নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" শাশুড়ি " - ( গল্প ) ।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:৫১

উৎসর্গ - ব্লগার শায়মা বোনকে, যার আগ্রহে এবং অনুপ্রেরনায় গল্প লেখার এ প্রয়াস।

ছবি - alamy.com

এক

বাড়ীর বড় বউ আশার রুমে এসে বলল শাশুড়ি তাকে ডেকেছে। মাত্র দুই দিন আগে বিয়ে হয়েছে আশার। হঠাৎ করে শাশুড়ির জরুরী তলবের পর এ বাড়ীর আরও তিন বউয়ের সাথে সাথে সেও দাড়িয়ে আছে শাশুড়ির রুমে। শ্বশুর বাড়ীতে একদিন যেতে না যেতেই শাশুড়ির সকাল সকাল জরুরী তলব পেয়ে ভয় পেয়ে যায় আশা। কিন্তু করোর কাছে যে জিজ্ঞাসা করে জানবে কেন ডেকেছে শাশুড়ী, সে সুযোগ ও তার মিলেনি। তাই সে হন্তদন্ত হয়ে শাশুড়ীর রুমে এসে হাজির হয়েছে।

তার এই অবস্থা দেখে শাশুড়ী খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, " ভয় পাওয়ার কিছু নেই ছোট বউ। বাড়ীর উত্তরে যে জামরুল ও কদবেল গাছ আছে, এই দুই গাছের মাঝে একখানা নারিকেল গাছ লাগানোর দায়িত্ব তোমার।আর শুধু লাগালেই হবেনা।মাঝে মাঝে সেই গাছের যত্ন ও পরিচর্যাও করতে হবে তোমাকে "।

বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ীতে আসার মাত্র একদিন গেল। এর মাঝেই নারিকেল গাছ লাগানোর কথা শুনে আশার যেমন ভয় লাগল তেমনি রাগও হল।আর মনে মনে ভাবতে লাগল,"এ কোথায় এসে পড়লাম আমি "? এই সব ভাবতে ভাবতে আশা চুপচাপ দাড়িয়ে আছে শাশুড়ীর রুমে।

আশার কোন জবাব না পেয়ে শাশুড়ী একটু কঠিন করে বললো, " আমার কথা কি বুঝনি ছোট বউ " ?
আশা জবাবে বলল, " বুঝেছি আম্মা"।
বুঝলে ভালো। বড় বউ তোমাকে সব দেখিয়ে দিবে। এই বাড়ীর বউ হয়ে আসছ,কাজ কর্ম মন দিয়ে করা লাগবে ছোট বউ।
" জি আম্মা " - জবাব দিল আশা।

শাশুড়ী এবার একটু রাগী চোখে মেজ বউয়ের দিকে তাকাল।মেজ বউ আমতা আমতা করে বলল," আম্মা,দোষটা আমার।আমাকে আপনি মাফ করে দেন।এমন ঘটনা আর হবেনা আমার দ্বারা "।কথাগুলো বলেই মেজবউ ফুপিয়ে কেঁদে উঠল।

মেজ বউয়ের কান্না দেখে শাশুড়ী খুব রেগে গিয়ে বললেন,"দোষ যে তোমার সেটা আমি আগেই জানতাম।তোমার তো কঠিন শাস্তি হওয়া উচিত বউমা।তোমার বাপের বাড়ী খবর দেওয়া উচিত কিন্তু আমি চাইনা এ বাড়ীর খারাপ কোন সংবাদ বাইরের মানুষের কাছে যাক।এ বিষয়ে আমিই বিচার করব।এই সংসার আমার,এখানে অন্যায় কোন কিছু আমি বরদাশত করবো না"।
কথা শেষ করে শাশুড়ী বির বির করে আরও কিছু বললেন যদিও সেগুলি বুঝা যায়নি। সবাই নিরবে দাড়িয়ে আছে।আশা কি করবে বা কি হচছে এসব - কিছুই বুঝতেছিলনা।

হঠাৎ করে শাশুড়ী বললেন, " তোমরা সবাই যাও"।

শাশুড়ীর রুম থেকে বেরিয়ে আসার পর সবকিছু কেমন উল্টাপাল্টা লাগছে আশার নিকট। আবার মেজভাবীর কান্না দেখেও তার খুব খারাপ লাগছে যদিও আশা বুঝতে পারছেনা ব্যাপারটা আসলে কি ? তার পরও সবকিছু মিলিয়ে আশার প্রচন্ড রাগ হচছে তার শাশুড়ীর উপর। একজন শাশুড়ী যদি এমন করে বাড়ীর বউদের শাসন করে তবে তা কিছুতেই মেনে নেয়া যাবেনা, ভাবতে থাকে আশা। আর মনে মনে বলতে থাকে," আমিও চৌধুরী বাড়ীর ছোট মেয়ে।আমার উপর এসব খবরদারী চলবে না"।আশা মনে মনে আরো সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে গাছ লাগাবেনা। ইচছে করেই গাছ লাগাবেনা, দেখি শাশুড়ী আমার কি করে ?

