নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর "নক্সী কাঁথার মাঠ"

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৭:৪০


পল্লী কবি জসীম উদ্দীন এর লেখা "নক্সী কাঁথার মাঠ" একটি কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ, একটি শিল্প সফল কাহিনী কাব্য।চৌদ্দটি ছোট ছোট দৃশ্যপটের সমন্বয়ে অসাধারন শৈল্পিকতার সংগে গ্রামীণ সমাজের একটি সামগ্রিক জীবন চিত্র ফুটে উঠেছে এখানে।বইটি প্রথম প্রকাশের পরই ই.এম. মিলফোর্ড কর্তৃক "The field of embroidered quilt" নামে ইংরেজি অনূদিত হয়ে বিশ্বপাঠকের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়।

আমাদের পাশের উপজেলা হচ্ছে গফরগাঁও। ময়মনসিংহ অঞ্চলের লোকজ সঙ্গীত সংগ্রহ করতে কবি এসেছিলেন এখানে,উঠেছিলেন খ্যাতনামা সাহিত্যিক মৌলভি শেখ আব্দুল জব্বারের বনগাঁও গ্রামের বাড়িতে।এখানে অবস্থানকালে বনগাঁও গ্রামে জমির ধান কাটা নিয়ে একদিন বড় ধরণের এক দাঙ্গা হয়৷ সেই দাঙ্গায় গফরগাঁওয়ের লাঠিয়াল দলের নেতৃত্ব দেন কৃষ্ণবর্ণের হালকা-পাতলা ছোটখাটো গড়নের যুবক রূপাই (প্রকৃত নাম রূপা)৷ পল্লীকবি সেই দাঙ্গা দেখেন; দেখেন লাঠিয়াল দলের নেতৃত্বদানকারী রূপার তেজোদীপ্ত এক ভয়ঙ্কর বীরত্ব৷ ওই দাঙ্গাই কবির মনে রেখাপাত করে৷ নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যের মূল উপজীব্য হয়ে ওঠে সেই দাঙ্গার ঘটনা৷

কাব্যে, রূপাইয়ের বিপরীতে সাজু নামে যে নারী চরিত্রের দেখা পাই আমরা,তিনিও বাস্তবের এক ব্যক্তিত্ব,প্রকৃত নাম ললীতা।রূপাই ললীতাকে ভালোবেসে ঘর বেধেছিলেন,আর তিনি ছিলেন রূপাইয়ের প্রতিবেশী গ্রাম মশাখালীর বাসিন্দা।

"এই গাঁয়ের এক চাষার ছেলে লম্বা মাথার চুল,
কালো মুখেই কালো ভ্রমর,কিসের রঙিন ফুল!
কাঁচা ধানের পাতার মত কচি মুখের মায়া,
তার সাথে কে মাখিয়ে দেছে নবীন তৃণের ছায়া।"


শুরুতেই কবি তার কবিতার নায়ককে আমাদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন এভাবে।এই রূপাইয়ের সাথেই পাশের গ্রামের মেয়ে সাজুর সাথে প্রেম হয়।কবি সাজুকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন যেভাবে-

"সেইখানি এক চাষীর মেয়ে নামটি তাহার সোনা,
সাজু বলেই ডাকে সবে,নাম নিতে যে গোনা।
লাল মোরগের পাখার মত ওগে তাহার শাড়ী,
ভোরের হাওয়া যায় যেন গো প্রভাতী মেঘ নাড়ি।"


একপর্যায়ে এই প্রেম স্থায়ী রূপ লাভ করে বিয়েতে গড়ায়,সুখের সংসার পাতে দু'জনে।কবির ভাষায়-

"নতুন চাষার নতুন চাষাণী নতুন বেঁধেছে ঘর,
সোহাগে আদরে দুটি প্রাণ যেন করিতেছে নড়বড়!"


