নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগামীকাল পবিত্র " শবেবরাত বা সৌভাগ্যের রজনী "। মহিমান্বিত এ রজনীতে মুসলমানদের করণীয় ও সতর্কতা।(ঈমান ও আমল - ৬)।

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০৮


ছবি - dailyjurain.com

আগামীকাল সোমবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে দিনটি পালিত হবে। হিজরি বর্ষের শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটিকে মুসলমানরা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পালন করে থাকেন। মহান আল্লাহ তাআলা আখেরি নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতদের ইবাদতের জন্য বিশেষ কিছু সুবিধা প্রদান করেছেন। এর মধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।যে সব রাতের ইবাদতে অশেষ সওয়াব লাভ করা যায়। ইবাদতের এই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো ১। জুমার রাত ২। ঈদুল ফিতরের রাত ৩।ঈদুল আযহার রাত ৪। শবে বরাত বা মুক্তির রাত তথা নিসফ শাবান বা শাবান মাসের মধ্য রাত ৫। শবে কদর বা কদরের রাত অর্থাৎ মর্যাদাপূর্ণ রজনী।

মূলত "শব" শব্দের অর্থ রাত এবং "বারাত" অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে "শবে বরাত"অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী।‘শব’ একটি ফারসী শব্দ এর অর্থ রাত। 'বারায়াত' কে যদি আরবী শব্দ ধরা হয় তাহলে এর অর্থ হচ্ছে সম্পর্কচ্ছেদ, পরোক্ষ অর্থে মুক্তি। যেমন কুরআন মাজীদে সূরা বারায়াত রয়েছে যা সূরা তাওবা নামেও পরিচিত। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,"সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।"। (সূরা তাওবা,আয়াত - ১)।


ছবি - alamy.com

আবার ‘বারায়াত’ শব্দকে যদি ফারসী শব্দ ধরা হয় তাহলে উহার অর্থ হবে সৌভাগ্য। অতএব শবে বরাত শব্দটার অর্থ দাড়ায় মুক্তির রজনী, সম্পর্ক ছিন্ন করার রজনী। মূলত ‘শব’ শব্দের অর্থ রাত এবং ‘বারাত’ অর্থ সৌভাগ্য। এ দুটি শব্দ নিয়ে ‘শবে বরাত’, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রজনী।এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক তিনি কুরআন শরীফ এ ইরশাদ করেন,"শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। নিশ্চয়ই আমি বরকতময় রজনীতে কুরআন নাযিল করেছি। নিশ্চয়ই আমিই সতর্ককারী। আমারই নির্দেশক্রমে উক্ত রাত্রিতে প্রতিটি প্রজ্ঞাময় বিষয়গুলো ফায়সালা হয়। আর নিশ্চয়ই আমিই রাসুল প্রেরণকারী"।(সূরা দু'খান, আয়াত - ২-৫)।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে(ইবনে মাজাহ)। ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নামাজ। মহান আল্লাহপাক বান্দাদের জন্য তাঁর অশেষ রহমতের দরজা খুলে দেন এ রাতে।হিজরি বর্ষপঞ্জির শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতটি বিশ্ব মুসলিম সমপ্রদায়ের কাছে অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত। মহিমান্বিত এ রজনীতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বিগত জীবনের সব ভুল-ভ্রান্তি, পাপ-তাপের জন্য গভীর অনুশোচনায় মহান আল্লাহর দরবারে সকাতরে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুণাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন।


ছবি - asaduzzamanshobuj.wordpress.com

নফল ইবাদতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো নফল নামাজ।এই রাতে মুসলমানরা নফল নামাজ, জিকির-আজকার, কোরআন মজিদ তিলাওয়াতের মধ্যদিয়ে বিনিদ্র রাত কাটিয়ে বিনম্র প্রার্থনা করেন ভবিষ্যৎ জীবনে পাপ-পঙ্কিলতা পরিহার করে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য। একইসঙ্গে মরহুম আত্মীয়-স্বজনসহ চিরবিদায় নেয়া মুসলিম নর-নারীর কবর জিয়ারত করে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন। এ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মসজিদগুলোতেও সন্ধ্যার পর থেকেই মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাতের আয়োজন করা হয়। অনেকে গভীর রাত পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থেকে শেষ রাতে সেহরি খেয়ে পরদিন নফল রোজা রাখেন। শাবান মাসের পরেই আসে পবিত্র মাহে রমজান। তাই শবে বরাত মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে।

শবে বরাতের নামাজ -

প্রকৃত অর্থে শবে বরাতের আলাদা নামাজ বলে কিছু নেই, যেহেতু এই রাতটি ইবাদত বন্দেগি করে কাটাতে হবে তাই হাদিসেই এই সমাধান দেয়া হয়েছে। আর বিশ্ব মুসলিম এই রাতে বিশেষ কিছু ইবাদত পালন করে থাকেন।

শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম -

১। এ রাতে প্রথমেই পড়া যায় দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামায - দুই রাকাত তাহিয়াতুল অযুর নামাজের নিয়ম - প্রতি রাকাতে আলহামদুলিল্লাহ ( সূরা ফাতিহা) পড়ার পর , ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং তিন বার ক্বুলহু আল্লাহ শরীফ ( সূরা এখলাছ) মিলিয়ে পড়া যায়।