এভাবে কয়েক দিন চলে যায়। যদিও এর মাঝে বড় বউ কয়েকবার তাড়া দিয়েছে গাছ লাগানোর জন্য তবে আশা ইচছা করেই এড়িয়ে গিয়েছে।এভাবে কয়েকবার বলার পর বড় বউ আর কিছুই বলেনি আশাকে। আশা মনে মনে ভাবে,"ভালোই হলো! এবার শাশুড়ী বুঝুক আমার উপর তার খবরদারী করা সহজ হবেনা এবং আমি তা মেনেও নিবনা "।

দুই

আশার শ্বশুর বাড়ী একান্নবর্তী পরিবার। তার স্বামীরা চার ভাই। বাজারে বিশাল বড় ব্যবসা। চার ভাই মিলেই এই ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তাছাড়া একাকায় আরো ব্যবসা ও অনেক জমিজমা নিয়ে এই পরিবারের বেশ নামডাক আছে। তাদের বাবা মারা গিয়েছেন অনেক দিন আগে। এই বাড়ীর চার ছেলেই তাদের মাকে ভীষন মান্য করে। মা যা বলেন ছেলেরা তা মেনে চলেন বিনা বাক্যব্যয়ে।ছেলেদের কথা হলো,"মা যতদিন জীবিত আছেন আমরা চার ভাই সবাই একসাথে। আলাদা হওয়া,আলাদা চিন্তা করার কোন সুযোগ নেই কারো কাছে। এই সব নিয়ে বাড়ীর বউদেরও কোন অভিযোগ করা চলবেনা "। আর বাড়ীর যে কোন ব্যাপারে সিদ্ধান্ত তাদের মা দিয়ে থাকেন আর সে সিদ্ধান্তে ছেলেদেরও কোন দ্বিমত থাকেনা "। এসব কথা আশাকে বলল মেজ বউ ।

মেজবউয়ের কাছে এসব শুনে আশার রাগ আরো বাড়ল। এটা অন্যায়। একজন মানুষ এমন করে সবার উপর খবরদারী করবে - এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। মনে মনে অনেক রাগ হলেও কাউকে কিছু বলল না আশা।

এর পর অনেক দিন চলে গেল । শাশুড়ীর সাথে কয়েকবার আশার দেখা ও কথা হলেও গাছ লাগানোর ব্যাপারে তিনি আর কোন কথা বললেন না । আশাও মনে মনে ভাবে, ভালোই হয়েছে। শাশুড়ীকে এই একটা বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে আমিও বুঝিয়ে দিয়েছি - আমিও চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে। আমার উপর তার এসব খবরদারী চলবেনা। তার অন্যায় বাকী বউরা মেনে নিলে বা মেনে চললেও আমার উপর তা চলবেনা বা আমি তা মানব না।

খবু অল্প দিনেই এই বাড়ীতে বড় বউ আশার সবচয়ে প্রিয় মানুষ হয়ে উঠল। বড় বউ চুপচাপ আপনমনে কাজ করেন। কোন বিষয়ে কখনো তাকে বিচলিত হতে দেখেনি আশা । এ বাড়ীর অন্য বউরাও বড় বউকে খুব পছন্দ করে। আশা একটা জিনিষ জেনে খুব কষ্ট পায় যে বড় বউ নিঃসন্তান। অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখিয়ে এবং চিকিৎসা করেও কোন ফল লাভ হয়নি। তাই এ বাড়ীর সব ছেলে-মেয়েরা সবাই তার ভক্ত এবং তাকে সবাই বড় মা বলে ডাকে। আবার সবার যার যত আবদার তার সবই তাদের বড় মায়ের কাছে। বাড়ীর সব ছেলে-মেয়ের লেখা-পড়া,খাবার-দাবার,আবদার সব কিছুর খবর ও দেখাশোনা তাদের বড় মায়ের কাজ। এ নিয়ে বাড়ীর কারো কোন অভিযোগ ও নেই। এসব দেখে বড় বউয়ের প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মান ও ভালোবাসা অনেক বেড়ে গেল আশার।

তিন

সব মিলিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে কেমন যেন স্বপ্নের মত দিনগুলি কেটে যাচ্ছিল আশার শুধু শ্বাশুরীর ব্যাপরটা ব্যতীত। হঠাৎ করে একদিন আশা দেখল বড় বউ চোখ মুছতে মুছতে শাশুড়ীর রুম থেকে বের হচছে। বড় বউকে এ অবস্থায় দেখে আশার খুব কষ্ট হলো। এদিকে রুমের ভিতরে শাশুড়ী কি সব বলে চিৎকার চেচামেছি করছেন। বড় বউয়ের মত একজন ভাল মানুষকে কেউ বকতে পারে - এটা বিশ্বাস করতেও আশার কষ্ট হচছিল। কি এমন অন্যায় করল বড় বউ, যার ফলে তাকে এভাবে কাঁদাতে হলো। এটা দেখার পর শাশুড়ীর উপর রাগ আরো বেড়ে গেল আশার।

সেদিন সন্ধ্যার দিকে আশাকে শাশুড়ী তার রুমে ডাকলেন। " কেমন আছো ছোট বউ " - বললেন শাশুড়ী।
" ভালো আম্মা " - জবাব দিল আশা।
" সাগরের সাথে নাকি তুমি খুব রাগারাগি করছো "? সাগর আশার স্বামীর নাম।
"এই কথা আপনার কানে আসল কেমন করে আম্মা " ? - আশা বলল।
" তুমি কি আমার কাছে খবরের বিষয়ে কৈফিয়ত চাচছ বউমা " ? - রেগে বললেন শাশুড়ী।

"কৈফিয়ত নয় আম্মা।আমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে একটু আধটু মান-অভিমান হতেই পারে তাই বলে সেই কথা আপনার কাছে আসবে আর আপনি সেটা নিয়ে আমার বিচার করবেন, সেটা কি ঠিক আম্মা "? - আশা অনেকটা রাগ ও অভিমানের সাথে বলল।
" কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক - সেটা বোঝার ক্ষমতা এখনো তুমি অর্জন করনি ছোট বউ। এ বাড়ীতে তোমার বড় ভাইকে আমি আসতে নিষেধ করেছি।এখানে সাগরের কোন দোষ নেই।এ নিয়ে তুমি আর কোন কথা বলবেনা ছোট বউ" । - বললেন শাশুড়ী।
" কাজটা কি আপনি ঠিক করেছেন আম্মা। আমার ভাইকে আপনি এ বাড়ীতে আসতে নিষেধ করে " ? - বলল আশা।
শাশুড়ী রাগত স্বরে বললেন, " বলেছিতো তোমাকে , কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক - সেটা বোঝার ক্ষমতা তোমার এখনো হয়নি । তুমি এখন যাও ছোট বউ "।

