নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" আল কোরআন " সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানী গ্রন্থ এবং মানব জাতির মুক্তির আলোকবর্তিকা।( আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব ৮)।

২১ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:৩৯


ছবি - shadow.com.bd

আমরা কেন বিশ্বাস করব আল কোরআন আল্লাহর কালাম ? কেন বিশ্বাস করব আল কোরআন মানুষের রচনা নয় ?

আমরা যদি আল কোরানের ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখব - আল কোরআন এমন একজন মানুষের উপর নাজিল হয়েছিল যিনি ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত পরিচিত ছিলেন একজন শান্তিপ্রিয় সদাচারী ভালো মানুষরূপে। ৪০ বছর বয়সে তাঁর মুখ থেকে নিঃসৃত হতে শুরু করল জীবনের বাঁকবদলকারী বাণীমালা, যা আরবি ভাষায় সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপিত। তিনি (রাসুল সাঃ) বললেন, " আল্লাহ এই বাণীমালা তাঁর ওপর নাজিল করেছেন"। আরবি ভাষার সকল কবি-সাহিত্যিকরাও স্বীকার করলেন, " না, এর মতো কোনো পঙক্তিমালা তাদের (কোন মানুষের) পক্ষে রচনা করা সম্ভব নয়"। শতাব্দীর পর শতাব্দী পার হয়ে গেল কিন্তু এর মতো কোনো পঙক্তিমালা আর কারো পক্ষেই রচনা করা সম্ভব হলো না।

এখন আমরা বলতে পারি, " কালজয়ী কবি সাহিত্যিকরাও অনন্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন এবং তারা সবাই মানুষ ছিলেন। তাই কোরআন যত অনন্যই হোক না কেন, তা মানুষের রচনা নয় এটা নিশ্চিত হবো কীভাবে"? আসলে কালজয়ী কবি-সাহিত্যিকদের সাহিত্য ও শিল্পকর্মের অনন্যতা এবং কোরআনের অনন্যতার ধরনে মনোনিবেশ করলেই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

১। কালজয়ী কাব্য বা সাহিত্য যে আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে, সে আঙ্গিকটা অনন্য নয়। সেই ছন্দ বা সেই আঙ্গিকে আরো অনেকেই কাব্য বা সাহিত্য রচনা করেছেন। কিন্তু কোরআন আরবি সাহিত্যের সম্পূর্ণ অপরিচিত ও অতুলনীয় এক আঙ্গিকে উপস্থাপিত হয়েছে। এই আঙ্গিকে এর আগে বা এর পরে কোনো সাহিত্য-প্রয়াসই চালানো সম্ভব হয় নি।

২। সকল কালজয়ী সাহিত্যকর্মের উৎকর্ষের জন্যে শব্দের পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন বা বিয়োজন সাহিত্যিক বা কবি নিজেই করেছেন। কিন্তু কোরআনের সাহিত্যিক অনন্যতা, এর অতুলনীয় মাধুর্য, ছন্দ ও শব্দবিন্যাস সত্ত্বেও তা তৎক্ষণাৎই বর্ণিত হয়েছে। সাহিত্যিক উৎকর্ষের জন্যে পরবর্তীতে কোনো পরিবর্তন, পরিমার্জন, সংযোজন বা বিয়োজন করা হয় নি।


ছবি - sangbadchorcha.com

মানুষের এক জীবনে যা দরকার, তার সবই সাজানো রয়েছে আল কোরআনের পরতে পরতে। সুস্থ সুন্দর সুখী পরিতৃপ্ত জীবনের জন্যে যা প্রয়োজন, আলকোরআনের পাতায় পাতায় রয়েছে তারই দিক-নির্দেশনা। পবিত্র কোরআনে মানব জীবনের সব দিকনির্দেশনার বর্ণনার পাশাপাশি মানবজাতীর প্রতি উপদেশ স্বরুপ বেশ কিছু আয়াত আছে।আসুন আমরা সেগুলো সম্পর্কে জানি -

আল কোরআনের উপদেশাবলী

১। তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো।

"হে মুমিনগণ! তোমরা ন্যায়বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষীস্বরূপ; যদিও তা তোমাদের নিজেদের বা পিতা-মাতা এবং আত্মীয় - স্বজনের বিরুদ্ধে হয়,সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্টতর। কাজেই তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হয়ে না। যদি তোমরা পেঁচালো কথা বল বা পাশ কাটিয়ে যাও তবে তোমরা যা কর আল্লাহ তো তার সম্যক খবর রাখেন।"
(সুরা নিসা, আয়াত - ১৩৫)।

২। তোমরা অন্যের প্রতি সদাচারী হও।

"আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ‌ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৩৬)।

৩। যাদের সঙ্গে তোমাদের রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাদের তোমরা বিয়ে কোরো না।

"তোমাদের জন্য হারাম করা হল তোমাদের মা, মেয়ে, বোন, ফুফু বা পিতার বোন, খালা বা মায়ের বোন, ভাই এবং বোনের মেয়ে, দুধ মা, দুধ বোন, শাশুড়ী এবং তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যার সাথে সহবাস হয়েছে, তার পূর্ব স্বামীর ঔরসে জন্ম নেয়া কন্যা ও যারা তোমার অভিভাবকত্বে আছে। তবে যদি তাদের সাথে সহবাস না হয়ে থাকে, তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ নেই এবং তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ তোমাদের ঔরসজাত পুত্রের স্ত্রী ও দুই বোনকে একসঙ্গে বিয়ে করা। অতীতে যা হবার হয়েছে, আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াময়"।(সুরা নিসা, আয়াত - ২৩)।

৪। অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ ভক্ষণ কোরো না।

"হে বিশ্বাসীগণ, তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না,কিন্তু পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে তোমাদের মধ্যে ব্যবসা বৈধ এবং তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়াময়।" (সুরা নিসা, আয়াত - ২৯)।

৫। তোমরা পরস্পরকে হত্যা কোরো না।

"কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত হতে পারে। আর যে ব্যক্তি ভুলবশত কোন মুমিনকে হত্যা করে তার কাফ্‌ফারা হিসেবে একজন মুমিনকে গোলামী থেকে মুক্ত করে দিতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে তবে যদি তারা রক্ত মূল্য মাফ করে দেয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। কিন্তু যদি ঐ নিহত মুসলিম ব্যক্তি এমন কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে তাহলে একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দেয়াই হবে তার কাফ্‌ফারা। আর যদি সে এমন কোন অমুসলিম জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে, তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে এবং একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দিতে হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোলাম পাবে না তাকে পরপর দু’মাস রোযা রাখতে হবে। এটিই হচ্ছে এই গোনাহের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করার পদ্ধতি। আর আল্লাহ‌ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময়"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৯২।


ছবি - samakal.com

৬। পরিবারের অভিভাবকত্ব ও অর্থ ব্যয় পুরুষের দায়িত্ব।

"পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। আর যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে বুঝাও, শয়নগৃহে তাদের থেকে আলাদা থাকো এবং তাদেরকে মারধোর করো। তারপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে অযথা তাদের ওপর নির্যাতন চালাবার জন্য বাহানা তালাশ করো না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ ওপরে আছেন, তিনি বড় ও শ্রেষ্ঠ"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৩৪)।

৭। তোমরা নিজে কার্পণ্য কোরো না এবং অন্যকে কার্পণ্য শিক্ষা দিয়ো না।

"আর আল্লাহ‌ এমন লোকদেরকেও পছন্দ করেন না, যারা কৃপণতা করে, অন্যদেরকেও কৃপণতা করার নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ‌ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা কিছু দিয়েছেন সেগুলো গোপন করে। এই ধরনের অনুগ্রহ অস্বীকারকারী লোকদের জন্য আমি লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৩৭)।

৮। তোমরা নিজেদের মাঝে বিদ্বেষ পরিহার করো ।

"তাহলে কি অন্যদের প্রতি তারা এ জন্য হিংসা করেছে যে, আল্লাহ‌ তাদেরকে নিজের অনুগ্রহ দানে সমৃদ্ধ করেছেন। যদি এ কথাই হয়ে থাকে, তাহলে তাদের জেনে রাখা দরকার, আমি ইবরাহীমের সন্তানদেরকে কিতাব ও হিকমত দান করেছি এবং তাদেরকে দান করেছি বিরাট রাজত্ব"। (সুরা নিসা, আয়াত - ৫৪)।

৯। মানুষের প্রতি ন্যায়বিচার করো।

"নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, আমানত তার মালিককে প্রত্যর্পণ করবে। আর যখন তোমরা মানুষের মধ্যে বিচার-কার্য পরিচালনা করবে, তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন, তা কত উৎকৃষ্ট! নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শোনেন ও দেখেন। " (সুরা নিসা, আয়াত - ৫৮)।