২। দুই রাকাত,দুই রাকাত করে নফল নামায শবে বরাতের নামাজ দু‘রাকাত করে যত বেশী পড়া যায় তত বেশী ছওয়াব। নামাজের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর সূরা ইখলাছ, সূরা ক্বদর, আয়াতুল কুরছী বা সূরা তাকাছুর ইত্যাদি মিলিয়ে পড়া অধিক ছওয়াবের কাজ। এই ভাবে কমপক্ষে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। এর বেশি যত রাকাত আদায় করা যায় ততই উত্তম।প্রতি ৪ রাকাত পর পর কিছু তাসবিহ-তাহলীল আদায় করে মহান আল্লাহর নিকট দোয়া কামনা করা অতি উত্তম। এই ভাবে সারা রাত নামাজ আদায় করা যেতে পারে।

এছাড়া এভাবে ও করা যায়, প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা পড়ার পর, ১ বার আয়াতুল কুরসী এবং ১৫ বার করে সূরা এখলাছ শরীফ, অতঃপর সালাম ফিরানোর পর ১২ বার দুরূদ শরীফ। ফযীলতঃ রুজিতে রবকত, দুঃখ-কষ্ট হতে মুক্তি লাভ করবে, গুনাহ হতে মাগফিরাতের বখসিস পাওয়া যাবে।

তাছাড়া এ রাতের নিয়মিত নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে - বাদ মাগরিব ছয় থেকে বিশ রাকাত আউওয়াবিন নামাজ।

৩।আওয়াবীন নামাজ - মাগরিব ও এশার নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায়কৃত ছয় রাকাত নামাজ ‘আউয়াবিন’ নামে পরিচিত। আল্লামা মাওয়ার্দি এই মতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মুগনির মুহতাজ - ১/৩৪৩)। তবে কেউ কেউ ‘দুহা’ নামাজকেই আউয়াবিনের নামাজ বলেছেন। নাম নিয়ে মতভিন্নতা থাকলেও এই সময় নামাজ আদায়ের গুরুত্ব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, "যে ব্যক্তি মাগরিবের পর ছয় রাকাত নামাজ আদায় করবে এবং এগুলোর মধ্যে কোনো মন্দ কথা না বলে, তার আমলনামায় বারো বছর ইবাদতের সওয়াব লেখা হবে"। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস - ১১৬৭) ।

হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, "যে ব্যক্তি মাগরিবের পর বিশ রাকাত নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন"। (তিরমিজি, মিশকাত, ফয়জুল কালাম, হাদিস - ৪৪৯-৪৫০)।

তাছাড়া, এ রাতের শ্রেষ্ঠতম ইবাদত হলো তাহাজ্জুদ নামাজ।এ প্রসংগে মহান আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন, "এবং ভোর রাত্রির কিছু অংশ কুরআন তিলাওয়াত আর নামায কায়েম করার মধ্য দিয়ে জাগ্রত থাকো। এটা তোমার জন্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব। অচিরেই তোমার রব তোমাকে ‘প্রশংসিত স্থানে’ প্রতিষ্ঠিত করবেন"।( সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত - ৭৯)।


ছবি-tazakhobor24.com

৪। তাহাজ্জুদ নামাজ - ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নামাজ হলো তাহাজ্জুদ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ আদায়ের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে।সালাতুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এশার নামাজ আদায়ের পর থেকে সুবেহ সাদিকের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। তবে অর্ধ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম।শেষ রাতের এ নামাজ অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। যাকে তাহাজ্জুদের নামাজ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এ নামাজ সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৮ রাকাআত তাহাজ্জুদ পড়তেন।প্রিয় নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই দুই রাকাত করে এ নামাজ আদায় করতেন। যেকোনো সূরা দিয়েই এ নামাজ পড়া যায়। তবে তিনি লম্বা কেরাতে নামাজ আদায় করতেন। তাই লম্বা কেরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করা উত্তম।তাই প্রতি বার ২ রাকাত ২ রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়াই ভালো।সম্ভব হলে ১২ রাকাআত তাহাজ্জুদ নামাজও আদায় করা যায়। তবে ৮ রাকাআত আদায় করা উত্তম।

এ ছাড়া এ রাতে সালাতুস তাসবিহ এবং অন্যান্য নফল নামাজ ও আদায় করা যায়।

৫।সালাতুত তাজবীহ - সালাতুত তাসবীহ "তাসবীহের নামাজ" নামেও পরিচিত। নবী মোহাম্মদ (সা.) তার অনুসারীদেরকে এ নামাজ পালনে উৎসাহিত করছেন। জীবনে একবার হলেও মুসলমানরা যেনো এ নামাজ পড়ে সে বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন।সালাতুত তাসবীহ চার রাকাত। প্রতি রাকাতে "সুবাহানাল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার" তাসবীহগুলো ৭৫ বার পড়তে হয়। চার রাকাতে মোট ৩০০ বার পড়তে হয়।


ছবি - pixelstalk.net

শবে বরাতের নামাজের নিয়ত - আরবীতে

"নাওয়াইতুআন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা‘আলা রাক‘আতাই ছালাতি লাইলাতিল বারাতিন নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা‘বাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার"।

বাংলায় নিয়ত "আমি ক্বেবলামূখী হয়ে আল্লাহ এর উদ্দেশ্যে শবে বরাতের দু'রাকআত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবার"।