আশার রাগ যেন পাহাড় ছুয়ে যাচ্ছিল। ইচ্ছে করছিল শাশুড়ীকে কিছু কঠিন কথা শুনিয়ে দিতে। কিন্তু আশার রাগ এতটাই বেড়েছিল যে , রাগের ফলে তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছিল না। শাশড়ীর রুম থেকে বের হয়ে এসে নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে একা একা অনেকক্ষণ কাঁদল আশা, আর অনেক রাগ হলো তার স্বামীর উপর। গতকাল এই বাড়ীতে তার ভাইয়ের আসার কথা ছিল কিছু জিনিষপত্র নিয়ে। পরে আশা শুনেছে তার ভাইকে তার স্বামী নিষেধ করেছে জিনিষপত্র নিয়ে এ বাড়ীতে আসতে। এ নিয়ে স্বামী সাগরের সাথে কিছু কথা কাটাকাটিও হয়েছে আশার। আর এ বিষয়টাই এখন যখন শাশুড়ীর মুখে শুনল তখন আশার রাগ আরো বাড়ল। সব কিছুতেই শাশুড়ীর এমন খবরদারী মেনে নিতে খুব কষ্ট হচ্ছিল আশার। তাদের বাড়ী থেকে কিছু জিনিষপত্র তার বাবা-ভাই তাকে দিতেই পারে কিন্তু তা আনতে এভাবে নিষেধ করে দেওয়া অন্যায়। আশা মনে মনে ভাবলো, আমিও চৌধুরী বাড়ীর মেয়ে। আমিও এর একটা বিহিত করেই ছাড়ব।

চার

রাতে একে একে সব ভাবীরাই এসে আশাকে খেতে ডাকলেন। সে জানিয়ে দিল সে খাবেনা। এমনকি তার স্বামী সাগরও অনেক জোরাজুরী করলো । আশাও কঠিন পণ করেছে, সে খাবেই না। শেষে সবাই হাল ছেড়ে ডাকাডাকি বন্ধ করে দিল আশার কঠিন মানষিকতা দেখে। আর আশাও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, এবার শাশুড়িকে একটা উচিত শিক্ষা দিয়ে এবং এর একটা বিহিত করেই সে শান্ত হবে এবং এরপর খাবে। নতুবা সে এই সংসারই করবেনা, চলে যাবে বাপের বাড়ী।

রাত ১২ টার দিকে বড় বউ এসে আশাকে বললো, " আশা আম্মা তোমায় ডাকছে "।
আশা একবার ভাবলো যাবেনা। পরে মনে মনে ভাবলো, " এইতো সুযোগ। তাকে এত সহজে ছেড়ে দেয়া ঠিক হবেনা"।
শাশুড়িকে যথাযথ জবাব দেবার উদ্দেশ্যে আর কিছু না বলেই শাশুড়ির রুমের দিকে রওয়ানা হলো আশা।রুমে এসে দেখে শাশুড়ী কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছেন। তিনি তাকে ইশারায় বসতে বললেন।
আশা চুপচাপ বসে আছে। শাশুড়ী একটু হালকা আওয়াজে কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছেন। খুব মিষ্টি লাগছে আশার কাছে যদিও তার ভেতরটা রাগে ফুসছে কিন্তু কেন জানি কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনে তার মনে অন্যরকম এক প্রশান্তি অনুভব করছে। আশা কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনতে শুনতেই শাশুড়ীর রুমের চারদিকে নজর বোলালো। রুমটা বেশ গোছানো। যদিও আরো কয়েকবার এই রুমে এসেছে তবে কখনো এতটা খেয়াল করে দেখা হয়নি যে সবকিছু বেশ সুন্দর করে সাজানো গোছানো। যেখানে যেটা থাকা দরকার ঠিক সেখানে তাই আছে।একটুও এদিক সেদিক নেই রুমে।

বেশ অনেকক্ষণ হয়ে গেছে আশা এ রুমে এসেছে। আশার শাশুড়ীর কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শেষ হয়নি । কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শুনতে শুনতে আশার বেশ ভাল লাগছে। এতোটা সময় পেরোনোর পরও আশার একটুও বিরক্ত লাগেনি বরং মনটা যেন কেমন শান্ত হয়ে আসে আশার। যতটা রাগ নিয়ে এবং শাশুরীকে শায়েস্তা করার ইচ্ছা ও সাহস নিয়ে এই রুমে এসেছিল সে সাহস এবং রাগটা মিলিয়ে গিয়ে আশা মনে মনে ভাবে, আমি এসব কি চিন্তা করছিলাম শাশুড়ির বিরুদ্ধে।

কোরআন শরীফ তেলাওয়াত শেষ করে শাশুড়ী বললো, " এসেছো বউমা " ?
" জি আম্মা " - বললো আশা ।
'সাগর ঘুমিয়েছে " ? - শাশুরী জিজ্ঞেস করলেন।
"শুয়ে পড়েছে , এতোক্ষণে হয়ত ঘুমিয়ে গেছে " - বললো আশা।
" যাক ভালোই হলো । এখন তোমার সাথে কিছুটা সময় গল্প করা যাবে "- বললেন শাশুড়ী।

