![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফেসবুক থেকে শুরু করে পত্র-পত্রিকাগুলোতে এখন সর্বাধিক আলোচিত একটি বিষয় সিরিয়ান পরিবারের শিশু আয়লান। গৃহযুদ্ধকবলিত সিরিয়া থেকে পরিবারটি আশ্রয় নিয়েছিল তুরস্কে। বুধবার তুরস্ক থেকে নৌকায় চেপে গ্রিস যাওয়ার চেষ্টা করার সময় দুর্ঘটনার শিকার হয় তারা। নৌকা ডুবে সাগরের ঢেউয়ে তলিয়ে যায় পরিবারের দুই ছেলে—তিন বছর বয়সী আয়লান আর পাঁচ বছর বয়সী গালিব। ভূমধ্যসাগর কেড়ে নিয়েছে ওদের মা রেহানাকেও।
তুরস্কের সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা আয়লানের ছোট নিথর দেহের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বড় ধরনের ঝাঁকুনি খায় অভিবাসী-সংকট নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ইউরোপ। ঘুম ভাঙেছে নাকি বিশ্ববাসীরও। আবার মিশরীয় এক ধনকুবের নাকি ইতালী-গ্রীস থেকে দ্বীপ কিনে অভিবাসীদের আশ্রয় দিতে চান। মিডিয়া বলছে সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া আয়লানের ছবিটি খানিকটা পাল্টে দিয়েছে জনমত। কিন্তু লাভ কি!! প্রতিবারই তো কোন বড় দূর্ঘটনা ঘটার পর এমন হয়। জাতি জাগে আবার কয়দিন পর ঘুময়ে যায়।
সাম্প্রতিক শরণার্থী সমস্যা নিয়ে ইউরোপের যে নেতারা এত দিন নির্লিপ্ত ছিলেন, তাঁরাও নাকি মানবিক উদ্যোগের পথে এগোনোর কথা বলছেন। অন্তত দুই লাখ অভিবাসীকে গ্রহণ করতে ইউরোপকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ।
এদিকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকটে রয়েছে ইউরোপ। এশিয়া , আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলো থেকে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসা লক্ষ লক্ষ মানুষ স্থলসীমান্ত এবং ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পা রাখার চেষ্টা করছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে গণহারে প্রাণ হারাচ্ছেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা।
অভিবাসীর সংখ্যার দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে সিরিয়ার শরণার্থীরা, এরপর আফগানিস্তানের যুদ্ধবিধ্বস্ত নাগরিকরা এবং তৃতীয় অবস্থানে প্রাণঘাতী সংঘর্ষে লিপ্ত ইরিত্রীয়ার অতিদরিদ্র নাগরিকরা, আর মায়ানমারের নিপীড়ন রহিঙ্গাদের কথা তো বাদই দিলাম। অতি দরিদ্র দেশ হওয়ায়, নিপীড়ন ও দারিদ্র্যের হাত থেকে বাঁচতে চেয়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছে দেশগুলোর দরিদ্ররা। চার বছরের গৃহযুদ্ধের কারণে ৪০ লাখেরও বেশি সিরীয় নাগরিক দেশ ছাড়া, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে তীব্র অভিবাসন সংকট সৃষ্টি করেছে। নাইজেরিয়া, কসোভো ও পাকিস্তান থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ ইউরোপে যাচ্ছে।
একই সাথে গ্রিস, ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেনসহ ইউরোপসহ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর পার্শ্ববর্তী দেশগুলোও নিপীড়িত ওই মানুষকে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। এশিয়া, আফ্রিকা ও আরব উপসাগরীয় এলাকার বিভিন্ন দেশ থেকে মূলত যুদ্ধ, হত্যাযজ্ঞ এবং দারিদ্র্য থেকে মুক্তির লক্ষ্যে দেশ থেকে পালানো ওই অভিবাসী ও উদ্বাস্তুরা প্রাণ দিচ্ছে সাগরেই। আর জাতিসংঘ নামধারী সংগঠনটি শুধু আহ্বান জানাতেই ব্যস্ত। তবে যে যাই বলুক না কেন বিধ্বস্ত দেশগুলোতে শান্তি ফিরিয়ে আনা না গেলে অভিবাসী সমস্যা দূর করার কথা বলা আর গাছের গোড়ায় পানি না দিয়ে বাইরে থেকে হাত বোলানো একই কথা।
©somewhere in net ltd.