শবেবরাতের পরদিন রোযা রাখা -

হযরত আলী রাঃ) থেকে বর্ণিত, "রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,পনেরো শাবান (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে, তখন তোমরা রাতটি ইবাদত বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখ। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোন রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদেরকে ডাকতে থাকেন"। ( সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস-১৩৮৪)।তাছাড়া শাবান মাসে বেশী বেশী নফল রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীজ তথা প্রতি চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

হযরত আয়েশা সিদ্দীক ( রাঃ ) বর্ণনা করেন -

মহানবী (সাঃ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, "হে আয়েশা! তুমি কি জান? আজ রাত ( নিসাফে শাবান ) কী? হযরত আয়েশা ( রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা ) বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি তো জানি না, দয়া করে বলুন। মহানবী ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন, আজ রাতে আগামী বছরে যে সমস্ত বনী আদম জমীনের বুকে জন্মগ্রহণ করবে এবং আরা মৃত্যুবরণ করবে, তাদের তালিকা লিপিবদ্ধ করা হয়। বিশেষ করে বান্দাদের আমলনামা মহান আল্লাহর নিকট প্রকাশ করা হয়"। (বাইহাক্বী, ইবনে মাজাহ্, মিশকাত শরীফ)

হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত -

অপর একটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, "আমি এক রাতে মহানবী (সাঃ) কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আঃ ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ লাইলাতুল বারাত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও"। (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)।উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়।

হযরত আশরাফ আলী থানভী (রঃ) এর মত -

তিনি বলেন হাদীসে শবে বরাতের তিনটি কাজ সুন্নত মত করাকে সওয়াব ও বরকত লাভের উপায় বলা হয়েছে। প্রথমতঃ পনেরো তারিখ রাতে কবরস্থানে গিয়ে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার করা। সাথে সাথে গরীব মিসকীনদের কিছু দান করে সে দানের সওয়াবটুকু ঐ মৃতদের নামে বখশে দিলে আরও ভাল হয়। সেই মুহূর্তে হাতে না থাকলে, অন্য সময় গোপনে কিছু দান করে দেওয়া উচিত। দ্বিতীয়তঃ রাত জেগে একা একা বা বিনা আমন্ত্রণে জড়ো হয়ে যাওয়া দু চারজনের সাথে ইবাদতে মশগুল থাকা। তৃতীয়তঃ শাবানের পনেরো তারিখ নফল রোযা রাখা।

কোন কোন মানুষকে মহান আল্লাহপাক শবেবরাত এর রাতেও ক্ষমা করবেন না - এ রাতে মহান আল্লাহপাক প্রায় সব মানুষকে ক্ষমা করলেও আল্লাহর সঙ্গে শিরককারী, সুদখোর, গণক, যাদুকর, কৃপণ, শরাবী, যিনাকারী এবং পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারীকে আল্লাহ মাফ করবেন না। এসকল মানুষ আল্লাহর এই ব্যাপক রহমত, মাগফিরাত ও সাধারণ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত থাকবেন।

শবে বরাত ও হালুয়া-রুটি - শবে বরাতের সঙ্গে হালুয়া-রুটির একটি প্রচলন পরিলক্ষিত হয়। হালুয়া আরবি শব্দ, অর্থ হলো মিষ্টি বা মিষ্টান্ন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মিষ্টি পছন্দ করতেন, এ কথা সুবিদিত । তিনি গোশত পছন্দ করতেন, তা-ও অবিদিত নয়। যা-ই হোক শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত, দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো একপ্রকার ইবাদত ।তবে এই দিন ও রাতকে হালুয়া-রুটিতে পরিণত করে ইবাদত থেকে গাফেল হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তেমনি হালুয়া-রুটির ওপর ফতোয়া প্রদানও প্রজ্ঞাপ্রসূত নয়।


ছবি - daily-sun.com

শবে বরাতে করণীয়ও বর্জনীয় -

যা যা করা উচিত -

(ক) নফল নামাজ,যেমন - (১)তাহিয়্যাতুল অজু (২)দুখুলিল মাসজিদ (৩) আউওয়াবিন নামাজ (৪) তাহাজ্জুদ নামাজ (৫) ছলাতুত তাসবিহ (৬)তাওবার নামাজ (৭)ছলাতুল হাজাত (৮)ছলাতুশ শোকর ও অন্যান্য নফল নামাজ পড়া।

(খ) নামাজে কিরাআত ও রুকু-সেজদা দীর্ঘ করা।
(গ) পরের দিন নফল রোজা রাখা ।
(ঘ) কোরআন শরিফ সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা।
(ঙ) দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া।
(চ) তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা ।
(ছ) দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা ।
(জ) কবর জিয়ারত করা ।
(ঝ) নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।

যা যা করা উচিত নয় বা বর্জনীয় -

(১) আতশবাজি, পটকা ফোটানো ।
(২) ইবাদত-বন্দেগি বাদ দিয়ে বেহুদা ঘোরাফেরা করা ।
(৩) অনাকাঙ্ক্ষিত আনন্দ-উল্লাস করা ।
(৪) অযথা কথাবার্তা ও বেপরোয়া আচরণ করা ।
(৫) অন্য কারও ইবাদতের বা ঘুমের বিঘ্ন ঘটানো ।
(৭) হালুয়া-রুটি বা খাওয়া-দাওয়ার পেছনে বেশি সময় নষ্ট করে ইবাদত থেকে গাফিল থাকা।

