নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিলনদ

মাহমুদুল হাসান কায়রো

যাযাবর, অান্তর্জাতিক যাযাবর।

মাহমুদুল হাসান কায়রো › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেশে কিংবা বিদেশে সচেতনতা হোক সর্বত্র

১৭ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:২৮

দুপুর দুই ঘটিকায় মিশরের আকাশে সুর্য যখন নিজ দায়িত্ব পালনে অতিউৎসাহি কায়রোর লোকাল পাবলিকের মন তখন ৩৮ ডিগ্রি সুর্যত্তাপের মতই গরম ও খিট খিটে। বিশেষ করে যাহারা লোকাল ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত করেন। দিনের আলোতে আমার বেশি বের হওয়া হয় না বিধায় যেদিন বের হতে হয় আমার মেজাজও খিট খিট করিতে থাকে। 'দুয়িকা' থেকে মিনি মাইক্রোবাসে করে রওয়ানা হলাম ৬ জন মিশরি ও আমি। গন্তব্য আল আযহার টানেল পার হয়ে শহরের ব্যস্ততম এলাকা 'ময়দানে ওবরা'। মনে রাখিতে হইবে ৪ কি.মি. লম্বা টানেলে যদি একবার জ্যাম বাধিয়া যায় তাহা হইলে ৫ মিনিটের টানেল পার হইতে ঘন্টা লাগিয়া যাইবে। ইহা মাথায় রাখিয়া ইয়াং ড্রাইভার পাইলটের মত মাইক্রো টেক অফ করিলো। কিন্তু মাইক্রো বাস তো উড়িতে পারিবে না, এমন কি রাস্তায় যেই জ্যাম বাধিয়াছে তাহাও শহজে ছুটিবে না। ড্রাইভার সাহেব কি করিবে তাহা সেকেন্ড বিশেক চিন্তা করিয়া এক গলি দিয়া গাড়ী প্রবেশ করায়ে দিল। ছোট্ট গলি পার হইয়া ড্রাইভার এক চিপা রাস্তায় উঠিয়া তাহার চলিবার জন্য নির্ধারিত রাস্তা বিমুখ হইয়া উল্টা দিকে চলিতে আরম্ব করিল। গাড়ীর সবাই খুশিতে হাসিয়া উঠিল।
এইভাবে ছোট ছোট ৪/৫ টা চিপা চাপার রাস্তা উল্টা চলিয়া মেইন রোডে চলিয়া আসিলো। কিন্তু ইহা আমাদের গন্তব্যের ঠিক উল্টা পার্শ্ব। অতি ব্যাস্ত এই সড়কের মাঝখানে বিশালাকারের আইল্যন্ড। এইবার ড্রাইভার তার আসল হিরোয়েটিক কারিশমা প্রকাশ করিয়া প্রশস্ত মেইন রোডের কিনারা ধরিয়া উলটা দিকেই গাড়ী টানিতে লাগিল। আমাদের সামনের দিক হতে শা শা শব্দে অন্যান্য গাড়ী চলিয়া যাইতে লাগিল। অনেকে যাবার সময় লম্বা 'বিপ' দিয়া চলিয়া গেল। এই 'বিপে'র অর্থ করিলে মাদার,ফাকার টাইপ কথা বার্তা হইবে, যেগুলো এখানে বলা যাইবে না। কিন্তু ইহাতে ড্রাইভার সাহেবর কোন কিছুই আসিবার কথা নয়। এইভাবে রঙ রোডে প্রায় দুই কিলমিটার ছুটিবার পর ইউটার্ন করে গাড়ী সঠিক লাইনে চলিয়া আসিল।
