নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবুল মনসুর আহমদ এর \'আয়না\'

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১১


তিনি ব্যঙ্গ করতেন, তবে পেশাদার কৌতাকাভিনেতা তিনি ছিলেন না। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী পার্লামেন্টারিয়ান এবং একজন কলমসৈনিক। যাঁর দূরদর্শীতা বারবার মুগ্ধ করে আমাদের।

আবুল মনসুর আহমদ। জন্ম ১৮৯৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা গ্রামে । সমকাল, সমাজ, জনগণ ও রাজনীতি সচেতন একজন গল্পকার।রাজনীতি তাঁর মূলমন্ত্র; সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবনের হাতেখড়ি; সাহিত্য সাধনায় নিহিত তাঁর প্রধান পরিচয়।

'আয়না' বাংলা সাহিত্যে ব্যাঙ্গ রচনার জগতে আবুল মনসুর আহমদ এর একটি কালজয়ী গ্রন্থ।সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি_ প্রতিটি ক্ষেত্র নিয়ে আবুল মনসুর আহমদ 'আয়না'র উদ্দেশ্যমূলক প্লট তৈরি করেছেন মানুষের জীবন ও সমাজের একটি আবৃত দিকের প্রকৃত স্বরূপ উন্মোচনের উদ্দেশ্য নিয়ে।

'আয়না'য় মোট সাতটি আলেখ্য অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি আলেখ্যেই তিনি সরসভাবে বিশ্লিষ্ট রূপের ব্যঙ্গ করেছেন নির্মম শানিত দৃষ্টির মাধ্যমে।
‘‘এমনি আয়নায় শুধু মানুষের বাইরের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়, কিন্তু আমার বন্ধু শিল্পী আবুল মনসুর যে আয়না তৈরি করেছেন, তাতে মানুষের অন্তরের রূপ ধরা পড়েছে। যে সমস্ত মানুষ হরেক রকমের মুখোশ পরে আমাদের সমাজে অবাধে বিচরণ করছে, আবুল মনসুরের আয়নার ভেতর তাদের স্বরূপ-মূর্তি বন্য ভীষণতা নিয়ে ফুটে উঠেছে।’’

কাজী নজরুল ইসলাম এই কথাগুলো লিখেছিলেন আবুল মনসুর আহমদের ‘আয়না’র ভূমিকায়- যার নাম তিনি দিয়েছিলেন, ‘‘আয়নার ফ্রেম’’।

‘আয়না’র প্রথম গল্প ‘হুজুর কেবলা’ গল্পে এমদাদ নামক একজন কলেজ ছাত্র কথিত হুজুরের খপ্পরে পড়েন। সে পীর সাহেবের সান্নিধ্যে গিয়ে কিভাবে নিজের অস্তিত্ব হারান অর্থাৎ হুজুর তার মুরিদের স্ত্রীকে তালাকের মাধ্যমে বিবাহ করল এবং তার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে পীরের মুরিদদের দ্বারা লঞ্ছিত হয়, সেই বিষয়টি উন্মোচিত হয়। হুজুর কেবলা ধর্ম ব্যবসায়ীদের লোভ ও লালসা চরিতার্থ করার বাস্তব ঘটনা, যা অশিক্ষা,কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও অসচেতন দরিদ্র বাঙালি মুসলমান সমাজের বাস্তব দলিল।

'গো-দেওতা-কা দেশ' গল্পে তিনি হিন্দুদের ধর্মান্ধতাকেও ব্যাঙ্গ করেছেন। এখানে আনন্দ বাজার পত্রিকা কে খোঁচা দেওয়া হয়েছে, গো- হত্যা রোধের কুফল রসাচ্ছলে ব্যক্ত করা হয়েছে।