১০। বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ নিয়ে বিতর্ক কোরো না।

"আর হে নবী! যখন তুমি মুসলমানদের মধ্যে থাকো এবং (যুদ্ধাবস্থায়) তাদেরকে নামায পড়াবার জন্য দাঁড়াও তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দলের তোমার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া উচিত এবং তারা অস্ত্রসস্ত্র সঙ্গে নেবে। তারপর তারা সিজদা করে নিলে পেছনে চলে যাবে এবং দ্বিতীয় দলটি, যারা এখনো নামায পড়েনি, তারা এসে তোমার সাথে নামায পড়বে। আর তারাও সতর্ক থাকবে এবং নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র বহন করবে। কারণ কাফেররা সুযোগের অপেক্ষায় আছে, তোমরা নিজেদের অস্ত্রশস্ত্র ও জিনিস পত্রের দিক থেকে সামান্য গাফেল হলেই তারা তোমাদের ওপর অকস্মাৎ ঝাঁপিয়ে পড়বে। তবে যদি তোমরা বৃষ্টির কারণে কষ্ট অনুভব করো অথবা অসুস্থ থাকো, তাহলে অস্ত্র রেখে দিলে কোন ক্ষতি নেই। কিন্তু তবুও সতর্ক থাকো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ‌ কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাকর আযাবের ব্যবস্থা করে রেখেছেন"।(সুরা নিসা, আয়াত - ১০২)।

আল্লাহ পাক আমাদেরকে আল কোরআন জানার-বুঝার এবং আল কুরআনের আলোকে জীবন গড়ার তওফিক দান করুন


চলবে -
===============================================================

পূর্ববর্তী পোস্ট -

আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৭ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৬ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৫ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৪ Click This Link
আল কোরআন সংকলন-সংরক্ষণের ইতিহাস - Click This Link
আল কোরআন এর ২৬ টি আয়াত বাতিল চেয়ে আদালতে দায়ের করা রিট বাতিল করলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট
- Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ৩ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ২ Click This Link
আল কোরআনের উপদেশাবলী - পর্ব - ১ Click This Link

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:১৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আল কোরআন রসুলের (সা) শ্রেষ্ঠ মোজেজা।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আল কোরআন মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত এবং রাসুল (সাঃ ) এর শ্রেষ্ঠ মোজেজা।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: ধরুন আমার ঘরে খাবার নেই অনেকদিন ধরে। পরিবারের বেশ কয়েকজন অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বন্ধ। অভাবের সংসার। এখন সে এই কিতাব দিয়ে কি করবে?

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:১৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আসলেই :( চিন্তার বিষয়। আল কোরআন পড়লেত আর সরাসরি খানা-টাকা মিলবেনা, অভাব দূর হবেনা - তাহলে কি করতে হবে ?

খানা-টাকা-অভাব দূর করার জন্য কাজ করতে হবে। আর সেই কাজের প্রক্রিয়া বা কিভাবে মানুষ দুনিয়ায় তার যাবতীয় দায়িত্ব - কর্তব্য পালন করবে এবং কিভাবে চললে তার সকল প্রয়োজন পূরণ হবে , অভাব দূর হবে তারই দিকনির্দেশনা আল কোরআনে দেয়া আছে ।

৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৭:০২

সাসুম বলেছেন: আপনার পোস্টে কমেন্ট করে মজা পাওয়া যায়। কারন আপনি মডারেট নামক বেকুব দের মত সত্যকে ঘুরিয়ে পেছান না, একদম সহীহ শুদ্ধ তুলে ধরেন ইসলাম কে।

"পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। আর যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে বুঝাও, শয়নগৃহে তাদের থেকে আলাদা থাকো এবং তাদেরকে মারধোর করো। তারপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে অযথা তাদের ওপর নির্যাতন চালাবার জন্য বাহানা তালাশ করো না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ ওপরে আছেন, তিনি বড় ও শ্রেষ্ঠ"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৩৪)।

সূরা নিসার এই আয়াত অনুযায়ী- যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর অবাধ্যতার আশঙ্কা করে তবে তাকে পিটানো জায়েজ আছে।

সোবাহানাল্লাহ! একদম সহীহ শুদ্ধ ধর্ম। এইসব সূরা ও আয়াত এর কারনেই মোমিন রা বউ পিটানোতে এক্সপার্ট এবং আগ্রহ ফিল করেন। আমীন।


"কোন মুমিনের কাজ নয় অন্য মুমিনকে হত্যা করা, তবে ভুলবশত হতে পারে। আর যে ব্যক্তি ভুলবশত কোন মুমিনকে হত্যা করে তার কাফ্‌ফারা হিসেবে একজন মুমিনকে গোলামী থেকে মুক্ত করে দিতে হবে এবং নিহত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে তবে যদি তারা রক্ত মূল্য মাফ করে দেয় তাহলে স্বতন্ত্র কথা। কিন্তু যদি ঐ নিহত মুসলিম ব্যক্তি এমন কোন জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের শত্রুতা রয়েছে তাহলে একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দেয়াই হবে তার কাফ্‌ফারা। আর যদি সে এমন কোন অমুসলিম জাতির অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে যাদের সাথে তোমাদের চুক্তি রয়েছে, তাহলে তার ওয়ারিসদেরকে রক্ত মূল্য দিতে হবে এবং একজন মুমিন গোলামকে মুক্ত করে দিতে হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোলাম পাবে না তাকে পরপর দু’মাস রোযা রাখতে হবে। এটিই হচ্ছে এই গোনাহের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে তাওবা করার পদ্ধতি। আর আল্লাহ‌ সর্বজ্ঞ ও জ্ঞানময়"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৯২।

এই আয়াত অনুযায়ী- আপ্নি একজন মোমিন মোসলমান হয়ে আরেকজন বিধর্মী কে খুন করলে ( ধরে নিলাম তাদের সাথে আপনার কোন চুক্তি নেই মারামারির, ধরে নিলাম আপনার বাসার পাশে বসবাসকারী হিন্দু বা ক্রিস্টান বা ইহুদি বা কাফের বা নাস্তিক ) সো, এদের কে খুন করলে জাস্ট একটা গোলাম মুক্ত করে দিলেই আল্লাহ মাফ করে দিবেন কিংবা মাত্র ২টা রোজা!

আপনার কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত দুনিয়ার সকল মানুষের । কারন, আপনি যে কোন মুহুর্তে হামলে পড়তে পারেন, করতে পারেন খুন! কারন, আপনি জানেন, মাত্র ২ টা রোজা রাখলেই এই খুনের দায় থেকে আপনার আল্লাহ আপ্নারে মুক্তি দিয়ে দিছেন ইন এডভান্স।


সোবাহানাল্লাহ! একদম সহীহ শুদ্ধ ধর্ম। একদম ন্যায় বিচার।

এইসব সূরা ও আয়াত এর কারনেই মোমিন রা কোপানো আর খুনাখুনি তে এক্সপার্ট এবং আগ্রহ ফিল করেন। আমীন।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৪২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাসুম ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

সূরা নিসার এই আয়াত অনুযায়ী- যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর অবাধ্যতার আশঙ্কা করে তবে তাকে পিটানো জায়েজ আছে।সোবাহানাল্লাহ! একদম সহীহ শুদ্ধ ধর্ম। এইসব সূরা ও আয়াত এর কারনেই মোমিন রা বউ পিটানোতে এক্সপার্ট এবং আগ্রহ ফিল করেন। আমীন।

- ভাই ,দেশে প্রচলিত একটা কথা আছে , " শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে " । নারীর যাবতীয় প্রয়োজনের নিশ্চয়তা পুরুষরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা বিধান করে থাকে। মোটকথা, ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। আর সে আনুগত্য হচ্ছে, সে স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।

এখন যে সব স্ত্রীলোক ব্যক্তি স্বাধীনতার এ যুগে স্বামীদের মানেনা তারা সরাসরি তালাক বা সর্বশেষ পথ বেছে নেয় অথচ ইসলাম তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেয়ার জন্য বলে।আর তার সংশোধনের জন্য ৩ টি পথ ধারাবাহিক ভাবে অনুসরন করতে বলা হয়েছে এবং এর যে কোন একটি পথে যদি সংশোধন হয়ে যায় তবে তাকে ক্ষমা করে দিতে বলা হয়েছে।

স্ত্রীলোক, যারা স্বামীদের আনুগত্য করে না কিংবা যারা এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে,আল্লাহ তা'আলা তদএর সংশোধনের জন্য পুরুষদেরকে যথাক্রমে তিনটি উপায় বাতলে দিয়েছেন। অর্থাৎ স্ত্রীদের পক্ষ থেকে যদি নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশংকা দেখা দেয়, তবে -