আশার ভিতরে যদিও কিছুটা রাগ তখনো ছিল তবে কিছু একটা বলতে গিয়েও বললোনা। তখন তার শাশুড়ী বলতে শুরু করলো -
" শোন বউমা , এই বাড়ীতে আমি বউ হয়ে এসেছি ১৬ বছর বয়সে। কলেজে উঠতেই বিয়ে হয়ে গেল। নিজের ভেতর কত রকম স্বপ্ন ছিল, বিয়ের পর সব শেষ। রান্না-বান্না,স্বামী-সংসার,সন্তান এই সব নিয়েই শুরু হলো আমার জীবন । ধীরে ধীরে সংসার বড় হতে লাগলো। ঘর-বাড়ী,জমি-জমা,ধনসম্পত্তি সবকিছুই বাড়তে লাগলো কিন্তু আমি এই বাড়ীর বউ হয়ে আসা ঠিক আগের মতই রয়ে গেলাম।বাবার বাড়ীর সব কিছু ছেড়ে আসলাম এই শ্বশুর বাড়ীতে। নিজের জীবনের একটা বিশাল সময় এই সংসারের পিছনে দিয়েও মনে হতে থাকে আমি শুধু এই বাড়ীর বউ। সবাই আমাকে অমুক বাড়ীর বউ হিসাবে চিনে বা কখনো কখনো আশিকের মা ,সাগরের মা হিসাবে।আমার যে একটা নাম আছে, আছে আলাদা একটা পরিচয় - এভাবে কেউ আমাকে চিনেনা। হয় আমি এ বাড়ীর বউ না হয় আমি কারো মা । এ ছাড়া আমার কোন পরিচয় নেই "।

শাশুড়ী একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার বলতে লাগলেন, "আমাকে দেখে তোমার মনে হতে পারে যে, এ বাড়ীর হর্তা-কর্তা বুঝি আমিই যে চাইলেই অনেক কিছু করতে পারি। হ্যা , কথাটা এখন হয়তো সত্যি যে চাইলেই এখন অনেক কিছু করতে পার আমি। তবে আমি নিজের জন্য কখনো কিছুই করতে পারিনি মা। আমার বিয়ের বছরখানেক পর ছোট ভাইটা মারা গেল টাইফয়েডে। টাকার অভাবে ঠিকমত চিকিৎসা করাতে পারেনি আমার গরীব স্কুলমাস্টার বাবা। বাবাকে কত কিছু খাওয়াতে ইচ্ছা করতো, যদিও এই সংসারে কোন অভাব ছিলনা ও আমি এই বাড়ীর বউ অথচ এই সংসারের কোন কিছুই তখন আমার হাতে ছিলনা। স্বামীর কাছে বলেও কোন লাভ ছিলনা। এই এত বড় বাড়ীর বউ হয়ে এসে শুধু চোখের পানিই ফেলেছি। ছোট বোনটার বিয়েতে একটা স্বর্ণের জিনিষ দেয়ার কথা ছিল। শেষে আমার শ্বশুর তাও দিতে দিলেন না, না করে দিলেন। সে যে কি কষ্ট আমার মা । বোনের বিয়েতেও গেলাম না লজ্জায় - অপমানে। আমি শুধু এই বাড়ীর বউ হয়েই রইলাম "।

শাশুড়ী একটু থামলেন। আশা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শাশুড়ীর দিকে। কিছুই বলতে ইচছা করছেনা তার। শাশুড়ী আবার বলতে লাগলেন, "এখন আমার হাতে অনেক কিছু আছে। ছেলেদের বললে অনেক কিছু হয়ে যাবে কিন্তু আমার তো আর করার জন্য কেউ নেই মা। বাবা-মা অনেক আগেই মারা গেছেন। ভাইটাও মরে গেল । বোন ও এখন বেশ ভালো আছে। এখন আমার জন্য বা আমার নিজের কারো জন্য যে কিছুই করার নেই মা "।

শাশুড়ী একটু অস্থির হয়ে উঠে বললো, "মা তুমি বোধ হয় আমার উপর রাগ করেছ এই বাড়ীতে আসতে না আসতেই তোমাকে গাছ লাগানোর কথা কেন বললাম তার জন্য"।

আশা আমতা আমতা করতে থাকে।

তখন শাশুড়ী আবার বলতে থাকে, "আমিতো জানি তুমি রাগ করে গাছ লাগাও নি। আর আমিই বড় বউকে নিষেধ করে দিয়েছি ,এ নিয়ে তোমাকে যেন আর কিছু না বলে। মাগো আমি চাই, যেন এ বাড়ী তোমাদের হোক। বাড়ীর উত্তর দিকের বড় নারিকেল গাছটা লাগিয়েছে বড় বউ। তার পাশের নারকেল গাছটা লাগিয়েছে সেজ বউ। আর পূর্বদিকের বড় নারকেল গাছটা লাগিয়েছে মেজ বউ। এ গাছগুলো এ বাড়ীর বউদের লাগানো গাছ - বুঝতে পারছো ছোট বউ ? গাছগুলো দিন দিন বড় হবে। তারা এই বাড়ীতে ছায়া দিবে, ফল দিবে। তার চেয়েও বড় কথা, এই গাছগুলো এই বাড়ীর চার পাশ যে ঘিরে রাখবে শুধু তাই নয় এই গাছগুলো দেখলে এ বাড়ীর বউদের মনের ভেতর একটা সাহসও আসবে। লম্বা হয়ে এই গাছগুলো মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকবে এ বাড়ীতে। দূর থেকে দেখলে মেন হবে যে এই বাড়ীটা তোমরা আগলে রেখেছে। তাছাড়া বাড়ীর পুরুষ মানুষগুলোও এসব গাছ দেখলে বুঝতে পারবে, এই বাড়ীর বউয়েরা মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে। তাদের অসম্মান করা এত সহজ নয়। তোমাদের শেকড় এই বাড়ীর মাটির সাথে শক্ত হয়ে মিশে আছে। এই বাড়ী তোমাদের। এটা আমাদের বাড়ী।এটা আমার বউদের বাড়ী "।