সতর্কতা:

মনে রাখতে হবে ফরজ নফলের চেয়ে অনেক বড়। শবে বরাতের নামাজ যেহেতু নফল সেহেতু নফল পড়তে পড়তে ফরজ পড়া ভুলে গেলে বা ঘুমের কারণে পড়তে না পারলে কিন্তু সবই শেষ। অর্থাৎ নফল নামাজ পড়ে পড়ে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আর এই দিকে ফজরের নামাজ পড়তে পারলেন না।এ যেন না হয় এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

মহিমান্বিত এই রাতে আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার করবো। যাতে করে আল্লাহ তায়ালা আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং বেশি বেশি নফল ইবাদতে মশগুল থাকবো। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন ।


তথ্যসূত্র - আল কোরআন,হাদীস ।

=================================================================
পূর্ববর্তী পোস্ট -


ঈমান ও আমল - ৫ Click This Link
(" নামাজ " ইসলামের দ্বিতীয় ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ । যা মুসলিম-অমুসলিমের মাঝে পার্থক্যকারী সূচক হিসাবে বিবেচিত এবং মুসলমান মাত্রই দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে)।
ঈমান ও আমল - ৪ Click This Link
("ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ" - যার শুরুটা কালেমা বা ঈমানে। যা শুধু মুখে বলা নয়, অন্তরে বিশ্বাস ও কর্মে পরিণত করার বিষয়)।
ঈমান ও আমল - ৩ Click This Link
(তাহাজ্জুদ নামাজের ফজিলত ও গুরুত্ব )।
ঈমান ও আমল - ২ Click This Link
("শুক্রবার - পবিত্র জুমা"- মুসলমানদের জন্য এক মর্যাদা ও ফজিলত পূর্ণ দিন এবং জুমার দিনের কতিপয় আমল )।
ঈমান ও আমল - ১ Click This Link
(যেসব আমলে মানুষের অভাব দূর হয় ও জীবন সুখের )।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:২২

মৃন্ময়ী শবনম বলেছেন: আল্লাহপাক আমাদের সকলকে ইবাদত করার তৌফিক দান করুণ ।

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন মৃন্ময়ী শবনম,আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য।

মহান আল্লাহপাক আমদের সকলকে এ পবিত্র রাতে বেশী বেশী ইবাদত করার তওফিক দান করুন এবং আমাদের সকলের প্রতি রহমত ,বরকত ও মাগফেরাত নসিব করুন।

২| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৩৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: শবে বারাত আরবী নয় কিন্তু তাহলে আরবীতে কী বলে । আর আরব দেশে এটা কেনো ঘটা করে কেনো পালন হয় না

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নেওয়াজ আলি ভাই ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

আরবি শব্দ লাইলা অর্থ রাত। ফার্সি শব্দ শব অর্থও রাত। আর বরাত অর্থ মুক্তি বা নিষ্কৃতি। শাবান মাসের ১৪ তারিখের এ রাতকে মুক্তির রাত বা নাজাতের রাত হিসেবে অবহিত করা হয়।অর্থ্যাৎ শবে বরাত মুসলামানদের কাছে লাইলাতুল বারাত বা সৌভাগ্যের রজনী হিসেবে পরিচিত।

আমি যতটুকু দেখেছি বা জানি ,আরবীয়রা মসজিদে শুধু ফরয নামাজ আদায় করে ।আর সুন্নাত ও নফল নামাজ তারা ঘরে পড়াকেই প্রাধান্য দেয়।আর ধর্মের নির্দেশ ও অনেকটা সেরকম।

ইবাদত লোক দেখানো বা ঘটা করে পালন করার বিষয় নয় । তা করতে হয় শুধু আল্লাহর জন্য এবং গোপনে তথা নীরবে।নফল ইবাদতের ক্ষেত্রে তা আরো বেশী প্রযোজ্য।

নফল নামাজ আল্লাহর ভালোবাসা আকৃষ্ট করার মাধ্যম। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ তাআলা বলেন,"আমার বান্দা নফলের মাধ্যমে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে এ পর্যন্ত যে আমি তাকে মহব্বত করে ফেলি। আর আমি যখন তাকে মহব্বত করে ফেলি আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে, আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে, আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। যদি সে আমার কাছে কোনো প্রার্থনা করে আমি তার প্রার্থনা কবুল করি। যদি সে আমার আশ্রয় প্রার্থনা করে তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই"( বুখারী শরীফ)।

আর বেশী বেশী নফল নামাজ ফরজ নামাজের ত্রুটি বিচ্যুতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে কাজ করে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"কিয়ামতের দিন প্রথম যে আমলের হিসাব নেয়া হবে তা হলো নামাজ। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের লক্ষ্য করে বলবেন-যদিও তিনি এ বিষয়ে সমধিক জ্ঞানী-, তোমরা আমার বান্দার নামাজ দেখ, সে কি পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছে, না অপূর্ণাঙ্গরূপে? যদি তা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে তা পূর্ণাঙ্গরূপেই লিখা হবে। আর যদি অপূর্ণাঙ্গরূপে আদায় হয়ে থাকে তবে আল্লাহ তাআলা বলবেন- দেখ, আমার বান্দার কোনো নফল নামাজ আছে কি না? নফল নামাজ থেকে থাকলে আল্লাহ তাআলা বলবেন,আমার বান্দার ফরয নামাজ নফল নামাজ দিয়ে পূর্ণাঙ্গ করে দাও। এরপর অন্যান্য আমলের হিসাব নেয়া হবে"(আবু দাউদ শরীফ)