১। প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধন হল যে, নরমভাবে তাদের বোঝাবে। যদি তাতেও বিরত না হয়, তবে -

২। দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দেবে। যাতে এই পৃথকতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে। তারপর যদি তাতেও সংশোধন না হয়, তবে -

৩। মৃদুভাবে মারবে, তিরস্কার করবে। আর তার সীমা হল এই যে, শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা যখম না হয়। কিন্তু এই পর্যায়ের শাস্তি দানকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি, বরং তিনি বলেছেন, " ভাল লোক এমন করে না। [ইবন হিব্বানঃ ৯/৪৯৯, নং ৪১৮৯, আবু দাউদঃ ২১৪৬, ইবন মাজাহঃ ১৯৮৫] যাইহোক, এ সাধারণ মারধরের মাধ্যমেই যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তবুও উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল"।

এখন ভাই, এখন যে যেভাবে এ আয়াতকে ব্যাখ্যা করে এটা তার ব্যাপার । আপনি যদি এর অর্ন্তনিহীত কারণের দিকে তাকান তাহলে এর কুফল থেকে সুফলই বেশী খুজে পাবেন। সামান্য কারনে পরিবারকে ভাংগনের হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিজেদের মাঝের ভূলভ্রান্তি দূর করে স্বামী- স্ত্রীর মাঝে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরী করাই মূল উদ্দেশ্য । কাজেই উদ্দেশ্যের বিচারে এ ধারাবাহিক কার্য সম্পাদন আমি ত মনে করি শতভাগ যুক্তিযুক্ত। আপনার কি মনে হয়?

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:১৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: সাসুম ভাই,

এইসব সূরা ও আয়াত এর কারনেই মোমিন রা কোপানো আর খুনাখুনি তে এক্সপার্ট এবং আগ্রহ ফিল করেন। আমীন।

হত্যা সর্বমোট আট প্রকার। কেননা, নিহত ব্যক্তি হয়তো মুসলিম, কিংবা যিম্মী, অথবা চুক্তিবদ্ধ ও অভয়প্রাপ্ত, নতুবা দারুল হারবের কাফের হবে। এ চার অবস্থার কোন না কোন একটি হবেই।আর হত্যাকারী দু'প্রকার, ১। ইচ্ছাকৃত, ২। ভুলবশতঃ।

আট প্রকার হত্যা হল -
১। মুসলিমকে ইচ্ছাকৃত হত্যা,
২। মুসলিমকে ভুলবশতঃ হত্যা,
৩। যিম্মীকে ইচ্ছাকৃত হত্যা,
৪। যিম্মীকে ভুলবশতঃ হত্যা,
৫। চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ইচ্ছাকৃত হত্যা,
৬। চুক্তিবদ্ধ ব্যক্তিকে ভুলবশতঃ হত্যা
৭। হারবী কাফেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা এবং
৮। হারবী কাফেরকে ভুলবশতঃ হত্যা।

সকল প্রকারের হত্যার প্রথম পার্থিব বিধান হচ্ছে, কিসাস কি (রক্ত মূল্য) ওয়াজিব হওয়া।

এখন আসুন দেখি কিসাস কি ? কেসাস সম্পর্কে (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত - ১৭৮ ) এ বলা হয়েছে - " হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তি স্বাধীন ব্যক্তির বদলায় দাস দাসের বদলায় এবং নারী নারীর বদলায়। অতঃপর তার ভাইয়ের তরফ থেকে যদি কিছুটা মাফ করে দেয়া হয় তবে প্রচলিত নিয়মের অনুসরণ করবে। এবং ভালভাবে তাকে তা প্রদান করতে হবে। এটা তোমাদের পালনকর্তার তরফ থেকে সহজ এবং বিশেষ অনুগ্রহ। এরপরও যে ব্যক্তি বাড়াবাড়ি করে তার জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব"।

এই আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট - এই আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম লেখেন যে, আইয়্যামে জাহিলিয়াতের যুগে দু’টি গোত্রের মধ্যে লড়াই হয়েছিল। তাদের উভয় দলের লোকই নিহত হয় কিন্তু কেসাস নেয়ার পূর্বেই উভয় গোত্র মুসলমান হয়ে যায়। তখন তারা প্রতিজ্ঞা করে যে, আমাদের একজন নারী হত্যার করণে আমরা তাদের একজন পুরুষ হত্যা করব এবং একজন গোলামের পরিবর্তে একজন স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করবো তখন এই আয়াত নাজিল হয়।

সারা বিশ্বে বর্তমানে মানুষে মানুষে হানাহানি, অন্যায়ভাবে মানব হত্যা এবং এ সংক্রান্ত অন্যায় অপরাধের প্রবণতা আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, জীবতরাও উৎকন্ঠিত কখন কী হয়! কেউ এখন আর এ থেকে নিজেকে নিরাপরাধ ভাবতে পারছে না। সচেতন মহল তাই এর প্রতিরোধের নানা রকম উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। এতদসংক্রান্ত অপরাধের প্রতিকার নিয়ে আল-কুরআনের একটি পন্থা হলো ‘কিসাস’। মূলতঃ মৃত্যুর বিনিময়ে মৃত্যু, কিংবা কোন ধরণের জখমের বিনিময়ে অনুরুপ জখমের পরিভাষা হলো ‘কিসাস’ বা ‘অনুরুপ প্রতিশোধ’। ইসলামী অপরাধ আইনের গরুত্বপূর্ণ এই পরিভাষাটি সরাসরি কুরআন ও হাদিসে ব্যবহৃত হয়েছে।

ইসলামী অপরাধ আইনে তিন ধরণের অপরাধের কথা বলা হয়েছে। যথা -
১। কিসাস (অনুরুপ প্রতিশোধ),
২। হুদুদ (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তি),
৩। তা’যির (ভীতি প্রদর্শন মূলক শাস্তি)।

এসকল শাস্তির মূল উদ্দেশ্য হলো - (১) অপরাধীকে শোধরানো, (২) ক্ষতিগ্রস্থদের সান্তনা এবং (৩) অন্যান্যদেরকে এ জাতীয় কাজে অনুৎসাহিত করা।

কিসাসের ব্যাপারে আল কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন," আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখম সমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম" (সূরা মায়েদাহ, আয়াত - ৪৫)।

কিসাস মূলতঃ কয়েকটি অপরাধকে অন্তর্ভুক্ত করে -

১। হত্যা (ইচ্ছাকৃত অথবা অনিচ্ছাকৃত উভয়ই),
২। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানবতা বিরোধী অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুর কারণ হতে পারে,
৩। ভুলকৃত হত্যা,
৪। ভূলক্রমে মানবতা বিরোধী এমন অপরাধ যা মৃত্যু কিংবা মৃত্যুও কারণ হতে পারে।

উক্ত আয়াত থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যেমন -

১। ন্যায় বিচার সবার জন্যে,
২। ক্ষতিগ্রস্থদের অধিকার আছে বৈধ উপায়ে প্রতিশোধ নেবার,
৩। সমবস্থার প্রতিশোধের বাইরেও শর্তসাপেক্ষে টাকা ও সম্পদের ক্ষতিপুরুণও চাইতে পারবে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি কিংবা তার উত্তরাধিকারীরা,
৪। ন্যায় বিচার অবশ্যই আল্লাহর দেয়া বিধান মোতাবেক হতে হবে,
৫। আল্লাহর দেয়া বিধান উপেক্ষাকারীদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি,
৬। কিসাসের মধ্যেই অন্যদের জীবনের নিরাপত্তা রয়েছে।

এখানে কিন্তু কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে তা হলো -

১। কিসাসের শাস্তি কিন্তু কোন ব্যক্তি দিতে পারবে না। এটির মূল দায়িত্ব সরকার বা বিচার ব্যবস্থার উপরে,
২। প্রত্যেক অপরাধেরই শাস্তি হতে হবে। এটি এমন না যে, আপনজনেরা শাস্তি পাবে না কিন্তু অন্যরা পাবে। অর্থাৎ কোন বৈষম্য করা যাবে না,
৩। অনুরুপভাবে প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির অধিকার আছে প্রতিশোধ নেবার,
৪। দিয়্যতের (টাকা বা সম্পদের বিনিময়ে প্রতিশোধ) ব্যাপারে নির্দিষ্ট নিয়ম নীতি আগে থেকেই থাকতে হবে,
৫। অপরাধী যদি ক্ষতিপুরুণ দিতে অসমার্থ হয় তাহলে তার পরিবার এবং পরিবার অসমর্থ হলে সমাজের উপর, এমনকি পর্যায়ক্রমে সরকারের উপরেও বর্তাবে,
৬। যে কোন ক্ষতিপুরুণ অবশ্যই নির্ধারিত নিয়ম-নীতির মাধ্যমে এবং বৈধ উপায়ে আদায় করতে হবে। এটি ব্যক্তি কিংবা গোষ্ঠির সাথে সংশ্লিষ্ট না হয়ে বরং বিচার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত হবে।

পরিশেষে বলা যায়, সতিক্যার অর্থেই যদি ইসলাম নির্দেশিত মৃত্যু ও এতদসংক্রান্ত কোন অপরাধের জন্যে সমপরিমাণ প্রতিশোধ (কিসাস) অপরাধী থেকে নেয়া যায় তাহলে বিশ্বজিত কিংবা রিফাতের মতো আর কেউ দূর্ঘটনার স্বীকার হবে না এবং সমাজ থেকে মানুষ হত্যার মত জঘন্য কাজ করার আগে সবাই দ্বিতীয়বার চিন্তা করবে।

এখন আপনার কি মনে হয় ভাইজান ? আল কোরআনে তা কি আসলে মানব জাতির কল্যাণের জন্য নাকি অপরাধকে উৎসাহিত করার জন্য বলা হয়েছে?