পাঁচ -

যেই রাগ - ক্ষোভ নিয়ে আশা শাশুড়ীর রুমে এসেছিল শাশুড়িকে হেনস্তা করার জন্য , সেই রাগ-ক্ষোভ দূর হয়ে কখন যে চোখেের জল পরিপূর্ণ হয়ে গড়িয়ে পড়ছিল তার কিছুই টের পেলনা আশা। আশা কাঁদতে লাগলো ছোট বাচচার মত ডুকরে ডুকরে কিন্তু আশার শাশুড়ি খুব একটা কিছু বললেন না আশাকে । তিনি কথা বলেই চলেছেন আপন মনে। আজ তাকে কথায় পেয়েছে।

এবার শাশুড়ি একটু রাগ দেখিয়ে বললো, " মাগো - বড় বউয়ের উপর আমার খুব রাগ। প্রতিদিন আমার কাছে এসে কান্নাকাটি করে"।
আশা কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করল , " কেন আম্মা "?

"কেন আবার , নিজের কপালে নিজে কুড়াল মারতে চায় মেয়েটা। এমন বোকা হলে চলে বলো? আমার বড় ছেলের আবার বিয়ে দিতে চায়। সেতো সন্তান দিতে পারবেনা তাই আবার বিয়ে দিলে নাকি নতুন বউয়ের সন্তান হবে। আমি বলে দিয়েছি, আমি জীবিত থাকতে এবং আমি মরে গেলেও এই কাজ হতে পারবেনা । আল্লাহ তাদের কপালে সন্তান রাখে নাই । বাড়ীতে আরো ছেলে-মেয়ে আছে। আমার ছেলের বংশ নিয়ে বড় বউয়ের চিন্তা করার দরকার নেই। কত বড় বোকা মেয়ে দেখেছ, নিজের স্বামীকে আবার বিয়ে দিতে চায় ? আর তাইতো খুব ভাল করে বকে দিয়েছি মেয়েটাকে। আমার খুব খারাপ লাগে তাকে এমন করে বকতে কিন্তু এসব শুনলে কি মাথা ঠিক থাকে , তুমি বলো মা " ?

আশার শাশুড়ি এবার একটু শান্তু হয়ে বললো, " আমাকে একটু পানি খাওয়াও মা। অনেক কথা বলে ফেলেছি। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে "।

আশা শাশুড়িকে একগ্লাস পানি দিল। পানি খেয়েই গ্লাসটা হাতে রেখেই আবার বলতে লাগলো, " কিছু জিনিষপত্র মানে ফার্নিচার নিয়ে তোমার ভাই আসতে চেয়েছিল এ বাড়ীতে। আমি তাকে নিষেধ করেছি। আমি জানি,এ নিয়ে তুমি অনেক রাগ করেছ আমার উপর কিন্তু আমি যে তোমার বাপের বাড়ী থেকে এসব নিতে পারব না মা । আমি বেঁচে থাকতে এসব জিনিষ আমার বাড়ীতে ঢুকবেনা আবার এটা অন্যায় ও মা। আমি জানি তোমার বাপের অনেক সহায় সম্পদ আছে। এসব তোমার বাপ খুশি হয়ে তোমাকে দিবে কিন্তু এসব জিনিষ আমার বাড়ীতে ঢুকলে আমার বাকী বউমাদের মনটা যে ছোট হয়ে থাকবে। আমার সব বউমাদের বাপের বাড়ীর অবস্থাতো তোমাদের মত না । তারা চাইলেও কিছু দিতে পারবেনা । তাছাড়া আমার ছেলেদের বিয়ে দিয়ে আমি কোন জিনিষ আমি এ বাড়ীতে আনব না , এটা আমার আগে থেকেই শপথ করা। এ নিয়ে তুমি আর কিছু মনে করোনা মা। আমি বলে দিয়েছি , তোমার বাড়ীর লোকজন যেন যে কোন সময় বেড়াতে আসে আমাদের বাড়ীতে। আর তারা বেড়াতে আসলে আমারও খুশি লাগবে তবে কোন কিছু নিয়ে নয় "।

আশা তার শাশুড়ি থেকে একটু দূরে বসা ছিল। এবার উঠে গিয়ে শাশুড়ির কলের কাছে বসলো। কাছে যেতেই শাশুড়ি আশার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিলেন। তিনি যদিও দেখলেন আশা কাঁদছে তবে তাকে কাঁদতে একবারও নিষেধ করলেন না।

কিছু সময় পর আশা শাশুড়ি কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। তিনি আশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,আমি জানি মেজ বউয়ের শাস্তির কথা শুনে তুমি ভয় পেয়েছ। ভয়ের কিছু নেই মা। মেজ বউ অন্যায় করেছে। এই অন্যায় আমার মেয়ে করলেও আমি তাকে একই শাস্তি দিতাম।

"কি করেছে মা "? আশা জিজ্ঞাস করল।

গত ঈদে আমি সব বউদের হাতে কিছু টাকা দিয়েছি তাদের বাপের বাড়ীর লোকজনের জন্য কেনা-কাটা করতে। মেয়েরা সব সময়তো আর বাপের বাড়ী কিছু দিতে পারেনা। ভাবলাম , মেয়েরা ঈদে নিজের হাতে নিজের মতো করে তাদের বাবা-মাকে কিছু ঊপহার দিক।তাতে তাদের মনটা বড় হবে। অথচ মেজ বউ কি করল? সেই টাকা সে নিজের কাছে রেখে দিল।একটা টাকাও সে সে খরচ করলো না ।আমি ভীষণ কষ্ট পেয়েছি তার এ আচরনে, ছোট বউ। আরো টাকা লাগলে বলতো আমাকে,আমি দিতাম। তার পরেও মানুষ এতটা ছোট মনের হয় কিভাবে? এটা শুনে আমি নিজে লোক পাঠিয়ে কেনা-কাটা করে বেয়াইর বাড়ী পাঠালাম।


