ পেশায় টিকে থাকা বড় কঠিন।ইনক্রিমেন্ট দেয়া হয় সেই ১৯৯১ সালের টায়।চিকিৎসা ভাতা ১৫০ টাকা।শিক্ষক কর্মচারী সকলের জন্য বাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা চলছিল প্রায় ত্রিশ বছর ধরে।। সত্যি কি হাস্যকর ব্যাপার। পৃথীবির কোন সভ্য দেশে এ ধরণের বৈষম্য থাকতে পারে না। এই ব্যাপারটা বর্তমান সরকার অত্যন্ত হীন মনমানসিকতায় পরিবর্তনের নামে যে প্রহসন করেছে তা অত্যন্ত দু:খজনক।আন্দোলনের মুখে সরকার পত্রপত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে দেশের জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে বাড়ী ভাড়া পাঁচগুণ ও চিকিৎসা ভাতা দ্বিগুণ করা হয়েছে। একশত টাকার পাচগুণ আর দেড়শত টাকার দ্বিগুণ মানে কতটাকা তা তো সবাই জানি। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের বাজারে শিক্ষকদের সাথে এ এক দারুন প্রহসন।জনবল কাঠামো সহ নানা ধরনের বৈষম্য মূলক নীতির শিকার এ দেশের বেসরকারী শিক্ষকরা। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এ নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে এবং হচ্ছে। অভিজ্ঞতা বাড়লে মানুষের দাম বাড়ে,কিন্তু বেসরকারী কলেজের শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা বাড়লে দাম কমে। অনুপাত প্রথার কারণে পদোন্নতির সম্ভাবনা খুব কম। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় শিক্ষকের ছাত্র পদোন্নতি পেয়ে গেয়েছেন অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে । কিন্তু নিজের টা হয় নি অনুপাত প্রথার কারণে। হয়তো হবেও না এবং এ নিয়েই হয়তো তাকে চাকরী জীবন শেষ করতে হবে। এ অভিজ্ঞতার কারণে তাকে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও নিতে চায় না কারন এ অভিজ্ঞতা সে প্রতিষ্ঠানের অন্য শিক্ষকদের সিনিয়রিটি নষ্ট করতে পারে। তারা চাইবে নতুন অভিজ্ঞতাহীন শিক্ষক এবং প্রতিষ্ঠান ও চাইবে তাই।এ এক অসহ্য যন্ত্রনাদায়ক অভিজ্ঞতা।আমরা কোচিং নিয়ে কথা বলি এটাতে জড়িত মুষ্ঠিমেয় গুটি কয়েক শিক্ষক যা সমগ্র শিক্ষকের ৫ ভাগ হবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু শিক্ষকের বৃহৎ অংশতো কোচিং এর সাথে জড়িত নেই। সবাই কেন এর বদনাম ভোগ করবে ? এর নাম দিয়ে অন্যরা কেন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে ?আমরা কোচিং বন্ধের নীতিমালা করি –কিন্তু ডাক্তারদের প্রাইভৈট প্র্যাকটিসের নীতি মালা করি না বা করলেও এ নিয়ে তেমন হৈ চৈ করি না।উকিল ডাক্তারদের ফিস নেওয়ার নীতিমালা করি না। পুলিশে ,ভ’মি অফিসে ,কোর্ট কাচারিতে কি হচ্ছে চোখ মেলে দেখুন।এ যেন শুধু শিক্ষকদের দেওয়ার মুরদ নাই , কিল দেওয়ার ঘোষাই। বেসরকারী শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন পাওয়ার অভিজ্ঞতা খুব কম। ৭ তারিখের মধ্যে বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও কয়েক মাস গেলে এ কথা আর কারো মনে থাকে না। পত্রিকায় প্রচার করা হয় বেতন প্রদানের খবর।আর কোন সেক্টরে তো এমনটি নেই। এ দেশের বেসরকারী স্কুর কলেজের শিক্ষকদের ঈদে পুজায বেতন বোনাস না পাওয়ার অভিজ্ঞতা বহুবার আছে। বেতন ছাড় হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে আসতে আসতে নির্দিষ্ট তারিখ পেরিয়ে আরও সপ্তাহ খানেক লেগে যায়।সবকিছু ডিজিটাল হচ্ছে কিন্তু বেসর কারী শিক্ষকরা এনালগ পদ্ধতিতে ’বেদরকারী’ই থেকে যাচ্ছেন। প্রতি বৎসর জুন মাসের বেতন পান এক দেড় মাস পর। কারন নাকি এটি নাকি বেসরকারী শিক্ষা খাতের ‍শক্ষি‍া বর্ষের প্রথম মাস। সে কারণেই দেরী হয়। দেশের আর কোন খাতের কর্মচারীরা বৈষম্যের শিকার কিনা জানা দরকার।এ বৎসর ও গত জুন মাসের বেতন বেসরকারী শিক্ষকরা এখনও পান নি । দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতির সময়ে এবং গত ১১ জুলাই পবিত্র রমজান মাস শুরু হলেও যথা সময়ে তারা জুন মাসের বেতন পান নি। বেসরকারী শিক্ষকদের দিন চলে কিভাবে ? সরকারের পদ মর্যদায় থেকে কেউ কি ভাবেন না ?এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক কিছু হতে পারে না।শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আলদা অর্থ বছর শুধু কি বেসরকারী শিক্ষকদের জন্য?