৪| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ৯:০৭

অগ্নিবেশ বলেছেন: "পুরুষ নারীর কর্তা। এ জন্য যে, আল্লাহ‌ তাদের একজনকে অন্য জনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং এ জন্য যে, পুরুষ নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করে। কাজেই সতী-সাধ্বী স্ত্রীরা আনুগত্যপরায়ণ হয় এবং পুরুষদের অনুপস্থিতিতে আল্লাহর হেফাজত ও তত্বাবধানে তাদের অধিকার সংরক্ষণ করে থাকে। আর যেসব স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা করো, তাদেরকে বুঝাও, শয়নগৃহে তাদের থেকে আলাদা থাকো এবং তাদেরকে মারধোর করো। তারপর যদি তারা তোমাদের অনুগত হয়ে যায় তাহলে অযথা তাদের ওপর নির্যাতন চালাবার জন্য বাহানা তালাশ করো না। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ ওপরে আছেন, তিনি বড় ও শ্রেষ্ঠ"।(সুরা নিসা, আয়াত - ৩৪)।
ইসলামের সর্বনাশ ডেকে আনবে এই কোরান হাদিস, যত মানে বুজঝে পড়বে ততই ইমান হারা হবে।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:১৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ অগ্নিবেশ ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

ইসলামের সর্বনাশ ডেকে আনবে এই কোরান হাদিস, যত মানে বুজঝে পড়বে ততই ইমান হারা হবে।

আসলেই কি এমনটা , যেমনটা আপনি বলেছেন ?

- ভাই ,দেশে প্রচলিত একটা কথা আছে , " শাসন করা তারই সাজে সোহাগ করে যে " । নারীর যাবতীয় প্রয়োজনের নিশ্চয়তা পুরুষরা নিজের উপার্জন কিংবা স্বীয় সম্পদের দ্বারা বিধান করে থাকে। মোটকথা, ইসলাম পুরুষকে নারীর নেতা বানিয়েছে। নারীর উপর কর্তব্য হচ্ছে, আল্লাহ তাকে তার স্বামীর যা আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন তার আনুগত্য করা। আর সে আনুগত্য হচ্ছে, সে স্বামীর পরিবারের প্রতি দয়াবান থাকবে, স্বামীর সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে। স্বামীর পক্ষ থেকে খরচ ও কষ্ট করার কারণে আল্লাহ স্বামীকে স্ত্রীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন।

এখন যে সব স্ত্রীলোক ব্যক্তি স্বাধীনতার এ যুগে স্বামীদের মানেনা তারা সরাসরি তালাক বা সর্বশেষ পথ বেছে নেয় অথচ ইসলাম তাদেরকে সংশোধনের সুযোগ দেয়ার জন্য বলে।আর তার সংশোধনের জন্য ৩ টি পথ ধারাবাহিক ভাবে অনুসরন করতে বলা হয়েছে এবং এর যে কোন একটি পথে যদি সংশোধন হয়ে যায় তবে তাকে ক্ষমা করে দিতে বলা হয়েছে।

স্ত্রীলোক, যারা স্বামীদের আনুগত্য করে না কিংবা যারা এ ব্যাপারে শৈথিল্য প্রদর্শন করে,আল্লাহ তা'আলা তাদের সংশোধনের জন্য পুরুষদেরকে যথাক্রমে তিনটি উপায় বাতলে দিয়েছেন। অর্থাৎ স্ত্রীদের পক্ষ থেকে যদি নাফরমানী সংঘটিত হয় কিংবা এমন আশংকা দেখা দেয়, তবে -

১। প্রথম পর্যায়ে তাদের সংশোধন হল যে, নরমভাবে তাদের বোঝাবে। যদি তাতেও বিরত না হয়, তবে -

২। দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের বিছানা নিজের থেকে পৃথক করে দেবে। যাতে এই পৃথকতার দরুন সে স্বামীর অসন্তুষ্টি উপলব্ধি করে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হতে পারে। তারপর যদি তাতেও সংশোধন না হয়, তবে -

৩। মৃদুভাবে মারবে, তিরস্কার করবে। আর তার সীমা হল এই যে, শরীরে যেন সে মারধরের প্রতিক্রিয়া কিংবা যখম না হয়। কিন্তু এই পর্যায়ের শাস্তি দানকেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পছন্দ করেননি, বরং তিনি বলেছেন, " ভাল লোক এমন করে না। [ইবন হিব্বানঃ ৯/৪৯৯, নং ৪১৮৯, আবু দাউদঃ ২১৪৬, ইবন মাজাহঃ ১৯৮৫] যাইহোক, এ সাধারণ মারধরের মাধ্যমেই যদি সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, তবুও উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেল"।

এখন ভাই, এখন যে যেভাবে এ আয়াতকে ব্যাখ্যা করে এটা তার ব্যাপার । আপনি যদি এর অর্ন্তনিহীত কারণের দিকে তাকান তাহলে এর কুফল থেকে সুফলই বেশী খুজে পাবেন। সামান্য কারনে পরিবারকে ভাংগনের হাত থেকে রক্ষা করা এবং নিজেদের মাঝের ভূলভ্রান্তি দূর করে স্বামী- স্ত্রীর মাঝে স্বাভাবিক সম্পর্ক তৈরী করাই মূল উদ্দেশ্য । কাজেই উদ্দেশ্যের বিচারে এ ধারাবাহিক কার্য সম্পাদন আমি ত মনে করি শতভাগ যুক্তিযুক্ত। আপনার কি মনে হয়?

৫| ২২ শে অক্টোবর, ২০২১ রাত ৮:৫০

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: কোরান যে আল্লাহর বানী এটার সবথেকে বড় প্রমান,কারন কোরানেই লেখা আছে কোরান আল্লাহর বানী।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:২৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলম০৬০৪ ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

আল কোরআন আল্লাহর কালাম এর অনেক প্রমানই আমাদের সামনে দৃশ্যমান যদি আমরা বুঝতে চাই।

৬| ২৩ শে অক্টোবর, ২০২১ সকাল ১০:৫৭

জুল ভার্ন বলেছেন: গুড পোস্ট। +

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই, আপনার মন্তব্যের,পড়ার এবং + এর জন্য ।

৭| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১২:৩৫

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
অথচ এখন কোরআন অনাদরে অবহেলায় পড়ে থাকে ঘরের কোনে। সুন্দর পোস্ট।

২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই, আপনার মন্তব্য এবং পড়ার জন্য ।

আমরা বেশীরভাগই এখন ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ভূলে নামে মুসলমান হয়ে গেছি কাজে-কর্মে কিছুই করিনা যা ইসলামে তথা কোরআন-হাদীসে বলা হয়েছে।

মহান আল্লাহপাক আমাদের সকলকে আল কোরআনের আলোকে আমাদের জীবন গড়ার তওফিক দান করুন।

৮| ২৪ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৩৪

এভো বলেছেন: কোরান ৪৮:১৬ – তোমরা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ-না তারা মুসলমান হয়ে যায়।

একটু ব্যাখা করবেন কি ? মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কেন যুদ্ধ করে যেতে হবে ? তারা যদি কাফের থেকে সারেন্ডার করে , সেটা চলবে না -- মুসলমান হতেই হবে ?
সুরা তওবার ৫ নং আয়াত -- অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।


এই আয়াতটা কোন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নাজিল হয়েছিল বলবেন কি ?
তাদের হত্যা করার কথা বলা হয়েছে -- যদি তারা তওবা করে , নামাজ কায়েম করে , যাকাত আদায় করে ---- অর্থাৎ তারা যদি মুসলমান হয়ে যায় তাহোলে ছেড়ে দিতে হবে এবং যদি মুসলমান না হয় তাহোলে হত্যা করতে হবে । ইসলাম ধর্ম গ্রহন করলে বেচে যাবে , না করলে মেরে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ আছে এই আয়াতে ।
বাচতে চাও তো ইসলাম ধর্ম গ্রহন কর , না করলে মৃর্তু
একটু ব্যাখা করবেন কি ?