সাংসারিক ব্যস্ততার ফাকে খানিকটা ভালোবাসা আর মধুর অভিমান নিয়ে বেশ ভালোই চলছিল তাদের সংসার।কিন্তু সুখের দিন খুব বেশি স্থায়ী হয় না!একদিন হঠাৎ খবর আসে, বনগেঁয়োরা তাদের গজনা চরের পাকা ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছে।প্রতিরোধে দলবল নিয়ে এগিয়ে যায় রূপাই,সেই লড়াইয়ে খুন হয় অনেকে!

এদিকে ঘরে সাজু বসে আছে প্রিয়তম স্বামীর অপেক্ষায়,কিন্তু রূপাই ফিরে আসেনা।পথের পানে তাকিয়ে আছে সে,কখন আসবে রূপাই?

"কত লোক আসে কত লোক যায়,সে কেন আসে না আজ,
তবে কি তাহার নসিব মন্দ,মাথায় ভাঙিবে বাজ!"


একদিন গভীর রাতে সাজুর সামনে এসে দাড়ায় রূপাই,জানায় খুনের দায়ে পুলিশ খুজছে তাকে।সাজুকে আল্লাহ'র কাছে সঁপে দিয়ে ফেরারি হয় রূপাই!

আশা নিয়ে বেচে থাকে সাজু,একদিন তার স্বামী ঠিকই ঘরে ফিরবে!আর তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া নানান স্মৃতি সুঁই সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলে নক্সী কাঁথার ওপর।কবির ভাষায়-

"নক্সী-কাঁথাটি বিছাইয়া সাজু সারারাত আঁকে ছবি,
ও যেন তাহার গোপন ব্যথার বিরহিয়া এক কবি।
অনেক সুখের দুঃখের স্মৃতি ওরি বুকে আছে লেখা,
তার জীবনের ইতিহাসখানি কহিছে রেখায় রেখা।"


একদিন সেই কাঁথা বোনা শেষ হয়,কিন্তু তার রূপাই তো তখনো ফিরে আসেনি!

আচ্ছা,কবিতা কি আমাদের বেদনাসিক্ত কিংবা ব্যথিত করতে পারে?অন্য কবিতার কথা জানি না,শুধু জানি এই কবিতা সেই ক্ষমতা রাখে।শেষ দিকে এসে তারই প্রমান পাই আমরা!

ততদিনে সাজু পৃথিবীর মায়া ছেড়ে কবরে শুয়ে আছে।
আর রূপাই?

"বহুদিন পর গাঁয়ের লোকেরা গভীর রাতের কাল,-
শুনিল কে যেন বাজাইছে বাঁশঅ বেদনার তালে তালে।
প্রভাতে সকলে দেখিল আসিয়া সেই কবরের গায়,
রোগ পান্ডুর একটি বিদেশী মরিয়া রয়েছে হায়!"


বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য রত্নটি পড়ার অনুরোধ রইল।

হ্যাপি রিডিং! :-)

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:১৩

উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: অসাধারন।

ধন্যবাদ লেখাটির জন্যে।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:২৬

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ :)

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:২৬

জল্লু ঘোড়া বলেছেন: পড়ার চেষ্টা করবো অসাধারণ এই কাব্যগ্রন্থটি।

৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:৩৬

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: সত্যিই অসাধারণ, অবশ্যই পড়ার চেষ্টা করবেন।

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

ধ্রুবক আলো বলেছেন: অনেক দিন আগে পড়েছিলাম, বইটা বাসা থেকে গুম9 হয়েছে।
সংগ্রহ করে আবার পড়তে হবে।

পোস্টে +++

০২ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:২২

ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: জ্যান্ত মানুষ যেখানে গুম হয়ে যেতে পারে, সেখানে বই গুম হওয়াটা দোষের কিছু না! :D
সংগ্রহ করে আবার পড়ে নিয়েন।

৪| ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:২৮

ধ্রুবক আলো বলেছেন: অনেক দিন আগে পড়েছিলাম, বইটা বাসা থেকে গুম হয়েছে।
সংগ্রহ করে আবার পড়তে হবে।

পোস্টে +++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.