সরকারী স্কুল কলেজের ঠিকই যথাসময়ে সব কিছু পেয়ে যান। বেসরকারী বলে তারা দিনের পর দিন এভাবে নিগৃহিত থাকতে পারেন না। দাবী আদায়ের জন্য শ্রমিকদের মত রাস্তায় নেমে তারা ভাংচুর, হরতাল, অবরোধ কিংবা ধংসাত্নক কোন কার্যকলাপে তারা লিপ্ত হতে পারেন না কারণ তাদের গায়ে শিক্ষক নামের যে চাদর জড়ানো আছে অর্থ বিত্ত না থাকলেও তার মান সম্মান অনেক বড়। এ জন্য শিক্ষকরা হয়তো তাদের ন্যায্য পাওনা হতে ক্রমাগত বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। বেতন পাওয়ার এ বিড়ম্বনার যেন শেষ নেই। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পর বোনাস দিচেছ শিক্ষকদের স্কেলের ২৫% আর কর্মচারীদের ৫০%। এ বকম শতকরায় ফেলে বোনাস দেওয়ার বিধি কোন দেশে আছে বলে আমাদের জানা নেই। এ ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় কর্মচারীরা অনেক শিক্ষকের চেয়ে বোনাস বেশী পান। স্কেলের এ হারে বোনাস কত হয় তা একটু ভেবে দেখেন । এ বেতন বোনাস এমন ভাবে ছাড় করা হয় উৎসবের দুই এক দিন আগে করে –এ গুলো পেতে পেতে উৎসবের আমেজটাই ম্লান হয়ে যায়।খরচের খাতগুলো তো আর বসে থাকে না। কয়েকদিনের মধ্যে পত্রপত্রিকায় আলোচনা হলে হয়তো শিক্ষকদের কথা মনে পড়বে। দাদনের মত বেসরকারী শিক্ষকদের চেক ও বিক্রি হওয়ার খবরাখবর আমরা পত্র পত্রিকায দেখি। বেসরকারী কলেজের শিক্ষকদের আট বছর পর টাইম স্কেল প্রাপ্তির বিষয়টি বিগত সরকারের আমলেই বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেক দেন দরবারের পর বর্তমান সরকার চালু করলেও আমলাতান্ত্রিক ঝটিলতায় পড়ে আবার তা বন্ধ করে দেয়া হয়। কথা ছিল বকেয়া সহ দেয়া হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি হাল নাগাদটা দিয়ে বর্তৃমান সরকারের আমলে যেখান থেকে দেওয়া শুরু হয়েছিলো সেখান থেকেও বকেয়া দেয়া হয় নি। এ দেশে এর কোন জবাব নেই। বলির পাঁঠা হলেন দেশের বেসরকারী শিক্ষকরা। অনেক জুনিয়র শিক্ষক এখন আমার সমান স্কেল ভ’ক্ত। কাগজে কলমে সিনিয়র হলেও নূন্যতম কিছু অতিরিক্ত সুযোগ সুবিধা পেয়েও সিনিয়র হওযার সুযোগ নেই।এই ক্ষোভ বড়ই যন্ত্রনাদায়ক।কোন কোন সময় দেখা যায় মাস দুয়েকের বেতন বকেয়া পড়ে গেছে। দুই তিন মাস পর দুই মাসের বেতন একসাথে দেয়ার ঘোষনা দেয়া হয়। এটি পত্রিকার খবর হয়, টিভির বিভিন্ন চ্যানেলে হেড লাইন হয়। কিন্তু দুই তিন মাস কি দু:সহ যন্ত্রনায় তাদের দিন কেটেছে তার খবর কেউ রাখে নি।আত্নীয়স্বজন ,পাড়া প্রতিবেশী, আশেপাশের লোকজন বলা বলি করে সরকার আপনাদের দুইমাসের একসাথে দিয়েছে। কিন্তু তার পিছনের কাহিনীটুকু কেউ জানে না।এদেশে বেসরকারী শিক্ষকরা জাতির ক্রান্তিকালে গুরুত্বত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন ঠিকই।জাতীয় পর্যায়ে যখন নির্বাচন হয় তখন তার দায়িত্ব পালনে তাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য।কিন্তু প্রাপ্তি ও সুযোগ সুবিধার দিক দিয়ে তার সাথে দায়িত্ব পালকারী অন্য কর্ম কর্তাদের অনেক ব্যবধান। বেসরকারি স্কুল কলেজের আয় ও কম নয়। দুনীর্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে তার সুবিধা থেকেও শিক্ষকরা বঞ্চিত। সব বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থাও এক নয়।সবগুলোকে একটি নীতিমালায় নিয়ে আসা উচিত।কতো সেক্টরে কতো পরিবর্তন হয়ে গেলো, কিন্তু বেসরকারী শিক্ষকদের এবং শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলিক কোন পরি বর্তন হয় নি। বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থাকে এ অবস্থায় দাঁড় করিয়ে রাখার পিছনে এক শ্রেনীর আমলাদের মনোভাব কাজ করে বলে অভিযোগ আছে। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কুম্ভকণ‍র্রে ঘুম কারো জন্য সূদুরপ্রসারী ফল বয়ে আনবে না।বর্তমান সরকাররের আমলেই বেসরকারী শিক্ষকদের কোন মৌলিক পরিবর্তন না হওয়াটা হচ্ছে সবচেয়ে দু:জনক। নিয়োগ প্রক্রিয়া সহ নানা ধরণের জটিলতা গুলো নিরসন করে এ শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা সম্মান জনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া দরকার।মনে হয় ইচ্ছে করে এ কাজটি করা হচ্ছে না।এ অবস্থা দেখে বৃটিশদের সেই নীতি ‘বিভক্ত কর এবং শাসন কর’ নীতিটির কথা মনে পড়ে যায়। শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয় করনের মাধ্যমেই এ সমস্যা নিরসন সম্ভব।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.