২৫ শে অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:২৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ এভো ভাই, আপনার মন্তব্য এবং পড়ার জন্য ।

সুরা বাকারার আয়াত নং - ১৯১ এবং সুরা তওবার আয়াত নং - ৫ এ বলা হয়েছে,

" অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা কর , তাদেরকে পাকড়াও কর , অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক; কিন্তু যদি তারা তাওবাহ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও ; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু" । ( সুরা তওবা, আয়াত - ৫ )।

‘আর মাসজিদুল হারামের (কা’বা শরীফের) নিকট তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করো না; যতক্ষণ না তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে। যদি তারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে তোমরা তাদেরকে হত্যা কর।’’ (সূরা বাকারাহ, আয়াত - ১৯১ )

ভাই , কেউ কেউ আল্লাহর বাণী, " তাদেরকে যেখানে পাবে হত্যা করবে " - এ বাণীর ভুল ব্যাখ্যা করে ইসলামকে জংগীবাদের প্রেরণাদায়ক বলে অপবাদ দেয়, তারা মূলতঃ এ আয়াতের অর্থ বুঝতে চেষ্টা করেন না। কারণ, এই আয়াতে " তাদেরকে " বলে ঐ সমস্ত কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে, যাদের বর্ণনা পূর্ববতী ও পরবর্তী আয়াতে এসেছে।

কেননা, পূর্ববতী আয়াতে কাফেরদের হত্যা করার জন্য শর্ত দেয়া হয়েছে দু'টি -

১। তারা তোমাদের সাথে যুদ্ধকারী সম্প্রদায় হবে।
২। তোমরা যদি এসব যুদ্ধবাজ কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর, তবুও তোমরা যেহেতু মানবতার জন্য রহমতস্বরূপ সেহেতু হত্যা করতে সীমালংঘন করোনা। যুদ্ধরত কাফেরদের ছাড়া অন্যান্য সাধারণ কাফেরদের হত্যা করার মাধ্যমে আল্লাহর নির্ধারিত সীমা লংঘন করোনা। যেমন, শিশু, অসুস্থ আঘাতপ্রাপ্ত, নারী এ জাতীয়দের হত্যা করা থেকে বিরত থাকবে।

পরবর্তী আয়াতসমূহে আরও কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে -

৩। যদি যুদ্ধবাজ কাফেররা যুদ্ধ করা থেকে বিরত হয় তবে তোমরা তৎক্ষণাত যুদ্ধ ত্যাগ কর।
৪। তোমাদের উপর যতটুকু আক্রমণ হবে তোমরা ততটুকুই শুধু আক্রমণ করবে।
৫। তোমাদের যুদ্ধের অন্যতম উদ্দেশ্য হলোঃ ক) ফিতনা তথা যাবতীয় বিপর্যয়, শান্তিভংগ, ঘর-বাড়ি থেকে বহিস্কার, যুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন, শির্ক, অসৎপথ ইত্যাদি থেকে মানুষকে উদ্ধার করা। খ) তোমাদের ইবাদাত তথা আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলতে যেন তারা বাধা না হয়। গ) তারা যেন তোমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র না করতে পারে। ঘ) তোমরা যে হক বা সত্যের অনুসারী, তার প্রচার ও প্রসারে সহায়তা করা। এ পথের বাধা দূর করা।

আবার, এ কথা তো অবশ্যই সত্য ও সর্বজনবিদিত যে, নরহত্যা নিকৃষ্ট কর্ম, কিন্তু মক্কার কাফেরদের কুফরী ও শির্কের উপর অটল থাকা এবং মুসলিমদেরকে উমরাহ ও হজের মত ইবাদাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা অতি গুরুতর ও কঠিন অপরাধ। এরূপ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার কারণেই তাদেরকে হত্যা করার অনুমতি প্রদান করা হল। আলোচ্য আয়াতে উল্লেখিত (ফেতনাহ) শব্দটির দ্বারা কুফর, শির্ক এবং মুসলিমদের ইবাদাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকেই বোঝানো হয়েছে।(আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস ও তাফসীরে কুরতুবী)।

পূর্ববতী আয়াতের ব্যাপকতার দ্বারা বোঝা যায় যে, কাফেররা যেখানেই থাকুক না কেন, তাদেরকে হত্যা করা শরীআতসিদ্ধ। আয়াতের এই ব্যাপকতাকে এই বলে সীমিত করা হয়েছে," মসজিদুল হারামের পার্শ্ববর্তী এলাকা তথা পুরো হারামে মক্কায় তোমরা তাদের সঙ্গে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করো না, যতক্ষণ না তারা নিজেরাই তোমাদের উপর আক্রমণোদ্যত হয়"। সাধারণতঃ মক্কার সম্মানিত এলাকা তথা হারাম এলাকায় মানুষ তো দূরের কথা, কোন পশু হত্যা করাও জায়েয নয়। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা জানা গেল যে, যদি কেউ অপরকে হত্যায় প্রবৃত্ত হয়, তার প্রতিরোধকল্পে যুদ্ধ করা জায়েয। এ মর্মে সমস্ত ফেকাহবিদগণ একমত।

আবার, ইসলাম গ্রহণ করার পর নামায কায়েম করা ও যাকাত প্রদান করা জরুরী। যদি কোন ব্যক্তি তার মধ্যে কোন একটি ত্যাগ করে, তাহলে তাকে মুসলিম ভাবা যাবে না। যেমন আবু বাকর সিদ্দীক (রাঃ) এই আয়াত থেকে দলীল গ্রহণ করে যাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। আর বলেছিলেন যে," আল্লাহর কসম! আমি সেই সব লোকদের বিরুদ্ধে অবশ্যই লড়ব, যারা নামায ও যাকাতের মাঝে পার্থক্য করবে"। (বুখারী, মুসলিম) অর্থাৎ, নামায তো পড়ে; কিন্তু যাকাত প্রদান করে না। এখানে কুফরী ও শির্কী থেকে মুক্তির আলামত হিসাবে সালাত আদায়ের সাথে সাথে যাকাত প্রদানের কথাও বলা হয়েছে।

৯| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৩

এভো বলেছেন: সুরা বারাকার ১৯১ আয়াত এবং সুরা তওবার ৫ নং আয়াতের সময় কাল এবং প্রেক্ষাপট ভিন্ন । সুরা তওবা নাজিলহু নবী সা: এর মৃর্তুর কয়েক মাস আগে , কোন যুদ্ধের পরিস্থিতি মক্কায় ছিল না যখন মক্কা মদিনা মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে ---

সুরা তওবা আয়াত নং ৫ (৯:৫)
“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

এই আয়াতের যদি আক্ষরিক অর্থ করা হয় তাহলে এর দ্বারা আল্লাহ কর্তৃক নিম্নক্ত নির্দেশাবলী প্রতীয়মান হয়ঃ

আল্লাহ মুসলিমদের মুশরিকদের হত্যা করতে আদেশ দিয়েছেন, পৃথিবীর যেখানেই তাদের পাওয়া যাক না কেন।
মুশরিকদের হত্যা করার জন্য বসে না থেকে সক্রিয় ভাবে তাদের খুঁজে বের করে হত্যা করতে হবে।
তাদের বন্দী বা হত্যা করার জন্য ওঁৎ পেতে বসে থাকতে হবে।
তাদের আবাসস্থল অবরোধ করতে হবে।
যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন না করে ততদিন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে যাতে ইসলাম গ্রহন ছাড়া আর কোন উপায় না থাকে।
এই আয়াতের, “মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও” এই অংশটি কোরান শরীফের সবচেয়ে অমানবিক ও বর্বর আয়াত কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকতে পারে, তবে এই আয়াতকে মানবিক প্রমান করতে বা নিদেন পক্ষে এই আয়াতে যে নির্বিচারে সকল কাফির- মুশরিকদের হত্যা করতে বলা হয় নাই এটা প্রমান করতে মোডারেট ইস্লামিস্ট ভাইদের (Muslim apologists) শত শত লেখা আর ইউটিউব ভিডিও আপনারা হয়ত দেখে থাকবেন। অপরপক্ষে, এই তরবারির আয়াত জঙ্গি-জিহাদি ও ইসলামি রাজনৈতিক দলদের বহুল ব্যাবহারিত মূলমন্ত্র। সুরা তাওবা নবি মোহাম্মদ (দঃ) এর মাদানি জীবনের শেষ দিকে নাজিলকৃত প্রধান সুরা বিধায় এর নির্দেশনা নবির তথা আল্লাহর চূড়ান্ত নির্দেশ বলে মেনে নিতে হবে। এই সুরায় নবি মোহাম্মদ (দঃ) মুমিন মুসলমানদের সাথে কাফির- মুশরিক বা অমুসলমানদের কি সম্পর্ক হবে, তাদের খুন করবার বিধান , জিহাদের গুরুত্ব ও একটি ইসলামি রাষ্ট্র বাবস্থার ধারনা দিয়েছেন। ইসলামে পুরুষদের উপর জিহাদের গুরুত্ব আর নারীদের উপর পর্দার গুরুত্ব হযরত ওমরের নিচের এই ফরমানেই সহজে বোধগম্য।