নফল নামাজ ঘরে পড়া উত্তম

নফল নামাজ ঘরে পড়া মসজিদে পড়ার চেয়ে উত্তম। তবে ওই নফলের কথা আলাদা যা জামাতের সাথে আদায়ের নির্দেশ এসেছে, যেমন তারাবীর নামাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"নিশ্চয় ঘরে আদায় করা নামাজ উত্তম নামাজ, তবে ফরয ব্যতীত "( বুখারী শরীফ)।

৩| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: শবে বরাত আর এক দুই দিন পরে হলে ভালো হতো।

২৮ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই ,আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনি আমি যদি সেই পবিত্র রাত পর্যন্ত জীবিত থাকি এবং পবিত্র রাতে বেশী বেশী ইবাদত করতে পারি সেটাই আল্লাহ রহমত হবে আমার আপনার আমাদের সবার প্রতি। এক-দুই দিন আগে পরের বিষয় নয়।আল্লাহ আমাদের তওফিক দান পবিত্র রাতে বেশী বেশী ইবাদত করার এবং আমাদের সকলের প্রতি রহমত ,বরকত ও মাগফেরাত নসিব করুন।

৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৩:০৭

সোহানাজোহা বলেছেন: ব্লগার নতুন নকিবের পোস্টে #রাজীব নুর বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম। অনেক কিছু শিখলাম। আর উক্ত পোস্টে #রাজীব নুর বলেছেন: শবে বরাত আর এক দুই দিন পরে হলে ভালো হতো। রাজীব নুর আপনি নিশ্চয় বড় ধরনের ট্রমায় আছেন নয়তো ধর্মীয় পোস্টে এভাবে মন্তব্য করতেন না।

কি কারণে আর দুদিন পরে শবে বরাত হতে হবে? বিস্তারিত লিখে ব্লগে একটি পোস্ট দিয়ে আপনার পোস্ট সংখ্যা বাড়ান! অথবা শবে বরাত নিয়ে ব্লগাররা যা ভাবছেন - সবার মন্তব্য নিয়ে একটি পোস্ট! অথবা সুরভী শবে বরাতে ৪ কেজি গরুর মাংস আর ৪ কেজি খাসির মাংস রান্না করেছে মাংসের তরকারিতে দুই ডজন সাগর কলা দিয়ে দিয়েছে। আলু দিয়ে চারটা প্রমান সাইজের ইলিশ মাছের ভর্তা!


২৮ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:৫৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন সোহানাজোহা আমার ব্লগে আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য এবং মন্তব্যের যথাযথ জবাব আমার হবেনা বিধায় আমি আর কি :-& বলব,তাই চুপ।

তারপরেও বোন, যদিও রাজীব ভাইয়ের মাঝে স্ব-বিরোধীতা আছে তবে ভাই আসলেই পরিষ্কার ভদ্রলোক।আর ভাইয়ের ভাষায়, ভাইয়ের মাঝে দুইটি স্বত্মা আছে ।যার একটি ভাল আর একটি খারাপ। তাই ভাই মাঝে মাঝে কিছুটা এদিক সেদিক বলে।তবে ভাইয়ের জানার ইচছা এবং ধৈর্য্য আছে এটা অবশ্য ঠিক।

আর সর্বোপরী ভাই একজন সুখী মানুষ,একজন আদর্শবান স্বামী,একজন স্নেহময়ী বাবা (যার দুইজন খুব সুন্দর কন্যা আছে) এবং দক্ষ পরিব্রাজক, আদর্শ ব্লগার এবং পাঠক ও।আর এতসব গুণ যার মাঝে বিদ্যমান তার দুই একটা দুর্বলতা মাফ করেই দেয়া যায় বোন।
বোন , রাগ ন করি (আমার জবাবের জন্য)।

পবিত্র রজনীতে আমরা সবাই সবার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি সকল কল্যাণ ও মংগল নসিবের জন্য এবং অকল্যাণ ও অমংগল থেকে হেফাজতের জন্য।

৫| ২৮ শে মার্চ, ২০২১ রাত ৮:৫৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: টাকা পয়সা কি শুধু মুসলমানদের দিবে,নাকি পৃথীবির সকল মানুষকে ভাগ করে দিবে।ভাগে এতো বৈষম্য কেন।গরীবদের কম ধনীদের বেশী।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:৫৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নুরুলইসলা০৬০৪ , আপনার মন্তব্যের জন্য।


স্রষ্টার বা সৃষ্টিকর্তার একটি বাণী আছে " জীবে প্রেম করে যেই জন ,সেই জন সেবিছে ঈশ্বর"।দান করা যায় সবাইকে বিশেষ করে যার প্রয়োজন।তবে ইসলামে দানের ক্ষেত্রে আপনজন,গরীব আত্মীয়,পরহেজগার মুমিনদের অগ্রাধিকারের কথা বলা হয়েছে।