গাড়ী আমাদের গন্তব্যের সঠিক দিশা পাইবার পর পিছন দিকে তাকিয়ে দেখিতে পাইলাম জ্যাম যেমন ছিল তেমনই বলবত রহিয়াছে। তাহা ছুটিবার কোন নাম ও গন্ধ নেই। জ্যাম পিছনে ফেলে দ্রুত চলিয়া আসিবার এই অভুতপূর্ব জয়ের দৃশ্য অবলোকন করিয়া গাড়ীর সকলের চক্ষু শিতল হইয়া গেল। আর ড্রাইভার মহোদয় ও নিজের কৃতিত্বের পুরস্কার হাসিল করিবার নিমিত্তে বীরের কন্ঠে বলিলো: এহ রয়ুকুম ইয়া গামা? মানে হলো কি বলো তোমরা, ওহে ভ্রাতা সম্প্রদায়? কেমন খেল দেখাইলাম? সবাই সমোস্যরে বলিয়া উঠিল বেশ বেশ, বেশ বেশ। ইহা শুনিয়া ড্রাইভারের হাইট কিঞ্চিত বাড়িয়া গেল। জনৈক ভদ্রলোক বলিতে লাগিল তোমার অসামান্য প্রতিভার জন্য আমাদের আধঘন্টা/চল্লিশ মিনিট বাঁচিয়া গেলো। অপর একজন বীর মোজাহিদ বলিতে লাগিল তোমার জন্যই আমার জরুরী একটা কাজ সম্পাদন করা সম্ভপর হইবে বলিয়া মনে হচ্ছে, জ্যামে বসিয়া থাকলে আজ কাজ টা করা সম্ভব হইতো না। জনৈক হিরো টাইপ একজন বলিতে লাগিল: তুমি হরোর মত আমাদের উড়ায়ে নিয়া আসিয়াছো, তুমাকে ধন্যবাদ। এত এত কম্পিলমেন্ট পাইয়া ড্রাইভার সাব ও নিজের কালচারের স্কিল দেখাইয়া সবাইকে বলিলো: আইয়ু খিদমা ইয়া রিগ্গালা... যাহার সরল অর্থ দাড়ায়: তোমাদের খেদমতে সব কিছু করিতেই প্রস্তুত।
বিজয়ের এত এত আনন্দের মাঝে আমি বাগরা দিয়া বসিলাম। পিছনের ছিট থেকে চিল্লায়া বলিয়া উঠিলাম: ফি এহ? তোমরা এত খুশি হইতাছো ক্য? ড্রাইভার আমাকে বলিলো: কেন হে বন্ধু, তুমি কি খুশি হও নাই? আমি বলিলাম: আমার চোখের সামনে এত গুলা আইন তুমি ভংগ করিলা আমি কি করে খুশি হই? বরং আমি তোমাকে নিশেধ করিতে পারি নাই ভাবিয়া কষ্ট পাহিয়াছি। ড্রাইভার চোখ বড় বড় করিয়া লুকিং গ্লাসে আমাকে দেখিতে লাগিলো। সামনের সিটের সবাই অবাক দৃষ্টিতে পিছনের দিকে আমাকে 'হা' করে গিলতে চাহিল। আমিও অধম সাজিয়া বসিয়া রহিলাম। ক্ষনিকের জন্য গাড়ীতে নিরবতা চলিয়া আসিলো। এক আজনবি সবাইকে এইভাবে চোখে আঙ্গুল ঢুকাইয়া দিব তাহা তাদের বিশ্বাস হতে চাচ্ছিল না। ড্রাইবার একা একা বির বির করে কি জেন বলিতে থাকিল। আমার সন্দেহ হইলো সে হয়তো আমাকে অপমানসুচক কোন কথা বির বির করে বলছে। তখন আমি আর চুপ থাকিতে পারিলাম না।
বলিলাম: তোমাদের মত লোকজনদের জন্যই ঐ রাস্তায় জ্যাম বাধিয়া রহিয়াছে। তুমি যেই ভাবে গাড়ী চালাইয়া আসিলে সবাই যদি এই ভাবে আসিতে চাহে তবে এই রোডেও জ্যাম বাধিয়া যাইবে। বল জ্যাম বাধবে না? কেহ কোন জবাব দিতে পারিল না। সবাই বরফ হইয়া গেল। আমি চিন্তা করিতে লাগিলাম কি করা যায়। ভাবিয়া চিন্তিয়া সব দোষ নিজের ঘারে নিয়া বলিলাম, আনা মালিশ। মানে আমি দুঃখিত উল্টা পাল্টা বলিয়া ফেলেছি। সরি...