তরবারির
(সুত্রঃ তাফসীরে জালালাইন দ্বিতীয় খণ্ড পৃষ্ঠা ৬১৯, প্রকাশনায় ইসলামিয়া কুতুবখানা, প্রকাশকাল ২০১০)

সুরা তওবার এই অপরিসীম গুরুত্ব ও বর্তমান জামানায় এর প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনা করে এই সুরার ৫ নং আয়াতের বিস্তারিত তাফসীর ও কার্যকারিতা একটি পূর্নাঙ্গ আলোচনার দাবি রাখে। এই বিবেচনায়, এই তরবারির আয়াতের প্রেক্ষাপট, আগের আয়াত, পরের আয়াত পাঠকদের কথা স্মরণ রেখে সহজ ভাবে উপস্থাপনা করাই আমার এই লেখার উদ্দেশ্য। সন্মানিত পাঠককুলকে অনুরোধ করব দয়া করে তথ্যসুত্রে দেওয়া রেফারেন্স সমুহ অধ্যয়ন করে আরও বিস্তারিত জ্ঞান লাভ করবেন ও আমার লেখাটির বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করবেন।

নবী মহাম্মাদ (দঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী ও টাইম লাইন
৫৭০ – মক্কায় জন্ম
৫৭৬ – মাতার মৃত্যুর পর এতিম
৫৯৫ – ধনী ব্যাবসায়ী খাদিজার সাথে বিবাহ
৬১০- ৪০ বছর বয়সে প্রথম ওহী নাজিলের খবর
৬১৯ – নবির নিরাপত্তা প্রদানকারী চাচা আবু তালিবের মৃত্যু
৬২০ – বোরাকে চড়ে মিরাজ গমন ও আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ
৬২২ – মক্কা হতে মদিনায় হিজরত ও আশ্রয় লাভ
৬২৩ – মক্কার বাণিজ্য কাফেলার উপর হামলা ও লুট করার আদেশ প্রদান
৬২৪ – বদরের যুদ্ধ (জয়লাভ)
৬২৪ – মদিনার ইহুদি গোত্র বানু কাইনুকাকে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ
৬২৪ – নবী মহাম্মাদ (দঃ) এর বিরুদ্ধে কবিতা লেখায় ইহুদি কবি আবু আফাক এর হত্যার আদেশ
৬২৪ – কবি আবু আফাক এর হত্যার বিরুদ্ধে কবিতা লেখায় মহাম্মাদ (দঃ) কর্তৃক কবি আসমা বিনতে মারওয়ানকে হত্যার আদেশ
৬২৪ – নবি মহাম্মাদ (দঃ) কর্তৃক ইহুদি কবি কাব বিন আশরাফকে হত্যার আদেশ
৬২৫ – উহুদের যুদ্ধ (পরাজিত)
৬২৫ – মদিনার ইহুদি গোত্র বানু নাদিরকে ভিটে মাটি থেকে উচ্ছেদ
৬২৭ – খন্দকের যুদ্ধ (জয়লাভ, প্রকৃত অর্থে কোন যুদ্ধ হয় নাই)
৬২৭ – মদিনার ইহুদি গোত্র বানু কুরাইযার ৯০০ পুরুষ হত্যা। নারি ও শিশুদের মালে গনিমত হিসাবে ভাগ বাটোয়ারা ও ইয়ামেনে দাস-দাসীর বাজারে বিক্রয় বিনিময়ে মুসলিমদের জন্য অস্ত্র ক্রয়
৬২৮ (৬ হিজরি) – মক্কায় হজ্জ পালনের নিরাপত্তার জন্য মক্কার মুশরিকদের সাথে হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি স্বাক্ষর
৬২৮ – খাইবার আক্রমন, ইহুদি নিধন ও জীবিতদের উপর জিজিয়া কর আরোপ
৬২৯ – খ্রিস্টান ভুমিতে মুতা যুদ্ধের আদেশ (পরাজিত)
৬৩০ (৮ হিজরি) – আকস্মিক হামলায় মক্কা বিজয়
৬৩১ (৯ হিজরি) – খ্রিস্টান ভুমিতে দ্বিতীয় অভিযান তাবুকের যুদ্ধে নেতৃত্ব দান (কোন যুদ্ধ হয় নাই, কোন শত্রু সেনা ছিল না )
৬৩২ (১০ হিজরি) – নবীর ইন্তেকাল
উপরে বর্ণিত ঘটনার আলোকে তরবারির আয়াত সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক ঃ

মাদানি সুরা তওবার প্রথম অংশ নাজিল হয় যখন নবি তাবুক যুদ্ধের অভিযান থেকে ফিরে আসছিলেন।
ইমাম বুখারির মতে এটি নবির উপর নাজিলকৃত সর্বশেষ সুরা (অন্য বর্ণনায় সুরা নাস সর্বশেষ সুরা)
(সুত্রঃ তাফসীর ইবনে কাসীর,চতুর্থ সংস্করণ জানুয়ারী ২০০৪, অনুবাদক ঃ ডাঃ মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান, প্রকাশক ঃ তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি, ৮,৯,১০,১১ তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৬৩৩)

কোরানের একমাত্র সুরা যার শুরুতে বিসমিল্লাহ নেই। কিছু সাহাবী এটিকে সুরা আনফালের সাথে এক সুরা মনে করেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হযরত আলির বরাত দিয়ে বলেন ঃ বিসমিল্লাতে রয়েছে শান্তি ও নিরাপত্তা, আর এই সুরাতে কাফিরদের বিরুদ্ধে তরবারি ব্যাবহারের আদেশ রয়েছে এজন্য বিসমিল্লাহ লিপিবদ্ধ হয়নি যেন আল্লাহপাকের গজবের নিদর্শন প্রতিভাত হয়।
সুরা তাওবার প্রায় ১২ টি নামের বর্ণনা তাফসীরে জালালাইনে আছে। এই সুরার অন্য প্রচলিত নাম বারাআত বা সম্পর্কছেদ, মোকাশকাশা বা ঘৃণা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি।
সুরা তওবার নং ৫ আয়াত কি যুদ্ধকালীন আয়াত?

প্রশ্নঃ তরবারির আয়াত (The sword verse) বা সুরা তওবার নং ৫ আয়াত কি যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধের নিয়ম সংক্রান্ত আয়াত ?

উত্তরঃ না, এটি মোটেও যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধের নিয়ম সংক্রান্ত আয়াত নয়। তরবারির আয়াতটি নাজিল হয় নবম হিজরিতে ও নবি যখন তাবুকের যুদ্ধ হতে মদিনায় ফিরছিলেন। এই আয়াতটিতে “মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও” বলতে নবি মক্কা ও এর আশেপাশের কাফিরদের বুঝিয়েছেন। এর আগের বছর অর্থাৎ অষ্টম হিজরিতেই প্রায় বিনা যুদ্ধে নবি মক্কা বিজয় করেছেন আর সেখানকার কাফির- মুশরিকরা বিনা শর্তে মুসলিম বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল এবং মক্কায় নবির হুকুমতই জারি ছিল, নবির পক্ষ থেকে আত্তাব ইবনে আসিদ ছিলেন মক্কার দায়িত্বপ্রাপ্ত ১। কাজেই এই তরবারির আয়াতটি নবির সাথে সম্পূর্ণ শান্তি অবস্থায় থাকা কাফিরদের বিরুদ্ধে একতরফা হত্যার হুমকি। এই আয়াতটি মোটেও তাবুক যুদ্ধের নিয়ম সংক্রান্ত আয়াত নয়, উপরুন্তু তাবুক যুদ্ধে বাস্তবিক কোন যুদ্ধ হয়নি, যা পরে আলোচনায় আসবে।

