নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ।। ক্রীতদাসের হাসি - শওকত ওসমান

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০


বইঃ ক্রীতদাসের হাসি
লেখকঃ শওকত ওসমান
প্রকাশনীঃ সময় প্রকাশন

বইটা কেনার পর ছোট বোন জিজ্ঞেস করছিল, “ভাইয়া, এটা কি নাটক?”
আমি বললাম, “না’তো,আমি তো জানি উপন্যাস।কেন?”
“কিন্তু এটা দেখে তো নাটকের মতই লাগছে!” সে বলল।

পড়তে গিয়ে আমার কাছেও খটকা লাগলো। আকারে আঙ্গিকে বইটা যত না উপন্যাস, তার থেকে অনেক বেশি নাটক বা ড্রামার কাছাকাছি । প্রায় পুরো অংশটাই সংলাপ নির্ভর,আর মঞ্চায়নে ব্যবহৃত "স্টেজ ডিরেকশনের" মত ব্র্যাকেট-বন্দী নির্দেশিকাও আছে প্রচুর। স্থান কাল পাত্র, কোন কিছুরই বিশদ বর্ণনা নাই, যা আছে খুব সামান্য। তাই ঠিক কি কারনে বইটা নাটক হিসেবে পরিচিত না হয়ে উপন্যাস হিসেবে চিহ্নিত হলো, বুঝলাম না।

আর সংলাপ নির্ভর উপন্যাস গুলোর আর কোন নাম আছে কিনা সেটাও জানা নেই আমার।
তবে যায় হোক, এটা উপন্যাস।শওকত ওসমানের লেখা তৃতীয় উপন্যাস।অনেকে তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাসও বলেন।

লেখক প্রথমেই কিভাবে এটা আরব্য রজনীর আলিফ লাইলার একটি অতিরিক্ত গল্প হল, তারও একটা ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করেছেন একটি প্রাচীন পাণ্ডুলিপি আবিষ্কারের ঘটনার অবতারণা করে।

উপন্যাসের ঘটনাটি মুসলিম খলিফা হারুন অর রশিদের সময়কার। তবে খলিফা হারুন অর রশিদের মত মহৎ প্রাণ মানুষকে তিনি ভিলেনের চরিত্র দান করেছেন রূপক অর্থে,তৎকালীন পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের শাসন ব্যবস্থাকে ব্যঙ্গ করার জন্যই তিনি এ কাজটি করেছেন।ঐতিহাসিক মোড়কে লেখা হলেও এর সাথে প্রকৃত ইতিহাসের কোন সংযোগ নেই।তাই খলিফা হারুন অর রশিদ কে অত্যাচারী শাসক হিসেবে ভাবার কোন দরকারও নেই কিংবা সুযোগও নেই।

একদিন রাতের বেলায় বাগানে খলিফা তার জল্লাদ-কাম সহচর মাসরুর সহ বেড়াতে গেলে সেখান থেকে ক্রীতদাসের হাসি শুনতে পান। পরের দিন তিনি গোপনে ক্রীতদাস তাতারী ও আরমেনীয় দাসী মেহেরজানের প্রেমলীলা প্রতক্ষ করেন। কিন্তু খলিফার অদ্ভূত খেয়াল হয় তিনি ক্রীতদাসকে মুক্ত করে দিয়ে তাকে প্রয়োজনীয় শানসাওকাত দিয়ে দিবেন। বিনিময়ে তার কাছ থেকে প্রাণখোলা হাশি শুনবেন।

যেই কথা সেই কাজ, তাকে সবকিছুই দেয়া হয়। বাগান বাড়ি, দাস-দাসি সবকিছু।কিন্তু প্রেমিকা মেহেরজানের সঙ্গ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

একদিন খলিফা তার কবি আতাহিয়া ও নওয়াসকে নিয়ে ক্রীতদাসের হাসি শোনার জন্য তার নতুন আবাসে উপস্থিত হন। কিন্তু তাতারি তার প্রেমিকার বিরহে হাসি ভুলে গেছে, জীবন থেকে হাসির সব উপাদানই মুছে গেছে তার।তাই সে খলিফার সামনে আর হাসতে পারেনা।

খলিফা এতে অপমান বোধ করেন।তাতারির উপর নেমে আসে অত্যাচারের খড়গ। তবুও তাতারি হাসে না!হাসি দেয়া তো দূরের কথা কোন প্রকার কথাই বলেন না। সকল প্রকার অত্যাচার-নির্যাতনে নিরব থাকেন।

তিন বছর পর প্রেমিকা মেহেরজান কে নিয়ে আসা হয় কারগারে, উদ্দেশ্য তাকে দিয়ে তাতারির মুখ থেকে কথা বের করা। ততদিনে মেহেরজান আর তার প্রেমিকা নেই,সে এখন খলিফার স্ত্রীতে পরিণত হয়েছে। সে প্রথমে তাতারিকে চিনতেই পারেনি।পরে চিনলেও তার প্রাক্তন প্রেমিককে কোন কথাই বলাতে পারেন না। সেও ব্যর্থ হয়।

মেহেরজান চলে যাওয়া শুরু করলে ক্রীতদাস তাতারি মুখ খোলে। মেহেরজান কে ডাক দেয়, পরক্ষনেই খলিফা কে উদ্দেশ্য করে বলে-

“ শোন হারুনর রশিদ।দিরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দি কেনা সম্ভব- ! কিন্তু - কিন্তু ক্রিতদাসের হাসি না-না-না-না-"

এর পরই তার মৃত্যু হয়।আর কবি নওয়াস বলে উঠে-

“আমিরুল মুমেনিন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি।“

বইটার আর একটি কথা খুব ভালো লেগেছে। তা হল-

“ভাল কথার মূল কি? ভাল কথা হচ্ছে রূহের(আত্নার) প্রতিধ্বনি--সেখানেই জমে থাকে, তারপর ঝর্ণার মতো বেরোয়। অনাবিল হাসি হচ্ছে ভাল কথারই শারীরিক রূপ। তাই জিল্লুল্লাহ, যারা ভাল কথা বলতে পারে, তারা ভাল হাসতেও পারে।হাসি আর কথার মূল উৎস এক জায়গায়।“

চমৎকার এই উপন্যাসটি পড়ার আমন্ত্রন রইল সবার প্রতি।
বই পড়া শুভ হোক! :)



মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৩

আনু মোল্লাহ বলেছেন: রিভিউটি ভাল লেগেছে। আপনাকে ধন্যবাদ।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৬

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা! :)

২| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৬

Feroz-Al-Mamum বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.