ছবি - proudhappymama.com

শাশুড়ির কোলে মাথা রেখে শুয়েছিল আশা।এবার মাথা তুলে শাশুড়ীর মুখের দিকে তাকাল। কেন জানি তার মুখটা খুব ভাল করে দেখতে ইচছা হলো আশার। তার শাশুরী ছোটখাট গড়নের মানুষ। সেই ছোটখাট মানুষের ছোট মুখটা দেখতে দেখতে আশার কেন যেন বিশাল বলে মনে হচছে। এত ছোটখাট একটা মানুষের মনটা কতটা বিশাল ও মহৎ তা ভাবতেই আবার ঢুকরে কেঁদে উঠল আশা। আর তার মনে হতে লাগলো, "এতো সুন্দর মনের মানুষ হাজার সাধনায়ও অনেকেই দেখতে পায়না , খুজে পায়না অনেকেই এমন মানুষের। এমন একজন মহৎ হৃদয়ের মানুষ দেখার জন্য অনেক সাধনার প্রয়োজন। আর আমি না চাইতেই দয়াময় আল্লাহ এমন একজন মানুষের ঘরে আমাকে পাঠিয়েছেন,আমি আজ সেই সুযোগ পেয়েছি। আমার আজ ইচছা করছে সারাটা রাত চেয়ে থাকি পবিত্র এ মুখটার দিকে। এসব ভাবতে ভাবতেই শাশুড়ির মুখের দিকে চেয়েই শোয়া অবস্থায়ই শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে আশা "।

দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে অনুভব করে নিজেদেরকে। আশা জড়িয়ে ধরে আছে শাশুড়িকে আর শাশুড়ি বিলি কেটে দিচছে আশার মাথায় ও আর পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দিচছে আশার মুখে।
হঠাৎ করেই শাশুড়ি বললো, " চলো বউমা, রাত অনেক হয়েছে,হয়েছে অনেক গল্পও । এবার আমরা খাওয়া দাওয়া করি "।
আশা অনেকটা অবাক প্রশ্ন করে, " আপনি এখনো খাননি আম্মা "?

শাশুড়ি বললেন, " আমার বাড়ীর ছোট মেয়েটা রাগ করে না খেয়ে আছে। আর আমি মা হয়ে খেয়ে নিব, তা কেমন করে হয় - বলো মা ?এই বাড়ীতে এমন কোন নিয়ম কখনো ছিলনা যে, মেয়েরা না খেয়ে থাকবে আর মা খেয়ে নিবে "।

এবার আর আশা নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না । বাচচাদের মত হাউমাউ করে কেঁদে শাশুড়িকে জড়িয়ে ধরে, তার বুকে মাথা রেখে চোখের পানিতে বুক ভাসিয়ে দিতে দিতে শুধু একটা কথাই বললো ," আমাকে ক্ষমা করে দিন, আম্মা "।


=====================================================================

পুনঃশ্চ - যদি ও এটা একটা গল্প তবে এরকম ঘটনা বা এর বিপরীত ঘটনা আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে-সমাজে-সংসারে ঘটতে দেখি। আমাদের সমাজের বেশীরভাগ পরিবারের অশান্তির মূল কারন বউ-শাশুরীর মানষিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত এবং একে অন্যকে মেনে না নেয়া, মানিয়ে না চলা। একদিকে, শাশুরিরা বউকে তার প্রাপ্য মর্যাদা দেয়না, আবার অন্য দিকে বউরা শাশুরিকে তার মায়ের মত না দেখে, তার যথাযথ সম্মান না দিয়ে তাকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে নেয় প্রথম থেকেই। এদিকে শাশুরীরা ভূলে যায় কিছুদিন আগে সেও বউ ছিল আবার বউ ও ভূলে যায় কিছুদিন পর সেও শাশুরী হবে। অথচ উভয়ে উভয়ের প্রতি, নিজ নিজ অবস্থা ও অবস্থান থেকে যদি একটু সম্মান-সহমর্মিতা, সহযোগীতা-সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেয় একের প্রতি অন্যে - তাহলে আমাদের সমাজ থেকে পারিবারিক সহিংসতা, পরিবারিক ভাংগন অনেকটাই দূর হয়ে যাবে আর প্রতিটা পরিবারই হয়ে উঠবে এ দুনিয়ায় এক একটা বেহেশতের বাগান। দয়াময় আল্লাহপাক আমাদের সকলকে সর্বোচ্চ ত্যাগ-সম্মানের মানষিকতা নিয়ে পরিবারের প্রতিটা সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার তওফিক দান করুন।

======================================================================

পূর্বের একটি গল্প -" রোযা " (ছোট গল্প)। লিংক Click This Link

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:১৫

জুল ভার্ন বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে। তবে কাউকে উৎসর্গের কোন গুরুত্ব নাই। কারণ, আপনার লেখার প্রেরণা আপনি নিজেই, অন্য কারোর প্রেরণায় অন্তত আমার লেখা হয় না।

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:১৫

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই , গল্প পড়া এবং আপনার প্রথম মন্তব্যের জন্য।

গল্প ভালো হয়েছে জেনে ভাল লাগল এবং কৃতজ্ঞতা আপনার প্রতি।

ভাই, আপনি যা বলেছেন তা একদিক থেকে ঠিক আছে তবে কোন কোন জায়গায় ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা আমাদের হয়তো করা উচিত। বিশেষ করে কারো প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে। যদিও এই উৎসর্গের অর্থনৈতিক কোন মূল্য নেই এবং কারো কারো কৃতজ্ঞতা না জানালে কারো কিছু বলারও নেই তবে আমার মনে হয় দেনা-পাওনার (স্বার্থের) এ পৃথিবীতে এ জাতীয় পদক্ষেপ কিছুটা হলেও আমাদেরকে পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করে।