তাবুকের যুদ্ধ
(তাবুকের যুদ্ধের প্রস্তুতির জন্য আহ্বান, সাহাবীদের জিহাদে যেতে গড়িমসি ইত্যাদি বিষয় সুরা তওবায় উঠে আসলেও তরবাবির আয়াতের সাথে এর সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই, পাঠক যারা শুধু তরবাবির আয়াতের তাফসীরের ব্যাপারে জানতে ইচ্ছুক তারা তাবুকের যুদ্ধের এই অধ্যায় বাদ দিয়ে যেতে পারেন)

অষ্টম হিজরিতে নবি মোহাম্মাদ (দঃ) মক্কা বিজয়ের পর অত্র ও আশেপাশের এলাকায় মুসলিম বাহিনীর আধিপত্য নিশ্চিত হয় ও হুনায়ুনের যুদ্ধ ও অন্যান্য ছোট ছোট যুদ্ধের মাধ্যমে পুরা অঞ্চল মুসলিম বাহিনীর করায়াত্ত হয়ে যায়। এর বেশ আগে থেকেই নবি মোহাম্মাদ (দঃ) বিভিন্ন দেশে দুত পাঠিয়ে উনার নবুয়ত ও আল্লাহর আনুগত্য মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান, এই সব দেশের মধ্যে বাইজেনটাইন বা রোমান সম্রাট হেরাক্লিস, পারশ্য সম্রাট, মিসরের মুকাওকিস, হাবাসা সম্রাট, বাহারাইনের গভর্নর অন্যতম। বলা বাহুল্য ইনারা কেও নবি মোহাম্মাদ (দঃ) এর এই দাবি মেনে নেন নি। তবে নবি ও তার সাহাবীরা রোমান সম্রাজ্য থেকে হামলার ভয়ে ভীত থাকত। এর পূর্বে জর্ডানের নিকট মুতার যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী রোমানদের কাছে শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়েছিল যেই যুদ্ধে মোহাম্মাদ (দঃ) এর পালক পুত্র ও নবিপত্নি জয়নাব বিনতে জাহাশের প্রাক্তন স্বামী জায়েদ ইবনে হারিথা, নবির চাচাত ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব সহ বহু সাহাবী নিহত হয়, পরিশেষে খালিদ বিন ওয়ালিদের নেতৃেত্ব মুসলিম বাহিনী প্রান রক্ষা করে মদিনায় ফিরে যায় এবং ফিরে আসা সেনারা বিদ্রুপের মুখে পড়ে। এক সময় মদিনায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে রোমানরা মদিনা আক্রমন করতে পারে। এইসব মাথায় রেখে নবি মোহাম্মাদ (দঃ) সকল মুসলিমকে জান-মাল কোরবানি করে তাবুক যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং নবি জীবনে সর্ববৃহৎ ৩০,০০০ সেনা নিয়ে তাবুক যাত্রা করেছিলেন। তবে বিবিধ অজুহাতে মুসলিমরা এই যুদ্ধে না যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। রোমানদের ব্যাপারে ভীতি ছাড়াও যে সব কারন ছিল তার মধ্যে উত্তপ্ত আবহাওয়া, যাত্রা দূরত্ব, সেই সময় খাদ্য সল্পতা, খরা ও খেজুর পাকার মৌসুম ইত্যাদি। নবি রোমানদের কাছে পরাজিত হবেন এই মর্মে মুনাফিকদের রটনাও নবিকে বিচলিত করে তুলেছিল। সুরা তওবার বিভিন্ন আয়াতে তাই এই জিহাদে সামিল হওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি, লোভ,ভয়, হুমকি সবই ফুটে উঠেছে।

“আর তাদের কেউ বলে, আমাকে অব্যাহতি দিন এবং পথভ্রষ্ট করবেন না। শোনে রাখ, তারা তো পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট এবং নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এই কাফেরদের পরিবেষ্টন করে রয়েছে।”
( সুরা তাওবা ৯:৪৯ )

আয়াতটি নাজিল হয়েছে জাদ ইবনে কাইস এর ক্ষেত্রে, যিনি মুসলমান হলেও তাকে মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয় কিন্তু তিনি তার নিজ গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ লোক । নবি যখন তাবুকের যুদ্ধের জন্য সকলকে জান মাল কোরবান করার আহ্বান জানাচ্ছিলেন, এরই অংশ হিসাবে নবি জাদ ইবনে কাইসকে বলেন “ওহে আবু ওয়াহাব (জাদ ইবনে কাইস এর নাম) তুমি কি কিছু রোমান নারিকে যৌন দাসী ও পুরুষদের দাস হিসাবে লাভ করতে চাও?” উত্তরে জাদ ইবনে কাইস বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমার লোকজন নারিদের প্রতি আমার বিশেষ আসক্তির কথা জানে। আমি আশঙ্কা করছি যে শ্বেতাঙ্গ রোমান রমণীদের দেখে আমি আর নিজেকে সামলাতে পারব না। কাজেই আমাকে আর লোভ দেখাবেন না, বরং আমাকে যুদ্ধে যাওয়া থেকে অবহতি দিন, আমি আমার সম্পদ দিয়ে আপনার জিহাদে সাহায্য করব।২

“হে ঈমানদারগণ, তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হবার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।“ ( সুরা তাওবা ৯:৩৮ )

“যদি বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের মর্মন্তুদ আযাব দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। তোমরা তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে শক্তিমান।“ ( সুরা তাওবা ৯:৩৯ )

“তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে এবং জেহাদ কর আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ও জান দিয়ে, এটি তোমাদের জন্যে অতি উত্তম, যদি তোমরা বুঝতে পার।“ ( সুরা তাওবা ৯:৪১ )

“পেছনে থেকে যাওয়া লোকেরা আল্লাহর রসূল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বসে থাকতে পেরে আনন্দ লাভ করেছে; আর জান ও মালের দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করতে অপছন্দ করেছে এবং বলেছে, এই গরমের মধ্যে অভিযানে বের হয়ো না। বলে দাও, উত্তাপে জাহান্নামের আগুন প্রচন্ডতম। যদি তাদের বিবেচনা শক্তি থাকত।“ ( সুরা তাওবা ৯:৮১ )

নবি মোহাম্মাদ (দঃ) তাবুকে পৌছিয়ে সেখানে কোন রোমান সৈন্য সমাবেশ দেখতে পাননি এবং বুঝতে পারেন যে রোমান আক্রমনের গুজবটি অতিরঞ্জিত। (Ref: The Life of Muhammad: Al-Waqidi’s Kitab Al-Maghazi (Routledge Studies in Classical Islam ) Edited by Rizwi Faizer, Published by Routledge 2011. Page 16451.Kindle version; Baladhuri, Ansab I, 368. ). নবি তাবুকে ১০ দিনের কম অবস্থান করেন এবং উমরের সাথে পরামর্শ করে কোন যুদ্ধ না করেই মদিনা প্রত্যাবর্তন করেন, তবে পথে বেশ কিছু গোত্রকে জিজিয়া করের আওতায় নিয়ে আসেন। (হালের বানানো নবির জীবনী যেমন মুবারকপুরি রচিত আর- রাহীকুল মাখতুম কিতাব ও বিভিন্ন ইসলামি বক্তা দাবী করেন যে রোমান বাহিনী নবির বাহিনী দেখে পালিয়ে গিয়েছিল, এটা পুরোটাই গাঁজাখুরি ধাপ্পাবাজি, এর কোনই ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। প্রদত্ত রেফারেন্স ছাড়াও ইবনে ইসহাক বা আল তাবারির লেখায় তাবুকে বাইজেনটাইনদের সাথে যুদ্ধের অথবা রোমান সেনাদল পালিয়ে যাওয়ার কোন বর্ণনা নাই , আধুনাকালের সিরাত লেখক আর প্রায় সব ইসলামিক ওয়েব সাইট সমুহ সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তাবুক অভিযানকে ইসলামের গৌরবগাঁথা হিসাবে বর্ণনা করেন)

নবির মদিনায় ফিরে আসার খবরে তাবুক যুদ্ধে না যাওয়া সাহাবীগণ নবি মোহাম্মাদ (দঃ) এর রোষানলে পড়ার ভয়ে ভীত হয়ে পড়েন এবং নবির কাছে নানা অজুহাত পেশ করতে থাকেন। ইসলামে ও নবির কাছে জিহাদ যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, এই অজুহাতকারিদের প্রতি নাজিলকৃত আয়াতগুলো লক্ষ্য করলে বুঝা যায়।