সাদকা বা দান আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। সাদকা সম্পর্কে হাদিসের বর্ণনা হলো মিসকিনকে সাদকাহ করলে নেকি হবে আর আত্মীয়কে সাদকা করলে তা হবে দুটি সাদকা বা নেকি করার সাওয়াব। আর তাহলো সাদকা ও আত্মীয়তা রক্ষা।দানের ব্যাপারে কুরআন ও হাদিসে অসংখ্য নির্দেশনা ও উপদেশ রয়েছে। তবে সে দান যদি আত্মীয়-স্বজন বা অধিনস্ত আপনজনদের জন্য হয় তাতে সাওয়াব হবে দ্বিগুণ বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রিয়নবি।

ইসলামের অন্যতম বিধান হচ্ছে অসহায়, নিঃস্ব ও দরিদ্র মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। তাদের অভাব পূরণ করা, তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।বিশেষ করে ইয়াতিম শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি দয়া করা মানবিক দৃষ্টি থেকে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ কাজ।

দানের মাধ্যমেই আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা, ক্ষমা এবং সওয়াব অর্জিত হয়,যা আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম মাধ্যম।সুতরাং আল্লাহ যাদের সম্পদ দান করেছেন তাদের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ জাতীয় মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ খরচ করা। তাদের সম্পদের জাকাত দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ দান সদকা করা।

আর ধন-সম্পদের বৈষম্য কেন? এর জবাব বিপুল-বিশাল এবং অনেক কারণ বিদ্যমান। যা এক মন্তব্যের মাধ্যমে দেয়া
সম্ভব না । আবরো ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

৬| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মন্তব্যের উত্তর দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন। আপই ভাই মাটির মানুষ। কোনো রাগ নাই। এখানেই অন্যদেরে সাথে আপনার পার্থক্য।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:১৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: রাজীব নুর ভাই ,আবারো আপনাকে ধন্যবাদ আপনার প্রতিমন্তব্যের জন্য।

ভাই ,এ আমার কর্তব্য আমার লেখা পড়ার পর কারো কোন জিজ্ঞাসা বা প্রশ্ন থাকলে তার জবাব দেয়া ।এক্ষেত্রে রাগ-অনুরাগ-বিরাগের কোন অবকাশ নেই।

আর এখানে আমরা কেউ পেশাদার নই। সবাই আমরা মনের আনন্দের জন্য এবং কিছু জানা-বুঝা-শেয়ার করার জন্য আছি। যেখানে কারো সাথে কারো বৈষয়িক কোন স্বার্থ জড়িত নেই ।যা আছে তা শুধু মানুষ হিসাবে নিজেকে জানার প্রচেষ্টা ।এখানে না কেহ ছাত্র বা না কেহ শিক্ষক। এখানে একের সাথে অপরের সম্পর্ক ভদ্রলোকদের চুক্তি (gentlement agreement ) দ্বারা পরিচালিত যেখানে রাগ-অনুরাগ-বিরাগের কোন অবকাশ নেই।

কথায় আছে ভাই ,"রেগে গেলেন ত হেরে গেলেন" - কাজেই নো রাগা রাগি। আর এখান থেকে আপনার-আমার কি পাওয়ার আছে বলেন যে রাগ করতে হবে । আর আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার জন্যই জানতে চাই।এটা দোষের কিছু নয় কম জানা তবে জানার জন্য চেষ্টা না করাটই দোষের।

৭| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: সোহানাজোহা আপনি আসলে মন্তব্য করে আমাকে অপমান করলেন। করুন। তবু খুশি থাকুন। ভালো থাকুন।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:২৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: রাজীব ভাই, প্রত্যেক মানুষের মাঝে দুইটি স্বত্মা আছে ।যার একটি ভাল আর একটি খারাপ।তবে মানুষ সর্বদা চেষ্টা করে নিজেকে আরো পরিবর্তন করতে বর্তমান অবস্থা থেকে।আপনিও চেষ্টা করছেন।আল্লাহ আপনাকে কামিয়াব করুন।

তবে,আমাদের সকলের স্ব-বিরোধীতা (দৃঢ় মনোবলের অভাবে একেক সময় একেক রকম বলা,বিশেষ করে ধর্মের মৌলিক নিয়ম কানুন তথা বিষয়ে) পরিহার করা উচিত।

আর মান-অপমান আপেক্ষিক ভাই। তা আমরা কেউ কাউকে না সম্মান দিতে পারি না অসম্মান করতে পারি। মান-সম্মান-অপমান অর্জন করার জিনিষ । দেয়ার নয়,করার নয়।
আল্লাহ আমাদের সকলকে সহনশীল হবার তওফিক দান করুন।(যদিও আপনি বোন সোহানাজোহা কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন তবুও আমিই তা বললাম) ।আল্লাহ আপনাকেও ভাল রাখুন।

৮| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ২:০৭

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: আন্তরিক ধন্যবাদ পোস্টের জন্য। যদি কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে এই দিবসের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতেন তাহলে আমরা আরো উপকৃত হতাম। আমি কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন হুজুরের বয়ান শুনেছি তাতে বেশির ভাগ হুজুরেরাই গুরুত্ব দিয়েছেন এই বিষয়গুলোর উপর যেমন শাবান মাসের তাৎপর্য অনেক এবং বেশি বেশি ইবাদত এবং রোজা রাখা উচিত-- কিন্তু তারা আলাদা করে সবে বরাতের প্রতি গুরুত্ব দেন নাই- যেমন হালুয়া রুটি তৈরি করে খেতে হবে এমন কোন কথা নেই, শুধু এই রাতেই সুরা এখলাস পড়ে বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া, মসসিদে জড়ো হয়ে নামাজ পড়া ইত্যাদি---তারা গুরুত্ব দিয়েছেন যে আসলে ভাগ্যের রজনী হলো শবে ক্বদর ( রমজানের শেষ ১০ দিন)।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৪৪