‘নায়েবে নবী’ গল্পে দেখা যায়, গ্রামের সরদার মৌলভী সুধারানী সাহেব এবং প্রতিদ্বন্দ্বী মৌলভী গরিবুল্লার প্রভাব-প্রতিপত্তি নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের চিত্র।একজনের মৃত্যুতে কিভাবে জানাজা পড়া হবে তা নিয়ে দুই মৌলভীর বাহাস, জুতা পেটাপেটি, ইমামতি নিয়ে কাড়াকাড়ি, ধাক্কাধাক্কি, পরে মাতাব্বরের মধ্যস্থতায় জানাজা। গল্পটি রঙ্গরসপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও গ্রামবাংলার এক সামাজিক বাস্তবতারই আলেখ্য।

‘লীডারে-কওম’ বর্ণিত হয় একাধারে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ভণ্ডামির কাহিনী,‘লিডারে কওম’কে অবিভক্ত বাংলার একজন স্বনামধন্য মুসলমান নেতার ‘জীবনপঞ্জি’ বললেও ভুল হবে না।অনেকের মতে এর মুল চরিত্র রূপক অর্থে মাওলানা মোহাম্মাদ আকরম খাঁ কেই বুঝানো হয়েছে।

‘মুজাহেদিন’ ধর্মীয় ভণ্ডামির কাহিনী, কীভাবে এক অঞ্চলের মধ্যে হানাফি ও মোহাম্মদী উভয় সম্প্রদায়ের শান্তিপূর্ণ বসবাসকে এক বহিরাগত মওলানা বাহাসের মাধ্যেমে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে পরিণত করে এবং উভয়পক্ষে সংষর্ষ ও গ্রেফতার, পুলিশি তদন্ত, পরিণামে গ্রামের প্রায় সবার জেল জরিমানা।

‘বিদ্রোহী সংঘ’ গল্পে ইংরেজবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী দলের কর্মী ও নেতার স্ববিরোধিতার স্যাটায়ার। এটি অত্যন্ত রসাত্মক হলেও ভাবুকদের ডুব দিতে হবে বারবার।

‘ধর্ম-রাজ্য’ গল্পে হিন্দু ও মুসলমানের সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও ইংরেজের ভূমিকার আক্ষরিক চিত্র তরতর করে ভেসে ওঠে।
সব ধরনের পাঠকই এ গল্পগ্রন্থটি পরে একই সাথে আনন্দ ও শিক্ষা লাভ করবেন বলে আশা করি।

পুনশ্চঃ ডঃ আনিসুজ্জামান লিখেছেন, "..আবুল মনসুরের আক্রমণের লক্ষ্য কোন ব্যক্তি, ধর্ম বা সম্প্রদায় নয়। তাঁর বিদ্রোহ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে। ‘আয়না’ প্রকাশের এতোকাল পরেও মনে হয়, এরকম গল্পের প্রয়োজন আজও সমাজে রয়ে গেছে।"

আমিও মনে করি এ বইটির মাধ্যমে লেখক কোন ধর্মকে আক্রমন করেননি বরং ধর্মীয় সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যেই লিখেছেন। তৎকালীন সময়ে একই সাথে বর্তমান সময়েও আমাদের মুসলিম সমাজে যে সমস্ত কুসংস্কার বিদ্যমান আছে সেগুলো দূর হয়ে প্রকৃত ইসলামের আলোই আলোকিত হোক আমাদের সমাজ। বিজ্ঞানময় কোরআনের আলো ছড়িয়ে যাক সবার মাঝে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:১৯

প্রামানিক বলেছেন: আবুল মনসুর আহমেদ আমার প্রিয় লেখক।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩২

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: শুনে ভালো লাগলো! :)

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৫

বিলিয়ার রহমান বলেছেন: আয়না পড়েছি।

মারাত্মক একটা স্যটায়ার।

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:৩৪

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: ঠিক বলেছেন।

৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

শামচুল হক বলেছেন: আবুল মনসুর আহমেদের লেখা একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠা যায় না।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: সহমত পোষন করছি! :)

৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:৪৭

বিজন রয় বলেছেন: ঈদ মোবারক।
আপনার এবং আপনার পরিবারের সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০২

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.