এইবার সবাই ডবল লজ্জায় নত হইয়া গেলো। সবার লজ্জা স্পষ্টই বুঝিতে পারিলাম। সবাই যখন চুপ তখন ড্রাইভারই প্রথম বলিয়া উঠিলো: ইন্তা সহ্‌......ইনতা সহ্‌...... তুমিই ঠিক, তুমিই ঠিক। সাথে সাথে সবাই বলিলো আসলে আমরা সবাই ভুল ছিলাম, তুমি ভুল ধরাই দিছো...... সবাই আবার সরব হইয়া গেলো। এবার সবাই আামাকে ঘিড়িয়া আলোচনা শুরু করিলো। প্রথম প্রশ্ন: ইনতা মিন ইন? তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? মানে তোামার দেশ কই? আমি বলিলাম: মুশ মুহিম, মানে আমার দেশ কোথায় সেটা জরুরী নয়। তোমাদের এই ভুল পৃথিবীর সব দেশেই ভুল। তবে তার চয়েও বড় ভুল একজনের ভুলকে দশজনে সাপোর্ট করা। সকলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমি ইচ্ছে মত উপদেশ ও বক্তৃতা মেরে দিচ্ছিলাম। এমন সময় মেজাজটা বিলা করে দিয়ে একজন বলিয়া উঠিলো: চেহাড়া দেখে মনে হচ্ছে ও ইন্ডিয়ান। আমি চেতিয়া গিয়া কহিলাম। লাাাাাাাাাাাা, নাাাাাাাাাাাা আমি ইন্ডিয়ান না। সে বলিলো তাহলে বলো কোন দেশের তুমি। আমি আমার ভঙ্গিতে ব্যস্ত থাকিয়া নিজের ব্যাপারে সব চাপিয়া গেলাম। ছোট্ট মাইক্রোবাসে তখন আবার আনন্দের জু্য়াড় বইতে শুরু করিলো। সবাই আমাকে নিয়ে বেশ মজা করিতে লাগিল, আর আমি সবাইকে নিয়ে রহস্য করিতে লাগিলাম। এইভাবে চলিতে চলিতে আমার গন্তব্য চলিয়া আসিল।
ড্রাইভারকে বলিলাম আমাকে কি ডাইনে নামায় দিতে পারবা? সে বলিলো: ফাদ্দাল, মানে অবশ্যই পারিব। সে গাড়ী সাইড করিলো আমি নামিয়া যাইতে লাগিলাম। সবাই বিদায় সম্ভাষণ করিতে লাগিলো। আমি নিচে নামিয়া গাড়ীর দড়জা টানিতে টানিতে বলিলাম: মাআস্সালামা মিন বানগালাদেশ......সবাই হা হা হো হো হো করিয়া হাসিতে হাসিতে হাত নাড়িয়া বায় বলিলো।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:৫৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমাদের সবারই এই বিষয়টা মনে রাখলে বাংলাদেশেও জ্যাম অনেক কমে যাবে।

২| ২৮ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৩৬

ইমরান আশফাক বলেছেন: চমৎকার আপনার উপাস্হাপনা, আমাদের দেশটাকে নিয়ে। আপনি যদি আগে হাড়ি ভেংগে দিতেন তাহলে কেউ আপনার কথা শুনবার জন্য আগ্রহী হতো না।

৩| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:২০

আহমেদ জী এস বলেছেন: মাহমুদুল হাসান কায়রো ,



বেশ মজাদার করিয়া লিখিয়াছেন । যেন আমাদের দেশেরই পথেঘাটের হরহামেশা চেহারার একখানা ছবি আঁকিয়াছেন জরুর । কিন্তু এই দেশে আপনার মতো সচেতন কাহাকেও পাইবেন বলিয়া মনে হয়না ...।

শুভেচ্ছান্তে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.