আবার চলার পথে কারো নিকট থেকে কিছু সাহায্য,অনুপ্রেরণা, উপদেশমূলক কথা-বাক্য,পরামর্শ (তা যত ছোট বা ক্ষুদ্রই হোক না কেন) পেলে তা আমাদের নিজেরই ভালো হয় এবং সময় সুযোগে তা প্রকাশ করতে কার্পন্য করাও উচিত নয়।

আবারো ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।

২| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৩:২০

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
মনেই হয়না যে এটা আপনার ১ম গল্প। যেমন বর্ননা, তেমনি কাহিনী, তেমটি গতিশীলতা।

এখন থেকে গল্পে মনোযোগি হবেন। মাঝে মাঝে গল্প চাই।

প্রসংশার পর এবার আসি সমালোচনায়। একাধিক বেদেশী ছবির ব্যবহার দৃষ্টিকটু। ছবি শুধু একটা সবার উপরে থাকবে সেটাই সুন্দর। প্রতি খন্ডে বোল্ড করা অংশটাও ভাললাগেনি। গল্পে আন্ডারলাইন বা বোল্ড করা লাইন বেমানান দেখায়।

+++++++++

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই , গল্প পড়া এবং আপনার চমতকার মন্তব্যের জন্য।

আপনার এ দিলখোলা মন্তব্যের জবাবে কি বলব ? বুঝতেছিনা । শুধু বলবো শুকরিয়া। দীর্ঘ কয়েকমাসের প্রচেষ্টায় এ গল্প । আর আপনার মন্তব্যে মনে হয় আমার পরিশ্রম স্বার্থক।

অনুশীলন যেমন একজন মানুষকে নিখুঁত করে গড়ে তোলে ঠিক তেমনি গঠনমূলক সমালোচনা একজন লেখক বা মানুষকে আরো ভাল লিখতে বা ভাল মানুষ হতে সাহায্য করে। আপনার সমালোচনা আমাকে কাজের মূল্যায়ণ করতে সাহায্য করবে এবং একজন পাঠকের চোখে আমার লেখার ভূলগুলি হ্রাস করে বা কমিয়ে আরো ভাল লিখতে সাহায্য করবে। তার জন্য আপনার মন্তব্যের জন্য +++।

আর, আপনার পরামর্শের বাস্তবায়ন হয়েছে,আশা করি দেখবেন এবং এরকম মন্তব্যে + পরামর্শ সকল লেখককে উৎসাহিত করবেন সবসময়।

৩| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:২১

নীল আকাশ বলেছেন: অতিমাত্রায় আবেগী গল্প। দেশের মেয়েরা যদি এত ভালো হতো, এত ভালো শ্বাশুড়ি হতো পারিবারিক শতকরা ৯৮% সমস্যা থাকতো না।
আমাদের দেশের মেয়েদের আসল সমস্যা কি জানেন?
যখন এরা বৌ হয়ে আসে তখন ভালো শ্বাশুড়ি পায় না
আর <
যখন শ্বাশুড়ি হয় তখন ভাল বৌ পায় না।
এই চক্র আজীবনেও শেষ হবি না ;)

২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৪০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নীল আকাশ ভাই , গল্প পড়া এবং আপনার চমতকার ও মূলসমস্যায় ফোকাস করে মন্তব্যের জন্য। আর তাই +++ রইলো মন্তব্যে।

বর্তমান জমানায় মানুষের সব আবেগ নিঃশেষ হয়ে গেছে নিজেদের তৈরী তথাকথিত আধুনিক জীবনের জটিলতায় । অতি আধুনিক হতে গিয়ে আমরা সবাই নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে এক একটা মানুষের আকৃতিতে অমানুষ (পশু ) হয়ে গেছি। আর তাইতো দুনিয়ায়,ঘরে ঘরে এখন এত হানা-হানি। এখন বড় ছোটকে স্নেহ করেনা, ভাল বাসেনা আর ছোট বড়কে সম্মান করেনা ও মর্যাদা দেয়না।

আমাদের সমাজের পারিবারিক অশান্তি এবং পরিবার ভাংগনের কারনগুলি যে খুব বড় কিছুর কারনে হয়-ঘটে এমন কিন্তু নয়। ছোট-খাট ব্যাপারগুলোই বাড়তে বাড়তে এবং নিজেদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ও ভালবাসার অভাবের কারনেই একসময় তা পরিবার ভাংগার মত বড় আকার ধারন করে ও তার কারন হয়ে দাড়ায়। অথচ একটুখানি আবেগ-ভালবাসাই এ ধরনের পরিস্থিতি পালটে দিয়ে একটি পরিবার-সমাজকে সুখ-শান্তিতে ভরিয়ে তুলতে পারে। তার জন্য দরকার শুধু পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালবাসার।

এ আসলেই এক অদৃশ্য চক্র তবে তা ভাংগার জন্য ,তা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের প্রত্যেকেরই যার যার অবস্থান থেকে চেষ্টা করা উচিত।

৪| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ বিকাল ৪:৩৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: অপু তানভীর, নীল আকাশ, কবিতা পড়ার প্রহর, ইসিয়াক ভাই এর পর সামু আরও একজন ভালো গল্পকার পেতে যাচ্ছে। সবার নাম উল্লেখ করলামনা আরও কয়েকজন আছেন ভাল গল্প লিখেন।

সমালোচনা গ্রহণ বা সয্য করার মানসিকতা অনেকের থাকেনা। আপনি সুন্দর ভাবে নিয়েছেন দেখে ভাললাগলো। পরিশ্রমে কিনা হয়, আপনিও একজন ভাল গল্পকার হয়ে উঠবেন সেই আশা ব্যক্ত করছি। শুভকামনা ভাই।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২১

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই , আপনার প্রতি-চমতকার মন্তব্যের জন্য।

আপনি যেই কয়জন গল্পাকার এর নাম বলেছেন সামুতে তারা সবাই এক একজন কিংবদন্তি বিশেষ করে গল্পের বেলায়। আর আমি ?

