নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মামুন আবদুল্লাহ

‘’Love killed my soul, My body seeks revenge’’

বাটাগোর বাস্কা

প্রতিদিনই অদ্ভুত এক ইচ্ছা জাগে আমার,ইস!আমি যদি কচ্ছপ হতে পারতাম। কি চমৎকারভাবে মাথাটা দেহের ভিতরে গুটিয়ে নিয়ে পথ চলতে পারতাম,শরীরে শক্ত একটা খোলস থাকতো, অপমান বোধটা গায়ে লাগতো না আর।কিন্তু নিয়তির ছকে আমি বাধা, আমি কখনো কচ্ছপ হয়ে উঠিনা।https://www.facebook.com/mamunabdullah.press

বাটাগোর বাস্কা › বিস্তারিত পোস্টঃ

'টিউশনি', একটি স্বপ্নের করুণ মৃত্যু…./:)/:)

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৭

অনেক স্বপ্ন ছিল অষ্টাদশী সোনিয়ার, স্বপ্নগুলো বাস্তবে রুপ নেওয়ার আগেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল । পদ্মার পাড়ের ছোট্ট গ্রামে শিশু থেকে কৈশোর এমনকি যৌবনের কিছু দিন কেটেছে মেয়েটির, সবুজ ঘাস আর চরের বালুতে।ছোটবেলায় পদ্মার ঘোলা পানিতে কত সাঁতার কেটেছে সে।মাঝে মাঝে গভীর রাতে টিনের ঘরে কুপির আলোতে শুয়ে ভাবনার জালে হারিয়ে যেত মেয়েটি।



প্রায়ই তার ইচ্ছে করতো কোন এক ভোরে ফড়িং অথবা প্রজাপতি হয়ে বারান্দার গ্রিলগুলোকে ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে পড়তে। পায়ের নীচে শক্ত মাটি নেই ,তাতে কি?? না চাইতেই আসবে এক টুকরো মেঘের নৌকা , ভাসিয়ে নিয়ে যাবে পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে, সমুদ্র থেকে মরুভূমিতে, পাহাড় থেকে অরণ্যে। আর কত কি!! অপেক্ষার দিনগুনে সময় কেটে যেত তার।



স্বপ্ন পুরণে কলেজের চৌহদ্দী পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখে মেয়েটি। নতুন পরিবেশ, নতুন স্বপ্ন। সহস্র মেধাবীদের মধ্যে নিজেকে একজন ভাবতে তার ভাল লাগে। কত আশা তার.., বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে চাকুরী, বাবা মায়ের মুখে একটু হাসি। বাবা মায়েরও গর্বের শেষ নেই, মেয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠের ছাত্রী, পাড়ার সব মানুষের মুখে মুখে তার নাম। এলাকার মানুষগুলোও যেন তাকে নিয়ে গর্ববোধ করে। কেননা, মেয়েটি তাদের গ্রামের মুখ উজ্জল করবে।



কিন্তু দরিদ্র পরিবারের মেয়ে সোনিয়ার পক্ষে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা, খাওয়া-,আসা-যাওয়ার খরচ চালানো সম্ভব নয়। বিভাগের বড় আপার সহায়তায় হল নেত্রীর বদৌলতে একটি রুমে জায়গা জুটে যায়। ব্যস্ত আর স্বার্থপর এই শহরে তার মাথা গোজার ঠাঁই হয়ে গেল।কিন্তু খাওয়া-পড়ার খরচের জন্য তো অর্থের দরকার। পরিবারের পক্ষে এ টাকা দেয়া সম্ভব নয়, তাই টিউশনিই একমাত্র ভরসা মেয়েটির..



একদিন বড় আপার সহায়তায় হলের উদীয়মান নেত্রীর কাছ থেকে এলো টিউশনির প্রতিশ্রুতি। সোনিয়া খুশিতে আত্মহারা, এবার বুজি পরিবার থেকে আর খরচ আনতে হবে না, ভালভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যাবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের হলকে তার অতটা খারাপ লাগে নি, যতটা না সে কৈশোরে লোকমুখে শুনেছে।ঢাকা শহরকে তার ততটা কঠিন, নির্মম আর নিসঙ্গ মনে হয়নি, যতটা তার কাছে দৃশ্যমান মনে হয়েছিল।



তারপর......



একদিন নেত্রী জানাল, রাতে তার টিউশনি ফাইনাল হয়ে যাবে।সন্ধ্যায় গাড়ি এসে তাকে নিয়ে যাবে , মাসে অনেক টাকা। একা যেতে মেয়েটির মন চাচ্ছে না। তবুও নেত্রীর প্রতি অগাধ বিশ্বাসে গাড়িতে উঠে রওনা দিল অজানা গন্তব্যে। কিন্তু বিধি বাম!!! যেখানে যাওয়ার কথা সেখানে না গিয়ে গাড়ি থামল ব্যস্ত শহরের অদূরে কোন এক নির্জন বহুতল ভবনের কাছে, তারপর এক নি:শব্দ,জনশূণ্য ফ্লাটে। কয়েক ঘণ্টা ধরে চলে পাশবিক নির্যাতন। এরপর হাতে ধরিয়ে দেয়া হলো পাঁচ হাজার টাকা।একটি নরপিশাচ পাঁচ হাজার টাকায় কিনতে চাইলো তার বহু বছর ধরে লালিত স্বপ্ন ।কত সস্তা একটি স্বপ্নের মূল্য....?? হিংস্র বাঘের থাবায় বিদির্ণ, জর্জরিত মেয়েটির শরীর যেন ক্রমশ নিস্তেজ হয়ে আসছে।অতপর তাকে নামিয়ে দেয়া হলো হলের অদূরে।



এরপর...........................