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, আপনার মন্তব্যের জন্য।

বিভিন্ন হাদিস থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়, এই রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো ইবাদত করেননি এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তা করার নির্দেশ দেননি বরং ফজিলতপূর্ণ এই রাতের আমলের ব্যাপারে হাদিসের যেসব নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা সবই ব্যক্তিগত নফল ইবাদত। তাই আমাদের উচিত মনগড়া ইবাদত-আমল পরিহার করে যথাসম্ভব রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাওবা-ইস্তিগফার ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকা।

আর মসজিদে নামাজের ব্যাপারে আসলে শুধু ফরজ নামাজ ব্যাতীত বাকী সব নামাজ ঘরে পড়ার ব্যাপারেই বলা হয়েছে।নফল নামাজ ঘরে পড়া উত্তম।নফল নামাজ ঘরে পড়া মসজিদে পড়ার চেয়ে উত্তম। তবে ওই নফলের কথা আলাদা যা জামাতের সাথে আদায়ের নির্দেশ এসেছে, যেমন তারাবীর নামাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,"নিশ্চয় ঘরে আদায় করা নামাজ উত্তম নামাজ, তবে ফরয ব্যতীত "( বুখারী শরীফ)।
শবে বরাতের নিয়ে সমাজে কিছুটা মতভেদ রয়েছে আলেমদের মাঝে। কেউ কেউ বলে থাকে সহীহ হাদিস দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত না। তারা অন্য সব রাতের মতই তাকে মনে করেন।তবে হাদিসে এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ হাদিসগুলো সহীহ।সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনও পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করা নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত।এই রাতকে অন্য সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে তার সবগুলোকে মওযূ বা যয়ীফ মনে করা ভুল।তবে এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও সঠিক ধারণা নয়।

এখানে শবে বরাত তথা পনের শাবানের রাত সম্পর্কে একটি হাদিস সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো।
হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, "নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন"।


এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকেন।
এখন আসুন, উল্লেখিত হাদিসটির সনদ নিয়ে আলোচনা করি। উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার ‘কিতাবুস সহীহ’ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮২এ) এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৪ নম্বর হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকী (রহঃ) ‘শুআবুল ঈমান’ এ(৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩) ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাতে এ বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও আরও অনেক হাদিসের ইমামগণ তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। হাদিসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে ‘কিতাবুস সহীহ’ এ বর্ণনা করেছেন।
এমনকি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন, ‘এসব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহ সহী প্রমাণিত হয়’।

আর হালুয়া-রুটি - শবে বরাত হলো ইবাদতের রাত, দান-খয়রাত করা ও মানুষকে খাওয়ানো ও একপ্রকার ইবাদত ।যদি কারো সামর্থ্য থাকে কাউকে খাওয়াতে পারে তবে তা বাধ্যতামুলক কিছু নয়।




৯| ২৯ শে মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:০০

অশুভ বলেছেন: সহীহ্ ইসলাম পালন করতে চাইলে মনগড়া ইবাদত না করাই উত্তম। আপনার লেখাগুলোতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পবীত্র কোরআন অথবা হাদীস থেকে সুনির্দিষ্ট কোন রেফারেন্স নেই।

১. আপনি বলেছেন এই রাত্রি সম্পর্কে হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেন, "এই রাত্রিতে এবাদত-কারিদের গুণাহরাশি আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেন।"
---এই কথাটা আপনি কোন হাদীসে পেয়েছেন তা উল্লেখ করেন নি।

২. আপনার লেখায় "শবে বরাতের নফল নামাজের নিয়ম" নিয়ে বিশাল প্যারা লিখলেন।
---কিন্তু এই নিয়ম কোন হাদীসে আছে তা উল্লেখ করলেন না।

৩. আরও লিখেছেন
হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত -
অপর একটি হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, "আমি এক রাতে মহানবী (সাঃ) কে বিছানায় পেলাম না। তাই আমি অত্যন্ত পেরেশান হয়ে খোঁজাখুঁজি আরম্ভ করলাম। খুঁজতে খুঁজতে দেখি, তিনি জান্নাতুল বাকীর মধ্যে মহান আল্লাহর প্রার্থনায় মগ্ন। তখন তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা! আমার নিকট হযরত জিবরাইল ( আঃ ) উপস্থিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আজ রাত হল নিসফে শাবান ( অর্থাৎ লাইলাতুল বারাত )। এ রাতে আল্লাহ তাআলা অধিক পরিমাণে জাহান্নামবাসী লোকদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এমনকি কালব বংশের বকরীগুলোর লোম সমপরিমাণ গুনাহগার বান্দা হলেও"। (বুখারী শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাযাহ, রযীন, মিশকাত শরীফ)।উক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহর তাআলার পক্ষ থেকে মাগফিরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত করা হয়।