“তুমি যখন তাদের কাছে ফিরে আসবে, তখন তারা তোমাদের নিকট ছল-ছুতা নিয়ে উপস্থিত হবে; তুমি বলো, ছল কারো না, আমি কখনো তোমাদের কথা শুনব না; আমাকে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করে দিয়েছেন। আর এখন তোমাদের কর্ম আল্লাহই দেখবেন এবং তাঁর রসূল। তারপর তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে সেই গোপন ও আগোপন বিষয়ে অবগত সত্তার নিকট। তিনিই তোমাদের বাতলে দেবেন যা তোমরা করছিলে। “( সুরা তাওবা ৯:৯৪ )

“এখন তারা তোমার সামনে আল্লাহর কসম খাবে, যখন তুমি তাদের কাছে ফিরে যাবে, যেন তুমি তাদের ক্ষমা করে দাও। সুতরাং তুমি তাদের ক্ষমা কর-নিঃসন্দে হে এরা অপবিত্র এবং তাদের কৃতকর্মের বদলা হিসাবে তাদের ঠিকানা হলো দোযখ।“ ( সুরা তাওবা ৯:৯৫ )

নবি অবশ্য তিন জন মুমিন সাহাবী কাব বিন মালিক, মোরারা বিন রাবি ও হেলাল বিন উমাইয়ার তাবুক যুদ্ধে না যাওয়ার তওবা গ্রহন করেন, তবে এর আগে তাদেরকে ৫০ দিনের জন্য নিজ বিবি, পরিবার-পরিজন ও সমাজ থেকে বয়কট মানসিক শাস্তি দেওয়া হয়। সুরা তওবা নামকরনের এটাই শানে নাজুল। কাজেই নবি জেহাদকে কতোটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন এ থেকেই পাঠকরা অনুধাবন করতে পারবেন।

প্রেক্ষাপট ও তাফসীর বিশ্লেষণ
তরবারির আয়াত (The sword verse) বা সুরা তওবা আয়াত নং ৫ এর প্রেক্ষাপট ও তাফসীর বিশ্লেষণ

সুরা তওবার আয়াত ১ থেকে ৪ঃ

১। সম্পর্কচ্ছেদ করা হল আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে সেই মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলে।

২। অতঃপর তোমরা পরিভ্রমণ কর এ দেশে চার মাসকাল। আর জেনে রেখো, তোমরা আল্লাহকে পরাভূত করতে পারবে না, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফেরদিগকে লাঞ্ছিত করে থাকেন।

৩। আর মহান হজ্বের দিনে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের পক্ষ থেকে লোকদের প্রতি ঘোষণা করে দেয়া হচ্ছে যে, আল্লাহ মুশরেকদের থেকে দায়িত্ব মুক্ত এবং তাঁর রসূলও। অবশ্য যদি তোমরা তওবা কর, তবে তা, তোমাদের জন্যেও কল্যাণকর, আর যদি মুখ ফেরাও, তবে জেনে রেখো, আল্লাহকে তোমরা পরাভূত করতে পারবে না। আর কাফেরদেরকে মর্মান্তিক শাস্তির সুসংবাদ দাও।

৪। তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি বদ্ধ, অতপরঃ যারা তোমাদের ব্যাপারে কোন ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সাহায্যও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তিকে তাদের দেয়া মেয়াদ পর্যন্ত পূরণ কর। অবশ্যই আল্লাহ সাবধানীদের পছন্দ করেন।

সুরা তাওবার প্রথম ৫ টি আয়াতে বর্ণিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও বাক্যের বিশ্লেষণঃ

“সম্পর্কচ্ছেদ”

সুরা তওবা শুরু হয়েছে নবি তথা আল্লাহর তরফ থেকে মুশরিকদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণার মাধ্যমে এবং ৫ নং তরবারির আয়াতে কতল করার হুমকির পূর্বে ৪ মাসের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী আলোচনায় দেখা যাবে যে আল্লাহ ও নবির সাথে এই সম্পর্কচ্ছেদের আওতায় চুক্তি ভুক্ত বা অচুক্তিভুক্ত সকল বিধর্মীই অন্তরভুক্ত, যেমনটি বলা হয়েছে নিম্নে বর্ণিত তাফসীরে মাযহারিতে। তবে এই তাফসিরে ভুলে তাবুক যুদ্ধের চুক্তি ভঙ্গকারী বলা হয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে হবে হুদাইবিয়ার চুক্তি । চুক্তির বিষয়টি পরে বিস্তারিত ভাবে আলোচনায় আসবে।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ এভো ভাই, অনেক কিছু জানলাম আপনার শেয়ার থেকে।

১০| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:২০

এভো বলেছেন: তারা চায় যে, তারা যেমন কাফের, তোমরাও তেমনি কাফের হয়ে যাও, যাতে তোমরা এবং তারা সব সমান হয়ে যাও। অতএব, তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর পথে হিজরত করে চলে আসে। অতঃপর যদি তারা বিমুখ হয়, তবে তাদেরকে পাকড়াও কর এবং যেখানে পাও হত্যা কর। তাদের মধ্যে কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না এবং সাহায্যকারী বানিও না।
কুরআন ৪ঃ৮৯


এই আয়াতের ব্যাখা কি ভাই ------ অমুসলিমদের বন্দ্ধু হিসাবে গ্রহন করতে মানা করা হচ্ছে --- যতক্ষন তারা মুসলমান না হয় । যদি তারা ইসলাম গ্রহন না করে তাহোলে তাদের পাকড়াও কর এবং হত্যা কর । এই আয়াতে এটা কি বোঝান হচ্ছে না যে -- অমুসলিমদের ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পর যদি তারা না গ্রহন না করে , তাহোলে তাদের পাকড়াও কর এবং হত্যা কর ?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ এভো ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য ।

এর জবাব আপনার ৮ নং মন্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে।

১১| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৫৬

বিটপি বলেছেন: এই আয়াতের শুরুতে যে 'তারা' উল্লেখ করা হয়েছে, এরা কারা বলুন তো? অমুসলিমরা। না । আপনি ভুল ভাবছেন। এই তারা হচ্ছে বিশেষ এক ধরণের 'মুসলিম' যাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এবার জিজ্ঞেস করুন কোন ধরণের মুসলিম এরা, যাদেরকে সাহায্যকারী বানাতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন!

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বিটপী , আপনার মন্তব্যের জন্য ।

এর জবাব এভো ভাইকে ৮ নং মন্তব্যের জবাবে বলা হয়েছে। তারপরও আপনার জবাবের জন্য শুকরিয়া। মহান আল্লাহপাক আমাদেকে সকলকিছু সঠিকভাবে জানার-বুঝার তওফিক দিন।

১২| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ সকাল ১০:১৫

এভো বলেছেন: বিটপি বলেছেন: এই আয়াতের শুরুতে যে 'তারা' উল্লেখ করা হয়েছে, এরা কারা বলুন তো? অমুসলিমরা। না । আপনি ভুল ভাবছেন। এই তারা হচ্ছে বিশেষ এক ধরণের 'মুসলিম' যাদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। এবার জিজ্ঞেস করুন কোন ধরণের মুসলিম এরা, যাদেরকে সাহায্যকারী বানাতে আল্লাহ নিষেধ করেছেন!
--- যদি আপনার কথা ঠিক হয় , তাহোলে ভিন্ন মতালম্বি মুসলমানদের হত্যা করতে বলা হয়েছে , মনে করুন কেউ , তালেবান, জামাত , মওদুদী বাদি আদর্শকে মেনে না নিবে, তখন সে সব মুসলমানদের পাকড়াও কর এবং হত্যা কর ।
তার মানে সালাফি, ওহাবি , দেওবন্ধ ইত্যাদি যারা যেখানে শক্তিশালী , তারা তখন অন্য মতের মুসলমানদের পাকড়াও করে হত্যা করবে , যদি তাদের পথে না আসে ।
তাহোলে এ কারনে কি আই এস আই , জামাত , তালেবানরা ভিন্ন মতের মুসলমানদের হত্যা করে ?

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: না এভো ভাই, ইসলাম কোন ভাবেই কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যায় সমর্থন করেনা।

উক্ত আয়াত নাজিলের প্রেক্ষাপট এবং প্রয়োগের ব্যাপারে আপনাকে তার আগে-পরের আয়াতগুলি ভালভাবে দেখার অনুরোধ রইলো।

১৩| ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২৬

বিটপি বলেছেন: আপনি এবারো কিছু বুঝেন নি। এই 'তারা' মানে ভিন্ন মতাদর্শী মুসলিম নয় - রাসূলের যুগে কোন তালেবান জামাত, মওদূদী, ওহাবী, সালাফি - এগুলো ছিলনা। কিন্তু সেই বিশেষ ধরণের মুসলিম ছিল। তারা কারা, কি তাদের পরিচয় - সেটা জানার জন্য পড়ুন সূরা নিসা'র ৮৮ নং আয়াত। তাহলে আপনার ভুল ভাঙবে আশা করি।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:৩১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বিটপি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.