ক্রমশই মেয়েটির স্বপ্নগুলো দু:স্বপ্নে হয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যেতে লাগল। মানসিক, শারীরিক ক্ষত মুছতে শিক্ষাজীবন থেকে ঝরে গেল একটি বছর। একটি টিউশনি কেড়ে নিল তার সব স্বপ্নকে,করুণ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল তার উজ্জল ভবিষ্যতকে ....



একদিন খুব ভোরবেলায় ঘুম ভেঙ্গে গেল মেয়েটির। জানালার পর্দা, ভোরের বাতাসে নৌকার পাল হয়ে যেন উড়ছে।চেনা শহরের সীমানা ছাড়িয়ে অনেক দূরের আকাশে উড়তে লাগলো সে।বুভুক্ষের মত দেখতে লাগলো ভোরের এই অপার্থিব রূপ, তারপর একটি দীর্ঘশ্বাস...।



জীবনে বেচে থাকতে হয় হয়ত স্বপ্নকে ঘিরে।কিন্তু স্বপ্নগুলো কখনও কখনও বড় স্বার্থপর হয়ে যায়, বুঝতে চায় না স্বপ্নদ্রষ্টাকে।তবুও স্বপ্নরা কখনো মরে না, ক্লান্ত হলে একটু ঘুমিয়ে পড়ে….

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪৯

খাটাস বলেছেন: আফসোস করব না। আফসোস করলে তা এক সময় শেষ হয়ে যাবে। নিজে কাদায় পড়লে অন্যকে কাদা মাখানোর চর্চা টা খুব বেশি বাস্তব নির্মমতা।
" নিজের মানসিকতার ছোট পরিবর্তন, সারা দেশের উন্নয়ন।"
ভাল থাকবেন।

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৭

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: " নিজের মানসিকতার ছোট পরিবর্তন, সারা দেশের উন্নয়ন।" আপ্নিও ভাল থাকবেন....

২| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৬

সপ্নাতুর আহসান বলেছেন: :(

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৪৭

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: :( :( :( :( :( :( :( :(

৩| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:৫১

তৌফিক মাসুদ বলেছেন: এমন ঘটনা গুলো যাতে বাস্তবে আর না ঘটে সেই কামনাই রইল।

লেখককে ধন্যবাদ।

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:০৯

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ,,মাসুদ ভাই,, দৃশ্যের বাইরে আমাদের চারপাশে এরকম অনেক ঘটনাই ঘটছে, যা লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে যায়...।হাজারো ঘটনার দুই একটি কখনো কখনো পত্রিকা কিংবা টেলিভিশেনর পর্দায় স্থান পায়,,,,ছোটবেলায় পড়েছিলাম, ''কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভু আশে বিষে ধ্বংসে নি যারে.''.

৪| ১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:২২

দুরন্ত-পথিক বলেছেন: নির্মম শহর, নির্মম মানুষ গুলো। তাই এইরকম হয়,অনেক তাদের নির্মমতা বুঝতে পারেনা।

১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:১১

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: ঠিকই বলেছেন ভাই..।পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন...

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২৭

স্বপ্নহীন নায়ক বলেছেন: ''স্বপ্নরা কখনো মরে না, ক্লান্ত হলে একটু ঘুমিয়ে পড়ে''।

১৮ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৩

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ...। ভালো থাকবেন । /:) /:) /:)

৬| ১৮ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৮

আরজু পনি বলেছেন:

বাস্তবে এমন ঘটনা আমার সামনে ঘটতে দেখলে বলতাম, মেয়ে তুমি আরো সাবধান হও, আরো কৌশলী হও :(

১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৪

বাটাগোর বাস্কা বলেছেন: আরজুপনি আপা,,অনেক কিছু ঘটতে দেখি, অনেক অজানা তথ্য হাতে আসে,অনেক না বলা গল্প শুনি...। একটু দীর্ঘশ্বাস আর উপদেশ দেয়া ছাড়া আর কি করার আছে..???? সমাজটা আসলে বন্দী, আর এ বন্দিদশা বহুমুখী।বহুদিনের শৃঙ্খল যেমন পায়ে চলার শক্তিকে কেড়ে নেয় তেমনি শৃঙ্খল খুলে দিলেও শৃঙ্খলমুক্ত লোকটি হাঁটতে পারে না।সমাজটা এ পর্যায় এসে দাড়িয়েছ.....


মেয়ে তুমি আরো সাবধান হও, আরো কৌশলী হও

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.