---বুখারী শরীফ বা তিরমিযী শরীফ-এর কত নম্বর হাদীসে এটা উল্লেখ আছে তা লিখলেন না।

দয়া করে আমাকে প্রতিপক্ষ মনে করবেন না। আমি বুঝতে পারছি আপনি একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম। কিন্তু না বুঝে আমরা কেউ যেন বিদআত কাজ না করে ফেলি সেটা লক্ষ রাখা জরুরী। কোনো বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান না থাকলে সেটা নিয়ে না লেখাটাই উত্তম। বিশেষ করে ইসলামের ইবাদত সম্পর্কে অন্য কাউকে কিছু জানাতে হলে আগে নিজে সেই বিষয়ে জেনে নেয়া আবশ্যক (কোরআন এবং সহীহ্ হাদীস-এর রেফারেন্স সহ)। না হলে নিজের অজান্তেই গুনাহ করে ফেলতে পারি।
আশা করি আমার কথাগুলো বুঝতে পারবেন। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ ইসলাম পালন করার তৌফিক দান করুন। আমিন।

২৯ শে মার্চ, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই অশুভ , আপনার মন্তব্যের জন্য।

শবে বরাতের নিয়ে সমাজে কিছুটা মতভেদ রয়েছে আলেমদের মাঝে। কেউ কেউ বলে থাকে সহীহ হাদিস দ্বারা শবে বরাত প্রমাণিত না। তারা অন্য সব রাতের মতই তাকে মনে করেন।তবে হাদিসে এ রাতের মহিমা ও ফজিলত বিশেষভাবে উল্লেখ রয়েছে। এ হাদিসগুলো সহীহ।সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোনও পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করা নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত।এই রাতকে অন্য সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এ রাতের ফজিলতের ব্যাপারে যত হাদিস এসেছে তার সবগুলোকে মওযূ বা যয়ীফ মনে করা ভুল।তবে এ রাতকে শবে কদরের মতো বা তার চেয়েও বেশি ফজিলতপূর্ণ মনে করাও সঠিক ধারণা নয়।

বিভিন্ন হাদিস থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়, এই রাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিশেষ পদ্ধতিতে কোনো ইবাদত করেননি এবং সাহাবায়ে কেরামকেও তা করার নির্দেশ দেননি বরং ফজিলতপূর্ণ এই রাতের আমলের ব্যাপারে হাদিসের যেসব নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায় তা সবই ব্যক্তিগত নফল ইবাদত। তাই আমাদের উচিত মনগড়া ইবাদত-আমল পরিহার করে যথাসম্ভব রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে বেশি বেশি নফল নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, তাওবা-ইস্তিগফার ও জিকির-আজকারে মশগুল থাকা।


এখানে শবে বরাত তথা পনের শাবানের রাত সম্পর্কে একটি হাদিস সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণসহ উল্লেখ করা হলো।
হযরত মুআয ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন, "নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সবাইকে ক্ষমা করে দেন"।

এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয় যে, এই রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বার ব্যাপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকী কাজকর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যাপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকেন।
এখন আসুন, উল্লেখিত হাদিসটির সনদ নিয়ে আলোচনা করি। উপরোক্ত হাদিসটি অনেক নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার ‘কিতাবুস সহীহ’ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮২এ) এই হাদিসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৪ নম্বর হাদিস। এ ছাড়া ইমাম বায়হাকী (রহঃ) ‘শুআবুল ঈমান’ এ(৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩) ইমাম তাবরানী আলমুজামুল কাবীর ও আলমুজামুল আওসাতে এ বর্ণনা করেছেন।
এছাড়াও আরও অনেক হাদিসের ইমামগণ তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদিসটি উল্লেখ করেছেন। হাদিসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে ‘কিতাবুস সহীহ’ এ বর্ণনা করেছেন।
এমনকি শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদীসিস সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন, ‘এসব বর্ণনার মাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে এই হাদিসটি নিঃসন্দেহ সহী প্রমাণিত হয়’।

এ রাত প্রসংগে হযরত আয়েশা ( রাঃ ) থেকে বর্ণিত - নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের ১৪ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে তাঁর বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থায়।’ (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৩৫৫৪)।

এ রাতে কোরআন শরিফ সুরা দুখান ও অন্যান্য ফজিলতের সুরাসমূহ তিলাওয়াত করা,দরুদ শরিফ বেশি বেশি পড়া,তাওবা-ইস্তিগফার অধিক পরিমাণে করা, দোয়া-কালাম, তাসবিহ তাহলিল, জিকির-আসকার ইত্যাদি করা,আপনজনদের কবর জিয়ারত করা, নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও সকল মোমিন মুসলমানের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা।আর এগুলির সবই নফল(অতিরিক্ত) কাজ-ইবাদত।এগুলি করার জন্য কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

তাওবা-ইস্তিগফার - এই রাতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তিগফার করা। কারণ বরকতময় এই রাতে আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে নেমে বান্দাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন। তাদের গুনাহ মাফ করেন। এই মর্মে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন অর্ধ শাবানের রাত আগমন করে তখন আল্লাহ তাআলা প্রথম আকাশে অবস্থান করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ছাড়া অন্যদের ক্ষমা করে দেন। (মুসনাদে বাজজার, হাদিস : ৮০)।

আল্লাহ আমাদেরকে বেশী বেশী ইবাদত ও আমল করার তৌফিক দান করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.