![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বইঃ আরেক ফাল্গুন
লেখকঃ জহির রায়হান
প্রকাশনীঃ অনুপম প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ একশত টাকা মাত্র।
জহির রায়হানের লেখাগুলো যতই পড়ছি,ততই মুগ্ধ হচ্ছি!সাথে একটা দীর্ঘশ্বাসও বুকের ভেতর থেকে বের হয়ে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে,এই মানুষটিকে যদি আমরা এত অল্প সময়ে না হারাতাম,তাহলে হয়তো তার রচিত অসাধারণ সব সাহিত্যকর্ম গুলো বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করতো।
আরেক ফাল্গুন।জহির রায়হানের লেখা ভাষা অান্দোলনের প্রেক্ষাপটে লেখা একটি উপন্যাস।ভাষা আন্দোলন ভিত্তিক রচিত সাহিত্যকর্ম গুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় এই বইটিকে।
পটভূমি ভাষা আন্দোলন হলেও গল্পটা ১৯৫২ সালের না,তারও পরের।
সময় ১৯৫৫ সাল।ছাত্র জনতার মাঝে তখনও চাপা উত্তেজনা,শহীদদের লাশের গন্ধ তখনো আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি বাংলা,মূল্যায়িত হয়নি শহীদদের আত্মত্যাগ।বরং সরকারের দমন পীড়ন নীতি জোরদার করা হয়েছে।স্বৈরাচারী শাসকের পদতলে পিষ্ট হয়েছে শহীদদের সম্মানে নির্মিত শহীদ মিনার।
সিপাহী বিদ্রোহের নির্মম স্মৃতি বিজরিত ভিক্টোরিয়া পার্কের বর্ননা দিয়ে ঔপন্যাসিক উপন্যাসের সূচনা করেন।এরপরই দেখা যায়,সাদা শার্ট,সাদা প্যান্ট পরিহিত নগ্ন পায়ে একটি ছেলে নবাবপুরের দিকে হেটে যাচ্ছে।এই ছেলেটিই মুনীম,আমাদের উপন্যাসের নায়ক।
পৃষ্ঠা উল্টানোর সাথে সাথে আরো অনেকের সাথে দেখা মিলবে-সালমা,রেনু,বানু,নীলা,আসাদ,কবি রসুল প্রমুখ শত শত ছাত্র ছাত্রী।সবারই নগ্ন পা।কিন্তু কেন?
এই বইয়ে অনেকগুলো চরিত্রের সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন লেখক,তারপরও খেই হারায়নি কোথাও।মনে হচ্ছিল প্রত্যেকটি চরিত্রেরই প্রয়োজন ছিল,আর সবগুলো চরিত্রের ছোট ছোট অবদানগুলো বইটির আবেদনও বাড়িয়েছে বহুগুণ।
ভাষা শহীদদের সম্মান জানানো আর রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার দাবিতে তাদের আন্দোলন।তিনদিন নগ্ন পায়ে চলা,রোজা রাখা,আর কালোব্যাজ ধারনের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে থাকে তাদের শান্তিপূর্ন আন্দোলন।
এর আগে জহির রায়হানের লেখা যে তিনটি উপন্যাস পড়েছি তাতে রোমান্টিকতার অনন্য সব উপকরন ছিল।এ উপন্যাসের তার ব্যতিক্রম হয়নি।লেখক অত্যন্ত দক্ষ হাতে প্রেম, ভালোবাসা,আবেগ,কপটতা,চতুরতা আর বিচ্ছেদের কিছু খন্ডচিত্র উপহার দিয়েছেন আমাদের।
আন্দোলনের ময়দান থেকে প্রেম-ভালোবাসাই চলে গিয়েছিলাম!!চলুন আবার আন্দোলনে ফিরে আসি!
ওদিকে,সরকার শহীদ দিবস পালন করতে দিবেনা।আর সে লক্ষ্যে মিছিল,মিটিং বেআইনি ঘোষনা করা হয়েছে।নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে রাজপথের স্লোগান।কিন্তু ছাত্র সমাজ কি থেমে থাকবে?না,কখনোই নয়।
২১ ফেব্রুয়ারির আগের রাতে বিভিন্ন কলেজ ভার্সিটির হলগুলোতে ছাত্র ছাত্রীরা অতন্দ্র প্রহরীর মত সারারাত জেগে রইল।কোরাস গান ধরলো কেউ কেউ-
" ভূলবো না,ভূলবোনা একুশে ফেব্রুয়ারি।"
স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হলো হলগুলোর ছাদ।রাতেই মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আক্রমন করে পুলিশ,গ্রেফতার হয় অনেকে।
পরদিন সকাল বেলা।বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শত শত ছাত্র ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জমায়েত হতে লাগলো।উত্তোলন করা হলো কালো পতাকা।সেখানেও পুলিশের নগ্ন হামলা।গ্রেফতার।কিন্তু প্রিজন ভ্যানে উঠেও তাদের স্লোগান-
"বরকতের খুন ভূলবোনা,শহীদদের খুন ভুলবোনা।"
কিংবা
"শহীদ স্মৃতি,অমর হোক।"
লিখতে গিয়ে চোখটা ছলছল করে উঠল।আমাদের এই দেশের জন্য,ভাষার জন্য,স্বাধীকারের জন্য ঐ সময়ের ছাত্র সমাজের কত ত্যাগই না স্বীকার করতে হয়েছে,আর আমরা??
আমাদের সময়ের ছাত্র সংগঠন আর ছাত্র নেতাদের ভূমিকা বা অবদানগুলো হয়তো অনেকগুলো প্রশ্নবোধক চিন্হ হয়েই থাকবে ইতিহাসের পাতায়।
বইয়ের শেষের দৃষ্টপটটি দারুনভাবে উদ্বেলিত করে।যেখানে শত শত ছাত্র-ছাত্রীদের জেলে ঢুকানো হচ্ছে।এদের সংখ্যা দেখে আর নাম ডাকতে ডাকতে বিরক্ত হয়ে উঠছে জেলার।তখন কেউ একজন বলে উঠল-
"এতেই ঘাবড়ে গেলেন নাকি?আসছে ফাল্গুনে আমরা কিন্তু দ্বিগুন হবো।"
বর্ণনার আবেগের সংগে ঘটনার প্রবহমানতা একাত্ম করে রচিত জহির রায়হানের এই উপন্যাসটি পড়ার অনুরোধ রইল সবার প্রতি।
হ্যাপি রিডিং! :-)
©somewhere in net ltd.