নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল সন্ধায় নীলক্ষেত থেকে রিক্সায় চড়বো হটাত দেখি ইয়াং ফর্সা স্মার্ট এক রিক্সাওলা, ভাল করে তাকিয়ে দেখে মনে হলো কিছু একটা আছে. ডাক দিয়ে বলাম এই ভাই যাবেন? সাথে সাথে অন্য রিক্সাওয়ালারা ছেলেটিকে ধমক দিয়ে আমাকে বল্লো মামা কই যাইবেন? ধমক খেয়ে ছেলেটি একটু দূরে রিক্সা নিয়ে গেল. ছেলেটির বয়স ২৩/২৪ হবে. আমি বললাম আমি ওই রিক্সায়ই যাবো বলে ছেলেটির কাছে গেলাম. বললাম, ভাই মতিঝিল যাবেন? বলে যাব. আমি বললাম ভাড়া কত দিতে হবে? সে মাথা নিচু করে বলে: আমি আসলে ভাড়া জানি না ভাই, সো আপনি খুশি হয়ে যা দেন তাই এ নেবো. আমি বললাম ওকে চলেন বলে রিক্সায় বসলাম. ছেলেটি বলে ভাই কোন দিক দিয়ে যাব? আমি বললাম যেদিক দিয়ে আপনার ভালো লাগে আপনি যান,আমার কোন সমস্যা নাই.ছেলেটি বলে না ভাই, আসলে রিক্সা নিয়ে কখনো মতিঝিল যাইনাই তাই চিনবো না. আপনি যেদিক যেদিক বলবেন আমি সেদিক এ যাবো বলে ছেলেটি রিক্সা টান দিলো. কিন্তু রিক্সা টান দিল মতিঝিলের ঠিক উল্টো দিকে. রিক্সার কন্ট্রোল ও বেশী ভাল না. আমি বললাম ভাই দাড়ান দাড়ান, আপনি উল্টো দিকে যাচ্ছেন মতিঝিল ঐদিকে.ছেলেটি মাথা নিচু করে থাকলো, আমার চোখে চোখ রাখার সাহস পাচ্ছিলো না. আমি জিগ্গেস করলাম কতদিন রিক্সা চালান?বলে খুব বেশী দিন না. বললাম এর আগে কি করতেন?বলে: লেখা পড়া করতাম.
কত দূর পড়েছেন? ডিগ্রী পরীক্ষা দিয়ে বাদ দিছি. তারপর কি করেছেন? অন্নো কিছু করার চেস্টা করেছি কিন্তু দেরী করা সম্ভব ছিলো না তাই রিক্সাই সম্বল.সন্ধার সাথে সাথে আমার মনে ও অন্ধকার নেমে আসলো.চিন্তা করতে লাগলাম মতিঝিল তো তার সাথে যাওয়া হবে না তাহলে ছেলেটির জন্য আমি কি করতে পারি? ২০০ টাকা কি তার পকেটে দিয়ে দেবো? আবার ভাবলাম ছেলেটি যদি অপমানিত হয়?এই ছেলেটির জন্যে কিছু করার যদি নাই ই থাকেঅন্তত তাকে অপমান করার অধিকার তো আমার নাই. অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি এই ধরনের বীরপুরুষেরা কারো হেল্প নেয় না. ইচ্ছে হলো তার সাথে এই এলাকাতেই ঘন্টা খানেক ঘূরি,সেটও সম্ভব ছিল না কারণ আমার মানিকগঞ্জ যেতে হবে. মিশর থেকে এসে এখন পর্যন্ত বাসায় যাই ni,সবাই অপেক্ষায় আছে. কি আর করার নিজের সীমাবব্ধতা স্মরণ করে মনটা ছোট হয়ে এলো চোখ ও ভেজা ভেজা হয়ে গেলো. চোখ মুছতে মুছতে অন্য রিক্সা নিয়ে মতিঝিল রওয়ানা দিলাম আর ছেলেটির কথা চিন্তা করতে লাগলাম. ছেলেটির গায়ের রং আমার চেয়েও অনেক উজ্জল, সাস্থ আমার চেয়ে অনেক ভালো ও ফিট. চিন্তা করতে লাগলাম এই ছেলেটির কি মন নেই?ভালো লাগা ভালবাসা নেই? এই ছেলেটি নিশ্চয়ই ফেসবুক চালায়.... ফেসবুকে পেশায় কি সে 'একজন রিক্সা ওয়ালা' লিখতে পাড়বে? রিক্সা চালানো অবস্থায় কি সে সেলফি তুলে আপলোড করতে পারবে? যদি পারেও তাহলে কি তার মেয়ে বন্ধুরা সেই পিক এ লাইক দেবে? নাকি সত্য জানার সাথে সাথে তাকে আনফ্রেন্ড করে দিবে? তার জন্য কি করতে পারতাম কি করতে পারতাম ভাবতে ভাবতে মনে পর্লো: অমাইগড, আমি তো তার ভাল বন্ধু হতে পারতাম! ওই এলাকায় গেলে তার সাথে দেখা করতে পারতাম! তার নাম্বর টা ক্যান আনলাম না? নাম্বার থাকলে মাঝে মাঝে ফোন দিয়ে জীবনে হসলা বাড়িয়ে দিতে পারতাম, কখনো কোনো সুযোগ আসলে তাকে সুযোগটা করে দিতে পারতাম, বিদেশে নেয়ার সুযোগ হলে বিদেশ পাঠানোর বেবস্থা করতে পারতাম... মানুষ চাইলে মানুষের জন্য কত কিছু করা সম্ভব..... আমি সালার কিছুই করলাম না !!! নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো. বাসায় ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুমায়গেলাম, ভোর পাচটায় ঘুম ভেঙ্গে যেতেই ছেলেটির কথা আবার মনে পরে গেল.... মনে পরে গেল তার লজ্জিত নিমজ্জিত মাথার কথা. অথচ তার তো লজ্জা পাওয়ার কথা না. লজ্জা পাওয়ার কথা দেশের কর্ণধারদের যারা শিক্ষিত দের চাকরি দিতে পারে না, লজ্জায় মস্তক অবনত হওয়ার কথা এই সমাজের যারা একজন খেটে খাওয়া মানুষকে ইজ্জত দিতে পারে না. লজ্জা পাওয়ার কথা আমাদের যারা বেছে বেছে বড়লোকদের ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ত করি প্রেম করি.
যাইহোক, নীলক্ষেত এলাকায় আমার কোনো বন্ধুর নজড়ে যদি ওই ছেলেটি পড়ে দয়া করে ছেলের নাম্বারটা সংগ্রহ করে আমাকে দিবেন, প্লিজ প্লিজ. ধন্যবাদ.
মোবাইল পোস্ট টা লিখতে লিখতে সকাল হয়ে গেলো: সবাইকে
শুভসকাল, জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখলাম আজকের ভোরটা অনেক সুন্দর. সবার আজকের দিনটা নিশ্চয়ই ভাল কাটবে......
©somewhere in net ltd.