আপনি আমাকে ব্যাপোক ভালবাসেন ,তাই এত দিলখোলা প্রসংসা ও আশা করেছেন। তার জন্য আপনার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। জানিনা ,আপনার প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারব তবে চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা আমার তরফ থেকে যদিও আমি গল্পাকার নই।

আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো । দয়াময় আল্লাহ যেন সবসময় আপনাকেও ভাল রাখেন।

৫| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ৯:০৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার গল্পটা অসাধারন হয়েছে। ব্লগে প্রতিযোগিতা হলে আপনার পুরস্কার পাওয়ার কথা। আপনি গল্প লেখা চালিয়ে যান। আমি ভাবতাম আপনি শুধু বড় বড় গরুর রচনাই লেখেন শুধু। খুব ভালো হয়েছে। আরও গল্প চাই। আপনার লেখায় বানান ভুলও অনেক কম। ভেরি গুড। আপনি চেষ্টা করলে একজন ভালো গল্পকার হতে পারবেন।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাড়ে চুয়াত্তরভাই , আপনার চমতকার দিলখোলা মন্তব্যের জন্য।

আপনি যেই বিশেষণে আমাকে ভূষিত (গরু রচনার লেখক) করছেন , এ আমার পরম পাওয়া। এর জন্য আপনার নিকট কৃতজ্ঞ ।

আপনার নিকট গল্প ভালো জেনে আমারও ভাল লাগল। আপনি আমাকে ব্যাপোক ;) ভালবাসেন ,তাই এত দিলখোলা প্রসংশা ও আশা করেছেন। তার জন্য আপনার নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাষা নেই। আর যে কোন কিছুর জন্য পুরস্কারই শেষ কথা নয় । আমার লেখা যদি একজনের মনেও দাগ কাটে-ভাল লাগে , যদি কারোর জীবনে এর সামান্যতম উপকারে লাগে তবেই লেখা সার্থক।

জানিনা ,আপনার-আপনাদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারব তবে চেষ্টার ত্রুটি থাকবেনা আমার তরফ থেকে যদিও আমি গল্পাকার নই।

আপনার জন্যও শুভ কামনা রইলো দয়াময় আল্লাহর নিকট।তিনি যেন সবসময় আপনাকে-আমাকে-আমাদের সকলকে ভাল রাখেন।

৬| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৬

প্রত্যাবর্তন@ বলেছেন: গল্পটা বিকালেই পড়েছিলাম। দারুণ।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রত্যাবর্তন@ ভাই , আপনার গল্প পড়া এবং মন্তব্যের জন্য।

আপনার নিকট ভাল (দারুণ) লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো।

৭| ২১ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১১:৪৪

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: পড়া হলো, খুব ভালো লিখেছেন।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৪৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মরুভূমির জলদস্যু ভাই , আপনার গল্প পড়া এবং মন্তব্যের জন্য।

আপনার নিকট ভাল লেগেছে জেনে আমারও ভাল লাগলো,শুকরিয়া ভাই।

৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: জার একটূ টেনে এটাকে উপন্যাস বানিয়ে ফেলুন।
আপনি কি অল্প কথায় কিছু লিখতে পারেন না?
গল্প ভালোই হইছে।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১২:৪২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই , আপনার চমতকার মন্তব্যের জন্য।

রাজিব ভাই, কিছু-মিছুকে টেনে-টুনে গল্পের আকৃতি দিয়েছি এটা সত্যি তবে উপন্যাস লেখার যোগ্যতা আমার নেই। এর জন্য ঈশ্বর প্রদত্ত বিশেষ যোগ্যতা দরকার যা আমার নেই বলেই আমার ধারনা।

ভাই, একটা বিষয়ে লিখতে গেলে এটার সম্পর্কে বিশদ লিখতে হয় । আর বিশদ বলতে গেলে একটু বড় হয়ে যায় এটা ঠিক তবে আমি কি করব বলেন? আপনার পরামর্শ কামনা করছি।

গল্প ভালো হয়েছে জেনে ভালো লাগল।

৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ২:৪৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: সাহিত্য পত্রিকার গল্প।ব্লগের গল্প আরেকটু ছোট হলে ভাল হয়।২৪ ঘন্টায় লেখা কোথায় চলে যায় খুঁজেই পাওয়া যায় না।

২২ শে নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ১:১৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলাম০৬০৪ ভাই , আপনার মন্তব্যের জন্য।

ভাইজান, সাহিত্য পত্রিকায় লেখার মত দক্ষতা কিংবা যোগ্যতা কোনটাই আমার নেই । যা কিছু মন চায় আবোল-তাবোল লিখে আপনাদের সাথে শেয়ার করি এতটুকুই । আর আপনারা পড়ে যে মন্তব্য করেন তাতেই শুকরিয়া।

বিষয় বস্তুর প্রাসংগিকতার ব্যাখ্যা তথা আলোচ্য বিষয়কে ভালভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখা বড় হয়ে যায় (পেশাদার লেখকরা হয়ত কম কথায় আরো ভালোভাবে বিষয়কে ফুটিয়ে তুলতে পারতো) যথাযথ জ্ঞানের অভাবে। এ অক্ষমতা মার্জনীয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.