![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"মৈমনসিংহ গীতিকা" নামের সাথেই জড়িয়ে আছে আমার জন্মস্থান ও ভালোবাসার প্রিয় জেলা!বুকশেলফে অনেকদিন পড়ে থাকার পর গতকাল বিকেলে বইটি হাতে নিই। আর,গতকালই ছিল ময়মনসিংহ জেলার প্রতিষ্ঠা দিবস।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা থেকে স্থানীয় সংগ্রাহকদের সহায়তায় প্রচলিত স্থানীয় পালাগানগুলো সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে ১৯২৩ সালে "মৈমনসিংহ গীতিকা" নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন।জেনে রাখা ভালো তৎকালীন সময়ে নেত্রকোনা,শেরপুর,জামালপুর, টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার অধীন ছিল।
মৈমনসিংহ গীতিকায় ১০ টি গীতিকা স্থান পেয়েছে,যদিও আমার কাছে থাকা বইটিতে মাত্র দুইটি গীতিকা দেওয়া আছে - মহুয়া, দেওয়ানা মদিনা।
গতকাল শুধু 'মহুয়া' পড়েছি তাই মহুয়া গীতিকা নিয়েই বলি- ধারনা করা হয় ১৬৫০ সালের দিকে দ্বিজ কানাই এটি রচনা করেন।এর প্রধান চরিত্র হলো মহুয়া ও নদের চাদ।বলা হয়ে থাকে, মহুয়া ও নদের চাদ নামক দুটি বাস্তব চরিত্রের বাস্তব প্রেমকাহিনীর উপর ভিত্তিকরেই গীতিকাটি রচিত হয়েছিল।
বন্দনাগীতি দিয়ে শুরু হয়েছে এই প্রাচীন পল্লীনাটিকা, এরপরে হুমরা এবং মাইনকা নামে বেদে সম্প্রদায়ের দুই ভাইয়ের পরিচয় পাই আমরা। যাযাবর জীবন তাদের,নেই কোন স্থায়ী আবাস। ঘুরতে ঘুরতে একদিন কাঞ্চনপুর গ্রামে উপস্থিত হয় তারা। সেখান থেকে এক ছয় মাসের এক ফুটফুটে শিশু কন্যাকে চুরি করে নিয়ে আসে হুমরা বেদে। তাদের কাছেই বড় হতে থাকে আর তাদের জীবনযাত্রার সাথেই অভ্যস্থ হয়ে উঠে সেই শিশু কন্যাটি। এভাবেই কেটে যায় ১৬ বছর।এই মেয়েটিই আমাদের গল্পের নায়িকা "মহুয়া"।
অতঃপর একদিন হুমরা বেদে তার দলবল নিয়ে খেলা দেখাতে হাজির হয় বামনকান্দা গ্রামে। নদের চাদ ঠাকুরের বাড়িতে খেলা দেখানোর ডাক পায় তারা,সেখানেই মহুয়াকে ভালো লেগে যায় নদেরচাঁদ ঠাকুরের। সেই গ্রামেই বসত তৈরির অনুমতি পায় তারা। ধীরে ধীরে বেদে কন্যা মহুয়ার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে নদেরচাঁদ ঠাকুরের। কিন্তু হুমরা বেদে তা জেনে যায়, সিদ্ধান্ত নেয় রাতের আধারে সবাইকে নিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার,চলে যায় তারা।
"ভাঙ্গা ঘর পড়িয়া রইছে চালে নাইরে ছানি
পিঞ্জিরা করিয়া খালি উইরাছে পঙ্খিনী।।"
মহুয়ার গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার খবর শুনে পাগলের মত হয়ে যায়!সিদ্ধান্ত নেয় মহুয়াকে খুজে বের করার,অতঃপর তীর্থযাত্রার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় সে।পথে পথে খুজে বেড়ায় মহুয়াকে,কেটে যায় অনেকদিন।একদিন ঠিকই মহুয়া কে খুজে পায় সে।আর অতিথি হিসেবে আশ্রয় নেয় মহুয়াদের বাড়িতেই! কিন্তু হুমরা বেদে ঠিকই চিনে ফেলে তাকে।তাইতো নদেরচাঁদ কে জাদুকর আখ্যায়িত করে তাকে হত্যার উদ্দেশ্য মহুয়ার হাতে বিষ মিশ্রিত ছুরি তুলে দেয় সে!
"এই ছুরি লইয়া তুমি যাও নদীর পারে
শুইয়া আছে নদীয়ার ঠাকুর মাইরা আইস তারে।।
ষোল বছর পাললাম কন্যা কত দুঃখ করি।
আমার কথা রাখ তুমি মহুয়া সুন্দরী।।"
অনেক ভেবে চিন্তে হাতে ছুরি তুলে নেয় মহুয়া,এগিয়ে যায় নদেরচাঁদ ঠাকুরের দিকে।যাকে মনেপ্রাণে এতকাল ভালোবেসে এসেছে,ভাবনায় যে সারাক্ষণ বাস করতো তাকে কি নিজ হাতে মারা যায়?যায় না!
"পইড়া থাকুক বাপ মাও পইড়া থাকুক ঘর
তোমারে লইয়া বন্ধু যাইবাম দেশান্তর।।
দুই আঁখি যে দিগে যায় যাইবাম সেই খানে।
আমার সঙ্গে চল বন্ধু যাইবাম গহীন বনে।।"
গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যায় দুজন!কিন্তু পালিয়ে গিয়ে কি ভালোবাসার সুখের নীড় তৈরি করতে পারে তারা?
উত্তরটা না'হয় বইটা পড়ে নিজেই খুজে নিবেন। ভাষা বুঝতে একটু কষ্ট হবে হয়তো,আমি নিজে ময়মনসিংহের মানুষ হওয়ার পরও অনেক শব্দার্থের জন্য পাদটীকার সাহায্য নিতে হয়েছে!তবে কাহিনীর আকর্ষনে এটা নিয়ে আটকাবেনা আশাকরি।
প্রাচীন এই গীতিকাটি পড়ার আমন্ত্রন রইল!
হ্যাপি রিডিং!
০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১৬
ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: লিখবো আশা করি, আর মন্তব্যে ভালোলাগা।
২| ০৩ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৫
সালমান মাহফুজ বলেছেন: বাংলা লোকসাহিত্যের অনবদ্য দুটি সম্পদ ! প্রাতিষ্ঠানকীকরণের মাধ্যমে এগুলোকে সংরক্ষিত ও পরিচর্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লোকের মুখে মুখে এসব লোককথা এখন আর শুনা যায় না ।
০৪ ঠা মে, ২০১৭ বিকাল ৩:১৭
ফাহাদ জুয়েল বলেছেন: সহমত পোষণ করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৭
জাহিদ হাসান বলেছেন: আমি কিশোর বয়সে দুষ্টামি করে বলতাম- ‘মমিসিঙ্গা গীতিকা’’। খুব জানার ইচ্ছা ছিল এই প্রাচীন গীতিকাটি নিয়ে।
দেওয়ানা মদিনা সম্পর্কেও একটা পোষ্ট দিয়েন। আপনার পোষ্ট প্রিয়তে রাখলাম।